Ajker Patrika

ইশরাক নিয়ে মুখোমুখি বিএনপি-সরকার

  • মেয়র পদে ইশরাকের শপথ নিয়ে মতামত দিচ্ছে না আইন মন্ত্রণালয়।
  • বিএনপির সমালোচনায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা, এনসিপি নেতা।
  • স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও নগর ভবনে অচলাবস্থা।
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা। গতকাল ট্রাক ও দড়ি দিয়ে সড়ক বন্ধ করে অবস্থান নেন তাঁরা। এতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে গুলিস্তান-সদরঘাট সড়কে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা। গতকাল ট্রাক ও দড়ি দিয়ে সড়ক বন্ধ করে অবস্থান নেন তাঁরা। এতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে গুলিস্তান-সদরঘাট সড়কে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের পদে বসানো হবে কি না, এ নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে সরকার। ইশরাক মেয়র হিসেবে শপথ নিতে পারবেন কি না, সরকারের পক্ষ থেকে তা এখনো স্পষ্ট করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সরকারের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। দিন দিন জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি। ইশরাক সমর্থকদের লাগাতার অবরোধে নগর ভবনে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। সব সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী।

আইন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস অনুযায়ী ইশরাকের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত দেওয়ার সুযোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে একটি টিম কাজ করছে। এটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই হুট করে মতামত দেওয়া যাবে না। আমরা এ-সংক্রান্ত আইনগুলো পর্যালোচনা করছি।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দিয়েছিলেন ইশরাক হোসেন। ইশরাকের করা মামলার রায় ও নির্বাচন কমিশনের আপিল না করার বিষয়ে কোনো আইনি জটিলতা আছে কি না, তা জানতে চেয়ে গত শুক্রবার আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। স্থানীয় সরকার বিভাগের নগর উন্নয়ন অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মাহবুবা আইরিন বলেন, ‘আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের অপেক্ষায় রয়েছি। তাদের মতামত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সরকারি সফরে এখন বিদেশে আছেন। ২৬ মে তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, যেকোনো মতামতে আইন উপদেষ্টার স্বাক্ষর থাকে। ইশরাকের বিষয়ে মতামত দেওয়া হলেও আইন উপদেষ্টার দেশে ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

আইন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করাটা ভুল হয়েছে। এখন সরকার তাঁকে মেয়র হিসেবে শপথ নিয়ে পদে বসানোর মতো ভুল করতে চায় না। এ জন্য আইন মন্ত্রণালয় থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে কোনো মতামত দেওয়া হবে না।

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সর্বশেষ নির্বাচনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে গত ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল আগের ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন। ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।

ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হলেও শপথ না হওয়ায় মেয়রের পদে বসতে পারছেন না তিনি। সিটি করপোরেশনের মেয়রদের প্রধানমন্ত্রী (প্রধান উপদেষ্টা) শপথ পড়ান। ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট জারির আগে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেই মতামত না পেয়ে ইশরাকের নামে গেজেট প্রকাশ করে ইসি।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ওপর নির্ভর করবে ইশরাক শপথ নিতে পারবেন কি না। স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর যতক্ষণ না একমত হবে, ততক্ষণ তার শপথ হবে না।

মন্ত্রণালয়-নগর ভবনে অচলাবস্থা

সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবন আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস নগর ভবনে স্থানান্তর করা হয়। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং সমবায় বিভাগের সচিবদের দপ্তরও নগর ভবনে করা হয়। ইশরাকের সমর্থকেরা গত বুধবার থেকে নগর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও গত শনিবার থেকে নগর ভবনের সব গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। ফলে শনিবার থেকে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের দুটি ফ্লোরে গাদাগাদি-ঠাসাঠাসি করে অফিস করছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অতি জরুরি ছাড়া অন্য কোনো কাজ করতে পারছেন না তাঁরা।

সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, ১০৪ নম্বর কক্ষে অফিস করছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী। কর্মকর্তারা হাতে হাতে ফাইল এনে তাতে স্বাক্ষর করাচ্ছেন।

একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কে যে কার রুমে বসেছেন, বোঝা যাচ্ছে না। যে যেখানে জায়গা পাচ্ছেন, সেখানেই বসছেন। অনেকে জায়গা না পেয়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে বাসায় চলে গেছেন। আমাদের ফাইলপত্রসহ সবকিছু নগর ভবনে থাকায় কোনো কাজও করা যাচ্ছে না।’

স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নগর ভবনের ১৩ তলায় এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওই ভবনের ১২ তলায় অফিস করছিলেন। শনিবার থেকে তাঁরা সেখানে ঢুকতে পারেননি।

পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিবের রুটিন দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাজে সমস্যা হচ্ছে। যেগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, আমরা এখন শুধু সেই জরুরি কাজগুলো করতে পারছি। যেসব বিষয় উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপ করে করতে হচ্ছে, সেগুলো উপদেষ্টার বাংলোতে গিয়ে করছি।’

জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি, পাল্টাপাল্টি অবস্থান

মেয়র হিসেবে ইশরাকের শপথ নিয়ে রাখঢাক না রেখে বক্তব্য দিয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বিএনপি নেতা ইশরাকও পাল্টা জবাব দিয়েছেন।

গায়ের জোরে নগর ভবন বন্ধ করে বিএনপি আন্দোলন করছে মন্তব্য করে আসিফ মাহমুদ গতকাল ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ না হওয়ার পেছনে ১০টি জটিলতার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। এসব জটিলতা নিরসন না করা পর্যন্ত শপথ গ্রহণ সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা।

আসিফের সুরে কথা বলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। ইশরাকের উদ্দেশে তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যে নির্বাচন অবৈধ, সেই নির্বাচনের মেয়র আমি কীভাবে হতে চাই? সেটা কীভাবে বৈধ হয়? তাহলে তো সেই নির্বাচনকে আমি বৈধতা দিয়ে দিচ্ছি।’

অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েক ব্যক্তি প্রসঙ্গে ইশরাক বলেছেন, ‘সর্বশক্তি দিয়ে এরা ঢাকায় বিএনপির মেয়র আটকানোর চেষ্টার মধ্য দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কী ভূমিকা পালন করবে, তা ক্লিনকাট বুঝিয়ে দিল।’ যাঁরা নিরপেক্ষতা বিসর্জন দিয়ে একটি দলের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন, অবিলম্বে তাঁদের পদত্যাগ দাবি করেছেন তিনি।

গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে ইশরাক হোসেন লিখেছেন, ‘মেয়র ফেওর কিছু না। অন্তর্বর্তী সরকারের কতিপয় ব্যক্তির অন্তরে ক্ষমতার লোভ ও এটি চিরস্থায়ী করার কুৎসিত সত্যটা বের করে আনাটাই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য। অনেক সমালোচনা মাথা পেতে নিয়েছি, পিতা-মাতা তুলে গালিগালাজও চুপ করে সহ‍্য করে গিয়েছি। কারণ একটাই, এদের চেহারা উন্মোচন করতে হবে গণতন্ত্রের স্বার্থে, জনগণের ভোটের অধিকারের স্বার্থে। কোনো কথা চলবে না, যারা নিরপেক্ষতা শুধু বিসর্জন দিয়েছে, তা নয়; বরং একটি দলের প্রতিনিধির কাজ করেছে, তাদের অবিলম্বে পদত‍্যাগ করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমরা প্রজাতন্ত্রের এমন চাকর যে মালিককে জেলে ভরে দিতে পারি’

দিনাজপুরে নিহত মাইক্রোবাস-আরোহীদের সবাই সরকারি কর্মকর্তা

ফরিদপুরে গাড়ির চাকায় ছিন্নভিন্ন অজ্ঞাত ব্যক্তি, অক্ষত শুধু পায়ের জুতা

ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া সেই মতিউর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন

নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারে বিব্রত ফারুকী, যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত