Ajker Patrika

পাকিস্তানে ট্রেন ছিনতাইয়ের নেপথ্যে কারা, কী চায় তারা

অনলাইন ডেস্ক
বেলুচ লিবারেশন আর্মির কয়েক সদস্য। ছবি: সংগৃহীত
বেলুচ লিবারেশন আর্মির কয়েক সদস্য। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানে গতকাল মঙ্গলবার বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীরা একটি ট্রেন ছিনতাই করে প্রায় ৫০০ যাত্রীকে জিম্মি করে। পরে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে বালুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। এই সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তানে স্বাধীনতার দাবিতে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।

নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাতভর অভিযানে সেনাবাহিনী অন্তত ১৫৫ জন জিম্মিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে এবং ২৭ বিদ্রোহীকে হত্যা করেছে।

অন্যদিকে বিএলএ দাবি করেছে, তারা পাকিস্তানের ৩০ জন সেনা সদস্যকে হত্যা করেছে এবং একটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।

বুধবার যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, বিদ্রোহীরা কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে বলান পার্বত্য অঞ্চলে হামলা করে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে তারা রেললাইনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ট্রেনটিকে থামিয়ে দেয় এবং এটিকে মাশকাফ টানেলের ভেতর আটকে ফেলে।

বালুচ লিবারেশন আর্মি কারা?

‘বিএলএ’ বেলুচিস্তানের অন্যতম বৃহৎ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। পাকিস্তানের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও এটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত।

এই গোষ্ঠী এবং অন্যান্য বিদ্রোহী সংগঠন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে, তারা বেলুচিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ—তেল ও খনিজ সম্পদ—অন্যায্যভাবে শোষণ করছে। বিদ্রোহীরা দাবি করে, ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে স্বায়ত্তশাসিত ‘কালাত খানাত’ বা বেলুচ খানাতকে চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য করে পাকিস্তানে সংযুক্ত করা হয়েছিল।

বিএলএ সংগঠনটি বহু বছর ধরে পাকিস্তানের বেসামরিক নাগরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে আসছে। তবে খনিজ সম্পদ আহরণ প্রকল্পগুলোই তাদের হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তু। পর্বতসংকুল এই অঞ্চলটি বিদ্রোহীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবেও পরিচিত।

সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্টে বিদ্রোহীরা একের পর এক হামলা চালিয়ে প্রায় ৭০ জনকে হত্যা করেছে। এর আগে ২০২৩ সালে তারা করাচির বিমানবন্দরের কাছে একটি হামলা চালিয়ে দুই চীনা নাগরিককে হত্যা করে। এ ছাড়াও ইতিপূর্বে তারা নারীদের আত্মঘাতী বোমা হামলায় ব্যবহার করেছে। ধারণা করা হয়, চীনা খনন প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবেই তারা এসব করছে।

ইসলামাবাদের গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ’-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিএলএ ১ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে।

কেন ট্রেনে হামলা চালানো হলো?

বিএলএ দাবি করেছে, তারা বালুচ রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি চায়। এসব বন্দীকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী গোপন অভিযানে আটক করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সংগঠনটি দাবি করেছে—তারা শুধুমাত্র নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের জিম্মি করেছে। আর যাত্রারত সাধারণ নাগরিক, বিশেষ করে নারী, শিশু ও প্রবীণদের ছেড়ে দিয়েছে।

তারা পাকিস্তান সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, তাদের দাবি না মানলে বা সামরিক অভিযান চালানো হলে সব বন্দীকে হত্যা করা হবে এবং ট্রেন ধ্বংস করা হবে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, হামলাকারীরা আত্মঘাতী বোমা পরিহিত ব্যক্তিদের কিছু জিম্মির পাশে বসিয়ে রেখেছে। বিএলএ দাবি করেছে, তারা ২১৪ জনকে আটক রেখেছে। তবে পাকিস্তানি কর্মকর্তারা বলছেন, হামলার সময় ট্রেনে অন্তত ৪২৫ জন যাত্রী ছিলেন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এবং প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘সন্ত্রাসীদের নির্মূল করা হবে।’

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং সকল জিম্মির অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত