Ajker Patrika

যার মাধ্যমে ফাঁদ পেতে কয়েক শ অপরাধীকে গ্রেপ্তার করল এফবিআই 

আপডেট : ০৯ জুন ২০২১, ১০: ১১
যার মাধ্যমে ফাঁদ পেতে কয়েক শ অপরাধীকে গ্রেপ্তার করল এফবিআই 

মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে ফাঁদ পেতে বিশ্বব্যাপী আট শতাধিক সন্দেহভাজন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। অস্ট্রেলিয়া পুলিশ ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এনক্রিপ্টেড মেসেজ পড়ে এই অপরাধীদের ধরেছে।

অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, মাদক সম্রাট হিসেবে পরিচিত হাকান আয়িকই নিজের অজান্তে তাদের সহায়তা করেছে। তিনি এমন মোবাইল ফোন অপরাধীদের মধ্যে গোপনে ছড়িয়ে দেন, যেটিতে অ্যানম অ্যাপটি ইনস্টল করা ছিল।

জানা গেছে, বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রচলিত কিছু মেসেজিং অ্যাপ বন্ধ করে দেওয়ায় অপরাধী চক্রগুলো নতুন এবং নিরাপদ ফোনের সন্ধানে ছিল। এরই সুযোগ নিয়ে এফবিআই তাদের গুপ্তচরদের মাধ্যমে অ্যানম অ্যাপটি ইনস্টল করা আছে এমন মোবাইল ফোন অপরাধীদের মধ্যে গোপনে ছড়িয়ে দেয়।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, `অপারেশন ট্রোজান শিল্ড' নামের অভিযানটি পরিচালনা করছে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। অ্যানম অ্যাপের মাধ্যমে এই অভিযান অস্ট্রেলিয়া পুলিশ ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা যৌথভাবে পরিচালনা করে।

অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে হাকান আয়িককে অস্ট্রেলিয়া পুলিশ চিহ্নিত করে। অস্ট্রেলিয়া পুলিশ জানায়, বহু বছর ধরে তুরস্কে বাস করে আসছিলেন হাকান আয়িক। নিজের নিরাপত্তার জন্যই হাকান আয়িক এফবিআইকে সাহায্য করতে রাজি হন।

অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ কমিশনার রিসি কেরশ বলেন, আন্ডারওয়ার্ল্ড থেকে হুমকি পাওয়ার পর তিনি দ্রুত নিজেকে আমাদের হাতে তুলে দেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয় , জোসেফ হাকান আয়িক নামের ৪২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি বেড়ে উঠেছেন সিডনিতে। তাঁর বাবা–মা ছিলেন তুরস্কের।

আয়িককে ফেসবুক গ্যাংস্টার হিসেবে উল্লেখ করে অস্ট্রেলিয়া পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, এক দশক আগেই মাদক কারবারিদের সঙ্গে যোগসাজশের কারণে গণমাধ্যমের খবর হন আয়িক। তাঁর বিলাসবহুল জীবনযাপনের কথাও তুলে ধরা হয় অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে। অস্ট্রেলিয়ার মোস্ট ওয়ান্টেড অপরাধীর তালিকায়ও নাম ওঠে তাঁর।
 
এর পরই তিনি অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে চলে যান। অল্প সময়ের জন্য ২০১০ সালে আয়িককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু পরে জামিনে বের হওয়ে আবার নিখোঁজ হয়ে যান আয়িক।
 
অস্ট্রেলিয়া পুলিশ বলছে, আয়িক বিদেশ থেকেও তাঁর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে থাকেন। এই সময়ের মধ্যে তাঁর বেশ কিছু সহযোগী পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন।
 
এই সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ান গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, আয়িক অসি কার্টেল নামের মাদক পাচারকারী প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। এই মাদক পাচারকারী প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর অস্ট্রেলিয়ায় দেড় বিলিয়ন ডলার মূল্যের মাদক চোরাচালান করতেন।

এর আগে অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম দ্য এজ, দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড ও সিক্সটি মিনিটস অস্ট্রেলিয়া যৌথভাবে তুরস্কে আয়িকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেখানেও অভিজাত এলাকায় বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন আয়িক।

তুরস্কে হাকান রেইস নামে পরিচিত ছিলেন আয়িক। সেখানে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক হিসেবেই থাকতেন তিনি। আয়িকের স্ত্রী নেদারল্যান্ডসের এবং তাঁর দুই সন্তান রয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া পুলিশের পক্ষ থেকে আজ মঙ্গলবার বলা হয়, আয়িক তাঁদের অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনিই অপরাধীদের কাছে অ্যানোম অ্যাপটি ছড়িয়ে দেন। জানা গেছে, বিশ্বের ১০০ দেশে ৩০০ অপরাধ সিন্ডিকেটের কাছেে এরকম ১২ হাজার ডিভাইস ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে অপরাধীদের লাখ লাখ মেসেজ পুলিশ কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে দেখতে পাচ্ছিলেন।

আয়িক এখন পুলিশ হেফাজতে নেই। অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশের সুপারিনটেনডেন্ট জারেদ ট্যাগগার্ট দ্য অস্ট্রেলিয়ান টেলিগ্রাফকে বলেন, আয়িক অ্যানোম অ্যাপটি সন্ত্রাসীদের মধ্যে ছড়িয়েছে, এই ডিভাইসগুলো সব জায়গায় রয়েছে।  ওই ডিভাইসগুলো যার কাছে রয়েছে, তাদের আপনি নজরদারিতে রাখতে পারবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত