Ajker Patrika

হেঁটে ৬ মহাদেশ ভ্রমণ

মোস্তাফিজ মিঠু, ঢাকা
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৭: ৪৯
হেঁটে ৬ মহাদেশ ভ্রমণ

আমাদের অনেকেরই তো ইচ্ছা জাগে পৃথিবীর কোনায় কোনায় গিয়ে এর রূপ দেখার। পাহাড়, সাগর থেকে মহাসাগর, মরুভূমির ধু ধু তেপান্তর অথবা হাজার বছরের সভ্যতাকে একবার দেখে চোখ জুড়াতে কে না চায়। কারও কাছে এটি কেবল স্বপ্ন, কেউ আবার তা পূরণ করে গড়েছেন বিশ্ব রেকর্ড। তেমনই একজন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস রাজ্যের তরুণ টম টারসিশ।

প্রায় ৯ বছর বিশ্বভ্রমণের ইচ্ছা বয়ে চলছিলেন টম। আর সেটি হেঁটে। ২৬তম জন্মদিনের ঠিক দুই দিন আগে, ২০১৫ সালের ২ এপ্রিল শেষ হয় তাঁর অপেক্ষার পালা। একা বেরিয়ে পড়েন বিশ্বভ্রমণে। সঙ্গে নেন একটা স্লিপিং ব্যাগ, ল্যাপটপ, ডিএসএলআর, হাঁটার জন্য মজবুত একটি লাঠি ও প্লাস্টিকের বাক্স।

টমের ভ্রমণের নেশা কিশোর বয়স থেকেই। একসময় হেঁটে ঘুরে বেড়াতেন প্রেমিকাকে নিয়ে। ইচ্ছা ছিল দুজনে ঘুরে দেখবেন পুরো পৃথিবী। কিন্তু ২০০৬ সালে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় চোখের সামনে প্রেমিকাকে চলে যেতে দেখেন টম।

এরপরই বিষণ্নতা ঘিরে ধরে ১৭ বছর বয়সী এই কিশোরকে। মনে হতে থাকে জীবন কত ঠুনকো। তাই চলে যাওয়ার আগে পৃথিবীটাকে হেঁটে দেখতে চান তিনি। কিন্তু এর জন্য চাই প্রস্তুতি এবং অর্থ। কলেজে পড়ার সময় চাকরি করে কিছু টাকার জোগাড় করেন টম। এর সঙ্গে খুঁজতে থাকেন একজন পৃষ্ঠপোষক। যিনি টমের বিশ্বভ্রমণে অর্থ দান করবেন। এগিয়ে এলেন নিউ জার্সির এক উদ্যোক্তা। টমের বিশ্বভ্রমণের অবশিষ্ট অর্থের জোগান দিলেন তিনি।

ভ্রমণ শুরুর দুই বছর আগে নিজের রোডম্যাপ তৈরি করে রাখেন টম। এতে সময় লাগত সাড়ে পাঁচ বছর। কিন্তু তা গড়ায় সাত বছরে। ছয়টি মহাদেশের ৩৮ দেশে প্রায় ৪৮ হাজার কিলোমিটার হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন টম।

ঘর থেকে একা বের হলেও টেক্সাসের পশু আশ্রয় কেন্দ্র থেকে দুই মাস বয়সী কুকুর সাভান্নাকে সঙ্গী করে বিশ্বভ্রমণের যাত্রা শুরু করেন টম। প্রথম কয়েক মাস সাভান্নাকে কাঁধে চাপিয়েই হেঁটেছেন। একটু বড় হলে সাভান্নাও হয়ে ওঠে টমের মতো পুরোদস্তুর অভিযাত্রী।

নিউ জার্সি থেকে টমের প্রথম গন্তব্য পানামা। সেখান থেকে পাড়ি দেন ডারিয়েন গ্যাপ। প্রথম দুই বছর টম ও সাভান্না ঘুরে বেড়ান বোগোটা, কলম্বিয়া, মন্টেভিডিও, উরুগুয়ে ও অ্যান্টার্কটিকা। সেখান থেকে নতুন গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করেন টম।

আমেরিকা পেরিয়ে প্রবেশ করেন ইউরোপে। সেখানে টমের ভ্রমণ শুরু হয় আয়ারল্যান্ড থেকে। পরের গন্তব্য ছিল স্কটল্যান্ড। তবে তা আর হলো না। বাদ সাধল অসুস্থতা। টম ঠিক করলেন, আপাতত বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু এতটা পথ পেরিয়ে এসে ফেরা কি আদতে হয়! টমেরও হয়নি। অসুস্থ শরীরে স্কটল্যান্ড থেকে তিনি লন্ডনের উদ্দেশে পাড়ি দেন। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে আবারও যাত্রা শুরু করেন। টম তাঁর পুরো যাত্রার বিভিন্ন সময়ের ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করতেন।

এ ছাড়া ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ওয়াক’ শিরোনামে ব্লগ লিখতেন, যা পরে বই আকারে প্রকাশিত হয়। যুক্তরাজ্য থেকে টম ও সাভান্নার পরবর্তী গন্তব্য ছিল ডেনমার্ক। সেখানে পৌঁছে আবারও ছবি পোস্ট ও লেখালেখি শুরু করেন। এরপর একে একে ঘুরে বেড়ান ইতালি, স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, আলবেনিয়া ও গ্রিস। গ্রিস থেকে পাড়ি দেন তুরস্কে। সেখানে একটি রেকর্ড গড়েন টম।

তুরস্কের বসফরাস সেতুতে কারও হাঁটার অনুমতি নেই। স্থানীয় প্রশাসনের থেকে সেই অনুমতি আদায় করেন টম। সেতু দিয়ে হেঁটে গ্রিস থেকে তুরস্কে যান তিনি। টমই প্রথম ব্যক্তি, যিনি এই অসাধ্য সাধন করেন।

তুরস্ক থেকে টমের গন্তব্য ছিল জর্জিয়া। সেখান থেকে ককেশাস পর্বতমালা। টমের এই দীর্ঘ যাত্রায় বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যেমন পড়তে হয়েছে, তেমন অনেক দেশের আতিথেয়তা মুগ্ধ করেছে তাঁকে। আজারবাইজান কিংবা কাজাখস্তানের আপ্যায়নে রীতিমতো অবাক হয়েছেন টম। ভ্রমণের শেষের দিকে করোনার কারণে আজারবাইজানে আটকে থাকতে হয় টমকে। সেই সময় চীন, ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে প্রবেশাধিকারও পাননি তিনি। এরপর উড়ে যান অস্ট্রেলিয়ায়। আর সেখানকার পাট চুকিয়ে সাত বছর পর ঘরে ফেরেন টম ও তাঁর সঙ্গী সাভান্না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত