Ajker Patrika

মহান স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক ও সাভার প্রতিনিধি (ঢাকা) 
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৫, ২৩: ৪৬
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করা হলো। আজ ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে হাজারো মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করা হলো। আজ ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে হাজারো মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ বুধবার (২৬ মার্চ) ভোরে ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে প্রথমে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি। এর কিছুক্ষণ পর ৬টা ১৩ মিনিটে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

ভোরে রাষ্ট্রপতি স্মৃতিসৌধে পৌঁছালে সেখানে তাঁকে অভিবাদন জানান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাষ্ট্রপতি স্মৃতিসৌধ থেকে বের হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধে পৌঁছান। তাঁকেও অভিবাদন জানান উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদসহ তিন বাহিনীর প্রধানেরা উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় গার্ড অব অনার দেয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে সই করেন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান।

শ্রদ্ধা নিবেদনপর্ব শেষে উপস্থিত বিদেশি মিশনগুলোর কূটনীতিক ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা।

পরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীকের নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর শ্রদ্ধা জানান বিদেশি কূটনীতিকেরা।

রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ ভিআইপিরা স্মৃতিসৌধ থেকে চলে যাওয়ার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনসহ সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় স্মৃতিসৌধ। এরপর একে একে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও সাধারণ মানুষ জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির সূর্যসন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

রমজান মাস এবং অনেক প্রতিষ্ঠানে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় এদিন স্মৃতিসৌধে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি কম ছিল। সকাল ৯টার পর থেকে অনেকটা ফাঁকা হতে থাকে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের উপস্থিতি ছিল আগের মতোই।

বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি, গণফোরাম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাসদ, জাসদ, গণসংহতি আন্দোলন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে।

এ ছাড়া বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল ইউনিট, বাংলাদেশ পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে।

স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসা হাজারো মানুষের মধ্যে ছিল বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। শিশু থেকে বৃদ্ধ অনেকের হাতে লাল-সবুজের পতাকা দেখা যায়। কেউ আবার স্বাধীনতার লাল-সবুজ রঙের জামা পরে আসেন। তাঁদের মধ্যে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাওহীদ আহমেদ সালেহীন বলেন, ‘স্বপ্ন দেখি, যেখানে কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থাকবে না, ধর্মের নামে কোনো যুদ্ধ হবে না, কোনো অযথা রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ হবে না। প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে যেন স্বচ্ছতা থাকে, তথ্যের অবাধ প্রবাহ থাকে। জনগণ যেন সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে পারে। মানুষের জীবিকার মান যেন বাড়ে—এটাই চাই স্বাধীনতা দিবসে। সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে দেখতে চাই। যেখানে কারও ওপর কোনো অপশক্তির চাপ আসবে না।’

সংস্কারগুলোতে ঐকমত্যে না পৌঁছানোর উপায় নেই: রিজওয়ানা

স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, জনগণকে আস্থায় যদি আনতে হয়, তাহলে যে সংস্কারগুলো জনগণের ক্ষেত্রে আসে, সেগুলোর ক্ষেত্রে ঐকমত্যে না পৌঁছানোর কোনো উপায় নেই। এখন একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, বিভিন্ন সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য গড়া। সেটা অবশ্যই একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

একাত্তর ও চব্বিশ আলাদা কিছু নয়: নাহিদ ইসলাম

বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘৭১ ও ২৪ আলাদা কিছু নয়, বরং ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একাত্তরের চেতনা পুনরুজ্জীবিত হয়েছে।’

এর আগে মির্জা আব্বাস জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে বলেন, ‘অনেকে বলে দ্বিতীয় স্বাধীনতা। আসলে আজকে স্বাধীনতা দিবস প্রমাণ করে, দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে বাংলাদেশে কিছু নেই। যারা বলে, তারা আজকের স্বাধীনতা দিবসকে খাটো করতে চায়।’

একাত্তরের স্বাধীনতাকে রক্ষা করেছে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান: আসিফ মাহমুদ

অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘একাত্তরে দেশের জন্ম হয়েছে, আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি; রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা। আমরা মনে করি, চব্বিশ সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করেছে।’

ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন সম্ভব: প্রিন্স

নির্বাচনব্যবস্থা ভালো করার জন্য অবশ্যই সংস্কার করতে হবে। ভালোভাবে সংস্কারের মধ্য দিয়ে আগামী ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন করা সম্ভব বলে মনে করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর গণমাধ্যমে এসব কথা বলেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত