মুহাম্মাদ রাহাতুল ইসলাম

বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে ফররুখ আহমদ (১৯১৮-৭৪) এক স্বতন্ত্র ও উজ্জ্বল প্রতিভার নাম। তাঁকে তাঁর কাব্যিক মিশনের কারণে সাধারণত ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তাঁর কাব্যচেতনা ছিল মূলত একটি সামাজিক ও আত্মিক পুনর্জাগরণের ডাক, যেখানে ইসলামি আদর্শ ও বাঙালি মুসলিমের আত্মপরিচয় নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা এক শিল্পিত রূপ লাভ করেছিল।
এটি ছিল গভীর মননশীল সাহিত্য-আন্দোলন, যা আত্মবিস্মৃত জাতিকে তার স্বকীয়তা পুনরুদ্ধারে অনুপ্রাণিত করে।
ফররুখ আহমদের আবির্ভাবকাল ছিল বাংলার মুসলিম সমাজের জন্য এক ঘোর সংকটকাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, পঞ্চাশের মন্বন্তর, ঔপনিবেশিক শোষণ ও মুসলিম সমাজের অভ্যন্তরীণ আত্মবিস্মৃতি—এই চতুর্মুখী অন্ধকারে কবি অনুভব করেছিলেন জাতির গভীর নিস্তব্ধতা। এই জরাগ্রস্ত ও হতাশাজনক বাস্তবতা তাঁকে স্থির থাকতে দেয়নি। তাঁর কবিতায় তিনি এই ঐতিহাসিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে এক বিপ্লবী দামামা বাজিয়েছেন।
কবির দৃষ্টিতে, মুসলিমদের অতীত ইতিহাস ছিল শৌর্য, বীরত্ব ও মানবতার। সেই ঐতিহ্য ভেঙে যাওয়ায় জাতির যে অধঃপতন, তা কবিকে ব্যথিত ও উদ্বেলিত করে তোলে।
তিনি উপলব্ধি করেন, এই জাতিকে জাগাতে হলে শুধু রোমান্টিকতা নয়, চাই এমন এক ‘পাঞ্জেরি’ (দিকনির্দেশক), যে অন্ধকার পেরিয়ে মঞ্জিলে পৌঁছানোর পথ দেখাবে। তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ‘সাত সাগরের মাঝি’ (১৯৪৪)-এর কালজয়ী কবিতা ‘পাঞ্জেরি’তে এই আর্তিই ধ্বনিত হয়:
‘রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা, হেলার এখনো ওঠেনি জেগে?’
এই ‘পাঞ্জেরি’ কবিতা কেবল একটি আশার বাণী নয়, বরং তা একটি জাতীয় আত্মসচেতনতার প্রতীক—যা বাঙালি মুসলিম সমাজকে তার সমৃদ্ধ অতীত ও ইসলামি সভ্যতা-সংস্কৃতির দিকে ফিরে তাকিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শেখায়। এটি ছিল অস্তিত্ব রক্ষার এক তীব্র ব্যাকুলতা।
রেনেসাঁর দার্শনিক ভিত্তি: ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন
ফররুখ আহমদের রেনেসাঁ চেতনা কেবল অতীত রোমন্থন ছিল না, বরং তা ছিল প্রাচীনকে ধ্বংস না করে পুরোনো ঐতিহ্যের ভিত্তির ওপর নতুন আদর্শ সৃষ্টি করার এক তাত্ত্বিক প্রয়াস। তাঁর চিন্তা ছিল আল্লামা ইকবালের মতো, যিনি পতনোন্মুখ মুসলিমদের মধ্যে আত্মমর্যাদা ও নতুন জীবনবোধ সঞ্চার করতে চেয়েছিলেন। ফররুখ বিশ্বাস করতেন, ইসলামের আদর্শই মানবমুক্তি, স্বাধীনতা ও চিন্তার মুক্তির প্রথম উদ্যোক্তা।
তাঁর এই বিশ্বাস কবিকে মানবতাবাদের প্রেরণা জুগিয়েছে, যা তাঁকে তৎকালীন ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার নির্মম শোষণ ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হতে সাহায্য করেছে। ‘লাশ’ কবিতায় তিনি যে অমানবিকতার চিত্র এঁকেছেন, তা প্রমাণ করে তাঁর কাব্য শুধু ধর্মীয় নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও মানবিক মুক্তির জন্যও নিবেদিত ছিল। তিনি লেখেন:
‘আজ এই উৎপীড়িত মৃত্যু-দীর্ণ নিখিলের অভিশাপ বও
ধ্বংস হও, তুমি ধ্বংস হও।’
তাঁর কাব্যচেতনা ছিল একটি বিশ্বজনীন আদর্শের প্রতিচ্ছবি, যা নিম্নোক্ত দুটি ধারায় প্রস্ফুটিত হয়েছে—
ফররুখ আহমদের কাব্যচেতনার একটি মৌলিক দিক হলো—তাঁর কাব্যভাষা নির্মাণে স্বাতন্ত্র্যবাদী অবস্থান। তিনি সচেতনভাবে বাংলা ভাষায় আরবি-ফারসি শব্দের প্রয়োগে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। এই শব্দভান্ডার কেবল ভাষার অলংকার ছিল না, বরং তা ছিল তাঁর সংস্কৃতি ও তাহজিব-তামাদ্দুনের প্রতি গভীর আস্থার বহিঃপ্রকাশ। তিনি বিশ্বাস করতেন, একটি জাতির স্বকীয় সাহিত্য নির্মাণের জন্য তার নিজস্ব শব্দভান্ডার ও ঐতিহ্যের মিশ্রণ অপরিহার্য। এই প্রয়াস ছিল কাজী নজরুল ইসলামের হাতে শুরু হওয়া বাংলা কাব্যের সেই ধারার সম্প্রসারণ, যেখানে আরবি-ফারসি মিশ্রিত একটি প্রাণের ভাষা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছিল।
সবশেষে বলা যায়, কবি ফররুখ আহমদের কাব্যচেতনা ছিল বস্তুত এক বৈপ্লবিক প্রত্যয় ও শৈল্পিক সংগ্রাম। তাঁর সাহিত্যকর্ম সেই সময়ের বাঙালি মুসলিম সমাজকে আত্ম-অনুসন্ধান ও আত্ম-প্রত্যয়ের পথে চালিত করেছিল। একদিকে তিনি ছিলেন ইসলামি আদর্শ ও ঐতিহ্যের প্রতি দ্বিধাহীনভাবে অনুরক্ত, অন্যদিকে ছিলেন আধুনিক কাব্যশৈলী ও মানবিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় আপসহীন। এই দুই আপাত-বিপরীতমুখী চিন্তাধারার শৈল্পিক ও দার্শনিক সমন্বয়ের ফলেই ফররুখ আহমদ বাংলা সাহিত্যে ‘মুসলিম রেনেসাঁর কণ্ঠস্বর’ হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর কবিতা প্রমাণ করে—আত্মপরিচয় ও আধুনিকতা একে অপরের পরিপূরক হতে পারে, যা একটি জাতির জাগরণের পথ দেখায়।
লেখক: রিসার্চ ফেলো, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট

বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে ফররুখ আহমদ (১৯১৮-৭৪) এক স্বতন্ত্র ও উজ্জ্বল প্রতিভার নাম। তাঁকে তাঁর কাব্যিক মিশনের কারণে সাধারণত ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তাঁর কাব্যচেতনা ছিল মূলত একটি সামাজিক ও আত্মিক পুনর্জাগরণের ডাক, যেখানে ইসলামি আদর্শ ও বাঙালি মুসলিমের আত্মপরিচয় নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা এক শিল্পিত রূপ লাভ করেছিল।
এটি ছিল গভীর মননশীল সাহিত্য-আন্দোলন, যা আত্মবিস্মৃত জাতিকে তার স্বকীয়তা পুনরুদ্ধারে অনুপ্রাণিত করে।
ফররুখ আহমদের আবির্ভাবকাল ছিল বাংলার মুসলিম সমাজের জন্য এক ঘোর সংকটকাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, পঞ্চাশের মন্বন্তর, ঔপনিবেশিক শোষণ ও মুসলিম সমাজের অভ্যন্তরীণ আত্মবিস্মৃতি—এই চতুর্মুখী অন্ধকারে কবি অনুভব করেছিলেন জাতির গভীর নিস্তব্ধতা। এই জরাগ্রস্ত ও হতাশাজনক বাস্তবতা তাঁকে স্থির থাকতে দেয়নি। তাঁর কবিতায় তিনি এই ঐতিহাসিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে এক বিপ্লবী দামামা বাজিয়েছেন।
কবির দৃষ্টিতে, মুসলিমদের অতীত ইতিহাস ছিল শৌর্য, বীরত্ব ও মানবতার। সেই ঐতিহ্য ভেঙে যাওয়ায় জাতির যে অধঃপতন, তা কবিকে ব্যথিত ও উদ্বেলিত করে তোলে।
তিনি উপলব্ধি করেন, এই জাতিকে জাগাতে হলে শুধু রোমান্টিকতা নয়, চাই এমন এক ‘পাঞ্জেরি’ (দিকনির্দেশক), যে অন্ধকার পেরিয়ে মঞ্জিলে পৌঁছানোর পথ দেখাবে। তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ‘সাত সাগরের মাঝি’ (১৯৪৪)-এর কালজয়ী কবিতা ‘পাঞ্জেরি’তে এই আর্তিই ধ্বনিত হয়:
‘রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা, হেলার এখনো ওঠেনি জেগে?’
এই ‘পাঞ্জেরি’ কবিতা কেবল একটি আশার বাণী নয়, বরং তা একটি জাতীয় আত্মসচেতনতার প্রতীক—যা বাঙালি মুসলিম সমাজকে তার সমৃদ্ধ অতীত ও ইসলামি সভ্যতা-সংস্কৃতির দিকে ফিরে তাকিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শেখায়। এটি ছিল অস্তিত্ব রক্ষার এক তীব্র ব্যাকুলতা।
রেনেসাঁর দার্শনিক ভিত্তি: ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন
ফররুখ আহমদের রেনেসাঁ চেতনা কেবল অতীত রোমন্থন ছিল না, বরং তা ছিল প্রাচীনকে ধ্বংস না করে পুরোনো ঐতিহ্যের ভিত্তির ওপর নতুন আদর্শ সৃষ্টি করার এক তাত্ত্বিক প্রয়াস। তাঁর চিন্তা ছিল আল্লামা ইকবালের মতো, যিনি পতনোন্মুখ মুসলিমদের মধ্যে আত্মমর্যাদা ও নতুন জীবনবোধ সঞ্চার করতে চেয়েছিলেন। ফররুখ বিশ্বাস করতেন, ইসলামের আদর্শই মানবমুক্তি, স্বাধীনতা ও চিন্তার মুক্তির প্রথম উদ্যোক্তা।
তাঁর এই বিশ্বাস কবিকে মানবতাবাদের প্রেরণা জুগিয়েছে, যা তাঁকে তৎকালীন ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার নির্মম শোষণ ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হতে সাহায্য করেছে। ‘লাশ’ কবিতায় তিনি যে অমানবিকতার চিত্র এঁকেছেন, তা প্রমাণ করে তাঁর কাব্য শুধু ধর্মীয় নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও মানবিক মুক্তির জন্যও নিবেদিত ছিল। তিনি লেখেন:
‘আজ এই উৎপীড়িত মৃত্যু-দীর্ণ নিখিলের অভিশাপ বও
ধ্বংস হও, তুমি ধ্বংস হও।’
তাঁর কাব্যচেতনা ছিল একটি বিশ্বজনীন আদর্শের প্রতিচ্ছবি, যা নিম্নোক্ত দুটি ধারায় প্রস্ফুটিত হয়েছে—
ফররুখ আহমদের কাব্যচেতনার একটি মৌলিক দিক হলো—তাঁর কাব্যভাষা নির্মাণে স্বাতন্ত্র্যবাদী অবস্থান। তিনি সচেতনভাবে বাংলা ভাষায় আরবি-ফারসি শব্দের প্রয়োগে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। এই শব্দভান্ডার কেবল ভাষার অলংকার ছিল না, বরং তা ছিল তাঁর সংস্কৃতি ও তাহজিব-তামাদ্দুনের প্রতি গভীর আস্থার বহিঃপ্রকাশ। তিনি বিশ্বাস করতেন, একটি জাতির স্বকীয় সাহিত্য নির্মাণের জন্য তার নিজস্ব শব্দভান্ডার ও ঐতিহ্যের মিশ্রণ অপরিহার্য। এই প্রয়াস ছিল কাজী নজরুল ইসলামের হাতে শুরু হওয়া বাংলা কাব্যের সেই ধারার সম্প্রসারণ, যেখানে আরবি-ফারসি মিশ্রিত একটি প্রাণের ভাষা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছিল।
সবশেষে বলা যায়, কবি ফররুখ আহমদের কাব্যচেতনা ছিল বস্তুত এক বৈপ্লবিক প্রত্যয় ও শৈল্পিক সংগ্রাম। তাঁর সাহিত্যকর্ম সেই সময়ের বাঙালি মুসলিম সমাজকে আত্ম-অনুসন্ধান ও আত্ম-প্রত্যয়ের পথে চালিত করেছিল। একদিকে তিনি ছিলেন ইসলামি আদর্শ ও ঐতিহ্যের প্রতি দ্বিধাহীনভাবে অনুরক্ত, অন্যদিকে ছিলেন আধুনিক কাব্যশৈলী ও মানবিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় আপসহীন। এই দুই আপাত-বিপরীতমুখী চিন্তাধারার শৈল্পিক ও দার্শনিক সমন্বয়ের ফলেই ফররুখ আহমদ বাংলা সাহিত্যে ‘মুসলিম রেনেসাঁর কণ্ঠস্বর’ হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর কবিতা প্রমাণ করে—আত্মপরিচয় ও আধুনিকতা একে অপরের পরিপূরক হতে পারে, যা একটি জাতির জাগরণের পথ দেখায়।
লেখক: রিসার্চ ফেলো, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট
মুহাম্মাদ রাহাতুল ইসলাম

বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে ফররুখ আহমদ (১৯১৮-৭৪) এক স্বতন্ত্র ও উজ্জ্বল প্রতিভার নাম। তাঁকে তাঁর কাব্যিক মিশনের কারণে সাধারণত ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তাঁর কাব্যচেতনা ছিল মূলত একটি সামাজিক ও আত্মিক পুনর্জাগরণের ডাক, যেখানে ইসলামি আদর্শ ও বাঙালি মুসলিমের আত্মপরিচয় নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা এক শিল্পিত রূপ লাভ করেছিল।
এটি ছিল গভীর মননশীল সাহিত্য-আন্দোলন, যা আত্মবিস্মৃত জাতিকে তার স্বকীয়তা পুনরুদ্ধারে অনুপ্রাণিত করে।
ফররুখ আহমদের আবির্ভাবকাল ছিল বাংলার মুসলিম সমাজের জন্য এক ঘোর সংকটকাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, পঞ্চাশের মন্বন্তর, ঔপনিবেশিক শোষণ ও মুসলিম সমাজের অভ্যন্তরীণ আত্মবিস্মৃতি—এই চতুর্মুখী অন্ধকারে কবি অনুভব করেছিলেন জাতির গভীর নিস্তব্ধতা। এই জরাগ্রস্ত ও হতাশাজনক বাস্তবতা তাঁকে স্থির থাকতে দেয়নি। তাঁর কবিতায় তিনি এই ঐতিহাসিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে এক বিপ্লবী দামামা বাজিয়েছেন।
কবির দৃষ্টিতে, মুসলিমদের অতীত ইতিহাস ছিল শৌর্য, বীরত্ব ও মানবতার। সেই ঐতিহ্য ভেঙে যাওয়ায় জাতির যে অধঃপতন, তা কবিকে ব্যথিত ও উদ্বেলিত করে তোলে।
তিনি উপলব্ধি করেন, এই জাতিকে জাগাতে হলে শুধু রোমান্টিকতা নয়, চাই এমন এক ‘পাঞ্জেরি’ (দিকনির্দেশক), যে অন্ধকার পেরিয়ে মঞ্জিলে পৌঁছানোর পথ দেখাবে। তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ‘সাত সাগরের মাঝি’ (১৯৪৪)-এর কালজয়ী কবিতা ‘পাঞ্জেরি’তে এই আর্তিই ধ্বনিত হয়:
‘রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা, হেলার এখনো ওঠেনি জেগে?’
এই ‘পাঞ্জেরি’ কবিতা কেবল একটি আশার বাণী নয়, বরং তা একটি জাতীয় আত্মসচেতনতার প্রতীক—যা বাঙালি মুসলিম সমাজকে তার সমৃদ্ধ অতীত ও ইসলামি সভ্যতা-সংস্কৃতির দিকে ফিরে তাকিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শেখায়। এটি ছিল অস্তিত্ব রক্ষার এক তীব্র ব্যাকুলতা।
রেনেসাঁর দার্শনিক ভিত্তি: ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন
ফররুখ আহমদের রেনেসাঁ চেতনা কেবল অতীত রোমন্থন ছিল না, বরং তা ছিল প্রাচীনকে ধ্বংস না করে পুরোনো ঐতিহ্যের ভিত্তির ওপর নতুন আদর্শ সৃষ্টি করার এক তাত্ত্বিক প্রয়াস। তাঁর চিন্তা ছিল আল্লামা ইকবালের মতো, যিনি পতনোন্মুখ মুসলিমদের মধ্যে আত্মমর্যাদা ও নতুন জীবনবোধ সঞ্চার করতে চেয়েছিলেন। ফররুখ বিশ্বাস করতেন, ইসলামের আদর্শই মানবমুক্তি, স্বাধীনতা ও চিন্তার মুক্তির প্রথম উদ্যোক্তা।
তাঁর এই বিশ্বাস কবিকে মানবতাবাদের প্রেরণা জুগিয়েছে, যা তাঁকে তৎকালীন ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার নির্মম শোষণ ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হতে সাহায্য করেছে। ‘লাশ’ কবিতায় তিনি যে অমানবিকতার চিত্র এঁকেছেন, তা প্রমাণ করে তাঁর কাব্য শুধু ধর্মীয় নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও মানবিক মুক্তির জন্যও নিবেদিত ছিল। তিনি লেখেন:
‘আজ এই উৎপীড়িত মৃত্যু-দীর্ণ নিখিলের অভিশাপ বও
ধ্বংস হও, তুমি ধ্বংস হও।’
তাঁর কাব্যচেতনা ছিল একটি বিশ্বজনীন আদর্শের প্রতিচ্ছবি, যা নিম্নোক্ত দুটি ধারায় প্রস্ফুটিত হয়েছে—
ফররুখ আহমদের কাব্যচেতনার একটি মৌলিক দিক হলো—তাঁর কাব্যভাষা নির্মাণে স্বাতন্ত্র্যবাদী অবস্থান। তিনি সচেতনভাবে বাংলা ভাষায় আরবি-ফারসি শব্দের প্রয়োগে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। এই শব্দভান্ডার কেবল ভাষার অলংকার ছিল না, বরং তা ছিল তাঁর সংস্কৃতি ও তাহজিব-তামাদ্দুনের প্রতি গভীর আস্থার বহিঃপ্রকাশ। তিনি বিশ্বাস করতেন, একটি জাতির স্বকীয় সাহিত্য নির্মাণের জন্য তার নিজস্ব শব্দভান্ডার ও ঐতিহ্যের মিশ্রণ অপরিহার্য। এই প্রয়াস ছিল কাজী নজরুল ইসলামের হাতে শুরু হওয়া বাংলা কাব্যের সেই ধারার সম্প্রসারণ, যেখানে আরবি-ফারসি মিশ্রিত একটি প্রাণের ভাষা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছিল।
সবশেষে বলা যায়, কবি ফররুখ আহমদের কাব্যচেতনা ছিল বস্তুত এক বৈপ্লবিক প্রত্যয় ও শৈল্পিক সংগ্রাম। তাঁর সাহিত্যকর্ম সেই সময়ের বাঙালি মুসলিম সমাজকে আত্ম-অনুসন্ধান ও আত্ম-প্রত্যয়ের পথে চালিত করেছিল। একদিকে তিনি ছিলেন ইসলামি আদর্শ ও ঐতিহ্যের প্রতি দ্বিধাহীনভাবে অনুরক্ত, অন্যদিকে ছিলেন আধুনিক কাব্যশৈলী ও মানবিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় আপসহীন। এই দুই আপাত-বিপরীতমুখী চিন্তাধারার শৈল্পিক ও দার্শনিক সমন্বয়ের ফলেই ফররুখ আহমদ বাংলা সাহিত্যে ‘মুসলিম রেনেসাঁর কণ্ঠস্বর’ হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর কবিতা প্রমাণ করে—আত্মপরিচয় ও আধুনিকতা একে অপরের পরিপূরক হতে পারে, যা একটি জাতির জাগরণের পথ দেখায়।
লেখক: রিসার্চ ফেলো, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট

বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে ফররুখ আহমদ (১৯১৮-৭৪) এক স্বতন্ত্র ও উজ্জ্বল প্রতিভার নাম। তাঁকে তাঁর কাব্যিক মিশনের কারণে সাধারণত ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তাঁর কাব্যচেতনা ছিল মূলত একটি সামাজিক ও আত্মিক পুনর্জাগরণের ডাক, যেখানে ইসলামি আদর্শ ও বাঙালি মুসলিমের আত্মপরিচয় নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা এক শিল্পিত রূপ লাভ করেছিল।
এটি ছিল গভীর মননশীল সাহিত্য-আন্দোলন, যা আত্মবিস্মৃত জাতিকে তার স্বকীয়তা পুনরুদ্ধারে অনুপ্রাণিত করে।
ফররুখ আহমদের আবির্ভাবকাল ছিল বাংলার মুসলিম সমাজের জন্য এক ঘোর সংকটকাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, পঞ্চাশের মন্বন্তর, ঔপনিবেশিক শোষণ ও মুসলিম সমাজের অভ্যন্তরীণ আত্মবিস্মৃতি—এই চতুর্মুখী অন্ধকারে কবি অনুভব করেছিলেন জাতির গভীর নিস্তব্ধতা। এই জরাগ্রস্ত ও হতাশাজনক বাস্তবতা তাঁকে স্থির থাকতে দেয়নি। তাঁর কবিতায় তিনি এই ঐতিহাসিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে এক বিপ্লবী দামামা বাজিয়েছেন।
কবির দৃষ্টিতে, মুসলিমদের অতীত ইতিহাস ছিল শৌর্য, বীরত্ব ও মানবতার। সেই ঐতিহ্য ভেঙে যাওয়ায় জাতির যে অধঃপতন, তা কবিকে ব্যথিত ও উদ্বেলিত করে তোলে।
তিনি উপলব্ধি করেন, এই জাতিকে জাগাতে হলে শুধু রোমান্টিকতা নয়, চাই এমন এক ‘পাঞ্জেরি’ (দিকনির্দেশক), যে অন্ধকার পেরিয়ে মঞ্জিলে পৌঁছানোর পথ দেখাবে। তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ‘সাত সাগরের মাঝি’ (১৯৪৪)-এর কালজয়ী কবিতা ‘পাঞ্জেরি’তে এই আর্তিই ধ্বনিত হয়:
‘রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা, হেলার এখনো ওঠেনি জেগে?’
এই ‘পাঞ্জেরি’ কবিতা কেবল একটি আশার বাণী নয়, বরং তা একটি জাতীয় আত্মসচেতনতার প্রতীক—যা বাঙালি মুসলিম সমাজকে তার সমৃদ্ধ অতীত ও ইসলামি সভ্যতা-সংস্কৃতির দিকে ফিরে তাকিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শেখায়। এটি ছিল অস্তিত্ব রক্ষার এক তীব্র ব্যাকুলতা।
রেনেসাঁর দার্শনিক ভিত্তি: ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন
ফররুখ আহমদের রেনেসাঁ চেতনা কেবল অতীত রোমন্থন ছিল না, বরং তা ছিল প্রাচীনকে ধ্বংস না করে পুরোনো ঐতিহ্যের ভিত্তির ওপর নতুন আদর্শ সৃষ্টি করার এক তাত্ত্বিক প্রয়াস। তাঁর চিন্তা ছিল আল্লামা ইকবালের মতো, যিনি পতনোন্মুখ মুসলিমদের মধ্যে আত্মমর্যাদা ও নতুন জীবনবোধ সঞ্চার করতে চেয়েছিলেন। ফররুখ বিশ্বাস করতেন, ইসলামের আদর্শই মানবমুক্তি, স্বাধীনতা ও চিন্তার মুক্তির প্রথম উদ্যোক্তা।
তাঁর এই বিশ্বাস কবিকে মানবতাবাদের প্রেরণা জুগিয়েছে, যা তাঁকে তৎকালীন ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার নির্মম শোষণ ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হতে সাহায্য করেছে। ‘লাশ’ কবিতায় তিনি যে অমানবিকতার চিত্র এঁকেছেন, তা প্রমাণ করে তাঁর কাব্য শুধু ধর্মীয় নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও মানবিক মুক্তির জন্যও নিবেদিত ছিল। তিনি লেখেন:
‘আজ এই উৎপীড়িত মৃত্যু-দীর্ণ নিখিলের অভিশাপ বও
ধ্বংস হও, তুমি ধ্বংস হও।’
তাঁর কাব্যচেতনা ছিল একটি বিশ্বজনীন আদর্শের প্রতিচ্ছবি, যা নিম্নোক্ত দুটি ধারায় প্রস্ফুটিত হয়েছে—
ফররুখ আহমদের কাব্যচেতনার একটি মৌলিক দিক হলো—তাঁর কাব্যভাষা নির্মাণে স্বাতন্ত্র্যবাদী অবস্থান। তিনি সচেতনভাবে বাংলা ভাষায় আরবি-ফারসি শব্দের প্রয়োগে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। এই শব্দভান্ডার কেবল ভাষার অলংকার ছিল না, বরং তা ছিল তাঁর সংস্কৃতি ও তাহজিব-তামাদ্দুনের প্রতি গভীর আস্থার বহিঃপ্রকাশ। তিনি বিশ্বাস করতেন, একটি জাতির স্বকীয় সাহিত্য নির্মাণের জন্য তার নিজস্ব শব্দভান্ডার ও ঐতিহ্যের মিশ্রণ অপরিহার্য। এই প্রয়াস ছিল কাজী নজরুল ইসলামের হাতে শুরু হওয়া বাংলা কাব্যের সেই ধারার সম্প্রসারণ, যেখানে আরবি-ফারসি মিশ্রিত একটি প্রাণের ভাষা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছিল।
সবশেষে বলা যায়, কবি ফররুখ আহমদের কাব্যচেতনা ছিল বস্তুত এক বৈপ্লবিক প্রত্যয় ও শৈল্পিক সংগ্রাম। তাঁর সাহিত্যকর্ম সেই সময়ের বাঙালি মুসলিম সমাজকে আত্ম-অনুসন্ধান ও আত্ম-প্রত্যয়ের পথে চালিত করেছিল। একদিকে তিনি ছিলেন ইসলামি আদর্শ ও ঐতিহ্যের প্রতি দ্বিধাহীনভাবে অনুরক্ত, অন্যদিকে ছিলেন আধুনিক কাব্যশৈলী ও মানবিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় আপসহীন। এই দুই আপাত-বিপরীতমুখী চিন্তাধারার শৈল্পিক ও দার্শনিক সমন্বয়ের ফলেই ফররুখ আহমদ বাংলা সাহিত্যে ‘মুসলিম রেনেসাঁর কণ্ঠস্বর’ হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর কবিতা প্রমাণ করে—আত্মপরিচয় ও আধুনিকতা একে অপরের পরিপূরক হতে পারে, যা একটি জাতির জাগরণের পথ দেখায়।
লেখক: রিসার্চ ফেলো, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট

মানুষকে কষ্ট দেওয়া অমানবিক নিষ্ঠুরতা। হোক সেটা কথা বা কাজকর্মে। আমরা দৈনন্দিন চেনা-অচেনা হাজারো মানুষের সঙ্গে কথা বলি। চলাচলের রাস্তায়, অফিস-আদালতে, যানবাহনে। কখনো ভেবে দেখেছি—আমার কথায় বা আচরণে কেউ কষ্ট পেল কি না? কাউকে কটুকথা বললাম কি না?
১১ ঘণ্টা আগে
ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস জমাদিউল আউয়াল। মাসটির নাম শুনলেই মনে হয় প্রশান্ত এক সময়—শীতল আবহে আত্মশুদ্ধি, তাওবা আর নতুনভাবে ইমানের জাগরণ ঘটানোর উপযুক্ত সময়। এ মাসের প্রতিটি জুমা যেমন বরকত ও রহমতের দিন, তেমনি তৃতীয় জুমাটি যেন আল্লাহর দিকে ফিরে আসার এক অনন্য সুযোগ।
১ দিন আগে
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব কেবল একটি নতুন ধর্মীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ছিল প্রাক্-ইসলামিক আরবের গোত্রীয় সংঘাত ও নৈরাজ্যের বিপরীতে এক সুসংগঠিত, একত্ববাদী এবং সাংবিধানিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন। তাঁর নেতৃত্বের কৌশল ছিল গভীর দূরদর্শিতা, নৈতিক কর্তৃত্ব...
১ দিন আগে
বর্তমানে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর পাওয়া যায়। এসব ক্যালকুলেটরে সম্পদের সার্বিক তথ্য দিলে সম্ভাব্য জাকাতের পরিমাণ নির্ণয় করে দেওয়া হয়। ইসলামে এ ধরনের ডিজিটাল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার সঠিক বিধান কী? এ বিষয়ে জানতে চাই।
১ দিন আগেআবরার নাঈম

মানুষকে কষ্ট দেওয়া অমানবিক নিষ্ঠুরতা। হোক সেটা কথা বা কাজকর্মে। আমরা দৈনন্দিন চেনা-অচেনা হাজারো মানুষের সঙ্গে কথা বলি। চলাচলের রাস্তায়, অফিস-আদালতে, যানবাহনে। কখনো ভেবে দেখেছি—আমার কথায় বা আচরণে কেউ কষ্ট পেল কি না? কাউকে কটুকথা বললাম কি না?
যদি কেউ আমার কথায় মনঃক্ষুণ্ন হয়ে থাকে, তাহলে আমি নিজেকে মুসলিম দাবি করলেও প্রকৃত মুসলিম হতে পারিনি। কারণ হাদিসের ভাষ্যমতে, প্রকৃত মুসলিম তো সে—যার হাত ও জবান থেকে অন্য মানুষ নিরাপদ থাকে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুসলিম ওই ব্যক্তি—যার হাত ও জিহ্বা থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে। (সুনানে নাসায়ি: ৪৯৯৫)
প্রকৃত মুমিন হতে হলে নিজের ভেতর বহুমুখী গুণাবলির সমন্বয় সাধন করতে হয়। শুধু ইবাদত-বন্দেগিতে সীমাবদ্ধ থেকে খাঁটি মুমিন হওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আনুষঙ্গিক নানা বিষয় ও বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়। যেমন, মানুষের প্রতি সদাচারী হওয়া। অন্যের জানমালের ক্ষতি না করা বা ক্ষতির কারণ না হওয়া। কেননা, চুরি-ডাকাতি কিংবা অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ লুট ও আত্মসাৎ করা কোনো মুমিনের গুণ হতে পারে না। তাই এসব পরিহারযোগ্য। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন ওই ব্যক্তি—যার কাছে অন্য মানুষ নিজের জান ও মালকে নিরাপদ মনে করে। (সুনানে নাসায়ি)
এগুলো আসলে খুব কঠিন কোনো কাজ নয়। একটু মানবিক ও সুচিন্তক হলেই নিজে ভালো মানুষ এবং অন্যের আস্থার পাত্র হওয়া যায়। কথা ও কাজে একটু সংযমী হলেই অন্যকে কষ্ট দেওয়া থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মানুষের সঙ্গে সদাচারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

মানুষকে কষ্ট দেওয়া অমানবিক নিষ্ঠুরতা। হোক সেটা কথা বা কাজকর্মে। আমরা দৈনন্দিন চেনা-অচেনা হাজারো মানুষের সঙ্গে কথা বলি। চলাচলের রাস্তায়, অফিস-আদালতে, যানবাহনে। কখনো ভেবে দেখেছি—আমার কথায় বা আচরণে কেউ কষ্ট পেল কি না? কাউকে কটুকথা বললাম কি না?
যদি কেউ আমার কথায় মনঃক্ষুণ্ন হয়ে থাকে, তাহলে আমি নিজেকে মুসলিম দাবি করলেও প্রকৃত মুসলিম হতে পারিনি। কারণ হাদিসের ভাষ্যমতে, প্রকৃত মুসলিম তো সে—যার হাত ও জবান থেকে অন্য মানুষ নিরাপদ থাকে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুসলিম ওই ব্যক্তি—যার হাত ও জিহ্বা থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে। (সুনানে নাসায়ি: ৪৯৯৫)
প্রকৃত মুমিন হতে হলে নিজের ভেতর বহুমুখী গুণাবলির সমন্বয় সাধন করতে হয়। শুধু ইবাদত-বন্দেগিতে সীমাবদ্ধ থেকে খাঁটি মুমিন হওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আনুষঙ্গিক নানা বিষয় ও বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়। যেমন, মানুষের প্রতি সদাচারী হওয়া। অন্যের জানমালের ক্ষতি না করা বা ক্ষতির কারণ না হওয়া। কেননা, চুরি-ডাকাতি কিংবা অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ লুট ও আত্মসাৎ করা কোনো মুমিনের গুণ হতে পারে না। তাই এসব পরিহারযোগ্য। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন ওই ব্যক্তি—যার কাছে অন্য মানুষ নিজের জান ও মালকে নিরাপদ মনে করে। (সুনানে নাসায়ি)
এগুলো আসলে খুব কঠিন কোনো কাজ নয়। একটু মানবিক ও সুচিন্তক হলেই নিজে ভালো মানুষ এবং অন্যের আস্থার পাত্র হওয়া যায়। কথা ও কাজে একটু সংযমী হলেই অন্যকে কষ্ট দেওয়া থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মানুষের সঙ্গে সদাচারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে ফররুখ আহমদ (১৯১৮-৭৪) এক স্বতন্ত্র ও উজ্জ্বল প্রতিভার নাম। তাঁকে তাঁর কাব্যিক মিশনের কারণে সাধারণত ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তাঁর কাব্যচেতনা ছিল মূলত একটি সামাজিক ও আত্মিক পুনর্জাগরণের ডাক, যেখানে ইসলামি আদর্শ ও বাঙালি মুসলিমের আত্মপরিচয় নির্মাণের...
১৬ দিন আগে
ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস জমাদিউল আউয়াল। মাসটির নাম শুনলেই মনে হয় প্রশান্ত এক সময়—শীতল আবহে আত্মশুদ্ধি, তাওবা আর নতুনভাবে ইমানের জাগরণ ঘটানোর উপযুক্ত সময়। এ মাসের প্রতিটি জুমা যেমন বরকত ও রহমতের দিন, তেমনি তৃতীয় জুমাটি যেন আল্লাহর দিকে ফিরে আসার এক অনন্য সুযোগ।
১ দিন আগে
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব কেবল একটি নতুন ধর্মীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ছিল প্রাক্-ইসলামিক আরবের গোত্রীয় সংঘাত ও নৈরাজ্যের বিপরীতে এক সুসংগঠিত, একত্ববাদী এবং সাংবিধানিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন। তাঁর নেতৃত্বের কৌশল ছিল গভীর দূরদর্শিতা, নৈতিক কর্তৃত্ব...
১ দিন আগে
বর্তমানে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর পাওয়া যায়। এসব ক্যালকুলেটরে সম্পদের সার্বিক তথ্য দিলে সম্ভাব্য জাকাতের পরিমাণ নির্ণয় করে দেওয়া হয়। ইসলামে এ ধরনের ডিজিটাল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার সঠিক বিধান কী? এ বিষয়ে জানতে চাই।
১ দিন আগেডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস জমাদিউল আউয়াল। মাসটির নাম শুনলেই মনে হয় প্রশান্ত এক সময়—শীতল আবহে আত্মশুদ্ধি, তাওবা আর নতুনভাবে ইমানের জাগরণ ঘটানোর উপযুক্ত সময়। এ মাসের প্রতিটি জুমা যেমন বরকত ও রহমতের দিন, তেমনি তৃতীয় জুমাটি যেন আল্লাহর দিকে ফিরে আসার এক অনন্য সুযোগ।
পবিত্র কোরআনের এসেছে, ‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে নামাজের আহ্বান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ত্বরান্বিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমা: ৯)
জুমা কেবল নামাজের দিন নয়—এটি মুসলমানদের ঐক্য, সংহতি ও আত্মসমালোচনার দিন। সমাজের সব শ্রেণির মানুষ এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে; কেউ ধনী, কেউ দরিদ্র—কিন্তু সবাই আল্লাহর বান্দা। এই দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সব পার্থিব বিভাজনকে ভুলে গিয়ে আল্লাহর সামনে এক হয়ে দাঁড়ানোই ইমানের সৌন্দর্য।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, উত্তম পোশাক পরে, সুগন্ধি ব্যবহার করে এবং মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে, তার এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করা হয়।’ (সহিহ্ বুখারি: ৮৮৩; সহিহ্ মুসলিম: ৮৫৭)। এই হাদিস শুধু বাহ্যিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা বলে না, বরং অভ্যন্তরীণ পরিশুদ্ধির প্রতীক। যেমন—পোশাক ধোয়া হয় ময়লা দূর করার জন্য, তেমনি আত্মাকে ধোয়া হয় তাওবা, ইস্তিগফার ও সৎকর্মের মাধ্যমে।
এই মাসের তৃতীয় জুমা তাই আমাদের মনে করিয়ে দেয়—একটি নতুন শুরু এখনো সম্ভব। যত গুনাহই হোক না কেন, আল্লাহর রহমতের দরজা সব সময় খোলা। এ জুমা আমাদের শেখায়—আল্লাহর দিকে ফিরে আসার জন্য কখনো দেরি করতে হয় না।
আসুন, এই জমাদিউল আউয়ালের তৃতীয় জুমাকে আমরা আত্মশুদ্ধি, তাওবা ও ইমান নবায়নের দিন হিসেবে গ্রহণ করি। আল্লাহ যেন আমাদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে দেন, গুনাহ মাফ করেন, আর এই জুমাকে করে তোলেন আমাদের জীবনের মোড় ঘোরানোর দিন।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি

ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস জমাদিউল আউয়াল। মাসটির নাম শুনলেই মনে হয় প্রশান্ত এক সময়—শীতল আবহে আত্মশুদ্ধি, তাওবা আর নতুনভাবে ইমানের জাগরণ ঘটানোর উপযুক্ত সময়। এ মাসের প্রতিটি জুমা যেমন বরকত ও রহমতের দিন, তেমনি তৃতীয় জুমাটি যেন আল্লাহর দিকে ফিরে আসার এক অনন্য সুযোগ।
পবিত্র কোরআনের এসেছে, ‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে নামাজের আহ্বান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ত্বরান্বিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমা: ৯)
জুমা কেবল নামাজের দিন নয়—এটি মুসলমানদের ঐক্য, সংহতি ও আত্মসমালোচনার দিন। সমাজের সব শ্রেণির মানুষ এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে; কেউ ধনী, কেউ দরিদ্র—কিন্তু সবাই আল্লাহর বান্দা। এই দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সব পার্থিব বিভাজনকে ভুলে গিয়ে আল্লাহর সামনে এক হয়ে দাঁড়ানোই ইমানের সৌন্দর্য।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, উত্তম পোশাক পরে, সুগন্ধি ব্যবহার করে এবং মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে, তার এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করা হয়।’ (সহিহ্ বুখারি: ৮৮৩; সহিহ্ মুসলিম: ৮৫৭)। এই হাদিস শুধু বাহ্যিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা বলে না, বরং অভ্যন্তরীণ পরিশুদ্ধির প্রতীক। যেমন—পোশাক ধোয়া হয় ময়লা দূর করার জন্য, তেমনি আত্মাকে ধোয়া হয় তাওবা, ইস্তিগফার ও সৎকর্মের মাধ্যমে।
এই মাসের তৃতীয় জুমা তাই আমাদের মনে করিয়ে দেয়—একটি নতুন শুরু এখনো সম্ভব। যত গুনাহই হোক না কেন, আল্লাহর রহমতের দরজা সব সময় খোলা। এ জুমা আমাদের শেখায়—আল্লাহর দিকে ফিরে আসার জন্য কখনো দেরি করতে হয় না।
আসুন, এই জমাদিউল আউয়ালের তৃতীয় জুমাকে আমরা আত্মশুদ্ধি, তাওবা ও ইমান নবায়নের দিন হিসেবে গ্রহণ করি। আল্লাহ যেন আমাদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে দেন, গুনাহ মাফ করেন, আর এই জুমাকে করে তোলেন আমাদের জীবনের মোড় ঘোরানোর দিন।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি

বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে ফররুখ আহমদ (১৯১৮-৭৪) এক স্বতন্ত্র ও উজ্জ্বল প্রতিভার নাম। তাঁকে তাঁর কাব্যিক মিশনের কারণে সাধারণত ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তাঁর কাব্যচেতনা ছিল মূলত একটি সামাজিক ও আত্মিক পুনর্জাগরণের ডাক, যেখানে ইসলামি আদর্শ ও বাঙালি মুসলিমের আত্মপরিচয় নির্মাণের...
১৬ দিন আগে
মানুষকে কষ্ট দেওয়া অমানবিক নিষ্ঠুরতা। হোক সেটা কথা বা কাজকর্মে। আমরা দৈনন্দিন চেনা-অচেনা হাজারো মানুষের সঙ্গে কথা বলি। চলাচলের রাস্তায়, অফিস-আদালতে, যানবাহনে। কখনো ভেবে দেখেছি—আমার কথায় বা আচরণে কেউ কষ্ট পেল কি না? কাউকে কটুকথা বললাম কি না?
১১ ঘণ্টা আগে
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব কেবল একটি নতুন ধর্মীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ছিল প্রাক্-ইসলামিক আরবের গোত্রীয় সংঘাত ও নৈরাজ্যের বিপরীতে এক সুসংগঠিত, একত্ববাদী এবং সাংবিধানিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন। তাঁর নেতৃত্বের কৌশল ছিল গভীর দূরদর্শিতা, নৈতিক কর্তৃত্ব...
১ দিন আগে
বর্তমানে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর পাওয়া যায়। এসব ক্যালকুলেটরে সম্পদের সার্বিক তথ্য দিলে সম্ভাব্য জাকাতের পরিমাণ নির্ণয় করে দেওয়া হয়। ইসলামে এ ধরনের ডিজিটাল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার সঠিক বিধান কী? এ বিষয়ে জানতে চাই।
১ দিন আগেজাহিদ হাসান

হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব কেবল একটি নতুন ধর্মীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ছিল প্রাক্-ইসলামিক আরবের গোত্রীয় সংঘাত ও নৈরাজ্যের বিপরীতে এক সুসংগঠিত, একত্ববাদী এবং সাংবিধানিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন। তাঁর নেতৃত্বের কৌশল ছিল গভীর দূরদর্শিতা, নৈতিক কর্তৃত্ব এবং কার্যকর কূটনীতির এক অনন্য সমন্বয়, যা আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সামরিক কৌশল ও বিপ্লবী চেতনার জন্য আজও অনুকরণীয়।
নবীজি (সা.) শুধু ধর্ম সংস্কারক বা ধর্মপ্রচারকই ছিলেন না; তিনি ছিলেন তৎকালীন আরবের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়ক, ন্যায়পরায়ণ বিচারক, সফল সামরিক নেতা এবং দূরদর্শী কূটনীতিক। তিনি আরবের বিচ্ছিন্ন ও খণ্ড খণ্ড সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে এমন এক আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন, যা কেবল সপ্তম শতকেই নয়, আধুনিক যুগেও তা নজিরবিহীন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ, সামরিক নেতৃত্বে ছিলেন এক অকুতোভয় সেনাপতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন এক দূরদর্শী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।
মহানবী (সা.)-এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার সূচনা হয়েছিল নবুওয়াত প্রাপ্তির বহু আগেই, তাঁর নৈতিক কর্তৃত্বের ভিত্তিতে। তাঁর নেতৃত্বের প্রথম নিদর্শন হিসেবে ফুটে ওঠে হিলফুল ফুজুল নামের একটি সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। কিছু সামাজিক সংস্কারের লক্ষ্যে তিনি আরবের সচেতন যুবকদের নিয়ে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত আরব সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও অন্যায় অবিচার দূরীকরণই ছিল হিলফুল ফুজুলের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
রাসুল (সা.)-এর এই নৈতিক মূল্যবোধই তাঁকে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা এনে দিয়েছিল। যেমন, কাবা ঘরের সংস্কারের সময় হাজরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে কুরাইশ গোত্রগুলোর মধ্যে যখন চরম বিরোধ দেখা দেয় এবং রক্তপাতের আশঙ্কা তৈরি হয়, তখন তারা সর্বসম্মতভাবে তাঁকে বিচারক হিসেবে গ্রহণ করেছিল। তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর কুরাইশরা শতভাগ আস্থা রেখেছিল। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে তিনি প্রাক্-নবুওয়াতি যুগ থেকেই একজন নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী এবং ন্যায় বিচারক হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছিলেন। তাঁর এই সর্বজনীন ন্যায়পরায়ণতার স্বীকৃতি পরবর্তী সময়ে মদিনায় ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক বৈধতার ভিত্তি স্থাপন করে।
৪০ বছর বয়সে রাসুল (সা.) নবুওয়াত প্রাপ্তির পর, মক্কায় গোপনে তাওহিদের দাওয়াত দিয়ে বিচ্ছিন্ন আরব সমাজকে আল্লাহর একত্ববাদের ছায়াতলে ঐক্যবদ্ধ করতে থাকেন। পরে তিনি যখন প্রকাশ্যে তাওহিদের দাওয়াত দিতে শুরু করেন, তখন মক্কার পরিবেশ তাঁর ও তাঁর সাথিদের জন্য এক প্রতিকূল পরিবেশে রূপান্তরিত হয়। তাঁদের ওপর নেমে আসে অমানবিক অত্যাচার, যা পরে মুসলমানদের মদিনায় হিজরতের দিকে ধাবিত করে। হিজরত কেবল ধর্মীয় আশ্রয় গ্রহণ ছিল না, বরং এটি ছিল মক্কার গোত্রীয় ক্ষমতার বাইরে গিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রথম কৌশলগত পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়েই মুহাম্মদ (সা.) স্বাধীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে ওঠেন।
মদিনায় হিজরতের পর তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কাজ ছিল মদিনার সনদ প্রণয়ন, যা ইতিহাসের প্রথম লিখিত রাজনৈতিক চুক্তি ও প্রথম লিখিত সংবিধান হিসেবে পরিচিত। এই মদিনার সনদই ছিল মদিনায় স্বাধীন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি। ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিকে প্রণীত এই সনদ মদিনার মুসলমান, ইহুদি এবং পৌত্তলিকদের একত্র করে একটি সাধারণ জাতি গঠনে সহায়তা করেছিল। এই সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা হলো একটি কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক কর্তৃত্ব স্থাপন। এই সংবিধানের ভিত্তিতে ঘোষণা করা হয় যে মুহাম্মদ (সা.) হবেন নবগঠিত এই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান। এই ধারা মদিনার নবগঠিত রাষ্ট্রকাঠামো এবং ক্ষমতাকাঠামোর কেন্দ্রবিন্দুতে তাঁর অবস্থানকে আইনি বৈধতা দান করে।
মদিনা সনদে সব সম্প্রদায়কে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল, যেখানে কেউ কারও ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এমনকি ইহুদিদের মিত্ররাও সমান নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা ভোগ করার আইনি নিশ্চয়তা লাভ করে। এর মাধ্যমে ধর্মীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে রাষ্ট্রীয় নাগরিকত্বের ধারণা প্রবর্তন করা হয়। মদিনা সনদের মাধ্যমে মদিনা রাষ্ট্রে এক যৌথ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। সনদের ধারা অনুযায়ী, কোনো গোত্র বহিঃশত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে চুক্তিবদ্ধ গোত্রগুলোর সম্মিলিত শক্তি দিয়ে শত্রু প্রতিহত করবে ও মদিনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং চুক্তিবদ্ধ সব গোত্র যুদ্ধের ব্যয়ভার গ্রহণ করবে।
রাসুল (সা.)-এর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা সব থেকে বেশি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বৈদেশিক নীতি, আন্তগোত্রীয় সম্পর্ক নির্ধারণের মধ্য দিয়ে। যেখানে তিনি সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতি সহিষ্ণুতা দেখিয়েছেন এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে সম্মান করেছেন। তাঁর অন্যতম বৃহৎ কূটনৈতিক সাফল্য হলো হুদাইবিয়ার সন্ধি, যা পবিত্র কোরআনে ফাতহুম মুবিন নামে পরিচিত। এই সন্ধির মাধ্যমে মক্কার কুরাইশরা মদিনার রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। এই রাজনৈতিক স্বীকৃতি মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। এই সন্ধি রাসুল (সা.)-এর কূটনৈতিক প্রজ্ঞার এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত।
হুদাইবিয়ার সন্ধির পর যখন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়, মুহাম্মদ (সা.) তখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে পত্র দিয়ে ইসলামের বাণীকে বিশ্ব-দরবারে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছিলেন। যার কারণে ইসলাম আরবের গণ্ডি ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে তাঁর সামরিক কৌশলগত নেতৃত্বের ফলাফল হিসেবে মক্কা বিজয় হলো এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। মক্কা বিজয়ের পর তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। এই ক্ষমাশীল ব্যক্তিত্ব তাঁর রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সুউচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করে।
লেখক: শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব কেবল একটি নতুন ধর্মীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ছিল প্রাক্-ইসলামিক আরবের গোত্রীয় সংঘাত ও নৈরাজ্যের বিপরীতে এক সুসংগঠিত, একত্ববাদী এবং সাংবিধানিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন। তাঁর নেতৃত্বের কৌশল ছিল গভীর দূরদর্শিতা, নৈতিক কর্তৃত্ব এবং কার্যকর কূটনীতির এক অনন্য সমন্বয়, যা আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সামরিক কৌশল ও বিপ্লবী চেতনার জন্য আজও অনুকরণীয়।
নবীজি (সা.) শুধু ধর্ম সংস্কারক বা ধর্মপ্রচারকই ছিলেন না; তিনি ছিলেন তৎকালীন আরবের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়ক, ন্যায়পরায়ণ বিচারক, সফল সামরিক নেতা এবং দূরদর্শী কূটনীতিক। তিনি আরবের বিচ্ছিন্ন ও খণ্ড খণ্ড সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে এমন এক আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন, যা কেবল সপ্তম শতকেই নয়, আধুনিক যুগেও তা নজিরবিহীন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ, সামরিক নেতৃত্বে ছিলেন এক অকুতোভয় সেনাপতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন এক দূরদর্শী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।
মহানবী (সা.)-এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার সূচনা হয়েছিল নবুওয়াত প্রাপ্তির বহু আগেই, তাঁর নৈতিক কর্তৃত্বের ভিত্তিতে। তাঁর নেতৃত্বের প্রথম নিদর্শন হিসেবে ফুটে ওঠে হিলফুল ফুজুল নামের একটি সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। কিছু সামাজিক সংস্কারের লক্ষ্যে তিনি আরবের সচেতন যুবকদের নিয়ে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত আরব সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও অন্যায় অবিচার দূরীকরণই ছিল হিলফুল ফুজুলের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
রাসুল (সা.)-এর এই নৈতিক মূল্যবোধই তাঁকে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা এনে দিয়েছিল। যেমন, কাবা ঘরের সংস্কারের সময় হাজরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে কুরাইশ গোত্রগুলোর মধ্যে যখন চরম বিরোধ দেখা দেয় এবং রক্তপাতের আশঙ্কা তৈরি হয়, তখন তারা সর্বসম্মতভাবে তাঁকে বিচারক হিসেবে গ্রহণ করেছিল। তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর কুরাইশরা শতভাগ আস্থা রেখেছিল। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে তিনি প্রাক্-নবুওয়াতি যুগ থেকেই একজন নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী এবং ন্যায় বিচারক হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছিলেন। তাঁর এই সর্বজনীন ন্যায়পরায়ণতার স্বীকৃতি পরবর্তী সময়ে মদিনায় ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক বৈধতার ভিত্তি স্থাপন করে।
৪০ বছর বয়সে রাসুল (সা.) নবুওয়াত প্রাপ্তির পর, মক্কায় গোপনে তাওহিদের দাওয়াত দিয়ে বিচ্ছিন্ন আরব সমাজকে আল্লাহর একত্ববাদের ছায়াতলে ঐক্যবদ্ধ করতে থাকেন। পরে তিনি যখন প্রকাশ্যে তাওহিদের দাওয়াত দিতে শুরু করেন, তখন মক্কার পরিবেশ তাঁর ও তাঁর সাথিদের জন্য এক প্রতিকূল পরিবেশে রূপান্তরিত হয়। তাঁদের ওপর নেমে আসে অমানবিক অত্যাচার, যা পরে মুসলমানদের মদিনায় হিজরতের দিকে ধাবিত করে। হিজরত কেবল ধর্মীয় আশ্রয় গ্রহণ ছিল না, বরং এটি ছিল মক্কার গোত্রীয় ক্ষমতার বাইরে গিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রথম কৌশলগত পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়েই মুহাম্মদ (সা.) স্বাধীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে ওঠেন।
মদিনায় হিজরতের পর তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কাজ ছিল মদিনার সনদ প্রণয়ন, যা ইতিহাসের প্রথম লিখিত রাজনৈতিক চুক্তি ও প্রথম লিখিত সংবিধান হিসেবে পরিচিত। এই মদিনার সনদই ছিল মদিনায় স্বাধীন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি। ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিকে প্রণীত এই সনদ মদিনার মুসলমান, ইহুদি এবং পৌত্তলিকদের একত্র করে একটি সাধারণ জাতি গঠনে সহায়তা করেছিল। এই সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা হলো একটি কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক কর্তৃত্ব স্থাপন। এই সংবিধানের ভিত্তিতে ঘোষণা করা হয় যে মুহাম্মদ (সা.) হবেন নবগঠিত এই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান। এই ধারা মদিনার নবগঠিত রাষ্ট্রকাঠামো এবং ক্ষমতাকাঠামোর কেন্দ্রবিন্দুতে তাঁর অবস্থানকে আইনি বৈধতা দান করে।
মদিনা সনদে সব সম্প্রদায়কে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল, যেখানে কেউ কারও ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এমনকি ইহুদিদের মিত্ররাও সমান নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা ভোগ করার আইনি নিশ্চয়তা লাভ করে। এর মাধ্যমে ধর্মীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে রাষ্ট্রীয় নাগরিকত্বের ধারণা প্রবর্তন করা হয়। মদিনা সনদের মাধ্যমে মদিনা রাষ্ট্রে এক যৌথ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। সনদের ধারা অনুযায়ী, কোনো গোত্র বহিঃশত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে চুক্তিবদ্ধ গোত্রগুলোর সম্মিলিত শক্তি দিয়ে শত্রু প্রতিহত করবে ও মদিনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং চুক্তিবদ্ধ সব গোত্র যুদ্ধের ব্যয়ভার গ্রহণ করবে।
রাসুল (সা.)-এর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা সব থেকে বেশি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বৈদেশিক নীতি, আন্তগোত্রীয় সম্পর্ক নির্ধারণের মধ্য দিয়ে। যেখানে তিনি সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতি সহিষ্ণুতা দেখিয়েছেন এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে সম্মান করেছেন। তাঁর অন্যতম বৃহৎ কূটনৈতিক সাফল্য হলো হুদাইবিয়ার সন্ধি, যা পবিত্র কোরআনে ফাতহুম মুবিন নামে পরিচিত। এই সন্ধির মাধ্যমে মক্কার কুরাইশরা মদিনার রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। এই রাজনৈতিক স্বীকৃতি মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। এই সন্ধি রাসুল (সা.)-এর কূটনৈতিক প্রজ্ঞার এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত।
হুদাইবিয়ার সন্ধির পর যখন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়, মুহাম্মদ (সা.) তখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে পত্র দিয়ে ইসলামের বাণীকে বিশ্ব-দরবারে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছিলেন। যার কারণে ইসলাম আরবের গণ্ডি ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে তাঁর সামরিক কৌশলগত নেতৃত্বের ফলাফল হিসেবে মক্কা বিজয় হলো এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। মক্কা বিজয়ের পর তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। এই ক্ষমাশীল ব্যক্তিত্ব তাঁর রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সুউচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করে।
লেখক: শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে ফররুখ আহমদ (১৯১৮-৭৪) এক স্বতন্ত্র ও উজ্জ্বল প্রতিভার নাম। তাঁকে তাঁর কাব্যিক মিশনের কারণে সাধারণত ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তাঁর কাব্যচেতনা ছিল মূলত একটি সামাজিক ও আত্মিক পুনর্জাগরণের ডাক, যেখানে ইসলামি আদর্শ ও বাঙালি মুসলিমের আত্মপরিচয় নির্মাণের...
১৬ দিন আগে
মানুষকে কষ্ট দেওয়া অমানবিক নিষ্ঠুরতা। হোক সেটা কথা বা কাজকর্মে। আমরা দৈনন্দিন চেনা-অচেনা হাজারো মানুষের সঙ্গে কথা বলি। চলাচলের রাস্তায়, অফিস-আদালতে, যানবাহনে। কখনো ভেবে দেখেছি—আমার কথায় বা আচরণে কেউ কষ্ট পেল কি না? কাউকে কটুকথা বললাম কি না?
১১ ঘণ্টা আগে
ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস জমাদিউল আউয়াল। মাসটির নাম শুনলেই মনে হয় প্রশান্ত এক সময়—শীতল আবহে আত্মশুদ্ধি, তাওবা আর নতুনভাবে ইমানের জাগরণ ঘটানোর উপযুক্ত সময়। এ মাসের প্রতিটি জুমা যেমন বরকত ও রহমতের দিন, তেমনি তৃতীয় জুমাটি যেন আল্লাহর দিকে ফিরে আসার এক অনন্য সুযোগ।
১ দিন আগে
বর্তমানে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর পাওয়া যায়। এসব ক্যালকুলেটরে সম্পদের সার্বিক তথ্য দিলে সম্ভাব্য জাকাতের পরিমাণ নির্ণয় করে দেওয়া হয়। ইসলামে এ ধরনের ডিজিটাল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার সঠিক বিধান কী? এ বিষয়ে জানতে চাই।
১ দিন আগেমুফতি শাব্বির আহমদ

প্রশ্ন: বর্তমানে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর পাওয়া যায়। এসব ক্যালকুলেটরে সম্পদের সার্বিক তথ্য দিলে সম্ভাব্য জাকাতের পরিমাণ নির্ণয় করে দেওয়া হয়। ইসলামে এ ধরনের ডিজিটাল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার সঠিক বিধান কী? এ বিষয়ে জানতে চাই।
আসলাম শেখ, গোপালগঞ্জ।
উত্তর: আপনার প্রশ্নটি বর্তমান প্রযুক্তির যুগে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। জাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম এবং এর সঠিক হিসাব ও আদায় প্রতিটি সম্পদশালী মুসলমানের জন্য ফরজ। ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটরের ব্যবহার সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা নিচে তুলে ধরা হলো।
ইসলামে প্রযুক্তির ব্যবহার
ইসলাম একটি চির আধুনিক জীবনব্যবস্থা। নবী-রাসুলগণও তাঁদের যুগে দাওয়াত ও দ্বীন প্রচারে তৎকালীন প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করেছেন। সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে বর্তমান যুগেও কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন হচ্ছে ইসলামের প্রচার-প্রসার এবং ব্যক্তিগত ইবাদত পালনে সহায়তাকারী অত্যন্ত শক্তিশালী মাধ্যম।
ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর এই আধুনিক প্রযুক্তিরই একটি ফসল। প্রযুক্তি ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য যদি শরিয়তসম্মত হয়, তাহলে এর ব্যবহার নীতিগতভাবে সম্পূর্ণ জায়েজ ও অনুমোদিত।
জাকাত ক্যালকুলেটর ব্যবহারের সঠিক বিধান
ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা বৈধ হলেও, জাকাত একটি ফরজ ইবাদত হওয়ায় এর হিসাবে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। এই ক্যালকুলেটরগুলো ব্যবহারের সঠিক বিধান ও গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতার দিকগুলো নিম্নরূপ:
১. ডিজিটাল ক্যালকুলেটরকে জাকাতের হিসাবকার্যে সহায়তাকারী একটি যন্ত্র হিসেবে গণ্য করতে হবে। এটি কোনোভাবেই চূড়ান্ত নির্ভুল হিসাবের নিশ্চয়তা প্রদানকারী নয়। জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদের নিসাব (সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা সমমূল্যের সম্পদ) এবং এক বছর অতিবাহিত হওয়া—এই শর্তগুলো সঠিকভাবে পূরণ হয়েছে কি না, তা ব্যবহারকারীকেই নিশ্চিত করতে হবে।
২. ক্যালকুলেটরের হিসাব সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে ব্যবহারকারী কর্তৃক সঠিকভাবে তথ্য দেওয়ার ওপর। যদি ভুল তথ্য দেওয়া হয় (যেমন নিসাব পরিমাণ অর্থ, বর্ধনশীল সম্পদ, ঋণ ইত্যাদি ভুলভাবে প্রবেশ করানো হয়), তাহলে ক্যালকুলেটর দ্বারা প্রাপ্ত জাকাতের পরিমাণও ভুল হবে। ভুল তথ্যের কারণে হিসাব ভুল হলে এর দায় সম্পূর্ণভাবে ব্যবহারকারীর ওপর বর্তাবে।
৩. জাকাতের হিসাব অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীল। বিভিন্ন ধরনের সম্পদ, ঋণ এবং ব্যবসায়িক লেনদেনের কারণে হিসাবের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই ডিজিটাল ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে জাকাতের একটি হিসাব নির্ণয় করার পর, সেটির যথার্থতা নিশ্চিত হওয়ার জন্য একজন অভিজ্ঞ মুফতি সাহেব বা ইসলামি স্কলারের শরণাপন্ন হয়ে হিসাবটি যাচাই করে নেওয়া আবশ্যক। এটিই সতর্কতা ও ইবাদতের পূর্ণতা নিশ্চিত করার সর্বোত্তম পন্থা।
ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ এবং এটি একটি সুবিধাজনক মাধ্যম। তবে এটি শুধু একটি সহায়ক সরঞ্জাম। জাকাতদাতার প্রধান দায়িত্ব হলো, নিজে সঠিকভাবে সব তথ্য দেওয়া এবং ফরজ ইবাদত নিশ্চিত করার জন্য প্রাপ্ত হিসাব একজন বিজ্ঞ আলেমের মাধ্যমে যাচাই করে নেওয়া। এতে প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করা হলো এবং একই সঙ্গে ইবাদতের সূক্ষ্মতা ও যথার্থতা নিশ্চিত করা গেল।
উত্তর দিয়েছেন: মুফতি শাব্বির আহমদ, ইসলামবিষয়ক গবেষক

প্রশ্ন: বর্তমানে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর পাওয়া যায়। এসব ক্যালকুলেটরে সম্পদের সার্বিক তথ্য দিলে সম্ভাব্য জাকাতের পরিমাণ নির্ণয় করে দেওয়া হয়। ইসলামে এ ধরনের ডিজিটাল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার সঠিক বিধান কী? এ বিষয়ে জানতে চাই।
আসলাম শেখ, গোপালগঞ্জ।
উত্তর: আপনার প্রশ্নটি বর্তমান প্রযুক্তির যুগে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। জাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম এবং এর সঠিক হিসাব ও আদায় প্রতিটি সম্পদশালী মুসলমানের জন্য ফরজ। ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটরের ব্যবহার সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা নিচে তুলে ধরা হলো।
ইসলামে প্রযুক্তির ব্যবহার
ইসলাম একটি চির আধুনিক জীবনব্যবস্থা। নবী-রাসুলগণও তাঁদের যুগে দাওয়াত ও দ্বীন প্রচারে তৎকালীন প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করেছেন। সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে বর্তমান যুগেও কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন হচ্ছে ইসলামের প্রচার-প্রসার এবং ব্যক্তিগত ইবাদত পালনে সহায়তাকারী অত্যন্ত শক্তিশালী মাধ্যম।
ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর এই আধুনিক প্রযুক্তিরই একটি ফসল। প্রযুক্তি ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য যদি শরিয়তসম্মত হয়, তাহলে এর ব্যবহার নীতিগতভাবে সম্পূর্ণ জায়েজ ও অনুমোদিত।
জাকাত ক্যালকুলেটর ব্যবহারের সঠিক বিধান
ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা বৈধ হলেও, জাকাত একটি ফরজ ইবাদত হওয়ায় এর হিসাবে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। এই ক্যালকুলেটরগুলো ব্যবহারের সঠিক বিধান ও গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতার দিকগুলো নিম্নরূপ:
১. ডিজিটাল ক্যালকুলেটরকে জাকাতের হিসাবকার্যে সহায়তাকারী একটি যন্ত্র হিসেবে গণ্য করতে হবে। এটি কোনোভাবেই চূড়ান্ত নির্ভুল হিসাবের নিশ্চয়তা প্রদানকারী নয়। জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদের নিসাব (সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা সমমূল্যের সম্পদ) এবং এক বছর অতিবাহিত হওয়া—এই শর্তগুলো সঠিকভাবে পূরণ হয়েছে কি না, তা ব্যবহারকারীকেই নিশ্চিত করতে হবে।
২. ক্যালকুলেটরের হিসাব সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে ব্যবহারকারী কর্তৃক সঠিকভাবে তথ্য দেওয়ার ওপর। যদি ভুল তথ্য দেওয়া হয় (যেমন নিসাব পরিমাণ অর্থ, বর্ধনশীল সম্পদ, ঋণ ইত্যাদি ভুলভাবে প্রবেশ করানো হয়), তাহলে ক্যালকুলেটর দ্বারা প্রাপ্ত জাকাতের পরিমাণও ভুল হবে। ভুল তথ্যের কারণে হিসাব ভুল হলে এর দায় সম্পূর্ণভাবে ব্যবহারকারীর ওপর বর্তাবে।
৩. জাকাতের হিসাব অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীল। বিভিন্ন ধরনের সম্পদ, ঋণ এবং ব্যবসায়িক লেনদেনের কারণে হিসাবের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই ডিজিটাল ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে জাকাতের একটি হিসাব নির্ণয় করার পর, সেটির যথার্থতা নিশ্চিত হওয়ার জন্য একজন অভিজ্ঞ মুফতি সাহেব বা ইসলামি স্কলারের শরণাপন্ন হয়ে হিসাবটি যাচাই করে নেওয়া আবশ্যক। এটিই সতর্কতা ও ইবাদতের পূর্ণতা নিশ্চিত করার সর্বোত্তম পন্থা।
ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ এবং এটি একটি সুবিধাজনক মাধ্যম। তবে এটি শুধু একটি সহায়ক সরঞ্জাম। জাকাতদাতার প্রধান দায়িত্ব হলো, নিজে সঠিকভাবে সব তথ্য দেওয়া এবং ফরজ ইবাদত নিশ্চিত করার জন্য প্রাপ্ত হিসাব একজন বিজ্ঞ আলেমের মাধ্যমে যাচাই করে নেওয়া। এতে প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করা হলো এবং একই সঙ্গে ইবাদতের সূক্ষ্মতা ও যথার্থতা নিশ্চিত করা গেল।
উত্তর দিয়েছেন: মুফতি শাব্বির আহমদ, ইসলামবিষয়ক গবেষক

বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে ফররুখ আহমদ (১৯১৮-৭৪) এক স্বতন্ত্র ও উজ্জ্বল প্রতিভার নাম। তাঁকে তাঁর কাব্যিক মিশনের কারণে সাধারণত ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তাঁর কাব্যচেতনা ছিল মূলত একটি সামাজিক ও আত্মিক পুনর্জাগরণের ডাক, যেখানে ইসলামি আদর্শ ও বাঙালি মুসলিমের আত্মপরিচয় নির্মাণের...
১৬ দিন আগে
মানুষকে কষ্ট দেওয়া অমানবিক নিষ্ঠুরতা। হোক সেটা কথা বা কাজকর্মে। আমরা দৈনন্দিন চেনা-অচেনা হাজারো মানুষের সঙ্গে কথা বলি। চলাচলের রাস্তায়, অফিস-আদালতে, যানবাহনে। কখনো ভেবে দেখেছি—আমার কথায় বা আচরণে কেউ কষ্ট পেল কি না? কাউকে কটুকথা বললাম কি না?
১১ ঘণ্টা আগে
ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস জমাদিউল আউয়াল। মাসটির নাম শুনলেই মনে হয় প্রশান্ত এক সময়—শীতল আবহে আত্মশুদ্ধি, তাওবা আর নতুনভাবে ইমানের জাগরণ ঘটানোর উপযুক্ত সময়। এ মাসের প্রতিটি জুমা যেমন বরকত ও রহমতের দিন, তেমনি তৃতীয় জুমাটি যেন আল্লাহর দিকে ফিরে আসার এক অনন্য সুযোগ।
১ দিন আগে
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব কেবল একটি নতুন ধর্মীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ছিল প্রাক্-ইসলামিক আরবের গোত্রীয় সংঘাত ও নৈরাজ্যের বিপরীতে এক সুসংগঠিত, একত্ববাদী এবং সাংবিধানিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন। তাঁর নেতৃত্বের কৌশল ছিল গভীর দূরদর্শিতা, নৈতিক কর্তৃত্ব...
১ দিন আগে