শাড়ি বাঙালি নারীর ঐতিহ্যবাহী পোশাক। কিন্তু এখন যেভাবে শাড়ি পরা হয়, একটা সময় সেভাবে পরা হতো না। গত এক শ বছরে শাড়ি পরা এবং এর নকশায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বাঙালি নারীর এখন যেভাবে শাড়ি পরে অতীতে বিষয়টি তেমন ছিল না। একটা সময় বাঙালি নারীরা কেবল একখানা শাড়িই গায়ে জড়াত। অভিজাত বাঙালি নারীরা ঘরের বাইরে বের হয়নি তখনো। ফলে ‘বাইরের পোশাক’ বলে তাদের আসলে কিছু ছিল না। মুসলমানি ঘরানায় কিছু পোশাকের চল শুরু হলেও তৎকালীন হিন্দু সমাজ তা গ্রহণ করতে নারাজ ছিল শাস্ত্র–সংস্কারের কারণে।
জানিয়ে রাখা ভালো, সে সময় হিন্দু পরিবারগুলোয় বিয়ে বা কোনো শুভ কাজে সেলাই করা জামাকাপড় পরার চল ছিল না। সেগুলো শুভ নয় বিবেচনায়। নারীদের জন্য শাড়ি থাকলেও ব্লাউজের ব্যবহার তখনো আসেনি বলে বোঝা যায়। ধীরে ধীরে অনেক নারী এমনভাবে গুছিয়ে শাড়ি পরতে শুরু করলেন যাতে সেলাই করা কাপড়ের অভাব পূরণ হয়।
যে কথা না বললেই নয়, আধুনিক বাংলার নন্দনতত্ত্ব ও সৌন্দর্যবোধের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশই এসেছে ঠাকুরবাড়ি থেকে। শাড়ি পরার আধুনিক ধরনের কথা বলতে গেলে সে পরিবারের বউ জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর কথা বলতেই হয়। তিনি বাংলার নারীদের পোশাকে বিশেষ করে শাড়ি পরার ধরনে এক বিশাল পরিবর্তন আনেন। বাঙালিদের সুরুচি পূর্ণরূপে শাড়ি পরার চলের শুরুটা তিনিই করেন।
একটু পেছন থেকে শুরু করি। জ্ঞানদানন্দিনী দেবী ছিলেন ঠাকুরবাড়ির মেজো বউ অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেজ দাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী। মাত্র আট বছর বয়সে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের প্রথম ভারতীয় সদস্য সত্যেন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় জ্ঞানদানন্দিনীর। সেকালে বাড়ির ছেলেরা কর্মসূত্রে বাইরে বসবাস করলেও তাদের স্ত্রীরা থেকে যেতেন শ্বশুরবাড়িতেই। এ প্রথা ভেঙেছিলেন ঠাকুরবাড়ির এই মেজো বউটি। সরকারিভাবে সত্যেন্দ্রনাথের কর্মস্থল যখন মহারাষ্ট্র ঠিক হয়, তখন তিনি জ্ঞানদান্দিনীকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন পরিবারের কাছে।
চারপাশে আপত্তির গুঞ্জন উঠলেও দেবেন্দ্রনাথ অসম্মত হননি। এই অনুমতিতে সত্যেন্দ্রনাথ–জ্ঞানদা দুজনই দারুণ খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু জ্ঞানদানন্দিনী ঘরের বাইরে যাবেন কী পরে? এত দিন তিনি ঘরেই ছিলেন। পোশাক নিয়েও অতটা ভাবতে হয়নি। স্নান সেরে কেবল একটা শাড়ি জড়িয়ে নিলেই চলত। তবে শীত এলে এই শাড়ির ওপর একটা চাদর জড়িয়ে নিতেন। কিন্তু ভদ্রস্থও দেখায় না বলে সে পোশাকে বাইরে যাওয়া যায় না।
তখন ফরাসি এক দোকানে জ্ঞানদানন্দিনীর জন্য অর্ডার দিয়ে একটি রুচিশীল ওরিয়েন্টাল পোশাক আনার ব্যবস্থা করা হয়। এক কথায় যা জবরজং আর বড্ড অস্বস্তিকর ঠেকেছিল জ্ঞানদানন্দিনী কাছে। পরতেও বেশ খাটুনি হয়েছিল বৈকি! প্রথমবার শাড়ি ছেড়ে এমন পোশাক পরায় বিব্রত অবস্থায় পড়েছিলেন বাড়ির মেজো বউ। তখন থেকেই তিনি ভাবতে শুরু করেন বাঙালি নারীর রুচিশীল ভদ্র পোশাক কী হতে পারে, তা নিয়ে।
বোম্বাই, মানে আজকের মুম্বাই, গিয়ে জ্ঞানদানন্দিনী জবরজং ওরিয়েন্টাল পোশাক আলমারি বন্দী করে রাখেন। তিনি পারসি নারীদের গুছিয়ে শাড়ি পরার ধরনে আকৃষ্ট হন। সে ধরনটিকে জ্ঞানদা সাদরে গ্রহণও করেন। তিনি পুরোপুরিই যে পারসি নারীদের মতো করে শাড়ি পরতেন, তা নয়। তার সঙ্গে নিজের সৃজনশীলতা যোগ করে এক অভিনব শাড়ি পরার ধরনের প্রবর্তন করেন তিনি। ব্যস, এবার হলো তাঁর স্বস্তি ও রুচির মেলবন্ধন। শাড়ি পরার এ নতুন ধরনে শাড়ির সঙ্গে পরা হতো বডিস, পেটিকোট, জুতা ও মোজা। এই নতুন স্টাইলে শাড়ি পরে যখন তিনি বাড়ি ফেরেন তখন বাড়িসুদ্ধ তো বটেই, আশপাশের মেয়েরাও তা গ্রহণ করেন সাদরে।
বাড়ির বউ বোম্বাই মানে মুম্বাই থেকে এ ধাঁচে শাড়ি পরে এসেছিলেন বলে ঠাকুরবাড়িতে এই স্টাইলের নাম দেওয়া হলো ‘বোম্বাই দস্তুর’। বোম্বাই থেকে ফিরে জ্ঞানদানন্দিনী ১৮৭১ সালে নতুন প্রবর্তিত পোশাকটির কথা ‘রাসবোধিনী’ পত্রিকায় প্রকাশ করেন। অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবারের নারীরা আগ্রহের সঙ্গে তাঁর কাছে এসেছিলেন সেই শাড়ি পরা শিখতে। শাড়িতে কুঁচির যোগই শুধু নয়, শাড়ির সঙ্গে পেটিকোট, ব্লাউজ, সেমিজ ও জ্যাকেট পরারও প্রচলন শুরু করেন জ্ঞানদানন্দিনী।
তবে বোম্বাই দস্তুর স্টাইলের সঙ্গে ছোট্ট একটি অনুষঙ্গ যোগ করে শাড়ি পরার ধরনকে আরও আকর্ষণীয় করেছিলেন কুচবিহারের মহারানি সুনীতি দেবী। তিনি শাড়ির পেছনে ঝোলানো অংশটি সামনে এনে কাঁধের ওপর সুন্দর করে গুছিয়ে ব্রুজ লাগানো শুরু করলেন। তবে জ্ঞানদান্দিনী শাড়ির আঁচল যে কাঁধের বা পাশে রাখার প্রচলন শুরু করেন, তা অব্যাহত রয়েছে এখন পর্যন্ত।
তথ্যসূত্র: চিত্রা দেব, ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল, দ্য ভয়েস অব ফ্যাশন ও বাংলাপিডিয়া।
শাড়ি বাঙালি নারীর ঐতিহ্যবাহী পোশাক। কিন্তু এখন যেভাবে শাড়ি পরা হয়, একটা সময় সেভাবে পরা হতো না। গত এক শ বছরে শাড়ি পরা এবং এর নকশায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বাঙালি নারীর এখন যেভাবে শাড়ি পরে অতীতে বিষয়টি তেমন ছিল না। একটা সময় বাঙালি নারীরা কেবল একখানা শাড়িই গায়ে জড়াত। অভিজাত বাঙালি নারীরা ঘরের বাইরে বের হয়নি তখনো। ফলে ‘বাইরের পোশাক’ বলে তাদের আসলে কিছু ছিল না। মুসলমানি ঘরানায় কিছু পোশাকের চল শুরু হলেও তৎকালীন হিন্দু সমাজ তা গ্রহণ করতে নারাজ ছিল শাস্ত্র–সংস্কারের কারণে।
জানিয়ে রাখা ভালো, সে সময় হিন্দু পরিবারগুলোয় বিয়ে বা কোনো শুভ কাজে সেলাই করা জামাকাপড় পরার চল ছিল না। সেগুলো শুভ নয় বিবেচনায়। নারীদের জন্য শাড়ি থাকলেও ব্লাউজের ব্যবহার তখনো আসেনি বলে বোঝা যায়। ধীরে ধীরে অনেক নারী এমনভাবে গুছিয়ে শাড়ি পরতে শুরু করলেন যাতে সেলাই করা কাপড়ের অভাব পূরণ হয়।
যে কথা না বললেই নয়, আধুনিক বাংলার নন্দনতত্ত্ব ও সৌন্দর্যবোধের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশই এসেছে ঠাকুরবাড়ি থেকে। শাড়ি পরার আধুনিক ধরনের কথা বলতে গেলে সে পরিবারের বউ জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর কথা বলতেই হয়। তিনি বাংলার নারীদের পোশাকে বিশেষ করে শাড়ি পরার ধরনে এক বিশাল পরিবর্তন আনেন। বাঙালিদের সুরুচি পূর্ণরূপে শাড়ি পরার চলের শুরুটা তিনিই করেন।
একটু পেছন থেকে শুরু করি। জ্ঞানদানন্দিনী দেবী ছিলেন ঠাকুরবাড়ির মেজো বউ অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেজ দাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী। মাত্র আট বছর বয়সে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের প্রথম ভারতীয় সদস্য সত্যেন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় জ্ঞানদানন্দিনীর। সেকালে বাড়ির ছেলেরা কর্মসূত্রে বাইরে বসবাস করলেও তাদের স্ত্রীরা থেকে যেতেন শ্বশুরবাড়িতেই। এ প্রথা ভেঙেছিলেন ঠাকুরবাড়ির এই মেজো বউটি। সরকারিভাবে সত্যেন্দ্রনাথের কর্মস্থল যখন মহারাষ্ট্র ঠিক হয়, তখন তিনি জ্ঞানদান্দিনীকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন পরিবারের কাছে।
চারপাশে আপত্তির গুঞ্জন উঠলেও দেবেন্দ্রনাথ অসম্মত হননি। এই অনুমতিতে সত্যেন্দ্রনাথ–জ্ঞানদা দুজনই দারুণ খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু জ্ঞানদানন্দিনী ঘরের বাইরে যাবেন কী পরে? এত দিন তিনি ঘরেই ছিলেন। পোশাক নিয়েও অতটা ভাবতে হয়নি। স্নান সেরে কেবল একটা শাড়ি জড়িয়ে নিলেই চলত। তবে শীত এলে এই শাড়ির ওপর একটা চাদর জড়িয়ে নিতেন। কিন্তু ভদ্রস্থও দেখায় না বলে সে পোশাকে বাইরে যাওয়া যায় না।
তখন ফরাসি এক দোকানে জ্ঞানদানন্দিনীর জন্য অর্ডার দিয়ে একটি রুচিশীল ওরিয়েন্টাল পোশাক আনার ব্যবস্থা করা হয়। এক কথায় যা জবরজং আর বড্ড অস্বস্তিকর ঠেকেছিল জ্ঞানদানন্দিনী কাছে। পরতেও বেশ খাটুনি হয়েছিল বৈকি! প্রথমবার শাড়ি ছেড়ে এমন পোশাক পরায় বিব্রত অবস্থায় পড়েছিলেন বাড়ির মেজো বউ। তখন থেকেই তিনি ভাবতে শুরু করেন বাঙালি নারীর রুচিশীল ভদ্র পোশাক কী হতে পারে, তা নিয়ে।
বোম্বাই, মানে আজকের মুম্বাই, গিয়ে জ্ঞানদানন্দিনী জবরজং ওরিয়েন্টাল পোশাক আলমারি বন্দী করে রাখেন। তিনি পারসি নারীদের গুছিয়ে শাড়ি পরার ধরনে আকৃষ্ট হন। সে ধরনটিকে জ্ঞানদা সাদরে গ্রহণও করেন। তিনি পুরোপুরিই যে পারসি নারীদের মতো করে শাড়ি পরতেন, তা নয়। তার সঙ্গে নিজের সৃজনশীলতা যোগ করে এক অভিনব শাড়ি পরার ধরনের প্রবর্তন করেন তিনি। ব্যস, এবার হলো তাঁর স্বস্তি ও রুচির মেলবন্ধন। শাড়ি পরার এ নতুন ধরনে শাড়ির সঙ্গে পরা হতো বডিস, পেটিকোট, জুতা ও মোজা। এই নতুন স্টাইলে শাড়ি পরে যখন তিনি বাড়ি ফেরেন তখন বাড়িসুদ্ধ তো বটেই, আশপাশের মেয়েরাও তা গ্রহণ করেন সাদরে।
বাড়ির বউ বোম্বাই মানে মুম্বাই থেকে এ ধাঁচে শাড়ি পরে এসেছিলেন বলে ঠাকুরবাড়িতে এই স্টাইলের নাম দেওয়া হলো ‘বোম্বাই দস্তুর’। বোম্বাই থেকে ফিরে জ্ঞানদানন্দিনী ১৮৭১ সালে নতুন প্রবর্তিত পোশাকটির কথা ‘রাসবোধিনী’ পত্রিকায় প্রকাশ করেন। অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবারের নারীরা আগ্রহের সঙ্গে তাঁর কাছে এসেছিলেন সেই শাড়ি পরা শিখতে। শাড়িতে কুঁচির যোগই শুধু নয়, শাড়ির সঙ্গে পেটিকোট, ব্লাউজ, সেমিজ ও জ্যাকেট পরারও প্রচলন শুরু করেন জ্ঞানদানন্দিনী।
তবে বোম্বাই দস্তুর স্টাইলের সঙ্গে ছোট্ট একটি অনুষঙ্গ যোগ করে শাড়ি পরার ধরনকে আরও আকর্ষণীয় করেছিলেন কুচবিহারের মহারানি সুনীতি দেবী। তিনি শাড়ির পেছনে ঝোলানো অংশটি সামনে এনে কাঁধের ওপর সুন্দর করে গুছিয়ে ব্রুজ লাগানো শুরু করলেন। তবে জ্ঞানদান্দিনী শাড়ির আঁচল যে কাঁধের বা পাশে রাখার প্রচলন শুরু করেন, তা অব্যাহত রয়েছে এখন পর্যন্ত।
তথ্যসূত্র: চিত্রা দেব, ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল, দ্য ভয়েস অব ফ্যাশন ও বাংলাপিডিয়া।
ইতস্তত করে হলেও স্বীকার করতেই হয়, এখনো অনেকের কাছে সৌন্দর্য মানে হলো ফরসা আর নিখুঁত ত্বক। প্রযুক্তির ঘনঘটা আর নারী স্বাধীনতার এ সময়ে এসেও পাত্রপক্ষ কনের ফরসা রঙেই বেশি মজে। ফলে নারীদের মধ্য়েও ছোটবেলা থেকে গায়ের রং উজ্জ্বল করে তোলার কসরত চলতে থাকে।
৪ ঘণ্টা আগেবিটরুটের সালাদ আর ভাজি তো সব সময় খাওয়া হয়। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ ইদানীং বিটরুটের জুসও পান করছেন। বেশ ট্রেন্ডে রয়েছে এই জুস। তবে চাইলে বিটরুট দিয়ে ভিন্ন স্বাদের স্ন্যাকস ও ডেজার্ট তৈরি করা যায়।
৪ ঘণ্টা আগেএকজন স্বাস্থ্যবতী নারী যদি বলেন, ‘আমার যা পরতে ভালো লাগে, তা-ই পরব।’ তাহলে আশপাশে মুখ টিপে হাসার মতো মানুষের অভাব হয় না। এখন কথা হচ্ছে, প্লাস সাইজের কোনো মানুষ কি ফ্যাশন নিয়ে ভাববেন না?
৪ ঘণ্টা আগেকারও পছন্দ হাতলওয়ালা চিরুনি আবার কারও পছন্দ চিকন দাঁতের। একসময় হাতির দাঁতের চিরুনি তৈরি হতো। শঙ্খ দিয়ে তৈরি চিরুনির কথাও শোনা যায়। তবে সেসব দিন গত হয়েছে। এখন বেশির ভাগ চিরুনি তৈরি হয় প্লাস্টিক থেকে। কখনো দেখা যায় কাঠের চিরুনিও।
৪ ঘণ্টা আগে