Ajker Patrika

দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২২, ১৮: ৫৮
দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না: প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আর যেন কোনো হায়নার দল এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আজ বুধবার রাজধানীর ফার্মগেট খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জানি, অনেক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র। ওইগুলো আমি মাথায় রাখিও না। আমি বিভ্রান্তও না। কারণ, আমরা সারা জীবনই দেখেছি এটা হচ্ছে, এটা হবেই। কিন্তু একটা আদর্শ নিয়ে চলতে গেলে, আর একটা লক্ষ্য স্থির করে চললে, আর বাংলাদেশের তৃণমূলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে গেলে যারা ওপরে থেকে বেশি বেশি খায়, বেশি বেশি পায় তাদের তো একটু দুঃখ থাকেই। তারা ভাবে আমাদের বোধ হয় জায়গা হবে না। সেই জন্য ষড়যন্ত্র করতেই থাকে। আর কিছু লোকের তো একটু লক্ষ্যই থাকে যে একটু ওই একটা পতাকা পেতে হবে বা একটু ক্ষমতায় যেতে হবে বা ইত্যাদি। এই ধরনের যাদের আকাঙ্ক্ষা বেশি তারা তো দেশের মানুষের ভাগ্যের কথা চিন্তা করে না।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাই তারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকে। কিন্তু নীতি-আদর্শ নিয়ে চললে পরে, আর সৎ পথে চললে পরে যেকোনো বাধা অতিক্রম করা যায়। সেটা প্রমাণ করেছি আমরা।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন হয়েছে একটি সিদ্ধান্ত থেকে। যেদিন পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের ওপর দোষারোপ করল, দুর্নীতি হয়েছে। সেটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলাম। এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যখন প্রমাণ করতে পারে নাই তারপরেই সারা বিশ্ববাসী বা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো, একসময় যাদের কাছ থেকে আমরা ঋণ নিলে তারা মনে করত যে আমাদের খুব করুণা করল। আমি কিন্তু সেই চিন্তা থেকে বাংলাদেশকে সরিয়ে এনেছি। যে আমরা ঋণ নিয়ে সুদসহ সেটা শোধ দিই। এইটা কখনো অনুদান না।’ 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাজেই আমরা কিন্তু এখন পরনির্ভরশীল না। আমাদের উন্নয়ন প্রকল্প আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করতে পারি। সেটা আমরা দেখিয়েছি এবং পদ্মা সেতু আমরা নিজস্ব অর্থায়নে যে করতে পারি সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। এই একটা সিদ্ধান্ত থেকেই কিন্তু সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পাল্টে গেছে। এখন কেউ আমাদের করুণা করতে সাহস পায় না, বরং আমাদের সমীহ করে চলতে পারে।’ 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এই অর্জনটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। কারণ আমাদের দেশের কিছু মানুষ সেই পাকিস্তান আমল থেকে দেখি সব সময় কোনো একটা প্রভু খুঁজে নিয়ে তাদের পদলেহন করতে ব্যস্ত থাকে। তাদের কোনো আত্মমর্যাদাবোধ নাই, তাদের নিজের প্রতি কোনো আত্মবিশ্বাস নাই। এদের দিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণ হয় না।’ 

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের দেশে জাতির পিতা স্বাধীনতার পর অনেক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছে যে এ দেশে তো কিছুই নেই আপনি কি দিয়ে এই দেশ গড়বেন? তিনি কী বলেছিলেন? বলেছিলেন, আমার মাটি আছে, মানুষ আছে। এই মাটি, মানুষ দিয়েই আমি দেশ গড়ব। মাটি মানুষ দিয়েই যে দেশ গড়া যায়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।’

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই আমি এটুকু চাইব যে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে যারা নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চাও, শিক্ষার আদর্শ নিয়ে সততার সঙ্গে প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে হবে। চলমান বিশ্বে সব সময় নিজেদের গতি ঠিক রেখে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই এ দেশের নেতৃত্ব দিয়ে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।’ 

 শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আগেই বললাম যে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কিন্তু ছাত্রলীগ এই দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে গেছে। অনেক ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী বুকের রক্ত দিয়ে গেছে। কত চেনা মুখ হারিয়ে গেছে। কাজেই সেই ঐতিহ্য নিয়েই কিন্তু এই সংগঠন। এই সংগঠন কোনো হঠাৎ করে উর্দি পরে এসে আমি আজকে রাষ্ট্রপতি হলাম ওই চেয়ারে বসে তারপর দল গঠন করে রাজনীতিতে অবতারণ করা সেই দল কিন্তু না। ক্ষমতায় উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে সৃষ্ট দল কিন্তু ছাত্রলীগও না, আওয়ামী লীগও না বা আমাদের সহযোগী সংগঠনও না। আমাদের দল গণমানুষের দল। অধিকারহারা মানুষের কথা বলেই কিন্তু এই সংগঠন তৈরি। এই কথাটা কিন্তু সব সময় মাথায় রাখতে হবে। এইটাই হচ্ছে আমাদের গর্বের বিষয়। কাজেই সেই গর্বটা থাকতে হবে। কিন্তু অহমিকা না। সেখানে বিনয়ী হতে হবে। দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে। যেটা জাতির পিতা বলে গেছেন। ডেভিড ফস্টারের ইন্টারভিউ সেখানে বলেছিলেন। তার সব থেকে বড় শক্তি এই দেশের মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা, সব থেকে বড় দুর্বলতা কারণ তিনি অধিক ভালোবাসেন। যেটা ঠিকই। সত্যিই তিনি অতিরিক্ত ভালোবাসতেন এই দেশের মানুষকে। সেই জন্যেই তো অকালে জীবনটা দিতে হলো। কারণ এই ভালোবাসার বিশ্বাস যাদের করেছিলেন তারাই তার বুকে গুলি চালাল, এটা হচ্ছে দুর্ভাগ্যের বিষয়। 

সরকার প্রধান বলেন, বুলেট, গোলা, বোমা অনেক কিছুই তো মোকাবিলা করেছি। কাজেই ও নিয়ে চিন্তা করি না। কিন্তু দেশটাকে যেখানে নিয়ে এলাম এই গতিটা যে অব্যাহত থাকে সেটাই চাই। চিন্তাটা সেখানেই আবার যেন আমাদের পিছিয়ে যেতে না হয়। ছাত্রলীগ এবং আমাদের যারা সহযোগী সংগঠন বা আমাদের আওয়ামী লীগ সকলকেই এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। যে আবার যেন কখনোই হায়নার দল এসে এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। এই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। এই কথাটাই মনে রাখতে হবে। এই কথা মনে রেখেই ছাত্রলীগ নিজেদের সুসংগঠিত রাখবে। কারণ এই ছাত্র রাজনীতি থেকেই তো রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। এটাও মাথায় রাখতে হবে। কাজেই নিজেদের নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে তুলতে গেলে সেভাবেই কাজ করতে হবে। 

ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তোমরা সেভাবেই নিজেদের গড়ে তুলবে। একটা আদর্শবান কর্মী হিসেবে। খেয়াল রাখবা কোনো লোভের বশবর্তী হয়ে পা পিছলে পড়ে যেও না যেন। নিজেকে শক্ত করে, সততার পথে থেকে এগিয়ে যাবে, সংগঠনকে শক্তিশালী করবে। জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে কাজ করবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কাজ করবে। সেইভাবে নেতৃত্ব গড়ে উঠবে। সেই কথা বলেই তোমাদেরকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইরানের ‘দানবীয় ক্ষেপণাস্ত্রের’ সামনে উন্মুক্ত ইসরায়েলের ‘অ্যাকিলিস হিল’

ভারতীয় বিমানবন্দরে ১১ দিন ধরে পড়ে আছে ব্রিটিশ এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, ঘনাচ্ছে রহস্য

মা-মেয়ের ত্রিভুজ প্রেম, বিয়ে ও একটি খুন

পাকিস্তানের পরমাণু প্রকল্প ধ্বংসে ভারত-ইসরায়েলের যৌথ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় যেভাবে

খামেনি কোথায়, কেমন আছেন—উৎকণ্ঠিত ইরানিদের প্রশ্নের বন্যা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত