Ajker Patrika

নিখোঁজের ১৯ মাস পর চার তরুণের ফোন, র‍্যাব-পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছে পরিবার

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা
আপডেট : ০৬ জুন ২০২৩, ১০: ০৮
নিখোঁজের ১৯ মাস পর চার তরুণের ফোন, র‍্যাব-পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছে পরিবার

উনিশ মাস আগে বাড়ি ছেড়ে নিখোঁজ হন কয়েক তরুণ। তাঁদের চারজন সম্প্রতি বাবা-মাকে ফোন কল করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন। তাঁরা ‘জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে দেশের নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন।

তাঁদের উদ্ধার করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পরিবারগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানিয়েছে।

অবশ্য ওই তরুণদের অবস্থান এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনের বিশেষ ইউনিটগুলো কাজ করছে। 

২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর সিলেটের ওসমানীনগর থেকে নিখোঁজ হন শেখ আহমদ মামুন। নিখোঁজের ১৯ মাস পর গত ঈদুল ফিতরের তিন দিন আগে মা আনোয়ারা বেগমকে ফোনকল করেন। 

আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘শবে কদরের আগে আমার ছেলে ফোন দিয়ে অনেক কেঁদেছে। বলছে, মা, আমাকে বাঁচাও। আমি বলছি, বাড়ি আয়। কিন্তু ভয়ে সে বাড়ি আসেনি। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায় আমার ছেলে। আমি পুলিশ ও র‍্যাবের কাছে আমার ছেলেকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে অনুরোধ জানিয়েছি। সিলেট ও ঢাকার র‍্যাব ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার ছেলেকে তাবলিগের কথা বলে ভুল বুঝিয়ে অন্যরা এই জঙ্গিবাদের পথে নিয়েছে।’ 

মামুন সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীরে তাঁদের বাড়ি। মামুন বাজারে যাওয়ার কথা বলে বের হয়ে আর ফেরেননি। এ ঘটনায় তাঁর বাবা শেখ শামসুল হক স্বপন ওই বছরের ২৭ নভেম্বর ওসমানীনগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। 

ছেলের ফোনকল পাওয়ার কথা জানিয়ে শামসুল হক স্বপন বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলের জঙ্গি আস্তানার ভিডিওতে ছেলেকে দেখে আমার পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যায়। বাবা হিসেবে এটা খুবই কষ্টের। এত দিনে সে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হতো। তাকে ভুল বুঝিয়ে এই পথে নিয়েছে। তারা কয়েকজন জঙ্গি আস্তানায় বিদ্রোহ করে বের হয়ে আসতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাদের আবার আটকে দেয় অন্য জঙ্গিরা।’ 

শামসুল হক বলেন, ‘ঈদের আগে মামুনের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। একবার বলেছিল ঢাকা, আরেকবার বলেছিল চট্টগ্রাম। বাড়িতে আসতে বললেও র‍্যাবের ভয়ে আসেনি। এরপর ফোন বন্ধ হয়ে যায়। আমরা ওই ফোন নম্বর র‍্যাবকে দিয়েছি। র‍্যাবকে আমি অনুরোধ করেছি আমার ছেলেকে জীবিত উদ্ধার করতে। তাকে আমি দায়িত্ব নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনব।’ 

মামুনের সঙ্গে নিখোঁজ হন একই গ্রামের আরও তিন যুবক। তাঁরা হলেন—হাসান সাঈদ, সাইফুল ইসলাম ও সাদিকুর রহমান। তাঁদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম ও সাদিকুর রহমানকে র‍্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তবে হাসান সাঈদের এখনো খোঁজ নেই। মামুন তাঁর বাবাকে ফোনকল দেওয়ার কিছুদিন আগে হাসান সাঈদ তাঁর বাবা ছোরাব আলী হাসানকে ফোনকল করেন। 

সাঈদ হাসানের ছোট ভাই আবিদ হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ভাই গত রমজানে হঠাৎ একদিন ফোন দিয়েছিল। এরপর আর খোঁজ নেই। আমরা বিষয়টি নিয়ে খুবই চিন্তিত।’ 

হাসান সাঈদ নিখোঁজের মাত্র পাঁচ মাস আগে বিয়ে করেন। এরও তিন বছর আগে ঢাকার মাদ্রাসা থেকে টাইটেল পাস করেন তিনি। এরপর থেকে গ্রামেই থাকতেন। 

হাসান সাঈদের বাবা ছোরাব আলী হাসান বলেন, ‘বিদেশি তাবলিগ জামাতের সঙ্গে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর আর খোঁজ পাইনি। রমজানে ফোন দিয়েছিল, এরপর আবার এক মাস হলো নিখোঁজ। আমরা র‍্যাব ও পুলিশকে জানিয়েছি। দেখি তারা কী করে।’ 

সিলেটের মামুন ও সাঈদের ফোনকলের পর আরও এক নিখোঁজ কিশোর বাবা-মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তাঁর নাম আবু বক্কর রিয়াসাদ রাইয়ান (১৬)। তিনি নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানা এলাকা থেকে ২০২২ সালের মার্চে নিখোঁজ হন। 

আল-আমিন নামে একজন গৃহশিক্ষকের মাধ্যমে তিনি জঙ্গিবাদে জড়ান। তাঁকে ‘জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার’ বান্দরবানের আস্তানায় নিয়ে যান ওই শিক্ষক। এমনটাই অভিযোগ পরিবারের। 

রাইয়ানের বাবা তানজীম মোহাম্মদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ছেলে অনেক ছোট ছিল, তাকে ভুল বুঝিয়ে ভুল পথে নিয়েছে শিক্ষক। আমার ছেলে কয়েক দিন আগে ফোন দিয়েছিল। বলছে, বাবা আমাকে বাঁচাও, আমি আর ভুল করব না। পরে ওই নম্বরে ফোন দিয়েছি, আর পাইনি। আমি সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ও র‍্যাবকে নম্বর দিয়েছি, তারা এখন কাজ করছে।’ 

এ ছাড়া মাদারীপুর জেলার কালিকাপুর পূর্ব হোসনাবাদ গ্রামের মো. ইয়াছিন ওরফে আরিফ (২১) তাঁর পরিবারকে ফোনকল করেছেন। তিনিও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে র‍্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আমরা তাদের আস্থায় নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে আনার চেষ্টা করছি। তারা পরিবারের কাছে যে দাবি করেছে, তার সত্যতা আমরা যাচাই করছি।’ 

এদিকে চার তরুণ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাওয়াকে স্বাগত জানিয়েছে র‍্যাব ও পুলিশ। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যমতে, ২০২১ ও ২০২২ সালে দেশের ১৯টি জেলা থেকে ৫৫ জন তরুণ বাড়ি ছাড়েন। র‍্যাব গত বছরের শেষের দিকে বান্দরবান অভিযান চালিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠনটির একটি আস্তানার সন্ধান পায়। পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চীনের আশ্রয়ে এই জঙ্গি সংগঠন প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল। সেখানে নিখোঁজ তরুণদের অনেকে উপস্থিতি ছিলেন। তাঁদের মধ্যে র‍্যাব ও ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অভিযানে ৪৩ জন গ্রেপ্তার হয়। দুজন নিহত হন। পাহাড়ি এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ারাই এখন তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইছেন বলে ধারণা করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। 

ডিএমপির সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, ‘কেউ ভালো হতে চাইলে আমরা তাদের সুযোগ দেই। এ জন্য আমাদের একটি প্রোগ্রাম নেওয়া আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিজের প্রস্রাব পান করে ‘আশিকি’ অভিনেত্রী অনু আগারওয়াল বললেন, ‘আহা অমৃত’

মে. জে. ফজলুরের সেভেন সিস্টার্স দখলের মন্তব্য সমর্থন করে না সরকার: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা-ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

গায়ে কেরোসিন ঢেলে কলেজছাত্রীর আত্মহনন, পলাতক ইমাম গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত