Ajker Patrika

সৌদি যুবরাজকে সাইকোপ্যাথ, খুনি বললেন সাবেক শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা

সৌদি যুবরাজকে সাইকোপ্যাথ, খুনি বললেন সাবেক শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে একজন সাইকোপ্যাথ ও খুনি বলে অভিহিত করেছেন দেশটির সাবেক শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তিনি বর্তমানে কানাডায় আশ্রিত। 

সম্প্রতি সিবিএস নিউজের সিক্সটি মিনিটস অনুষ্ঠানে দেওয়ার এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমবিএসের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ করেছেন। সাদ আল জাবরি নামে ওই সাবেক কর্মকর্তা এমবিএসকে সৌদি জনগণ, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং পৃথিবীর জন্য হুমকি বলে বর্ণনা করেছেন। 

যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফকে হটিয়ে ২০১৭ সালে সৌদি রাজতন্ত্রের ক্ষমতার মসনদ দখল করেন এমবিএস। ওই সময় তিনি নায়েফসহ রাজ পরিবারের বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেন। 

সাক্ষাৎকারে এমবিএসকে ‘সাইকোপ্যাথ’ বলে উল্লেখ করার ব্যাখ্যা চাইলে সাদ আল জাবরি বলেন, তিনি একজন সাইকোপ্যাথ, মানুষের প্রতি তাঁর সহানুভূতি নেই। তাঁর আবেগ বলে কিছু নেই। কখনোই অভিজ্ঞতা থেকে শেখেন না। আমরা এই খুনির নৃশংসতা এবং অপরাধের সাক্ষী। 

যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ সাবেক এ কর্মকর্তার এমন বক্তব্যের ব্যাপারে মন্তব্য চাইলে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র সিবিএসকে জানিয়েছে, সাদ জাবরি দীর্ঘদিন নীরব ছিলেন। অনেকটা মরিয়া হয়েই তিনি এমন সাক্ষাৎকার দিয়ে থাকতে পারেন। 

সাদ আল জাবরির বর্তমান বয়স ৬২ বছর। আট সন্তানের জনক। ক্যারিয়ার শুরু করেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে। দ্রুতই সৌদি গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ পদে আসীন হন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে তাঁর পিএইচডি ডিগ্রি রয়েছে। এর আগে তাঁকে ওভ্যাল অফিসে মার্কিন রাষ্ট্রদূত, মার্কিন সামরিক কমান্ডার এবং সিআইএর সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মাইকেল মোরেলের সঙ্গে দেখা গেছে। 

মোরেল বলেছেন, সাদ তাঁর দেশের প্রতি অনুগত ছিলেন। তাঁকে যথেষ্ট সম্মানও করা হতো। কিন্তু হঠাৎ করে ২০১৭ সালে তিনি মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরোধী শিবিরে নিজেকে আবিষ্কার করেন। সেই সময়ের যুবরাজ নায়েফ ছিলেন তাঁর বস। সাদ তখন কানাডা পালিয়ে যান। কিন্তু দুজন সন্তানসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য দেশেই থেকে যায়। ছেলেকে এমবিএস প্রশাসন নির্যাতনও করেছে বলে অভিযোগ করেছেন সাদ। 

সাদ বলেন, কানাডা থাকাকালে তাঁকে সেখানে সৌদি মিশন থেকে একশ হাত দূরে থাকতে বলা হয়। হত্যার তালিকায় তাঁর নাম প্রথমে আছে বলেও জানানো হয়। 

তিনি বলেন, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝিতে অটোয়া বিমানবন্দরে ছয় জনের একটি দল অবতরণ করেছিল। ওই টিমের সদস্যরা কাস্টমসকে মিথ্যা তথ্য দেন। বলেন, তাঁরা কেউ কাউকে চেনেন না। তাঁদের কাছে সন্দেহজনক ডিএনএ বিশ্লেষণ ছিল। পরে ওই দলটিকে ফেরত পাঠানো হয়। এভাবে ওই হত্যা চেষ্টা থেকে বেঁচে যান বলে দাবি করেন সাদ। 

সাক্ষাৎকারে সাদ আরও দাবি করেন, ২০১৪ সালে তৎকালীন বাদশাহ আব্দুল্লাহকে হত্যা করার ইচ্ছাপোষণের একটি ভিডিও সম্পর্কে তিনি জানতেন। 

সৌদি আরবের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান সাদ আল জাবরিসৌদি প্রশাসনের কার্যত প্রধান হওয়ার চার বছর আগে এমবিএস নাকি বাহাদুরি করে বলেছিলেন, তাঁর কাছে রাশিয়া থেকে আনা একটি বিষ মেশানো আংটি (অঙ্গুরি) আছে। হাত মেলালেই বাদশাহ আব্দুল্লাহ মারা যাবেন। 

এ ব্যাপারে সৌদি সরকার সিবিএসকে একটি বিবৃতিতে বলেছে, সাদ আল জাবরি সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নাম করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য বিকৃতি এবং ভুল পথে পরিচালিত করার দীর্ঘ রেকর্ড রয়েছে। তিনি তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ঢাকতেই এই কৌশল নিয়েছেন। 

এমবিএসের বাবা সালমান বিন আব্দুল আজিজ ২০১৫ সালে তৎকালীন বাদশাহ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পর সিংহাসনে আরোহন করেন। বর্তমানে তিনিই আনুষ্ঠানিকভাবে সৌদি আরবের শাসক। কিন্তু সবাই জানে, কার্যত শাসক মোহাম্মদ বিন সালমান। 

সাদ আল জাবরি সেই সময়ের যুবরাজ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন নায়েফের ডান হাত ছিলেন। তিনি এমবিএসের চাচাত বড় ভাই এবং সাবেক প্রতিদ্বন্দ্বী। 

সাদ ২০২০ সালে ওয়াশিংটনে এমবিএসের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে খুঁজে বের করে হত্যার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে চর নিয়োগ করেছেন এমবিএস। ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাসোগিকে হত্যার কয়েক সপ্তাহ পরই এই ঘাতক দল যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয় বলে দাবি করেন সাদ। 

সাবেক যুবরাজ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নায়েফের অধীনে থাকাকালে সাদ আল জাবরিই ছিলেন সৌদি আরব এবং পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। বিশেষ করে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ার হামলার পর পশ্চিমের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন তিনি। 

সিআইএর সাবেক উপপরিচালক (পরে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক) মাইকেল মোরেল সিবিএসকে বলেন, সাদ আল জাবরির ভূমিকার কারণে বহু সৌদি এবং আমেরিকান নাগরিকের জীবন রক্ষা পেয়েছে। 

 ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখী দুটি বিমানে বোমা রাখার পরিকল্পনা করেছিল আল কায়েদা। এই তথ্য আগেই ফাঁস করে দিয়েছিলেন সাদ আল জাবরি। তাঁর তথ্যের ভিত্তিতেই মার্কিন কর্মকর্তারা আল কায়েদার পরিকল্পনা ভেস্তে দেয় বলে জানান মাইকেল মোরেল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত