Ajker Patrika

অমুসলিমদের প্রতি মহানবীর মহানুভবতা

ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২১, ১৫: ৩৪
অমুসলিমদের প্রতি মহানবীর মহানুভবতা

মানবতার ত্রাণকর্তা দয়াল নবী মুহাম্মদ (স.) ছিলেন বিশ্ববাসীর জন্য করুণার ঝরনাধারা। সব মানুষের সঙ্গেই তিনি সুন্দর, মার্জিত ও ভালোবাসার আচরণ করতেন। অমুসলিমদের প্রতিও তাঁর মহানুভবতা সর্বজনবিদিত। তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনে অমুসলিমদের সঙ্গে এমন অজস্র ঘটনা ঘটেছে, যা আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করতে পারি। এখানে কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরছি।

প্রথমেই মক্কা বিজয়কালীন জনৈক বৃদ্ধার সঙ্গে তাঁর মহত্তম আচরণের উপাখ্যানটি বলি। মক্কা বিজয়-পরবর্তী সময়ে মক্কার লোকেরা দলে দলে তাঁর ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে দূরবর্তী পাহাড়ে আশ্রয় নিতে যখন উদ্যত, তিনি সেই অবস্থা দেখে তাঁর মহানুভবতার স্বর্গীয় দ্বার উন্মোচন করে দিলেন। দেখলেন এক বৃদ্ধা তাঁর বহনক্ষমতার চেয়েও বৃহৎ এক বোঝা নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে, কিন্তু অতি কষ্টে রাস্তা অতিক্রম করছেন। প্রিয়নবী (স.) তাঁর কাছে গেলেন, বোঝাটি নিজের কাঁধে নিলেন এবং তাঁর গন্তব্যে পৌঁছে দিলেন। বৃদ্ধা তদানীন্তন আরব সমাজে পরোপকারী এই মহামানবের পরিচয় পেয়ে লজ্জায়, কৃতজ্ঞতায় ও নবী (স.)-এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন এবং সদলবলে ইসলাম কবুল করলেন।

আরেকবার প্রিয় নবী (স.)-এর বাড়িতে মেহমান এল। রাতে পরিবারের সবার জন্য রান্না করা খাবার মেহমান একাই খেল এবং নবীজির পবিত্র বিছানায় রাত যাপন করল। অনাহারে বিনিদ্র রজনী কাটিয়ে প্রভাতে নবীজি মেহমানের খবর নিতে গিয়ে দেখলেন মেহমান নেই, কিন্তু কক্ষে দুর্গন্ধ। রাগ করেননি, মেহমানকে গালি দেননি; আফসোস করলেন মেহমানের অসুস্থতার সময়ে খেদমত করতে না পারার কারণে। কক্ষে রক্ষিত মেহমানের তরবারি নিয়ে রাসুল (স.) তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। মেহমান এল, নবীজি এগিয়ে গেলেন, স্বাস্থ্যের খবর নিলেন এবং তরবারিটি হাতে ফেরত দিয়ে বললেন, রাতে আমার বাড়ির খাবার খেয়ে তোমার পেট খারাপ করেছে, আমাকে জাগালেই পারতে, আমি তোমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতাম, তুমি কষ্ট পেয়েছ, আমাকে মাফ করে দিয়ো। আর নাও, এই তোমার তরবারি। মেহমান ভাবল, যার একটা হুকুমে আমার তরবারি দিয়ে আলাদা হয়ে আমার শিরটা এই মুহূর্তে মরুভূমির তপ্ত বালুতে গড়াগড়ি খেতে পারে, সেই মানুষ আমার সঙ্গে এত বিনম্র, এত ভদ্রজনোচিত আচরণ করছেন; তিনি নিশ্চয়ই কোনো সাধারণ মানুষ নন। মেহমান তরবারিটা রাসুলের পায়ের কাছে রেখে ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন আর একত্ববাদের কালেমা পড়ে ইসলাম গ্রহণ করলেন। এই তো ইসলাম প্রসারের কাহিনি আর এমনই তো রাসুলের চারিত্রিক মাধুর্য!

অন্য একদিন মসজিদের বারান্দায় প্রিয় নবী (স.) তাঁর কিছু সঙ্গী নিয়ে বসে আছেন। এমন সময় এক লোক এল এবং মসজিদে প্রস্রাব করতে লাগল। সাহাবিরা উত্তেজিত হলেন, মারতে উদ্যত হলেন। রাসুল (স.) বললেন, পূর্ণ নিরাপদে তাকে তার কাজ শেষ করতে দাও। দয়াল নবী বুঝতে পারলেন, প্রস্রাবের মাঝখানে তাকে থামিয়ে দিলে সে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। লোকটির প্রস্রাব শেষ হওয়ার পর রাসুল (স.) তাকে সোহাগভরা কণ্ঠে ডাকলেন এবং মমতাভরে বললেন, এটি আমাদের ইবাদতের স্থান, আমাদের কাছে স্থানটি অত্যন্ত পবিত্র। প্রস্রাবের জন্য নির্ধারিত জায়গা রয়েছে। দয়া করে আমাদের প্রার্থনার জায়গায় আর এ কাজ কোরো না। লোকটি জেনেছিল, রাসুল যিনি হবেন তিনি ক্ষুব্ধ হবেন না, ক্ষেপে যাবেন না, রাগ করবেন না; আর তা পরীক্ষার জন্যই সে এ কাজ করেছিল। নবীজি তার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। এরপর সে ক্ষমা চাইল এবং ইসলাম কবুল করল।

লেখক: চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তোরা যারা রাজাকার, সময় থাকতে বাংলা ছাড়: ফেসবুকে বাকের মজুমদার

সমাবেশে দলীয় স্লোগান ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে এনসিপির বিবৃতি

কঠোর হচ্ছে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি, স্থায়ী বসবাসের আবেদনে অপেক্ষা ১০ বছর

যুদ্ধ বলিউডের সিনেমা নয়: ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান

রাজপথের চাপে কোনো বিচার করা সম্ভব নয়: চিফ প্রসিকিউটর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত