Ajker Patrika

ব্যালেরিনাদের ছবি তুলে যুদ্ধ ভুলে থাকতে চান নিকা

ডয়চে ভেলে
কিয়েভের এক স্টুডিওতে ব্যালেরিনাদের ছবি তোলেন নিকা। ছবি: ডয়চে ভেলে
কিয়েভের এক স্টুডিওতে ব্যালেরিনাদের ছবি তোলেন নিকা। ছবি: ডয়চে ভেলে

ইউক্রেনের আলোকচিত্রী নিকা রিতচেল ক্যামেরায় বন্দি করছেন ব্যালেরিনাদের ছবি। যুদ্ধের নৃশংস বাস্তবতা থেকে কিছুটা দূরে থাকার উপায় হিসেবে এ কাজকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা তিন লাখেরও বেশি।

রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রায় তিন বছর পর ইউক্রেনজুড়ে ছড়িয়ে আছে যুদ্ধের চিহ্ন। প্রতিদিনই যুদ্ধের বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছেন নিকা। তবে ক্যামেরার লেন্সে তিনি রুখে দাঁড়াতে চান ওই নির্মমতাকে।

নিকা বলছিলেন, ‘আমার তোলা ছবিগুলো জীবনকে ধারণ করে—তরুণ, সুন্দর মানুষদের সঙ্গে সম্পর্কিত। ছবিগুলো কখনও আনন্দদায়ক, কখনও বিষণ্ণ, কিন্তু সব সময়ই জীবনের কথা বলে।’

কিয়েভের এক স্টুডিওতে তিনি নিয়মিত ব্যালেরিনাদের ছবি তোলেন। যুদ্ধের আগে থেকে বিষয়টি তাঁকে আকর্ষণ করত। ২০১৮ সালে প্রথম একজন ব্যালেরিনার ছবি তুলে মুগ্ধ হয়ে যান নিকা, তারপর থেকে থেমে থাকেননি—যুদ্ধের মধ্যেও ধরে রেখেছেন এই শিল্পচর্চা।

‘এই ছবিগুলো প্রমাণ করে, আমরা এখনো বেঁচে আছি,’ বলেন নিকা। ‘২০২৩ সালের মে মাসে প্রতিদিন বোমা পড়ছিল। সেই সময়েও আমরা এই স্টুডিওতে কাজ করতাম। জানালার বাইরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চললেও কাজ থামাইনি—কারণ, কেউ আমাদের হারাতে পারবে না।’

যুদ্ধ শুরু হলে অনেকে দেশ ছেড়ে পালালেও নিকা তা ভাবেননি। বরং তিনি ইউক্রেনের পতাকার রং নীল ও হলুদকে ভিত্তি করে একটি আলোকচিত্র সিরিজ শুরু করেন। যদিও নিকা মূলত পেশাদার আলোকচিত্রী, এই বিশেষ সিরিজ থেকে তিনি কোনো আয় করেন না।

তিনি বলেন, ‘এই সিরিজের প্রতিটি ছবিই একটি ভালো উদ্দেশ্যে তোলা। সম্ভাব্য ক্রেতাদের বলি—ছবির পুরো মূল্যই একটি অলাভজনক সংস্থায় যাবে। তবে কোন সংস্থায় যাবে, সেটা ছবির মডেলই নির্ধারণ করেন।’

বর্তমানে কিয়েভ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ হলেও রুশ হামলার আশঙ্কা এখনো পুরোপুরি কাটেনি। মাঝেমধ্যেই রাতের বেলা বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়।

নিকা বলেন, ‘আমরা রাত জেগে টেলিগ্রামে খবর দেখি—ড্রোন বা মিসাইল আসছে কি না! সব সময়ই মনে হয়, যেকোনো সময় কিছু একটা ঘটে যেতে পারে। আমরা, আমাদের বন্ধু ও পরিবারের সবাই একধরনের আতঙ্কে থাকি।’

তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পূর্ব ইউক্রেন। লাখ লাখ সামরিক ও বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

নিকা বলেন, ‘এটা আমাদের সবার জন্য এক অসীম ট্র্যাজেডি। কিন্তু প্রতিদিন শোক করে কাটানো যায় না। যুদ্ধ তিন বছর ধরে চলছে। আপনি তো আর সোফায় বসে তিন বছর ধরে কাঁদতে পারেন না। এই ছবিগুলোর মধ্য দিয়ে আমি নিজেকে যুদ্ধের মূল্যের কথা মনে করিয়ে দিই।’

তাই যুদ্ধের মধ্যেও স্টুডিওতে ছবি তোলা চালিয়ে যাচ্ছেন নিকা। কারণ, জীবন থেমে থাকে না। আর কোথাও না কোথাও, একটুখানি হলেও আশার আলো থাকে।

নিকা দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘আমি সত্যিই বিশ্বাস করি, একদিন আমরা স্বাধীন ইউক্রেনে বাস করব—এটা শুধু কথার কথা হবে না। আমরা আমাদের প্রতিবেশীর ছায়া থেকে মুক্ত হব।’

নিকার আলোকচিত্র শুধু শিল্প নয়, বরং যুদ্ধবিধ্বস্ত এক জাতির আশা ও সাহসের প্রতীক হয়ে উঠেছে। শান্তিপূর্ণ, স্বাধীন ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনছেন তিনি—নিজের ভেতরে ও অন্যদের মনে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত