Ajker Patrika

ভবিষ্যৎ চাকরির নতুন উৎস ‘স্টার্টআপ’

চাকরি ডেস্ক 
মীর হাসিব মাহমুদ, চিফ বিজনেস অফিসার, গোইয়ারা লিমিটেড এবং স্টার্টআপ পরামর্শক
মীর হাসিব মাহমুদ, চিফ বিজনেস অফিসার, গোইয়ারা লিমিটেড এবং স্টার্টআপ পরামর্শক

বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তির ঢেউয়ে ভাসছে। বাংলাদেশও সেই স্রোতের অন্যতম একটি অংশ। প্রযুক্তিনির্ভর এ বিশ্বে তরুণদের হাতে গড়া স্টার্টআপ আজ আর বিলাসিতা নয়, বরং সময়ের দাবি। কিন্তু এই যাত্রা শুরু হবে কখন, কীভাবে আর কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে—নির্দিষ্ট সমস্যা চিহ্নিত করার চোখ এবং সমাধানের সাহস। যাদের এমন দৃষ্টি রয়েছে, সময় এখন তাদেরই।

দেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে আজ স্টার্টআপ একটি আশাবাদের নাম। যদিও স্টার্টআপের ধারণা আমাদের দেশে তুলনামূলক নতুন, তবুও গত এক দশকে এর উত্থান বিস্ময়কর। আজ রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে অসংখ্য তরুণ উদ্যোক্তা নিজেদের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে আসছেন—কেউ প্রযুক্তিতে, কেউ কৃষিতে, কেউবা স্বাস্থ্যসেবায়।

কখন শুরু করবেন

স্টার্টআপ শুরু করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট বয়স, ডিগ্রি বা বড় পুঁজি প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় সঠিক সময় বোঝার অনুভূতি এবং সমস্যা নির্ণয়ের দৃষ্টিভঙ্গি। যখন কোনো সমস্যা চোখে পড়ে এবং মনে হয়—‘এর সমাধান চাই, আর সেটি আমি দিতে পারি’—তখনই একজন উদ্যোক্তার জন্ম হয়। সমস্যা যত বাস্তব, সমাধানের চাহিদাও তত বেশি।

সহপ্রতিষ্ঠাতার প্রয়োজনীয়তা

এই পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা রাখে সহপ্রতিষ্ঠাতা বা কো-ফাউন্ডার। স্টার্টআপের যাত্রা কঠিন, দীর্ঘ এবং অনিশ্চিত। এই পথে একা এগোনো প্রায় অসম্ভব।সফল স্টার্টআপগুলোর ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের পেছনে ছিল শক্তিশালী দল এবং পরিপূরক দক্ষতার সহপ্রতিষ্ঠাতা। যেমন, একজন ব্যবসায়িক কৌশলে দক্ষ, অন্যজন প্রযুক্তি জানেন—এ ধরনের পরিপূরক জুটি স্টার্টআপের সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দেশের পাঠাও, শপআপ, শেফটেক বা সহজের মতো স্টার্টআপগুলোর দ্রুত বৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে—কারণ তাদের প্রতিষ্ঠাতা দল একসঙ্গে সমস্যা বুঝেছে, সমাধান এনেছে এবং ঝুঁকি ভাগ করে নিয়েছে। তাই সহপ্রতিষ্ঠাতা নির্বাচনের সময় আবেগ নয়, যুক্তি দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।

বিনিয়োগ সংগ্রহ

স্টার্টআপ শুরুর পরপরই আসে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ—বিনিয়োগ। দেশের প্রেক্ষাপটে একে বড় বাধা বলা যায়, কারণ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ এখনো সীমিত।

তবে আশার দিক হলো, গত কয়েক বছরে এঞ্জেল ইনভেস্টর ও স্টার্টআপ ফান্ডিংয়ের নানা পথ উন্মুক্ত হয়েছে। সরকারের ‘স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড’ প্ল্যাটফর্ম ইতিমধ্যে তরুণ উদ্যোক্তাদের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ দিয়েছে।

বিনিয়োগ পেতে করণীয়

বিনিয়োগ পেতে হলে কেবল ধারণা নয়, প্রমাণও দেখাতে হয়। প্রাথমিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা, বাজার প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা এবং ব্যবসার মডেল—সবকিছু বিনিয়োগকারীর সামনে স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হয়।

বিনিয়োগকারীরা কেবল আইডিয়ার প্রেমে পড়ে না; তারা পড়ে আইডিয়ার পেছনের পরিকল্পনা, দলের দৃঢ়তা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার প্রেমে। তাই একজন উদ্যোক্তার হতে হয় একসঙ্গে যুক্তিবান, কৌশলী ও স্বপ্নদ্রষ্টা।

সঠিক উপস্থাপনা

স্টার্টআপের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো পিচিং। একটি আইডিয়া তখনই মূল্য পায়, যখন সেটিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা যায়।

পিচ মানে কেবল তথ্য নয়, এটি একটি গল্প বলা—যেখানে বোঝানো হয় সমস্যাটি কতটা বাস্তব, সমাধানটি কতটা কার্যকর, এবং কীভাবে এটি মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই গল্প বিশ্বাসযোগ্যভাবে বলতে পারাই একজন উদ্যোক্তার বড় সক্ষমতা।

টিকে থাকতে যা করবেন

একটি সফল স্টার্টআপের জন্য শুধু শুরু করাই যথেষ্ট নয়—টিকে থাকাই আসল পরীক্ষা। বিশ্বব্যাপী প্রথম তিন বছরে প্রায় ৭০% স্টার্টআপ ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটও আলাদা নয়।

এখানে টিকে থাকার মূল কৌশল হলো গ্রাহকের কথা শোনা এবং তথ্যনির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণ। ব্যবহারকারীর প্রয়োজনীয়তা বোঝা, দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখানো এবং প্রয়োজনে ব্যবসার মডেল পরিবর্তন করাই টিকে থাকার চাবিকাঠি।

পাঠাও বা ইভ্যালির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর উত্থান ও পতনের ইতিহাস আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়—গ্রোথের পাশাপাশি টেকসই মডেল তৈরি করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যর্থতা রোধে করণীয়

পরিসংখ্যান বলছে, ৪২ শতাংশ স্টার্টআপ ব্যর্থ হয় কারণ তারা এমন সমস্যা সমাধান করতে চায়, যা বাস্তবে বাজারে গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাংলাদেশেও এ প্রবণতা লক্ষণীয়। তাই শুরুতেই বাজার যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি।

কোনো ধারণা নিজের কাছে ভালো লাগছে বলেই স্টার্টআপ শুরু করা উচিত নয়; বরং সেটি বাস্তবে কারও জীবনে প্রয়োজনীয় কি না—তা যাচাই করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

স্টার্টআপ কেবল একটি ব্যবসায়িক পদক্ষেপ নয়, এটি একটি দৃষ্টিভঙ্গি। এটি ভিন্নভাবে চিন্তা করার সাহস। স্টার্টআপ মানে সমস্যাকে ভয় না পেয়ে, সেটিকে সমাধানে রূপান্তর করার আকাঙ্ক্ষা। বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ তরুণ, সেখানে স্টার্টআপই হতে পারে আগামী দিনে চাকরির নতুন উৎস, উন্নয়নের নতুন গতি। আজ যারা সমস্যায় সম্ভাবনা খুঁজে পান, তারাই আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়বেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফোন-ইন্টারনেট ভাতা পাচ্ছেন মাঠ প্রশাসনের সব কর্মচারী

ভাড়া বাড়িতে চলা ১৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ

জোবাইদার নিরাপত্তার নামে প্রতিবেশীদের বিরক্ত না করার নির্দেশ তারেক রহমানের

হেফাজতসহ ধর্ম ব্যবসায়ীরা নারীবিদ্বেষী প্রচারণা চালাচ্ছে: ৬৮ মানবাধিকার সংগঠন

মানিকগঞ্জে সালিসে বিএনপি নেতার নির্দেশে পাঁচ ভাইকে জুতাপেটা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত