Ajker Patrika

ভারতকে কেন এত টাকা দিচ্ছি, তাদেরই তো অনেক আছে: ট্রাম্প

আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪: ৫৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের জাতীয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর লক্ষ্যে মার্কিন সহায়তা সংস্থাগুলোর অর্থ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা ভারতকে কেন এত অর্থ দিচ্ছি? তাদেরই তো অনেক অর্থ-কড়ি আছে।’ গতকাল মঙ্গলবার ডোনাল্ড ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন সরকারের কর্মদক্ষতা বিষয়ক দপ্তর ডিওজিই ভারতের নির্বাচনে ‘ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধি’ কর্মসূচির জন্য নির্ধারিত ২১ মিলিয়ন ডলারের তহবিল বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতি ও উচ্চ করহারসম্পন্ন ভারতকে এ ধরনের আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন নেই।

যদিও ট্রাম্প ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি তাঁর সম্মানের কথা স্বীকার করেছেন। তবে ট্রাম্প ভারতের ভোটার উপস্থিতি সংক্রান্ত উদ্যোগে অর্থায়নের ধারণার সমালোচনা করেছেন।

ফ্লোরিডায় অবস্থিত নিজ বাসভবন মার-এ-লাগোতে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের সময় ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা কেন ভারতকে ২১ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছি? তাদের নিজেদেরই প্রচুর অর্থ আছে। তারা বিশ্বের অন্যতম উচ্চ করহারসম্পন্ন দেশ। বিশেষ করে, আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে, আমরা সেখানে প্রবেশ করতেই পারি না, কারণ তাদের শুল্ক অনেক বেশি। আমি ভারত ও তাদের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করি, কিন্তু ভোটার উপস্থিতির জন্য ২১ মিলিয়ন ডলার? কেন?’

এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ডিওজিই মার্কিন করদাতাদের অর্থায়নে পরিচালিত বেশ কয়েকটি বাতিলকৃত প্রকল্পের তালিকা প্রকাশ করে। যেখানে ‘ভারতে ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধি’ কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ ২১ মিলিয়ন ডলারের কথাও উল্লেখ ছিল।

বিজেপির অমিত মালব্য ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তাঁর এক্স অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘ভোটার উপস্থিতির জন্য ২১ মিলিয়ন ডলার? এটি যে ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সরাসরি বহিরাগত হস্তক্ষেপ, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এতে কার লাভ? অবশ্যই শাসক দলের নয়!’

এদিকে, ওয়াশিংটনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের পরদিনই পায়ে ডান্ডাবেড়ি ও হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে ১১২ জন অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে। গত রোববার পাঞ্জাবের অমৃতসরের শ্রী গুরু রাম দাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিবাসীদের নিয়ে অবতরণ করে মার্কিন সামরিক বিমান।

এই ১১২ অভিবাসীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৪ জন হরিয়ানার বাসিন্দা। বাকিদের মধ্যে ৩৩ জন গুজরাটের, ৩১ জন পাঞ্জাবের, ২ জন উত্তর প্রদেশের এবং ১ জন করে হিমাচল ও উত্তরাখন্ডের নাগরিক। এর আগে, গত শনিবার রাতেও একটি মার্কিন সামরিক বিমানে ১১৯ জন ভারতীয় অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হয়। তাঁদের মধ্যে ৬৭ জন পাঞ্জাবের, ৩৩ জন হরিয়ানার, ৮ জন গুজরাটের, ৩ জন উত্তর প্রদেশের, ২ জন করে গোয়া, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থানের এবং ১ জন করে হিমাচল প্রদেশ ও জম্মু-কাশ্মীরের নাগরিক।

ফেরত পাঠানো এসব অভিবাসীদের কয়েকজন অভিযোগ করেছেন, ভ্রমণকালে তাঁদের হাতকড়া ও পায়ে শিকল পরানো হয়েছিল। অমৃতসরে পৌঁছানোর পর খোলা হয়। তবে দেশে ফেরত পাঠানো ভারতীয়দের সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করা হয়েছে, তা নিয়ে দেশটিতে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বর্ডার প্যাট্রল কর্মকর্তারা ভারতীয়দের হাতকড়া পরিয়ে এবং পা শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন। বিমান থেকে নামানোর সময় দেখে মনে হচ্ছিল, কোনো কুখ্যাত অপরাধীকে আনা হচ্ছে।

এই ঘটনার পর ভারতের বিরোধী দলগুলো কেন্দ্রের তীব্র সমালোচনা শুরু করেছে। তারা প্রশ্ন তুলছে, কেন ভারত সরকার নিজস্ব উদ্যোগে একটি ফ্লাইট পাঠিয়ে নিজের নাগরিকদের সম্মানের সঙ্গে দেশে ফেরত আনতে পারেনি।

বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগকারী সংস্থা (আইসিই) এই প্রক্রিয়া পরিচালনা করছে এবং এই সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী নিরাপত্তার জন্য বন্দীদের হাতকড়া পরানো হয়। তবে নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তাঁদের খাবার, চিকিৎসা ও টয়লেট ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হয়।

জয়শঙ্কর আরও জানান, এমন ঘটনা নতুন নয়। ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার ৭৫৬ ভারতীয়কে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ছিল ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪২ জন এবং ২০২০ সালে ১ হাজার ৮৮৯ জন।

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত ভারতীয়দের ফেরত পাঠানোর এই প্রক্রিয়া আগামী সপ্তাহগুলোতেও চলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রতি ১৫ দিন পর সামরিক বিমানের ফ্লাইটে ভারতীয় অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হবে, যত দিন পর্যন্ত না সবাই দেশে ফিরে আসে।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল থেকে প্রায় ৭ লাখ ২৫ হাজার ভারতীয় নাগরিক অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। তাই আরও অনেককে ফেরত পাঠানো হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত