Ajker Patrika

আজ টাকা দিবস

এটিএম আনোয়ারুল কাদির
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৩, ১২: ১৫
আজ টাকা দিবস

পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের দিবস রয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দিবস যেমন আছে, তেমনি অনেক বাণিজ্যিক দিবসও আছে। টাকা দিবস বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস। দিবসটির বীজও লুকিয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের মধ্যে।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেশকে মেধাশূন্য করতে যেমন বুদ্ধিজীবী হত্যায় মেতেছিল, তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত করতে নগদ টাকা (রুপি নোট) পুড়িয়ে দিয়েছিল। এক হিসাবে, শুধু ঢাকার মতিঝিলে কয়েক শ কোটি টাকার নোট তারা পুড়িয়ে ধ্বংস করেছিল।

বাংলাদেশ সরকার ৯ মাসের ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠন বিষয়ে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ ছিল। তাই সরকার আনুষ্ঠানিক বিজয়ের মাত্র ১০ দিনের মধ্যে ‘টাকা’কে বাংলাদেশের জাতীয় মুদ্রা হিসেবে ঘোষণা করে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আইন প্রণয়ন করে। সরকারি এক দলিলে দেখা যায়, স্বাধীনতা লাভের পক্ষকাল অতিক্রান্ত হওয়ার আগে বাংলাদেশের ‘টাকা’ ছাপানোর প্রক্রিয়া শুরু করে।

কাগজি নোটের নিরাপত্তা বজায় রেখে নোট ছাপানো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হলেও তা ১২ থেকে ১৫ মাস সময়ের প্রয়োজন। বাংলাদেশের প্রয়োজন বিবেচনা করা বন্ধুরাষ্ট্র ভারত তাদের ব্যাংক নোট ছাপানোর ছাপাখানায় বাংলাদেশের নোট দ্রুততার সঙ্গে ছাপিয়ে দিতে রাজি হয়।

স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি না পেলে বাঙালি সত্যিকারের স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারছিল না। সেই সুযোগ আসে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে। তিনি এসেই দেশ বিনির্মাণে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাঁর সরকার প্রথম যে কজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেন, তাঁদের একজন হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আ ন ম হামিদুল্লাহ।

অপ্রতুল ব্যাংক নোট নিয়ে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা যাত্রা শুরু করলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত যোগাযোগব্যবস্থা  ব্যাংক নোট জোগান ও সরবরাহের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। ইতিমধ্যে স্বল্পতম সময়ে বাংলাদেশের নিজস্ব ১ টাকা ও ১০০ টাকা ভারত থেকে ছেপে আসে, যা ৪ মার্চ ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো প্রকাশ করা হয়। দেশের সব অঞ্চলে বাংলাদেশের নিজস্ব নোট পৌঁছে দিতে সরকার সচেষ্ট ছিল। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নোট পৌঁছানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত হেলিকপ্টার এই কাজে ব্যবহার করার আদেশ দেন। সরকারের সহযোগিতায় বাংলাদেশ ব্যাংক পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যে উন্নত নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যযুক্ত পর্যাপ্ত পরিমাণে বিভিন্ন মূল্যমানের কাগজি নোট প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ করার সামর্থ্য অর্জন করে।

‘কালেক্টার’ বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র ব্যাংক নোট ও মুদ্রাবিষয়ক তথ্য ও গবেষণাধর্মী পত্রিকা। বাংলাদেশের প্রথম কাগজি টাকার নোট প্রচলনের ঐতিহাসিক দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ‘কালেক্টার’ ২০২১ সালের ৪ মার্চ তারিখটিকে প্রথমবারের মতো ‘টাকা দিবস’ হিসেবে উদ্‌যাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। উদ্যোগটিকে শুধু শৌখিন ব্যাংক নোট সংগ্রাহকেরা সাদরে গ্রহণ করেনি, জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোও যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে প্রচার করে। ২০২২ সালে বাংলাদেশের প্রথম কাগজি টাকা প্রচলনের সুবর্ণজয়ন্তী (১৯৭২-২০২২) সামনে রেখে ব্যাপক উদ্দীপনার সঙ্গে টাকা দিবস পালিত হয়েছিল। 

এ বছরও ‘কালেক্টার’ টাকা দিবস উপলক্ষে ৬৮ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ (৩য় তলা), ফার্মগেট, ঢাকায় কর্মশালাসহ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সরকারিভাবে দিনটি উদ্‌যাপনের জন্য জোর দাবিও জানানো হয়েছে কালেক্টারের পক্ষ থেকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত