Ajker Patrika

সমাজ সভ্যতায় হজ ও কোরবানির প্রভাব

মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
সমাজ সভ্যতায় হজ ও কোরবানির প্রভাব

হজ ও কোরবানি সম্পর্কে অনেকে প্রশ্ন করেন, হজে গিয়ে কী লাভ? সম্পদ অপচয় ছাড়া হজ থেকে কী অর্জিত হয়? আর কোরবানি পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা নয় কি? এর বিপরীতে এসব টাকা গরিব-দুঃখী মানুষের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়াই জাতি হিসেবে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার কারণ নয় কি? মূলত এসব প্রশ্নের বেশির ভাগই বিদ্বেষপ্রসূত। কারণ ইসলামে পৃথকভাবে দান-সদকার প্রতি যেভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে, তা পৃথিবীর অন্য কোনো সভ্যতায় করা হয়নি।

সুতরাং ভিন্ন উদ্দেশ্যে প্রবর্তিত দুটি বিধানকে দান-সদকার চটকদার স্লোগান দিয়ে বাদ দেওয়ার আলাপ ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধাবোধসম্পন্ন কোনো মানুষ করতে পারে না।

ইসলামে হজ ও কোরবানির বদলে সেই সম্পদ দান করে দেওয়ার কোনো বিধান নেই। কারণ ইসলামের কোন বিধানের বিকল্প আছে, কোন বিধানের নেই, বিকল্প থাকলে সেটা কী এবং কখন তা প্রযোজ্য হবে—এসব বিষয় আল্লাহ তাআলাই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিছু বিধান সরাসরি পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, কিছু অহির মাধ্যমে রাসুল (সা.)কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে তা সাহাবিদের শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং পবিত্র কোরআন ও হাদিসে যেসব বিধানের বিকল্প উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন—শর্ত সাপেক্ষে অজু-গোসলের বিকল্প হিসেবে তায়াম্মুম, অশীতিপর বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য রোজার বিকল্প হিসেবে ফিদইয়া ইত্যাদি ছাড়া অন্য কোনো বিধানের বিকল্প নির্ধারণ করার সুযোগ নেই।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের ওপর আমার অনুগ্রহের পূর্ণতা দান করলাম এবং একমাত্র ইসলামকেই তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’ (সুরা মায়িদা: ৩) রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে আমার এই দ্বীনে এমন কিছু সংযোজন করে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, সেটা প্রত্যাখ্যাত হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম) আয়াত ও হাদিস থেকে বোঝা যায়, যুগের প্রয়োজনে বা সংস্কারের নামে বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে—তা বাহ্যিক দৃষ্টিতে যত মহৎই হোক না কেন, ইসলামের নির্ধারিত বিধানের কোনো হেরফের করা যাবে না; যেভাবে উল্লেখ আছে, সেভাবেই তা পালন করতে হবে।

হজ ও কোরবানি এমন দুটি বিধান, যার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অর্থ ইসলামের প্রতিই প্রশ্ন তোলা। অন্য সব বিধানের মতো এ দুটি বিধানও আল্লাহ তাআলা মানবজাতির কল্যাণেই প্রবর্তন করেছেন। পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে আল্লাহর প্রতি বান্দার কৃতজ্ঞতা এবং বান্দার প্রতি তাঁর সন্তুষ্টির নিদর্শন হিসেবে কোরবানির বিধান পালিত হয়ে আসছে। যুগে যুগে সব নবী-রাসুল তাঁদের জাতিকে আল্লাহর নামে কোরবানি করার আদেশ দিয়েছেন। পৃথিবীর বুকে প্রথম নির্মিত ঘর হিসেবে পরিচিত পবিত্র কাবাঘরের তাওয়াফ ও হজ মুসলিম জাতির গোড়াপত্তনকারী নবী হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর স্মৃতিবিজড়িত বিধান। তাঁর সময় থেকেই পৃথিবীতে হজ পালিত হয়ে আসছে।

সমাজ ও সভ্যতার বিনির্মাণে এ দুটি বিধানের কার্যকর ভূমিকা রয়েছে। ইসলামের মূলমন্ত্রই হলো এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর নির্দেশিত পথে পৃথিবীর জীবন পরিচালিত করা এবং এর মাধ্যমে পরকালের অনন্ত জীবনের সাফল্য অর্জনের চেষ্টা করা। ইসলামের অন্য ১০টি বিধানের মতো হজ ও কোরবানিও মানুষকে সেই পথে পরিচালিত করে। হজের সব কটি বিধানই মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় করার প্রয়াস। কোরবানিও আমাদের মহান আল্লাহর নামে পশু উৎসর্গ করে তাঁর অফুরন্ত–নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায়ের সুযোগ করে দেয়।

ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দান ও মসজিদে নামিরাহশুধু কি তাই? হজ সারা বিশ্বের মুসলমানদের এক জায়গায় একত্র করে ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ডাক দেয়, যা সূক্ষ্মভাবে বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ভূমিকা রাখে। বর্ণ-গোত্র ও জাতীয়তাবাদের যে সংকীর্ণতা ইসলাম-পূর্ব যুগের সমাজব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হজের শিক্ষার বিকল্প নেই। এ ছাড়া হজ আল্লাহ, পরকাল, হাশর, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি বিষয়কে এমনভাবে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, হজ থেকে ফিরে অনেক অপরাধী অপরাধ ছেড়ে দেয়, যা দেশ ও জাতিকে স্বস্তি দেয়। ফলে হজের মাধ্যমে ব্যক্তি, সমাজ ও বিশ্ব আরও শুদ্ধ, নৈতিক ও উন্নত হওয়ার সুযোগ পায়।

একইভাবে কোরবানিও দারুণ সম্প্রীতির শিক্ষা দেয়। কোরবানির মাংস বণ্টনের যে নীতি ইসলাম প্রণয়ন করেছে, এর মাধ্যমে বছরে অন্তত একবার হলেও সমাজের সব শ্রেণির মানুষ মনভরে মাংস খেতে পারে। তা ছাড়া কোরবানি পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা নয়, কারণ এসব প্রাণীকে মানুষের কল্যাণেই আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন এবং অত্যন্ত মানবিক উপায়ে তা জবাই করার বিধান দিয়েছে ইসলাম। আর ইসলাম এমন কোনো পশু দিয়ে কোরবানি করার কথা বলেনি, যা পৃথিবীতে অপ্রতুল বা বিপন্ন হতে পারে। বরং যে ছয় ধরনের পশু দিয়ে কোরবানি করার আদেশ দেওয়া হয়েছে, তার প্রতিটিই পৃথিবীতে বিপুল পরিমাণে বিদ্যমান। বরং কোরবানিকে কেন্দ্র করেই বিশ্বজুড়ে কোটি টাকার বাণিজ্য হচ্ছে এবং পৃথিবী অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছে।

এর পরও কেউ যদি কোরবানি ও হজের টাকা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করার কথা বলে, যার জন্য আল্লাহ তাআলা জাকাত-সদকার পৃথক বিধান দিয়েছেন, তাহলে কোরবানি ও হজের মহৎ উদ্দেশ্যগুলো কী করে সাধিত হবে? মানুষের আত্মিক ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষের পাশাপাশি সমাজ-সভ্যতার সমৃদ্ধিতে হাজার বছর ধরে অবদান রেখে চলা এসব বিধানকে বিতর্কিত করার চেষ্টা নিঃসন্দেহে বিদ্বেষপ্রসূত, যা কেবল ইসলাম, সমাজ ও সভ্যতার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী মানুষের পক্ষেই শোভা পায়। 

লেখক: শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ১১ নভেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৪: ৫১ মিনিট
ফজর০৪: ৫২ মিনিট০৬: ০৯ মিনিট
জোহর১১: ৪৩ মিনিট০৩: ৩৮ মিনিট
আসর০৩: ৩৯ মিনিট০৫: ১৪ মিনিট
মাগরিব০৫: ১৬ মিনিট০৬: ৩১ মিনিট
এশা০৬: ৩২ মিনিট০৪: ৫১ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যেসব রোগ থাকলে হজের অনুমতি দেবে না সৌদি সরকার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

প্রত্যেক হজযাত্রীর সার্বিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হজযাত্রী প্রেরণকারী কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়। সংক্রামক রোগসহ সুর্নিদিষ্ট কিছু রোগ থেকে মুক্ত বলে প্রত্যয়নপত্র ছাড়া হজের অনুমতি দেওয়া হবে না। এবিষয়ে সম্প্রতি হজযাত্রী প্রেরণকারী দেশগুলোকে চিঠি পাঠিয়েছে সৌদি সরকার।

ওই চিঠিতে একজন হজযাত্রী যেসব শারীরিক পরিস্থিতিতে হজের অনুমতি পাবেন না তার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে—

* কোনো হজযাত্রীর শরীরের প্রধান অঙ্গগুলো অকার্যকর হলে তিনি হজের অনুমতি পাবেন না। এর মধ্যে রয়েছে ডায়ালাইসিস চলছে এমন কিডনি রোগ, গুরুতর হৃদরোগ, সব সময় অক্সিজেন প্রয়োজন হয়, এ ধরনের ফুসফুসের রোগ ও ভয়াবহ লিভার সিরোসিস।

* গুরুতর স্নায়বিক কিংবা মানসিক রোগ, স্মৃতিভ্রষ্টতাসহ অতি বয়স্ক ব্যক্তি, শেষ প্রান্তিকের গর্ভাবস্থা ও যেকোনো স্তরে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থায়ও হজের অনুমতি মিলবে না।

* সংক্রামক রোগ যেমন—যক্ষ্মা, ভাইরাল হেমোরেজিক জ্বর এবং কেমোথেরাপি কিংবা অন্য কোনো নিবিড় ইমিউনোথেরাপি চিকিৎসা গ্রহণ করছেন এমন ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তিকেও হজের অনুমতি দেবে না সৌদি সরকার।

হজযাত্রী প্রেরণের ক্ষেত্রে হজযাত্রী প্রেরণকারী কর্তৃপক্ষকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত প্রত্যয়ন করে নুসুক মাসার প্লাটফর্মে প্রত্যেক হজযাত্রীর জন্য আবশ্যিকভাবে বৈধ স্বাস্থ্য সনদ ইস্যু করতে অনুরোধ করেছে সৌদি আরব।

আগমন ও বহির্গমন প্রান্তে মনিটরিংয়ে পরিপূর্ণ সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, নুসুক মাসার প্লাটফর্মের মাধ্যমে ইস্যু করা স্বাস্থ্য সনদের সত্যতা ও যথার্থতা যাচাই করবে মনিটরিং দল। কোনো দেশের একজন হজযাত্রীকে তালিকাভুক্ত স্বাস্থ্য পাওয়া যায় তাহলে সেদেশের বিরুদ্ধে সংশোধনমূলক ও নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, মসৃণ ও নিরাপদ হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে শারীরিক সক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদেশ থেকে হজযাত্রী প্রেরণের ক্ষেত্রে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিধিনিষেধগুলো কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে।

উল্লেখ্য, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হজের নিবন্ধন না করার জন্য নিবন্ধন শুরু আগেই ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে অনুরোধ হয়েছে। হজ এজেন্সিগুলোকেও এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা নিতে সৌদি সরকারের অনুরোধে সেদেশে অনুষ্ঠিত একটি ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করছেন বাংলাদেশি দুজন চিকিৎসক।

-------------------------------------------------------------

নির্দেশনা

সেই অনুযায়ী, সব হজযাত্রী বিষয়ক অফিসকে (Pilgrims’ Affairs Offices) নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নিতে হবে:

নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রতিটি হজযাত্রীর জন্য বৈধ স্বাস্থ্য অনুমোদন সনদ (Health Clearance Certificate) ইস্যু করতে হবে, যেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে যে তিনি উপরোক্ত কোনো চিকিৎসাগত অবস্থায় ভুগছেন না। এই সনদ ভিসা ইস্যুর পূর্বশর্ত হিসেবে গণ্য হবে।

প্রবেশ ও প্রস্থান পয়েন্টসহ হজ মৌসুমে হজযাত্রীদের সঙ্গে সম্পর্কিত সব স্থানে কার্যরত তদারকি দলগুলোর সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে।

এসব দল নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ইস্যুকৃত স্বাস্থ্য সনদের সত্যতা ও যথার্থতা যাচাই করবে।

যদি কোনো দেশ থেকে আগত কোনো হজযাত্রীর মধ্যে উল্লেখিত রোগাবস্থা বা নিষিদ্ধ স্বাস্থ্যঝুঁকি পাওয়া যায়, তবে হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট হজযাত্রী বিষয়ক অফিসের বিরুদ্ধে সংশোধনমূলক ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।

অনুরোধ

আপনার মহামান্য দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিনীতভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে যে—

আপনার কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যথাযথ নির্দেশনা প্রদান করুন যেন তাঁরা হজযাত্রীদের আগমনের পূর্বে সঠিক চিকিৎসা পরীক্ষা সম্পন্ন করেন এবং তাদের জন্য বৈধ স্বাস্থ্য অনুমোদন সনদ ইস্যু নিশ্চিত করেন।

এটি আপনার তত্ত্বাবধানে থাকা সব হজযাত্রীদের নিরাপদ, সুস্থ ও নিয়ম-সম্মতভাবে হজ পালনের জন্য অপরিহার্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাহাবিদের মর্যাদা ও আমাদের জীবনচর্চা

মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
মসজিদে নববী, মদিনা। ছবি: সংগৃহীত
মসজিদে নববী, মদিনা। ছবি: সংগৃহীত

ইসলামের ইতিহাসে সাহাবিদের স্থান অতুলনীয়। নবী করিম (সা.)-এর সরাসরি সঙ্গী এবং তাঁর শিক্ষার অনন্য প্রয়োগকারী হিসেবে তাঁরা মানবতার জন্য এক জীবন্ত উদাহরণ। সাহাবিরা শুধু আল্লাহর পথের পথিকই ছিলেন না; বরং ন্যায়, ধৈর্য, সাহস এবং আত্মত্যাগের সর্বোত্তম পরিচয় স্থাপন করেছিলেন। তাঁদের জীবন ও চরিত্রের মর্যাদা আমাদের জন্য কেবল ইতিহাস নয়; বরং বর্তমান জীবনে নৈতিক ও আত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যবান শিক্ষা।

আজকের এ সমাজে সাহাবিদের আদর্শ ও মূল্যবোধ আমাদের জীবনচর্চার পথপ্রদর্শক হতে পারে। তাঁদের শিক্ষা আমাদেরকে ধৈর্য ধরে লক্ষ্য অর্জন, ন্যায় ও সততার প্রতি অটল থাকা এবং সমাজে সঠিক ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে উদ্বুদ্ধ করে।

সাহাবিদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য

ইমান ও নিষ্ঠা: সাহাবিরা নবী করিম (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণে ছিলেন অবিচল। ইসলামের প্রাথমিক যুগে সামাজিক বৈরিতা, পরিবার ও সম্পদের ক্ষতি এবং নানাবিধ বিপর্যয় সত্ত্বেও তাঁরা দৃঢ় ছিলেন।

আত্মত্যাগ ও পরিশ্রম: সাহাবিরা ইসলামের জন্য নিজের সব জীবন উৎসর্গ করেছেন। হিজরতের সময় পরিবার, সম্পদ এবং মাতৃভূমি ত্যাগ, বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ, দান ও খয়রাত বিতরণ এবং শিক্ষার প্রচার—সবই ছিল তাঁদের জীবনের অংশ। এই ত্যাগ ও পরিশ্রম তাঁদের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করেছে এবং আমাদের শেখায় যে, ধর্মের জন্য আত্মত্যাগ সর্বদা সম্মানজনক।

সাহাবিদের শিক্ষণীয় দিক

নৈতিক ও সামাজিক আদর্শ: সাহাবিরা শুধু যুদ্ধে বা ধর্ম প্রচারে নয়, সামাজিক আচরণ ও নৈতিকতার ক্ষেত্রেও আদর্শ ছিলেন। তাঁরা সততা, ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও ন্যায়পরায়ণতার সর্বোচ্চ উদাহরণ স্থাপন করেছেন। প্রতিটি মুসলিমের উচিত তাঁদের নৈতিকতা অনুকরণ করা এবং সমাজে একটি সুসংগঠিত ও ন্যায়পরায়ণ পরিবেশ গঠন করা।

নেতৃত্ব ও পরিকল্পনা: সাহাবিরা নবী করিম (সা.)-এর নির্দেশনায় নেতৃত্বদান ও সমন্বয়পূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনায় পারদর্শী ছিলেন। তাঁরা অসংখ্য মুসলিম সম্প্রদায়কে যুগোপযোগী নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালনা করেছেন। বিশেষ করে হিজরতের সময় মক্কা থেকে মদিনায় স্থানান্তর এবং সেখানে একটি সুশৃঙ্খল মুসলিম সমাজ গঠনের নেতৃত্ব ছিল তাঁদের।

শিক্ষা ও প্রচারের গুরুত্ব: সাহাবিরা ইসলামের শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁরা কেবল জ্ঞান অর্জন করতেন না; বরং তা জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতেন। সাহাবিদের জীবন ছিল ধৈর্য, অধ্যবসায় ও জ্ঞানচর্চার অনন্য সংমিশ্রণ। তাঁদের শিক্ষা আমাদের শেখায় যে, জ্ঞান অর্জন ও সম্প্রসারণই সমাজের প্রকৃত উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।

আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য

সাহাবিদের জীবন আমাদের জন্য চিরন্তন দৃষ্টান্ত। আমাদের উচিত—

  • ১. সাহাবিদের ত্যাগ ও গুণাবলি স্মরণ করা।
  • ২. তাঁদের জীবন ও আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা।
  • ৩. ইতিহাসের ভুল ব্যাখ্যা থেকে তাঁদের মর্যাদা রক্ষা করা।
  • ৪. নিজেদের জীবনে সাহাবিদের গুণাবলি—ইমান, ধৈর্য, আত্মত্যাগ, সহিষ্ণুতা ও ন্যায়বোধ গড়ে তোলা। সাহাবিদের জীবন আমাদের শেখায় যে, ইমান ও নৈতিকতা কখনো অবহেলা করা উচিত নয়। তাঁরা দেখিয়েছেন কীভাবে কঠিন পরিস্থিতিতেও সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকা যায়।

সাহাবিরা ইসলামের প্রাথমিক যুগে আল্লাহ ও নবীর পথে সর্বস্ব উৎসর্গ করেছেন। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সাহাবিদের মতো আদর্শ অনুসরণে সক্ষম করুন।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগীকল্যাণ সোসাইটি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কোরআনের আলোকে মুমিনের ১০ গুণাবলি

মুহাম্মদ হেদায়ত উল্লাহ
পবিত্র কোরআন। ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র কোরআন। ছবি: সংগৃহীত

ইসলাম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা মানুষকে ন্যায়, সত্য, শান্তি ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করে। এই ব্যবস্থার কেন্দ্রে রয়েছে ইমান—আল্লাহ, তাঁর রাসুল (সা.), কোরআন ও পরকাল সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস। যে ব্যক্তি ইমানকে অন্তরে ধারণ করে, মুখে প্রকাশ করে এবং কর্মে প্রতিফলিত করে, তিনিই প্রকৃত মুমিন।

কোরআনুল কারিমে মুমিনদের গুণাবলি এমনভাবে বর্ণিত হয়েছে, যা মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নৈতিকতা, শৃঙ্খলা ও আত্মশুদ্ধির দিশা দেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে সুরা মুমিনুনে, যেখানে সফল মুমিনদের সাতটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে।

সুরা মুমিনুনে সফল মুমিনের ছয়টি বৈশিষ্ট্য

আল্লাহ তাআলা সুরা মুমিনুনে বলেন‚ ‘নিশ্চয়ই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ...’ (সুরা মুমিনুন: ১)। এরপর তিনি তাদের ছয়টি বিশেষ গুণের কথা উল্লেখ করেছেন—

  • ১. নামাজে বিনয়ী হওয়া: ‘যারা বিনয়-নম্র নিজেদের নামাজে।’ (আয়াত: ২)
  • ২. অনর্থক কাজ থেকে দূরে থাকা: ‘যারা অসার ক্রিয়াকলাপ হতে বিরত থাকে।’ (আয়াত: ৩)
  • ৩. জাকাত আদায় করা: ‘যারা জাকাতদানে সক্রিয়।’ (আয়াত: ৪)
  • ৪. লজ্জাস্থানের হেফাজত করা: ‘যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে।’ (আয়াত: ৫)
  • ৫. আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা: ‘এবং যারা নিজেদের আমানত ও অঙ্গীকার রক্ষা করে।’ (আয়াত: ৮)
  • ৬. নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া: ‘যারা নিজেদের নামাজের প্রতি যত্নবান।’ (আয়াত: ৯)

এই ছয়টি বৈশিষ্ট্য অর্জনকারী মুমিনদের সম্পর্কে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘তারাই উত্তরাধিকারী, যারা উত্তরাধিকারী হবে জান্নাতুল ফিরদাউসের; তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।’ (সুরা মুমিনুন: ১০ ও ১১)

এগুলোই হলো সেই পথ, যা মুমিনকে আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান করে এবং জান্নাতের উত্তরাধিকারী বানায়।

মুমিনের আরও কিছু মৌলিক গুণাবলি কোরআনের আলোকে

কোরআনে আরও বহু স্থানে মুমিনদের গুণাবলি বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে, যেমন—

  • ১. আল্লাহর প্রতি নির্ভেজাল বিশ্বাস ও তাওয়াক্কুল: ‘মুমিন তো তারাই, যাদের হৃদয় কম্পিত হয় যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয় এবং যখন তাঁর আয়াত তাদের নিকট পাঠ করা হয়, তখন তা তাদের ইমান বৃদ্ধি করে আর তারা তাদের প্রতিপালকের ওপরই নির্ভর করে।’ (আল আনফাল: ২)
  • ২. দানশীলতা: ‘তারা আল্লাহর ভালোবাসায় অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দীদের খাদ্য দান করে।’ (সুরা দাহর: ৮)। মুমিন সমাজে দয়া, সহমর্মিতা ও ন্যায়ের আলোক ছড়িয়ে দেয়।
  • ৩. ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা: ‘ধৈর্যশীলদের প্রতিদান সীমাহীনভাবে প্রদান করা হবে।’ (সুরা জুমার: ১০)। বিপদে ধৈর্য, প্রাপ্তিতে কৃতজ্ঞতা—এটাই মুমিনের চরিত্রের সৌন্দর্য।
  • ৪. নম্রতা ও নৈতিকতা: ‘রহমানের বান্দা তারা, যারা ভূমিতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞ লোক যখন তাদের লক্ষ্য করে (অজ্ঞতাসুলভ) কথা বলে, তখন তারা শান্তিপূর্ণ কথা বলে।’ (সুরা ফুরকান: ৬৩)। অহংকার, গর্ব ও উদ্ধততা মুমিনের চরিত্রে নেই; বরং তার আচরণে প্রকাশ পায় বিনয় ও মমতা।

কোরআনের আলোকে মুমিনের গুণাবলি কেবল আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনা নয়; এটি এক সম্পূর্ণ জীবনপথের নির্দেশিকা। মুমিনের ইমান, নামাজ, তাকওয়া, দানশীলতা ও নৈতিকতা একত্রে গড়ে তোলে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ।

যারা কোরআনের বর্ণিত এই গুণাবলি অর্জনে সচেষ্ট হয়, তারাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা, সমাজের শান্তির দূত এবং আখিরাতে জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী।

‘নিশ্চয়ই সফল হয়েছে সেই মুমিনরা...।’ এই আয়াত শুধু ঘোষণা নয়—এটি প্রতিটি বিশ্বাসীর জন্য প্রেরণার উৎস, যা আমাদের আহ্বান জানায় এক উত্তম, ন্যায়নিষ্ঠ ও আলোকিত জীবনের পথে।

লেখক: প্রভাষক, ইসলামিক স্টাডিজ, দশমিনা ইসলামিয়া কামিল এম এ মাদ্রাসা, পটুয়াখালী

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত