Ajker Patrika

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

পরাজিত হলে এবারও ট্রাম্পের বিশৃঙ্খলার পরিকল্পনা

  • তিন ধাপে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন ট্রাম্পের সমর্থকেরা।
  • ভোটের পর রাতেই নিজেকে জয়ী ঘোষণা করতে ট্রাম্পেরে প্রতি আহ্বান।
  • পদে পদে বাধা দেওয়ার পরিকল্পনা। গণনাকেন্দ্রে যাবেন সমর্থকেরা।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৫: ১৪
গতকাল শুক্রবার নিউ মেক্সিকোতে প্রচারণা চালান ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
গতকাল শুক্রবার নিউ মেক্সিকোতে প্রচারণা চালান ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনে হেরে গেলে এবারও বিশৃঙ্খলা করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল নিউইয়র্ক টাইমসের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার ভোটের ফল বদলে দেওয়ার জন্য তিনি ও তাঁর মিত্ররা আরও বিধ্বংসী পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন। নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে—এই অভিযোগ তোলার জন্য বেশ কিছু গ্রুপ কাজ করবে।

২০২০ সালের নির্বাচনের ফল বদলে দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসের ভবনে হামলা চালিয়েছিলেন ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকেরা। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম কালো দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয় ২০২১ সালের সেই ৬ জানুয়ারিকে। কারণ ওই দিন জো বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য কংগ্রেসে যৌথ অধিবেশনের সভা বসেছিল। সেখানে ট্রাম্পের নির্দেশে হামলা হয়েছিল।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ভোটের আর তিন দিন বাকি রয়েছে। এরই মধ্যে সেই পথে আগাচ্ছেন ট্রাম্প। ইতিমধ্যে তিনি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোয় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন।

২০২০ সালের ভোটের পর ২০২১ জানুয়ারির ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য বেশ কিছু আইনও করা হয়েছে। তবে এই আইনের ফাঁকফোকর খুঁজে বের করেছেন ট্রাম্পের সহযোগীরা। এই আইন অনুসারে, ভোট গণনার পর অঙ্গরাজ্যগুলোকে তাদের চূড়ান্ত ফল ওয়াশিংটনে পাঠাতে হবে। প্রেসিডেন্টের জয় নিশ্চিত করার জন্য যে ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতির ভোট হয়, সেই ভোটের আগেই তা পাঠাতে হবে। যদি কোনো অঙ্গরাজ্য ফল পাঠাতে না পারে, সে ক্ষেত্রে কী হবে সেটা জানানো হয়নি। আর এটা নিয়েই ফন্দি আঁটছেন ট্রাম্পের সমর্থকেরা। স্থানীয়ভাবে যাতে কোনো প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা না করা হয়, সেই উদ্যোগ নেবেন তাঁরা। প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ট্রাম্পের সমর্থকেরা এমনভাবে বাধা সৃষ্টি করবেন, যাতে অঙ্গরাজ্যগুলো চূড়ান্ত ফলাফল পাঠাতে না পারে।

২০২০ সালের ভোটের পর নির্বাচন নিয়ে রিপাবলিকানপন্থী গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছিল। ভোটিং মেশিনে জালিয়াতির অভিযোগও তোলা হয়েছিল সেই সময়। এবারও তা শুরু হয়েছে এক্সে (সাবেক টুইটার) এসব ছড়ানো হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ইলন মাস্ক নিজে এ তথ্য ছড়াচ্ছেন যে, ট্রাম্প এবার জিতে যাচ্ছেন। নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, মিথ্যা জরিপের ভিত্তিতে এসব প্রচার করছেন মাস্ক।

এ প্রসঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কাজ করা অদলীয় প্রতিষ্ঠান সেন্টার ইলেকশন ইনোভেশন অ্যান্ড রিসার্চের নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বেকার বলেন, ট্রাম্পের মিত্ররা ব্যাপক পরিমাণে অর্থ ব্যয় করছেন এটা প্রচারের জন্য যে তাঁর বিজয় অনিবার্য। এই প্রচার ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে একধরনের প্রত্যাশা সৃষ্টি করছে।

আগেভাগে ট্রাম্পকে বিজয়ী ঘোষণা

নির্বাচনের পর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য কয়েক ধাপে কাজ করার পরিকল্পনা করছেন ট্রাম্পের সমর্থকেরা। এ নিয়ে সরাসরি কথা বলেছেন ট্রাম্পের সাবেক সহযোগী সদ্য জেল থেকে মুক্তি পাওয়া স্টিফেন কেভিন বেনন। তিনি বলেছেন, ভোটগ্রহণের পর রাতেই ট্রাম্পের উচিত হবে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করা।

ট্রাম্পকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, তার শুধু বলা উচিত এই নির্বাচনে আমি জিতেছি। আমাদের একটি দল আছে। তারা যাবে এবং ভোট গণনা কেন্দ্রে এটা নিশ্চিত করবে যে ভোটে কারচুপি হচ্ছে না।

নতুন আইন অনুসারে, অঙ্গরাজ্যের আইনপ্রণেতারা এবারের নির্বাচনে ভোট গণনা পরিবর্তী প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবেন না। শুধু রাজ্যের গভর্নর এবং অন্য নির্বাহীরা কেন্দ্রীয় সরকারকে জানাবেন, কে জিতেছে এবং রাজ্যের পক্ষ থেকে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট দিতে কে যাবেন। কিন্তু ট্রাম্পের সমর্থকেরা ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, রাজ্যের আইনপ্রণেতারাই এই কাজ করবেন।

২০২০ সালে ফল বদলে দেওয়ার যারা চেষ্টা করেছিলেন তাদের একজন ট্রাম্পের সহযোগী জন ইস্টম্যান। নতুন আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, এই আইন অসাংবিধানিক।

সন্দেহ প্রকাশ

ভোট নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছে ট্রাম্পের সমর্থকেরা। নিউইয়র্ক টাইমসে খবরে বলা হয়েছে, প্রতিটি নির্বাচনে প্রযুক্তিগত এবং কর্মীদের ভুল হয়। এসব ঘটনাকে ভুলভাবে উপস্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ট্রাম্প। ইতি মধ্যেই তিনি এ নিয়ে প্রচার শুরু করেছেন।

২০২০ সালের নির্বাচনের সময় শুধু ট্রাম্প ও তাঁর একনিষ্ঠ সমর্থকেরা নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে আওয়াজ তুলেছিল। রিপাবলিকান পার্টির পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হয়নি। তবে এবার দল, দলের গুরুত্বপূর্ণ সমর্থকেরাও এ নিয়ে কথা বলা শুরু করেছেন। তারা বলছেন, একমাত্র কারচুপি করেই ট্রাম্পকে হারানো সম্ভব। পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও এ নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা শুরু করেছেন।

পদে পদে বাধা

২০২০ সালের ভোটের পর ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যখন বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা হবে তখন হামলা চালিয়েছিলেন ট্রাম্পের সমর্থকেরা। এবার পদ পদে বাধা দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। অঙ্গরাজ্যের যেসব কেন্দ্রে ভোট গণনা হবে সেখানে থেকেই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ট্রাম্পের প্রচারের শিবির বক্তব্য জানতে চাইলেও সাড়া পায়নি নিউইয়র্ক টাইমস। তবে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন, ফল যাই হোক তিনি মেনে নেবেন। এদিকে ট্রাম্পের এমন বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে বেশকিছু পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত