Ajker Patrika

বাপ-ছেলের পুলিৎজার জয়, স্থানীয় সাংবাদিকতায় চমক

আপডেট : ১০ মে ২০২৩, ১০: ৩৪
বাপ-ছেলের পুলিৎজার জয়, স্থানীয় সাংবাদিকতায় চমক

জন আর্চিবল্ডের জীবনের সেরা মুহূর্তগুলোর মধ্যে একটি এসেছিল ২০১৮ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামা অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম সংবাদ প্রকাশক অ্যালাবামা মিডিয়া গ্রুপের পত্রিকায় প্রকাশিত ধারাবাহিক মন্তব্য প্রতিবেদনের জন্য পুলিৎজার জিতেছিলেন তিনি। 

গত সোমবার (৮ মে) এল আরেক স্মরণীয় মুহূর্ত। পৌর পুলিশ বাহিনীর বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য পুলিৎজার পেলেন তিনি, সঙ্গে তাঁর ছেলে রামসে আর্চিবল্ড। সহকর্মীদের একটি দলের অংশ হিসেবে আর্চিবল্ড স্থানীয় রিপোর্টিংয়ে দ্বিতীয়বার পুরস্কার জিতলেন।

ছেলের এই অর্জনে উচ্ছ্বসিত জন আর্চিবল্ড এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি বাকরুদ্ধ। এটি একটি বড় সম্মান। আপনার সন্তানের সঙ্গে এমন উদ্‌যাপন—এটি সোনালি মুহূর্ত।’ 

এএল ডটকমের চার সাংবাদিক ওই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এর মধ্যে বাকি দুজন হলেন অনুসন্ধানী সম্পাদক অ্যাশলি রেমকাস ও শানেল স্টিফেনস। 

সোমবার অ্যালাবামা মিডিয়া গ্রুপ দুটি পুলিৎজার জিতে নিয়েছে। প্রায় ১১০ জন সাংবাদিক নিয়ে গঠিত বার্তা বিভাগের জন্য এটি একটি বিস্ময়কর কীর্তি বলেই মনে করা হচ্ছে। সংবাদপত্র প্রকাশক প্রতিষ্ঠানটি কাইল হোয়াইটমায়ার কলামের জন্য মন্তব্য প্রতিবেদন ক্যাটাগরিতেও পুরস্কার জিতেছে। কাইল হোয়াইটমায়ার একজন রাজনৈতিক কলাম লেখক। কীভাবে অ্যালাবামার কনফেডারেট ইতিহাস আজও এই অঙ্গরাজ্যকে প্রভাবিত করে, সেটি নিয়েই তিনি ধারাবাহিক কলাম লিখেছেন। 

যেখানে পাঠকেরা এখন প্রথাগত ছাপা কাগজের সংবাদপত্র পড়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছে, করপোরেট মালিকেরা সংবাদপত্র বন্ধ করে দিচ্ছেন। সেখানে খুব কমসংখ্যক সংবাদ সংস্থার স্থানীয় সরকার বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এবং ঝুঁকিপূর্ণ সাংবাদিকতা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে। 

পুলিৎজার জেতার পর ফেসবুকে এই ছবি শেয়ার করে জন আর্চিবল্ড লিখেছেন, তোমরা অনেক পথ পেরিয়েছ বাচ্চারাএএল ডটকম বর্তমান সময়ের অর্থনৈতিক উত্থান-পতনের মধ্যে দৃঢ়ভাবে টিকে থাকতে পেরেছে। অ্যাডভান্স লোকালের মালিকানাধীন একাধিক জাতীয় সংবাদপত্রের প্রকাশক অ্যালাবামা মিডিয়া গ্রুপ তিনটি সংবাদপত্র প্রকাশ করত: দ্য বার্মিংহাম নিউজ, মোবাইল’স প্রেস-রেজিস্টার ও দ্য হান্টসভিল টাইমস। এএল ডটকমের প্রধান সম্পাদক কেলি অ্যান স্কট গত ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা দিয়েছেন, সংস্থাটি সেই সংবাদপত্রগুলো ছাপানো বন্ধ করবে। পাঠক ও বিজ্ঞাপনদাতাদের অভ্যাস পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে সেই সব সংবাদপত্রের পাঠকদের এএল ডটকমে আসার আহ্বান জানান কেলি।

তবে গত সোমবার কেলি স্কট এক সাক্ষাৎকারে বলেন, অ্যালাবামা মিডিয়া গ্রুপে পাঁচ বছর আগের তুলনায় অনেক বেশি সাংবাদিক রয়েছে। 

কেলি স্কট বলেন, ‘আমেরিকায় স্থানীয় সাংবাদিকতা এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেই সব লোকের মাধ্যমে তৈরি হওয়া গল্প ও মন্তব্য বা আলোচনা জাতীয় সংলাপে উঠে আসছে, যাঁরা নিজেরা যেখান থেকে এসেছেন সেই সব স্থানকে ভালোবাসেন। এটি দেখতে দুর্দান্ত লাগে।’ 

রামসে আর্চিবল্ড (৩১) অ্যালাবামা মিডিয়া গ্রুপের একজন ডেটা রিপোর্টার। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তাঁর বাবা জন এবং অনুসন্ধানী সম্পাদক অ্যাশলি রেমকাসের সঙ্গে যোগ দেন। এই অনুসন্ধানী দলের প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে, ব্রুকসাইড শহরের স্থানীয় পুলিশ বাহিনী তাদের রাজস্ব বাড়াতে আক্রমণাত্মক পুলিশিংয়ে জড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবেদনগুলো প্রকাশের পর পুলিশের প্রধান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। পরে রাজ্য সরকার এ নিয়ে তদন্ত শুরু করে। 

অ্যাশলি রেমকাসের অবশ্য এটি দ্বিতীয় পুলিৎজার। ২০২১ সালে বছরব্যাপী এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তিনি পুলিশের সাহায্যকারী কুকুরের আক্রমণে সাধারণ নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য তুলে এনেছিলেন। 

রেমকাস এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তাঁর কোম্পানি সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদপত্র ছাপানো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলেও তিনি অ্যালাবামার স্থানীয় সংবাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘ছাপা কাগজে আসছে নাকি অনলাইনে প্রকাশিত হচ্ছে, সেটি বিষয় নয়, বরং সাংবাদিকতাই প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি না যে পাঠকের কাছে সংবাদ পৌঁছানোর পদ্ধতি আমাদের সেই কাজটি করা থেকে বিরত রাখছে।’ 

বার্মিংহামে নিজেদের বাড়িতে গত সোমবার পুলিৎজার জয় উদ্‌যাপন করেছেন রামসে আর্চিবল্ড। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ব্রুকসাইডের অনুসন্ধানটি প্রাথমিকভাবে শহরে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎকার নেওয়া, সহকর্মীদের সঙ্গে ফোন কল এবং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে করা হয়েছিল। কারণ তখনো (করোনার কারণে) অফিসে ফেরার আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। 

জন আর্চিবল্ড বলেন, তিনি তাঁর ছেলের সাংবাদিকতায় আসা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। কারণ কয়েক দশক ধরে এই শিল্প অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকির মুখে রয়েছে। জন বলেন, কিন্তু তিনি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানতেন যে ছেলের পথ আটকে দাঁড়ানোর চেষ্টা করাটা বিফল হবে! 

‘আমি কখনই তাকে নিরুৎসাহিত করব না, কারণ আমার নিজের জীবন থেকে আমি জানি যে একমাত্র এই ব্যাপারটাই গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি আপনার কাজ থেকে কেমন অনুভূতি পাচ্ছেন।’ যোগ করেন জন আর্চিবল্ড। 

বিভিন্ন ক্ষেত্রে এবার পুলিৎজার জিতল যারা: 

জনসেবায় অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) 
ব্রেকিং নিউজে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস
অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল
ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদনে দ্য আটলান্টিকের কেইটলিন ডিকারসন
স্থানীয় সাংবাদিকতায় এএল ডটকম এবং মিসিসিপি টু ডে
জাতীয় সাংবাদিকতায় ওয়াশিংটন পোস্টের ক্যারোলিন কিচনার
আন্তর্জাতিক সাংবাদিকতায় নিউইয়র্ক টাইমস
ফিচার লেখায় ওয়াশিংটন পোস্টের এলি স্যাসলো
মন্তব্য প্রতিবেদনে এএল ডটকমের কাইল হোয়াইটমায়ার
সমালোচনায় নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনের আন্দ্রেয়া লং চু
সম্পাদকীয়তে মায়ামি হেরাল্ডের পাঁচ সাংবাদিক
সচিত্র প্রতিবেদন এবং কমেন্টারিতে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রদায়ক মোনা শালাবি
ব্রেকিং নিউজ ফটোগ্রাফিতে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের আলোকচিত্রীর দল
ফিচার ফটোগ্রাফিতে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের ক্রিস্টিনা হাউস
অডিও রিপোর্টিংয়ে গিমলেট মিডিয়ার কর্মীরা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মার্কিন সরকারে শাটডাউন: একদিনে ৩৩০০ ফ্লাইট বাতিল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সরকারি অচলাবস্থার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক হাজার ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ছবিটি নিউইয়র্ক বিমানবন্দরের। ছবি: এএফপি
সরকারি অচলাবস্থার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক হাজার ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ছবিটি নিউইয়র্ক বিমানবন্দরের। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রে উড়োজাহাজ চলাচলে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। মার্কিন সরকারে চলমান শাটডাউন বা অচলাবস্থার কারণে দেশটির বিভিন্ন এয়ারলাইনস ৩ হাজার ৩০০ টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করেছে। এক শীর্ষ কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেছেন, এভাবে চলতে থাকলে ‘বিমান চলাচল প্রায় বন্ধের পর্যায়ে নেমে আসতে পারে।’

স্থানীয় সময় গতকাল রোববার এসব ফ্লাইট বাতিল করা হয়। আর ঠিক সেই সময়ই তহবিল বিল পাস নিয়ে দীর্ঘ অচলাবস্থার ৪০ তম দিনে এসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা সরকার পুনরায় চালু করতে অস্থায়ী এক চুক্তিতে পৌঁছায়।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহ থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) ক্লান্তি ও অনুপস্থিত কর্মীদের কারণে ফ্লাইট সীমিত করার নির্দেশ দিয়েছিল। অনেক এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার (বিমান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা) অতিরিক্ত কাজের চাপ ও বেতন না পাওয়ায় কাজে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান।

মোট ১৩ হাজার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারকে ‘অপরিহার্য কর্মী’ হিসেবে গণ্য করা হয়। সরকারের শাটডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে, অর্থাৎ ১ অক্টোবর থেকে তারা বিনা বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটঅ্যাওয়্যার জানায়, কেবল রোববারই যুক্তরাষ্ট্রে ৩ হাজার ৩০৪টি ফ্লাইট বাতিল হয় এবং ১০ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়। শনিবার বাতিল হয়েছিল আরও ১ হাজার ৫০০ টির বেশি ফ্লাইট, শুক্রবার প্রায় ১ হাজার ফ্লাইট বাতিল হয়েছিল।

এফএএ-এর ধাপে ধাপে ফ্লাইট কমানোর নির্দেশনা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় মান সময় শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে দেশজুড়ে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ৪ শতাংশ কমানো হয়। সোমবার থেকে তা ৬ শতাংশ, বৃহস্পতিবারে ৮ শতাংশ, আর শুক্রবারে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা আছে।

রোববার বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি সতর্ক করেন, থ্যাঙ্কসগিভিং ছুটির আগে বিমান চলাচল একেবারেই স্থবির হয়ে যেতে পারে। তিনি ফক্স নিউজকে বলেন, ‘থ্যাঙ্কসগিভিং ঘনিয়ে এলে সবাই পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে ভ্রমণে বের হবে। তখন বিমান চলাচল প্রায় থেমে যাবে।’ ডাফি আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে না। যত দিন পর্যন্ত বিমান নিয়ন্ত্রকদের বেতন দেওয়া না হয়, তত দিন এটি আরও খারাপ হবে।’

থ্যাঙ্কসগিভিং যুক্তরাষ্ট্রে বছরের সবচেয়ে ব্যস্ত ভ্রমণ মৌসুমগুলোর একটি। ২০২৪ সালে এই সময় প্রায় ৮ কোটি মানুষ ভ্রমণ করেছিলেন। শুধু ছুটির পরের রোববারেই বিমানবন্দরে প্রায় ৩১ লাখ যাত্রী চলাচল করেছিলেন, যা ছিল রেকর্ড।

এদিকে, মার্কিন সিনেটররা জানিয়েছেন—তারা সরকার পরিচালনায় অর্থায়ন পুনরায় চালু করার বিষয়ে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে—এমন এক অন্তর্বর্তী চুক্তিতে পৌঁছেছেন। রোববার রাতে সিনেট সেই বিলের প্রাথমিক ভোটাভুটি শুরু হয়। কয়েকজন মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাট জানান, তারা রিপাবলিকানদের সঙ্গে ভোট দিয়ে সরকার পুনরায় চালু করার পক্ষে যাবেন।

তবে এই বিল কার্যকর করতে হলে সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদে তা পাস হতে হবে এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষর লাগবে। তাহলেই সরকার বন্ধের অবসান ঘটবে। তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে—সরকার পুনরায় খুললেও বিমান চলাচল দ্রুত স্বাভাবিক হবে কি না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রাম্পের বক্তব্য বিকৃতি: বিবিসির মহাপরিচালক ও হেড অব নিউজের একযোগে পদত্যাগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও হেড অব নিউজ বা বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন। ছবি: সংগৃহীত
বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও হেড অব নিউজ বা বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন। ছবি: সংগৃহীত

বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও হেড অব নিউজ বা বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক ভাষণ সম্পাদনা করে দর্শকদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগে বিবিসির ‘প্যানোরামা’ অনুষ্ঠান নিয়ে সমালোচনার পর তারা এই সিদ্ধান্ত নেন। খবর বিবিসির।

ডেভি গত পাঁচ বছর ধরে বিবিসির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি নানা বিতর্ক ও পক্ষপাতের অভিযোগের মুখে পড়েছিলেন। ব্রিটিশ আরেক সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের ফাঁস করা অভ্যন্তরীণ নথির বরাতে জানা গেছে, বিবিসির প্যানোরামা অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষণের দুটি অংশ কেটে একত্র করা হয়। ফলে মনে হয়, ট্রাম্প ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় উৎসাহ দিয়েছিলেন।

এই ঘটনার পর ব্রিটিশ রাজনীতিকেরা আশা প্রকাশ করেছেন, ডেভি ও টারনেসের পদত্যাগ বিবিসিতে পরিবর্তনের পথ খুলে দেবে। ট্রাম্প পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। বিবিসির ইতিহাসে একই দিনে মহাপরিচালক ও বার্তা বিভাগের প্রধানের পদত্যাগের ঘটনা নজিরবিহীন।

রোববার সন্ধ্যায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে টিম ডেভি বলেন, ‘সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো বিবিসিও নিখুঁত নয়। আমাদের সব সময় উন্মুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক থাকতে হবে। বর্তমান বিতর্কই আমার পদত্যাগের একমাত্র কারণ নয়, তবে তা সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে। বিবিসি সামগ্রিকভাবে ভালো করছে, কিন্তু কিছু ভুল হয়েছে, যার দায় আমাকে নিতেই হবে।’

ডেবোরা টারনেস রোববার রাতে এক বিবৃতিতে বলেন, প্যানোরামা বিতর্ক এমন অবস্থায় পৌঁছেছে, যা বিবিসির ক্ষতি করছে। তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রতিষ্ঠানে নেতাদের পূর্ণ জবাবদিহি থাকতে হয়। তাই আমি সরে দাঁড়াচ্ছি। কিছু ভুল হয়েছে, তবে আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই—বিবিসি নিউজ প্রতিষ্ঠানগতভাবে পক্ষপাতদুষ্ট—এই অভিযোগ সঠিক নয়।’ টারনেস গত তিন বছর ধরে বিবিসির নিউজ ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

টেলিগ্রাফের প্রকাশিত নথিতে আরও বলা হয়, বিবিসি আরবির ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধসংক্রান্ত প্রতিবেদনে পক্ষপাতের অভিযোগের বিষয়ে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এতে ‘পদ্ধতিগত সমস্যা’র কথাও উল্লেখ করা হয়।

এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন ‘শতভাগ ভুয়া সংবাদমাধ্যম’ ও ‘প্রচারযন্ত্র।’ সম্প্রতি সম্প্রচারে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠার পর তিনি এমন মন্তব্য করেন।

নথি অনুসারে, অনুষ্ঠানটি দুইটি ভিন্ন অংশ জোড়া লাগিয়ে এমনভাবে দেখিয়েছে, যেন ট্রাম্প সমর্থকদের ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি দাঙ্গার আগে ক্যাপিটলে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন এবং তাঁদের ‘প্রাণপণে লড়তে’ বলছেন। কিন্তু ভাষণের যে অংশে ট্রাম্প সমর্থকদের ‘শান্তিপূর্ণভাবে ও দেশপ্রেমিকের মতো নিজেদের মত প্রকাশের’ আহ্বান জানিয়েছিলেন সেই অংশ বাদ দেওয়া হয়েছিল। ভাষণের এই দুই অংশ মূলত প্রায় ৫০ মিনিটের ব্যবধানে ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শুল্ক থেকে আয়ের ২০০০ ডলার করে জনগণকে দেবেন ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ২৪
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর দেশের সব নাগরিককে ২০০০ ডলার করে ডিভিডেন্ড বা লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মূলত তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর যে রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন তা থেকে অর্জিত অর্থ থেকে এই ডিভিডেন্ড দেওয়া হবে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসের খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় গতকাল রোববার আবারও আমেরিকান নাগরিকদের ২ হাজার ডলার করে ‘ডিভিডেন্ড’ বা ‘লভ্যাংশ’ দেওয়ার প্রস্তাব তুলেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ অর্থ আসবে এই বছর শুল্ক থেকে সরকারের তোলা বিলিয়ন ডলার রাজস্ব থেকে। বিষয়টি তিনি বহুবার বলেছেন, কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন করেননি।

ট্রাম্প আবারও তাঁর শুল্কনীতি নিয়ে সরব হয়েছেন এমন এক সময়, যখন বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টে বড় আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে। পাশাপাশি, সাম্প্রতিক নির্বাচনে রিপাবলিকানদের বড় ধাক্কা লেগেছে। যেখানে ভোটাররা মূল্যস্ফীতির জন্য তাদের দায়ী করেছেন, যা আংশিকভাবে ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কের ফল।

ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘আমরা ট্রিলিয়ন ডলার আয় করছি এবং শিগগিরই ৩৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বিশাল ঋণ পরিশোধ শুরু করব। যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড বিনিয়োগ হচ্ছে, নতুন কারখানা গড়ে উঠছে সর্বত্র।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘প্রত্যেকের জন্য অন্তত ২ হাজার ডলারের একটি ডিভিডেন্ড দেওয়া হবে (অবশ্যই উচ্চ আয়ের মানুষ ছাড়া)।’

এর আগে, এই সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টে ট্রাম্পের বেশির ভাগ শুল্ক আইনগতভাবে বৈধ কি না, তা নিয়ে শুনানি হয়। বিচারপতিরা শুনানিতে ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তাঁরা ইঙ্গিত দেন, এই শুল্ক আসলে রাজস্ব সংগ্রহের এক প্রকার করের মতো কাজ করেছে—বাণিজ্য ভারসাম্যজনিত কোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার হাতিয়ার হিসেবে নয়।

যদি আদালত শেষ পর্যন্ত রায় দেয় যে এসব শুল্ক অবৈধ ছিল, তাহলে সরকারকে ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ আমদানিকারকদের ফেরত দিতে হতে পারে। রোববার এবিসি নিউজের দিস উইক—অনুষ্ঠানে ট্রেজারি সচিব বা অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, শুল্কের উদ্দেশ্য রাজস্ব আদায় নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভারসাম্য আনা।

ট্রাম্প এই বছর একাধিকবার এমন ‘শুল্ক ডিভিডেন্ড’ দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে সম্প্রতি তিনি নির্দিষ্টভাবে ২ হাজার ডলার পরিমাণের কথাই বলছেন। সুপ্রিম কোর্ট কবে এই শুল্ক মামলার রায় দেবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। যদি আদালত শুল্ক বহাল রাখে, তাহলে নতুন প্রশ্ন উঠবে—এই ডিভিডেন্ড দেওয়ার অনুমোদন আদৌ আছে কি না, কারা এটি পাবেন, আর এতে সরকারের ঋণ পরিশোধের প্রচেষ্টায় কতটা প্রভাব পড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৪০ দিন পর মার্কিন সরকারের অচলাবস্থা অবসানে ঐকমত্য সিনেটে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিল। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিল। ছবি: সংগৃহীত

অবশেষে ৪০ দিন পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের শাটডাউন বা অচলাবস্থা শেষ হওয়ার সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেছে। মার্কিন সিনেট রিপাবলিকান পার্টি প্রস্তাবিত একটি বিলের পক্ষে ভোট দিতে যাচ্ছে, যা দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের সরকারি অচলাবস্থা অবসানের পথ খুলে দিতে পারে।

একদল মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাট সিনেটরের সঙ্গে রিপাবলিকান পার্টির সমঝোতার পর এই অগ্রগতি এসেছে। শর্ত হলো—রিপাবলিকানরা আগামী ডিসেম্বরে মেয়াদোত্তীর্ণ হতে যাওয়া স্বাস্থ্যসেবা ভর্তুকি নিয়ে উত্থাপিত বিলে যদি ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, তাহলে ডেমোক্র্যাটরা এই তহবিলের বিলে ভোট দেবে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত এই তহবিল প্যাকেজে কিছু সরকারি খাত—যেমন খাদ্য সহায়তা ও আইনসভা শাখার অর্থায়ন—চলতি অর্থবছর পর্যন্ত চালু রাখার বিলও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই প্যাকেজের পক্ষে আট ডেমোক্র্যাট সিনেটর ভোট দেন।

ওয়াশিংটন ডিসি থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক মাইক হান্না জানিয়েছেন, ডেমোক্র্যাটদের সমর্থনের ফলে সিনেট এখন অচলাবস্থা ভাঙার জন্য প্রয়োজনীয় ৬০ ভোট পেয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘এটিকে ক্লোচার ভোট বলা হয়। এর মাধ্যমে সিনেট সম্মত হয়েছে তহবিল সংক্রান্ত আলোচনা চালিয়ে যেতে এবং সরকার পুনরায় চালুর জন্য প্রয়োজনীয় বিলগুলো পাসের প্রক্রিয়া শুরু করতে।’

হান্না আরও বলেন, ‘ক্লোচার ভোটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—এটি একবার ৬০ শতাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হয়ে গেলে পরবর্তী সব ভোট সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নেওয়া যায়। অর্থাৎ, সিনেটে এখন বিল ও অর্থায়ন প্রস্তাব পাস হওয়া অনেকটাই নিশ্চিত।’

তবে এই সংশোধিত প্যাকেজটি প্রতিনিধি পরিষদে পাস হতে হবে এবং এরপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষরের জন্য পাঠাতে হবে। পুরো প্রক্রিয়ায় কয়েক দিন সময় লাগতে পারে। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ফ্লোরিডায় সপ্তাহান্তের ছুটি কাটিয়ে হোয়াইট হাউসে ফিরে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘দেখে মনে হচ্ছে, আমরা সরকার শাটডাউন অবসানের খুব কাছাকাছি।’

বর্তমানে টানা ৪০ দিন ধরে চলা এই অচলাবস্থার কারণে হাজারো ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার সরকারি কর্মচারী কর্মবিরতিতে গেছেন এবং লাখো আমেরিকানের খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত