জাহাঙ্গীর আলম
গতকাল শুক্রবার ইসরায়েলের হাইফা শহরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আহত তিন ব্যক্তি এখনো রামবাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ এই খবর জানিয়েছে।
হাসপাতালের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়েছে, আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর।
সংবাদ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সামান্য আহত কয়েকজনকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এই হামলা এমন এক সময়ে ঘটে যখন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এই ধরনের ঘটনাগুলো মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলছে এবং আঞ্চলিক সংঘাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ দাবি করেছেন, ইরানের কোম শহরে একটি অ্যাপার্টমেন্টে চালানো হামলায় ইরানের কুদস ফোর্সের ফিলিস্তিনি কর্পসের কমান্ডার সাঈদ ইজাদি নিহত হয়েছেন।
এর আগে, তেহরান থেকে ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত কোম শহরের একটি অ্যাপার্টমেন্টে ইসরায়েলি বিমান হামলা চালায়, যাতে একজন ১৬ বছর বয়সী কিশোর নিহত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়, এই দুজন একই হামলায় নিহত হয়েছেন কিনা।
ইজাদির মৃত্যুর ঘোষণা দিয়ে কাৎজ বলেছেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে হামলার আগে হামাসকে অর্থায়ন ও অস্ত্র দিয়েছিলেন ইজাদি।
কাৎজ আরও বলেন, ইজাদি হত্যা ইসরায়েলি গোয়েন্দা ও বিমানবাহিনীর জন্য একটি বিশাল অর্জন, নিহত এবং অপহৃতদের জন্য ন্যায়বিচার। ইসরায়েলের দীর্ঘ হাত তার সব শত্রুদের কাছে পৌঁছাবে।
এই ঘটনা ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ইরানের কুদস ফোর্সকে এই অঞ্চলে বিভিন্ন ‘প্রক্সি’ গোষ্ঠীকে সমর্থন করার জন্য অভিযুক্ত করে আসছে, এর মধ্যে হামাসও রয়েছে। ইরানের পক্ষ থেকে এখনো এই দাবির কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা একটি ইরানি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। দখলকৃত গোলান মালভূমি এলাকার আকাশে ড্রোনটি প্রবেশ করেছিল।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরও জানিয়েছে, ড্রোনটি একটি জনবসতিহীন এলাকায় বিধ্বস্ত হয়েছে।
ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাত শুরুর পর থেকে ‘জায়নবাদী শাসনের গুপ্তচর সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার’ অভিযোগে ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোম প্রদেশের গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান। ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) পরিচালিত ফার্স নিউজ এজেন্সি এ খবর জানিয়েছে।
ফার্স নিউজ এজেন্সি আরও জানায়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ‘জনমতকে বিভ্রান্ত করা এবং অপরাধী শাসকগোষ্ঠীকে (ইসরায়েল) সমর্থন’ করার অভিযোগও আনা হয়েছে।
তবে, অভিযুক্ত ব্যক্তি বা তাদের বিরুদ্ধে আনা নির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। এই গ্রেপ্তার এমন এক সময়ে ঘটল যখন ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে ১৩ জুন থেকে সরাসরি সামরিক উত্তেজনা চলছে, যা আঞ্চলিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সারের বরাত দিয়ে জার্মান সংবাদপত্র বিল্ড জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি অন্তত দুই বছরের জন্য পিছিয়ে গেছে।
সার বলেছেন, ‘আমাদের শুনেছি, আমরা ইতিমধ্যে তাদের পারমাণবিক বোমা তৈরির সম্ভাবনাকে অন্তত দুই বা তিন বছরের জন্য বিলম্বিত করেছি।’
তিনি আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইসরায়েলের হামলা বন্ধ করার কোনো উদ্দেশ্য নেই।
সার বলেন, ‘এই হুমকি দূর করার জন্য আমরা সেখানে যা যা করতে পারি, তার সবকিছুই করব।’
পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা করছে না বলে বারবার দাবি করেছে ইরান। তারা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধু বেসামরিক উদ্দেশ্যে।
ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় শহর ইস্পাহানে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস পরিচালিত ফার্স নিউজ এজেন্সি এই তথ্য জানিয়েছে।
এই শহরেই ইরানের বৃহত্তম পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র ইস্পাহান নিউক্লিয়ার টেকনোলজি সেন্টার অবস্থিত।
ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) বৈঠকে যোগ দিতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি তুরস্কে পৌঁছেছেন। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইয়ং জার্নালিস্টস ক্লাব জানিয়েছে, আজ শনিবার এই বৈঠকে ৪০ জনেরও বেশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
আরাকচি গতকাল শুক্রবার জেনেভায় ইউরোপীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করার পর আজ ওআইসি বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন।
ইরানে ইসরায়েলি হামলার পর সংঘাত কমানোর প্রচেষ্টায় তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে দুইবার ফোনালাপ করেছে বলে জানা গেছে।
গতকাল ট্রাম্প ইসরায়েলকে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধ করার জন্য চাপ দেওয়ার সম্ভাবনাকে হালকা করে দেখিয়েছেন। তিনি কূটনৈতিক সমাধানের জন্য দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছেন।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের আজকের বৈঠকের ঠিক আগে ইরাকের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে ৫০টি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরাকের প্রতিনিধি এ কথা বলেছেন।
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, ইরাকের জাতিসংঘ মিশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আব্বাস কাযম ওবায়েদ আল-ফাতলাওয়ি নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, যুদ্ধবিমানগুলো সিরিয়া-জর্ডান সীমান্ত অঞ্চল থেকে এসেছিল। তিনি জানান, প্রথমে ২০টি যুদ্ধবিমান প্রবেশ করে। পরে আরও ৩০টি যুদ্ধবিমান ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলের দিকে যায়। এই বিমানগুলো বসরা, নাজাফ ও কারবালা শহরের আকাশসীমা অতিক্রম করে।
আল-ফাতলাওয়ি আরও বলেন, এই আকাশসীমা লঙ্ঘন আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থী। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘পবিত্র স্থান ও অঞ্চলগুলোর ওপর এ ধরনের হুমকি আমাদের জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, কারণ এসব ধর্মীয় স্থান আমাদের জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জেনেভায় স্পষ্টভাবে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ হলে এবং দোষীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা গেলে ইরান আবারও কূটনৈতিক আলোচনায় ফিরতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং এটি সবসময় আইএইএ’র পর্যবেক্ষণ ও নিরাপত্তার আওতায় পরিচালিত হয়ে আসছে। ফলে এমন একটি রাষ্ট্রের পারমাণবিক স্থাপনায় সশস্ত্র হামলা করা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন এবং একটি যুদ্ধাপরাধ।
আরাগচি জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ (ই-থ্রি) ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীরবতার বিষয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এই আগ্রাসনের নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হওয়ায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইরান কূটনৈতিক পথে ফিরে আসতে প্রস্তুত, তবে সেটা তখনই সম্ভব যখন আগ্রাসন বন্ধ হবে এবং দোষীদের অপরাধের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি করা হবে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ইরানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা কোনোভাবেই আলোচনার বিষয় নয়।’
আমেরিকার সঙ্গে ইসরায়েল বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাঘচি। তিনি বলেন, ইসরায়েলের হামলা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনীতিকভাবে বিশ্বাসঘাতকতা।
শুক্রবার (২০ জুন) জর্ডানের সংবাদমাধ্যম রয়া নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইরানে ইসরায়েলের হামলা যুক্তরাষ্ট্রে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। তিনি এ হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, তেহরান এবং ওয়াশিংটন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একটি ‘অত্যন্ত সম্ভাবনাময় চুক্তির’ পথে ছিল।
জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের আগে আরাঘচি বলেন, আমরা যখন একটি চলমান কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিলাম, তখনই আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ শুক্রবার বলেছেন, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে রক্তপাত বন্ধে রাশিয়া কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি মনে করছেন, এই সংকটের একটি কূটনৈতিক সমাধান সম্ভব।
পুতিন বলেন, ‘আমরা আমাদের ইসরায়েলি ও ইরানি বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি” এবং মস্কোর দেওয়া প্রস্তাবগুলো বর্তমানে আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, রাশিয়া সংকটের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তিতে আগ্রহী এবং দ্বন্দ্বময় পরিস্থিতি শান্তভাবে সমাধানে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত। তবে ঠিক কী ধরনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানাননি রুশ প্রেসিডেন্ট।
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের হাইফা শহরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। ভিডিওটি কিছুক্ষণ আগের বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় আজ শুক্রবার সন্ধ্যার পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালিয়েছে।
এদিকে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের বুশেহর প্রদেশে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইয়াং জার্নালিস্টস ক্লাব।
এর আগে ইসরায়েলের দিকে একযোগে বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল ইরান। এই হামলার জবাবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ জানায়, এই হামলা প্রতিহত করতে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে এবং নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে বিমান হামলার সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে উঠেছে। সাধারণ মানুষ দ্রুত বাংকার বা নিরাপদ এলাকায় ছুটছেন।
রয়টার্স জানায়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহতের ঘোষণা দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই জেরুজালেম ও তেলআবিবের আকাশে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন আজ শুক্রবার নতুন করে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর আওতায় রয়েছে হংকংভিত্তিক দুটি ইরানি প্রতিষ্ঠানসহ সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত বেশ কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক নোটিশ অনুযায়ী, ট্রেজারির অফিস অব ফরেন অ্যাসেট কন্ট্রোল (ওফাক) অন্তত ২০টি প্রতিষ্ঠান, ৫ জন ব্যক্তি এবং ৩টি জাহাজকে এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছে।
এই নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য মূলত ইরানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক ও সামরিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা এবং দেশটির কথিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন রোধ করা।
ইসরায়েল নতুন করে ইরানে হামলা শুরু করেছে বলে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম আইআরআইবির অধীন ইয়াং জার্নালিস্টস ক্লাব। তারা বলছে, ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরে বুশেহরে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে।
আল–জাজিরার খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দেশটির সামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে।
জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে বক্তব্য শুরু করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ইসরায়েলের হামলা ‘নিকৃষ্ট যুদ্ধাপরাধ’।
আরাঘচি আরও কী বলেছেন, তা শিগগিরই জানানো হবে।
বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলের দিকে আবারও একযোগে সালভো ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ জানিয়েছে, এই হামলা প্রতিহত করতে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে এবং নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে বিমান হামলার সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে উঠেছে। সাধারণ মানুষ দ্রুত বাংকার বা নিরাপদ এলাকায় ছুটছেন।
এদিকে রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহতের ঘোষণা দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই জেরুজালেম ও তেলআবিবের আকাশে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে তারা বিমানবাহিনীকেও ব্যবহার করছে।
এই হামলা ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার সর্বশেষ ধাপ, যা পুরো অঞ্চলে বড় ধরনের সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সালভো ক্ষেপণাস্ত্র হলো মূলত একযোগে বহু ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা। ইসরায়েলি মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেদ করতে সংঘাতের শুরু থেকেই এই কৌশল অবলম্বন করছে ইরান।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, দেশটির বিমানবাহিনী ইরানের পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে নতুন করে হামলা চালাচ্ছে।
আইডিএফ-এর মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা ইরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তুগুলোতে নির্ভুলভাবে আঘাত করছি।’ তবে ঠিক কোন কোন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হচ্ছে বা এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
গত ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসরায়েল ইতিমধ্যে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন সামরিক অবকাঠামোয় বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে।
ইরানের হামলায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটি ইরানের হামলা ঠেকাতে ক্রমশ ব্যর্থ হয়ে পড়ছে। ইসরায়েলের আয়রন ডোম ও আকাশ প্রতিরক্ষা ফাঁকি দিয়ে একের পর এক মূল ভূখণ্ডে আছড়ে পড়ছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র-জার্মান থেকে সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে ইসরায়েলে নামছে এক ডজনের বেশি বিমান।
শুক্রবার (২০ জুন) মিডল ইস্ট মনিটরের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, ইরানের সঙ্গে চলমান সংঘাতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি থেকে ১৪টি সামরিক কার্গো বিমান ইসরায়েলে এসে পৌঁছেছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বৃহস্পতিবার দেওয়া বিবৃতিতে জানানো হয়, এসব বিমান সামরিক সরঞ্জাম ও রসদ বহন করছে, যা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ‘অপারেশনাল প্রস্তুতি’ জোরদারে সহায়তা করবে। এই চালানটি ১৩ জুন ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর গঠিত আকাশ ও সমুদ্রপথে সহায়তা চ্যানেলের অংশ।
তেহরানের একটি হাসপাতালে আবারও ইসরায়েলি বোমা হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগের প্রধানের বিবৃতির বরাত দিয়ে ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানায়, হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত এটা তৃতীয় হাসপাতাল, যা ইসরায়েলি হামলার শিকার হলো। হামলায় ছয়টি অ্যাম্বুলেন্স ও একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র নির্মম হামলার শিকার হয়েছে।
বিবৃতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, সাত দিনের কাপুরুষোচিত আগ্রাসনে ইসরায়েল ছয়টির বেশি আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
ইসরায়েলের হামলা এবং যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির প্রতিবাদে ইরানের রাজধানী তেহরানে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে জানানো হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা ইরানের শীর্ষ নেতাদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে স্লোগান দেন। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ‘আমার নেতা, তোমার জন্য জীবন দেব’সহ নানা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা যায়, তেহরানের রাজপথে মানুষ ইসরায়েলি হামলায় নিহত কমান্ডারদের ছবি ও ইরান, ফিলিস্তিন এবং হিজবুল্লাহর পতাকা হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। প্রতিবাদকারীরা একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন।
রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমের প্রতিবেদনে এক উপস্থাপক বলেন, আজকের শুক্রবার গোটা দেশের একাত্মতা প্রতিরোধের প্রতীক।
ইরানের ‘শাসনব্যবস্থার প্রতীক’ হিসেবে চিহ্নিত লক্ষ্যবস্তুতে হামলা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এসব হামলার উদ্দেশ্য হচ্ছে ইরান সরকারকে দুর্বল করে ফেলা।
ওই বিবৃতির বরাত দিয়ে আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, কাৎজ বলেছেন, ‘আমরা (ইরানের) শাসনব্যবস্থার সব প্রতীক ও জনগণের ওপর দমন-পীড়নের জড়িতদের, যেমন বাসিজ (মিলিশিয়া); এবং রেভল্যুশনারি গার্ডের মতো ক্ষমতার কেন্দ্রগুলোতে আঘাত হানব।’
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্য ইসরায়েলের যুদ্ধনীতিতে একটি স্পষ্ট পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে—পরমাণু কর্মসূচির ওপর সীমিত হামলা থেকে এখন ইরান সরকারকে অস্থিতিশীল করার কৌশলের দিকে যাচ্ছে দেশটি।
লেবাননের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি (এনএনও) জানিয়েছে, একটি ইসরায়েলি ড্রোন দক্ষিণ লেবাননের টায়ার জেলার আল-আবাসিয়াহ শহরে একটি গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
এনএনএ জানিয়েছে, এই হামলায় একজন নিহত হয়েছেন।
গত বছরের নভেম্বর থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েল লেবাননে হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তু বলে দাবি করা স্থানগুলোতে, যার মধ্যে রাজধানী বৈরুতও রয়েছে, নিয়মিত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসরায়েলের ইয়েদিওথ আহরোনোথ পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত ৮ হাজারের বেশি ইসরায়েলি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। পত্রিকাটি ইসরায়েলি সম্পত্তি কর ক্ষতিপূরণ তহবিলের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ভবন বা যানবাহনের ক্ষতির জন্য প্রায় ৩০ হাজার ক্ষতিপূরণের আবেদন জমা পড়েছে।
মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে ইরান ও মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আবদেলাত্তি তাঁর ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এবং মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে পৃথক টেলিফোন আলাপে এই অঞ্চলের উত্তেজনা নিরসনের উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আবদেলাত্তি ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং অঞ্চলে একটি পূর্ণাঙ্গ সংঘাতের ঝুঁকি সীমিত করতে যুদ্ধবিরতি ও কূটনীতির গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেছেন, ইসরায়েলি হামলা চলতে থাকায় তিনি কারও সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত নন, যদিও জেনেভায় ইউরোপীয় প্রতিপক্ষদের সঙ্গে তাঁর একটি নির্ধারিত বৈঠক রয়েছে আজ।
আরাকচি এরই মধ্যে জেনেভায় পৌঁছেছেন। সেখানে ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এই দেশগুলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সৃষ্টি সংঘাত নিরসনে কূটনীতির পথে ফিরে আসার একটি উপায় তৈরি করতে চাচ্ছে। গত সপ্তাহে ইসরায়েল ইরানে হামলা শুরু করার পর এটিই প্রথম বড় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা।
তবে, ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া মন্তব্যে আরাকচি বলেছেন, ইসরায়েল তাঁর দেশের ওপর হামলা চালিয়ে গেলে তিনি কথা বলতে প্রস্তুত নন। তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধের পর, আমি মনে করি দেশগুলো এই আগ্রাসন থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নেবে।’
জেনেভার আলোচনায় অংশ নিতে যাওয়া ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি গতকাল বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে একটি কূটনৈতিক সমাধান অর্জনের একটি সুযোগ এখন রয়েছে।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএনইএ) জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ইরানের খোন্দাব হেভি ওয়াটার রিসার্চ চুল্লিতে হামলা করেছে ইসরায়েল। এতে স্থাপনার প্রধান ভবনগুলো, যার মধ্যে ডিস্টিলেশন ইউনিটও রয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে, বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক নজরদারি সংস্থাটি বলছে, খোন্দাব চুল্লিটি নির্মাণাধীন ছিল এবং চালু না থাকায় এতে কোনো পারমাণবিক উপাদান ছিল না। তাই, কোনো তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা নেই বলে সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রোসি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পূর্বে আরাক নামে পরিচিত এই স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান ছিল না। তবে পরবর্তীতে সংস্থাটি মূল্যায়ন করে দেখেছে, কমপ্লেক্সের মূল ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা বিশেষভাবে ‘চুল্লির মূল সিলের কাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল, যা প্লুটোনিয়াম উৎপাদনে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান’।
লেবানন পার্লামেন্টের স্পিকার নাবিহ বেরি গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় এমটিভি নিউজকে বলেছেন, লেবানন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের যুদ্ধে যোগ দেবে না। নাবিহ বেরি দেশের সর্বোচ্চ পদস্থ শিয়া রাজনীতিবিদ এবং হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ মিত্র।
বেরি বলেন, ‘আমি ২০০ শতাংশ নিশ্চিত লেবানন যুদ্ধে প্রবেশ করবে না, কারণ এতে তার কোনো স্বার্থ নেই এবং এর জন্য তাকে চড়া মূল্য দিতে হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমাদেরকে ইরানের প্রয়োজন নেই। বরং ইসরায়েলেরই এখন সহায়তা সমর্থনের দরকার।’
ইরান, ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধবিরতি যখন আলোচনার দরজা খুলছে সেই সময় লেবাননের স্পিকারের এমন বক্তব্য এল। যেখানে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আক্রমণে ইরানকে সমর্থন করার জন্য সক্রিয় হবে কিনা সে বিষয়টিও এখনো ধোঁয়াশাপূর্ণ।
হিজবুল্লাহ এখনো পর্যন্ত যে ইঙ্গিত দিয়েছে তাতের বোঝা যায়, এই যুদ্ধে অংশ নেবে না।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও যদি ইসরায়েলের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেয় তাহলে ইরান লেবাননে তার এই ঘনিষ্ঠ মিত্রকে জড়িত হওয়ার জন্য চাপ দিতে পারে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা আলী শামখানির শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য দিয়েছে। এক সপ্তাহ আগে ইসরায়েলি হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি।
তাসনিম সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, চিকিৎসকদের রাত-দিন প্রচেষ্টার ফলে শামখানির শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল।
তাসনিম তাঁকে উদ্ধৃত করে বলেছে, সর্বোচ্চ নেতা এবং ইরানি জাতির উদ্দেশ্যে এক বার্তায় শামখানি বলেছেন, ‘আমি বেঁচে আছি এবং শহীদ হতে প্রস্তুত।’
ইসরায়েলের বিরশেভা প্রযুক্তি পার্ক, মাইক্রোসফট কার্যালয় এবং ইসরায়েলি সামরিক শাখার কাছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। ইরানি হামলার পর বিরশেভার কেন্দ্রীয় রেল স্টেশন সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া। রেলস্টেশনটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ছাড়া গাভ-ইয়াম নেগেভ অ্যাডভান্সড টেকনোলজিস পার্কে মাইক্রোসফট অফিসের দৃশ্যমান ক্ষতি হয়েছে। এই প্রযুক্তি পার্কে রোবোটিক্স এবং ডেটা সায়েন্সসহ প্রচুর গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম রয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, আজ শুক্রবার সকালে তারা ইসরায়েলে উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র প্ল্যাটফর্মে হামলা চালিয়েছে।
তারা আরও জানিয়েছে, যে সামরিক কমান্ডার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাঁকেও হত্যা করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তারা তেহরানের ৬০ টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, ইরানের রাজধানীতে চালানো হামলায় ৬০ টিরও বেশি যুদ্ধবিমান অংশ নিয়েছিল। এই অভিযানে প্রায় ১২০টি যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, তারা তেহরান এলাকার ‘ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের জন্য বেশ কয়েকটি শিল্প স্থাপনায়’ আঘাত হেনেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ইয়েদিওথ আহরোনোথ জানিয়েছে, বিরশেভা পৌরসভা নিশ্চিত করেছে, কিছুক্ষণ আগে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। কোনো ধরনের বাধাই পায়নি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র।
সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রটির গতিপথে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কোনো বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি।
সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এই হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের বিরশেভায় মাইক্রোসফটের কার্যালয়ের কাছে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে।
সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা একটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে। এরপর বিরশেভা শহরের একটি স্থানে আগুন ধরে গেলে জরুরি পরিষেবাগুলো সেখানে পৌঁছে যায়।
ইসরায়েলের উদ্ধারকারী সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডোম দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার পরের একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছে।
তারা জানিয়েছে, এই মুহূর্তে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে তাদের দলগুলোকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হচ্ছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী নাগরিকদের প্রাথমিক সতর্কবার্তা দেওয়ার পরপরই রকেট হামলা এবং সেগুলোর প্রতিরোধে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় নেগেভের বেয়েরশেভায় আগুন এবং ধোঁয়ার কুণ্ডলীর ছবি পোস্ট করছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ‘জুয়িশ ভয়েস ফর পিস’ (জেভিপি) ইসরায়েলকে ইরান আক্রমণ ‘অবিলম্বে বন্ধ’ করার আহ্বান জানিয়েছে। গ্রুপটি সতর্ক করে বলেছে, এই আক্রমণ একটি ‘পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক যুদ্ধের’ হুমকি তৈরি করছে।
এক্স হ্যান্ডলে প্রকাশিত বিবৃতিতে জেভিপি বলেছে, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল সরকারের যুদ্ধাপরাধের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত দশকের পর দশক ধরে দায়মুক্তি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে শর্তহীন সামরিক তহবিল আমাদের আজ এই পর্যায়ে এনেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে বছরে কমপক্ষে ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ বোমা হামলা শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র আরও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সহায়তা পাঠিয়েছে।
গ্রুপটি আরও যোগ করেছে, ইরানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেও, ইসরায়েল সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল এবং সমর্থনে ফিলিস্তিনিদের ওপর তাদের নৃশংস গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে।
জেভিপি জোর দিয়ে বলেছে, ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে এবং আঞ্চলিক যুদ্ধ উসকে দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এখনই ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা উচিত।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ শনাক্ত করেছে। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে শনাক্ত ও প্রতিহত করার জন্য কাজ করছে।
ইসরায়েলের জনগণকে বোমা আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে সতর্ক করা হয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহে একটি বাড়িতে বোমা হামলা চালিয়েছে। এতে কমপক্ষে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন।
কুদস নিউজ নেটওয়ার্ক এবং ফিলিস্তিনি ইনফরমেশন সেন্টার এখন জানাচ্ছে, আল-মা’আসকার এলাকার আইয়াশ পরিবারের বাড়িতে চালানো ওই হামলায় কমপক্ষে ১১ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য আরও দুই সপ্তাহ সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন ল্যাভিট এ বিষয়ে ব্রিফিং করেন।
ইরানের রাজধানী তেহরানের বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
তেহরানে থাকা নিজেদের সংবাদকর্মীদের বরাত দিয়ে আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, তেহরানে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে। সেখানে টানা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ থেকে সরে আসার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। তিনি বলেছেন, এই সংঘাতে ‘উত্তেজনা বৃদ্ধির একটি সত্যিকারের ঝুঁকি’ রয়েছে। তাই তিনি সব পক্ষকে একটি কূটনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজতে অনুরোধ করেছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, স্টারমার উল্লেখ করেছেন, এর আগে ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কয়েক দফা আলোচনা’ হয়েছে (ইরানের) এবং ‘আমার কাছে মনে হয়, এটিই এই সমস্যা সমাধানের পথ।’
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এল, যখন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ওয়াশিংটনে উত্তেজনা কমানোর জন্য যুক্তরাজ্যের মতামত তুলে ধরতে যাচ্ছেন। সেখানে তিনি ট্রাম্পের শীর্ষ কূটনীতিক মার্কো রুবিওর সাথে সাক্ষাৎ করবেন।
ল্যামি এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও আজ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাঁদের পঞ্চদশ দফায় হামলা শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে দেওয়া এক ঘোষণায় তাঁরা জানায়, ‘হাইফা ও তেল আবিব শহরের সামরিক স্থাপনা ও সামরিক শিল্পকেন্দ্র লক্ষ্য করে নতুন এক দফা সম্মিলিত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা শুরু হয়েছে।
আইআরজিসি জানায়, এই অভিযানে ১০০-রও বেশি যুদ্ধ ও আত্মঘাতী ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে, যেগুলো বিশেষভাবে হাইফা ও তেল আবিবের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও অন্যান্য সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে।
ঘোষণার শেষাংশে ইরান কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ‘ইসরায়েলের সামরিক ও সামরিক শিল্পক্ষেত্রের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাত্রা আরও বাড়ানো হবে।’
এই হামলা 'অপারেশন ট্রু প্রমিস' অভিযানের ধারাবাহিকতা, যার লক্ষ্য বলে দাবি করছে—ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনের পাল্টা জবাব ও দেশটির প্রতিরক্ষা কাঠামোকে দুর্বল করা। ইসরায়েল এখনো এই নতুন দফার হামলার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
তবে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, হাইফা ও তেল আবিবে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং কিছু এলাকায় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়েছে।
ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার এই সর্বশেষ ধাপ মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ আরও বিস্তৃত হওয়ার শঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে।
ইরান ইস্যুতে হামলার অনুমোদন দিয়েছেন কিনা— এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই এক রহস্যময় বার্তা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে দাবি করেছিল, ট্রাম্প গোপনে ইরানে সামরিক হামলার পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছেন, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দিয়েছেন— হয়তো এই আশায় যে, ইরান পরমাণু কর্মসূচি থেকে সরে আসবে।
এই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানেই না, আমার ইরান বিষয়ে কী ভাবনা!’
এর আগের দিন ইরান বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘কি হতে যাচ্ছে, তা দেখা যাক। সবাই আমাকে এই নিয়ে প্রশ্ন করছে, কিন্তু আমি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের ইরাননীতি এখনো চূড়ান্ত নয়— আর এ ধরনের বার্তা পরিস্থিতিকে আরও অনিশ্চিত করে তুলছে।
ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরান আবার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এ কথা জানিয়েছে।
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইরান থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, সেটা শনাক্ত করা হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এসব হামলা প্রতিহত করতে কাজ করছে।
একইসঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনী জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে এবং নতুন নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করতে বলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইসরায়েলের সহায়তা চাওয়ার বিষয়টি ইসরায়েলর দুর্বলতার লক্ষণ বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনি এক এক্স (সাবেক টুইটার) বার্তায় এ মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে আল–জাজিরা।
খামেনি বলেছেন, এটা সত্য যে জায়নিস্ট শাসনের মার্কিন বন্ধুদের এখন হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে। এ ধরনের কথা (সাহায্য চাওয়া) বলতে হচ্ছে—যা প্রমাণ করে, ওই (ইসরায়েল) শাসনব্যবস্থা কতটা দুর্বল ও অক্ষম।
খামেনি আরও বলেন, ‘আমি আমাদের প্রিয় জাতিকে বলতে চাই, ‘শত্রু যদি বুঝতে পারে আপনি তাদের ভয় পাচ্ছেন, তাহলে তারা আপনাকে ছাড়বে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা এখন পর্যন্ত যেভাবে আচরণ করেছেন, তা অব্যাহত রাখুন; সেই আচরণই আরও দৃঢ়তার সঙ্গে চালিয়ে যান।’
এর আগে খামেনিকে হত্যার হুমকি দিয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, খামেনিকে ‘আর বেঁচে থাকার সুযোগ দেওয়া যায় না’। তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ধ্বংস করা তাঁর (খামেনি) লক্ষ্য... এমন একজন মানুষকে আর বেঁচে থাকার সুযোগ দেওয়া যায় না।’
ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খাতিবজাদে বলেছেন, ‘জল্পনা বা অভিপ্রায়ের ওপর ভিত্তি করে যুদ্ধ শুরু করা যায় না।’ তিনি অভিযোগ করেন, ইসরায়েল ভিত্তিহীনভাবে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে—এমন সন্দেহে এই যুদ্ধ উসকে দিয়েছে, যা ‘অত্যন্ত খারাপ সিদ্ধান্ত।’
এক বিবৃতিতে খাতিবজাদে বলেন, ‘আমরা এখনো পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছিলাম, এমন সময় ইসরায়েল বোমাবর্ষণ করে সেই কূটনৈতিক প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করে দেয়।’
জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ সম্প্রতি জানিয়েছে, ইরান ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত করেছে, যা অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশ মানের এক ধাপ নিচে। তবে খাতিবজাদে এই তথ্যকে অস্বীকার করে বলেন, “এই দাবি একেবারেই ভিত্তিহীন।”
তিনি বলেন, “ইসরায়েল নিজেই পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র। তারা অন্য দেশের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক নীতিমালার চরম লঙ্ঘন করেছে।”
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের এই অবস্থান কূটনৈতিক সমঝোতার পথ খোলা রাখতে চায়, কিন্তু একযোগে ইসরায়েলের ওপর দায় চাপিয়ে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি অর্জনের কৌশলও এতে প্রতিফলিত হচ্ছে।
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে বিপুল পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম ও সেনা মোতায়েন করছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত সরাসরি যুদ্ধে জড়ায়নি। ট্রাম্প বলছেন, সময় ফুরিয়ে আসছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় ৪০ হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করছে। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজবাহী রণতরী ‘ইউএসএস নিমিৎজ’ দক্ষিণ চীন সাগর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে যাত্রা করেছে। এর সঙ্গে রয়েছে একাধিক গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার, যেগুলো পারস্য উপসাগর ও ওমান উপসাগরের অবস্থানরত মার্কিন যুদ্ধজাহাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যৌথভাবে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করবে।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এফ-১৬, এফ-১২ ও এফ-৩৫ মডেলের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানগুলোকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটিতে স্থানান্তর করেছে। ৩০টিরও বেশি ট্যাঙ্কার বিমান ইউরোপে স্থানান্তর করা হয়েছে, যেগুলো যুদ্ধবিমান ও বোমারু বিমানগুলোর আকাশেই জ্বালানি সরবরাহ করতে পারবে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি আগের মতোই সাহসিকতার সঙ্গে শত্রুর মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার এক্স প্ল্যাটফর্মে এক বার্তায় খামেনি বলেন, ‘শত্রু যদি বুঝতে পারে আপনি তাদের ভয় পান, তবে তারা আপনাকে আর ছাড়বে না। তাই আগের মতোই দৃঢ় মনোবল নিয়ে এবং আরও শক্তি নিয়ে এগিয়ে চলুন।’
চলমান ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে উচ্চ পর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তা হারানোর পর এটি খামেনির অন্যতম প্রত্যক্ষ জনসম্মুখ বার্তা, যা দেশব্যাপী সাহস ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রয়াস হিসেবেই দেখা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্য তার নেতৃত্বে জনসমর্থন ধরে রাখার কৌশলের অংশ।
ইসরায়েলে ইরান আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকালের দিকে হামলা চালায়। এই হামলা ব্যাপক শক্তিশালী ছিল বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ইসরায়েলি রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম জানিয়েছে, ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলজুড়ে অন্তত ১৩৭ জন আহত হয়েছে।
ইসরায়েলের তেল আবিব, রামাত গান ও হোলোন শহর এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইরান দাবি করেছে, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ও সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সদর দপ্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ইরানের জনগণ এই কঠিন সময় কাটিয়ে উঠবেই। ইরানে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিষয়টি ইঙ্গিত করে তিনি আজ বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা এক পোস্টে তিনি এই কথা বলেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট জাতির উদ্দেশ্যে শেয়ার করা এক পোস্টে বলেন, তিনি সরকারের প্রতিটি অংশকে ‘ইরানের সেবা করার’ নির্দেশ দিয়েছেন।
মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ‘সব মন্ত্রণালয় এবং সরকারি সংস্থাকে আপনার ধৈর্য এবং সমর্থনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে, কোনো সেবা বাকি না রেখে, তাদের সর্বশক্তি ও সম্পদ দিয়ে ইরানের সেবা করার মিশন দেওয়া হয়েছে।’
পেজেশকিয়ান আরও যোগ করেছেন, ‘আল্লাহর রহমতে এবং সহানুভূতি ও সংহতির সাহায্যে আমরা এই কঠিন সময় কাটিয়ে উঠবই।’
ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদক তৌহিদ আসাদি বলেছেন, রাজধানী জুড়ে আমি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি। সময়ে সময়ে, আমরা রাজধানীতে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হতে দেখেছি। এছাড়া, শহরের বিভিন্ন স্থানে পর্যায়ক্রমে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়, যা ইঙ্গিত দেয় যে (ইসরায়েলি) আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে।
সামরিক বা পারমাণবিক স্থাপনাগুলোই শুধু লক্ষ্যবস্তু নয়। ইসরায়েলি হামলায় বেসামরিক স্থানগুলোতেও আঘাত হানার খবর পাওয়া গেছে। এতে অনেক বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষবা সংস্থা ম্যাজেন ডেভিড অ্যাডাম জানিয়েছে, ইরানের সাম্প্রতিক হামলায় আহত ৬৫ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আহতদের মধ্যে ৪২ জন ‘সামান্য আহত’ এবং ১৮ জন বোমা হামলা আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে আঘাত পেয়েছেন।
এদিকে, বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে—গত কয়েকদিন ইসরায়েলে ইরানের হামলা খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। কিন্তু এবার তারা ইসরায়েলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি করতে পেরেছে। বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে বিভিন্ন স্থানে আঘাত হেনেছে।
তবে সম্প্রতি ইরানের হামলার মাত্রা অনেকটাই কমে এসেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, ইরানের সামরিক স্থাপনাগুলোতে ইসরায়েলের পাল্টা বিমান হামলা কার্যকর হয়েছে। এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ইসরায়েল সরকার যুদ্ধের কারণে আরোপিত কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।
তবে আজ সকালে ইরানের নতুন করে চালানো হামলা দেখিয়ে দিয়েছে, তারা এখনো ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে আঘাত হানার সক্ষমতা রাখে। হামলার লক্ষ্যস্থলগুলোর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বির শেবার সোরোকা মেডিকেল সেন্টার, তেল আবিবের আশপাশে অবস্থিত হোলোন শহর (যেখানে দুটি ভবনের মাঝখানে ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে), এবং রামাত গান।
ইরান বলেছে, বির শেবায় তারা একটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে, যা সোরোকা হাসপাতালের কাছাকাছি। তবে ইসরায়েলের উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী শ্যারেন হ্যাসকেল অভিযোগ করেছেন, ইরান ইচ্ছাকৃতভাবে সোরোকা হাসপাতালকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। অন্য যেসব শহরে হামলা হয়েছে, সেখানে ইরানের লক্ষ্যবস্তু কী ছিল—তা এখনও পরিষ্কার নয়।
গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা, জ্বালানি অবকাঠামো, বিমানবন্দর, সরকারি ভবন এবং আবাসিক এলাকাগুলোতে বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। তারই প্রতিক্রিয়ায় ইরান এই হামলা চালাচ্ছে। ইরান বলেছে, এটি একটি আগ্রাসনের যুদ্ধ এবং তাদের আত্মরক্ষার পূর্ণ অধিকার রয়েছে।
ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজেম গরিবাবাদী বলেছেন, তাঁর দেশ সংঘাতকে আর বাড়াতে চায় না। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, দেশটি যেন যুদ্ধে না জড়ায়। পরিণতি ভালো হবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজেম গরিবাবাদী আবারও যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ইরান সংঘাত আরও বিস্তার লাভ করুক তা চায় না। তবে প্রয়োজনে আগ্রাসনকারীদের উপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ইরানের সামরিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের কাছে ‘সব ধরনের প্রয়োজনীয় বিকল্পই টেবিলে রয়েছে।’
ইসরায়েলে একধরনের ধারণা তৈরি হয়েছিল যে, তাদের সরকার হয়তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে। কিন্তু ইরানের সাম্প্রতিক হামলা দেশটির ‘মাথার ওপর’ এবং ‘প্রাণকেন্দ্রে’ আঘাত করেছে—এমনটাই বলছেন ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওরি গোল্ডবার্গ।
তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলাগুলো পুরো দেশজুড়ে হলেও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের সোরোকার একটি হাসপাতালে হামলার বিষয়টি তুলে ধরতে। কারণ তারা এক ধরনের বার্তা দিতে চাইছে যে, ‘ইরানিরা ইচ্ছা করেই হাসপাতালকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে।’
গোল্ডবার্গ আরও বলেন, ‘অবশ্য ইসরায়েলিরাও হাসপাতালকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এটা বলা জরুরি, কারণ ওই হাসপাতালের আশপাশেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা ও সদরদফতর রয়েছে। আসলে ইসরায়েল নিজের সামরিক সদরদফতরগুলো গড়ে তোলে সাধারণ মানুষের পাড়ায়-মহল্লায়।’
তিনি জানান, ‘হামলার তথ্যও খুব সহজে পাওয়া যায় না। আপনাকে মনে রাখতে হবে, যেমন আল জাজিরার ওপর সেন্সরশিপ চলে এবং ছবি প্রকাশেও বিধিনিষেধ থাকে, তেমনি ইসরায়েলি নাগরিকরাও আমাদের সরকারি গণমাধ্যমে খুব বেশি কিছু দেখতে পায় না।’
গোল্ডবার্গ আরও বলেন, ‘আমরাও কঠোর সেন্সরশিপের আওতায় কাজ করি। তাই মূলত নানা ধরনের গুজব, ফাঁস হওয়া খবর বা ধীরে ধীরে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেই ধারণা নেওয়া যায়। তবে এটা পরিষ্কার, ইরানিরা আঘাত করেছে—আর তা গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ জায়গাগুলোকেই।’
ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ৩৬ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অন্তত ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের রামাত গানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় প্রায় ২০ জন সামান্য আহত হয়েছেন বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে নেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া, আরেক ইসরায়েলি শহর হোলোনের ওল্ফসন মেডিকেল সেন্টার জানিয়েছে, তারা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় গুরুতর আহত তিনজনের এবং মোট ১৬ জন আহত ব্যক্তির চিকিৎসা করছে।
হোলোনে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার স্থানে পৌঁছানো প্যারামেডিক ওরি লাজেরোভিচ চ্যানেল ১২-কে বলেছেন, ‘আমি একটি ভবন দেখলাম যেটি সরাসরি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে, সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এর চারপাশে একটি বিশাল ব্যাসার্ধে ভবনগুলোও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
তিনি জানান, প্যারামেডিকরা বাড়িঘর ও আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লোকজনকে বের করে আনতে সাহায্য করেছেন। ঘটনাস্থলে গুরুতর আহত কয়েকজন সম্পর্কে তিনি বলেন, আঘাতের মধ্যে ‘আঘাতজনিত এবং মাল্টিসিস্টেম ইনজুরি’ ছিল।
ইরানের ইসলামিক রিপাবলিক নিউজ এজেন্সি (আইআরএনএ) টেলিগ্রামে জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার সকালে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ‘মূল লক্ষ্য’ ছিল গাভ-ইয়াম টেকনোলজি পার্কে অবস্থিত ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বৃহৎ কমান্ড ও ইন্টেলিজেন্স (আইডিএফ সিফোরআই) সদর দফতর এবং সামরিক গোয়েন্দা শিবির।
সংবাদ সংস্থাটি আরও বলেছে, এই সামরিক স্থাপনাটি বির শেবার সোরোকা হাসপাতালের পাশেই অবস্থিত। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলে সৃষ্ট কম্পনের কারণে হাসপাতালটির সামান্য ক্ষতি হয়েছে।
তারা বলেছে, ‘সামরিক অবকাঠামোটি ছিল একটি সুনির্দিষ্ট ও সরাসরি লক্ষ্য।’ ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বির শেবার হাসপাতালটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানালেও সামরিক ও গোয়েন্দা সদরদপ্তরে হামলার বিষয়ে এখনো কিছু জানায়নি।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচির অংশ খোনদাবে অবস্থিত দুটি ভারী পানির গবেষণা চুল্লির কাছাকাছি এলাকায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল—এমনটাই জানিয়েছে ইরানের সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ। তারা জানিয়েছে, হামলার আগেই ওই স্থাপনাটি খালি করে ফেলা হয়েছিল এবং কোনো রেডিয়েশন ঝুঁকি নেই বলে কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে।
এই গবেষণা চুল্লিটি আংশিক নির্মাণাধীন এবং আগে এটি ‘আরাক’ নামে পরিচিত ছিল। তেহরান জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থাকে জানিয়েছে, তারা আগামী বছর এটি চালু করার পরিকল্পনা করছে।
ইসরায়েলে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এই হামলায় এখন পর্যন্ত বেশ ক্ষয়ক্ষতি এবং হতাহতের খবর জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল।
ইসরায়েলের মধ্য ও উত্তরের বিভিন্ন এলাকায় বিমান হামলার সতর্কতা জারি করার পরপরই দুটি শহরের আকাশে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, দেশটির ভেতরে অন্তত চারটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
ইসরায়েলি জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাজেন ডেভিড অ্যাডাম জানিয়েছে, হোলোনে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে একজন মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন এবং আরও প্রায় দুই ডজন ব্যক্তি হালকা আঘাত পেয়েছেন।
মধ্য ও দক্ষিণ ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পড়ার ঘটনায় জরুরি সেবাকর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ছিল সাম্প্রতিক সময়ের চেয়ে অনেক বড় পরিসরের।
ইসরায়েলে ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এই হামলায় এখনো কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে ইসরায়েলজুড়ে সতর্ক সংকেত বাজানো হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এই তথ্য জানিয়েছে।
হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে এবং সবাইকে হোম ফ্রন্ট কমান্ডের নিরাপত্তা নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে।
সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমানবাহিনী ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছে, তবে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘সম্পূর্ণ অজেয় নয়।’
মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আহ্বান জানিয়েছেন, তিনি যেন ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে পুরোপুরি ‘অংশ নেন’ এবং ইরানের ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালান। মধ্য ইরানে পাহাড়ের গভীরে অবস্থিত এই কেন্দ্রটিকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আর কেউ ধ্বংস করতে সক্ষম নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গ্রাহাম লিখেছেন, ‘ইসরায়েল আকাশপথে আধিপত্য ধরে রেখেছে এবং এরই মধ্যে ইরানের সামরিক ও বৈজ্ঞানিক নেতৃত্বকে ধ্বংস করেছে। তারা ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোরও মারাত্মক ক্ষতি করেছে। তবে এখনো একটি কেন্দ্র অক্ষত রয়েছে—আর সেটিই হচ্ছে গভীর মাটির নিচে থাকা ফোর্দো স্থাপনা। এই কেন্দ্রটি ধ্বংস না করলে ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হবে না।’
রিপাবলিকান এই আইনপ্রণেতা আরও লিখেছেন, ‘এ ধরনের গভীর ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় হামলা চালানোর যে সক্ষমতা, তা কেবল আমেরিকারই রয়েছে। এই কাজটা শেষ করতে হবে।’
ফোরদো কেন্দ্রটি পাহাড়ের নিচে প্রায় ৮০ মিটার (২৬০ ফুট) গভীরে অবস্থিত। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ধ্বংস করতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ ধরণের ‘বাঙ্কার-বাস্টার’ বোমা ছাড়া আর কিছুই কার্যকর নয়।
তবে উল্লেখযোগ্য যে, ইরান বহুবার দাবি করেছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না। জাতিসংঘের পারমাণবিক সংস্থাও জানিয়েছে, ইরান পারমাণবিক বোমা বানাচ্ছে—এমন কোনো প্রমাণ তাদের হাতে নেই।
ওয়াশিংটনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস জানিয়েছে, ইরানে ইসরায়েলের টানা ৭ দিনের হামলায় অন্তত ৬৩৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১ হাজার ৩২০ জনের বেশি।
সংস্থাটি জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ২৬৩ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১৫৪ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস বলছে, তারা ইরানের ভেতরে গড়ে তোলা নিজস্ব নেটওয়ার্ক থেকে পাওয়া তথ্য এবং স্থানীয় প্রতিবেদনগুলো যাচাই করে হতাহতের এ হিসাব নিশ্চিত করেছে।
ইরান সরকার এখন পর্যন্ত নিয়মিতভাবে হতাহতের সংখ্যা জানায়নি। শেষবার তারা জানিয়েছিল, ইসরায়েলের হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ১ হাজার ২৭৭ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েল লক্ষ্য করে এবার হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি এ কথা জানিয়েছে।
ইরানের দাবি, ‘ফাত্তাহ’ নামের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে সফলভাবে প্রবেশ করেছে।
ইসরায়েল ইরানে প্রথম হামলা চালানোর পর ছয় দিন ধরে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে।
ইরানের আলোচকেরা হোয়াইট হাউসে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া বক্তব্য নাকচ করে দিয়েছে ইরান।
ইরানের জাতিসংঘ মিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতির বরাত দিয়ে আল–জাজিরার খবরে বলা হয়, কোনো ইরানি কর্মকর্তা কখনো হোয়াইট হাউসের দরজায় মাথা নোয়াতে যায়নি। তাঁর (ট্রাম্প) মিথ্যার চেয়ে আরও ঘৃণ্য বিষয় হলো তাঁর কাপুরুষোচিত হুমকি। তিনি (ট্রাম্প) হুমকি দিয়েছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে হত্যা করবেন।
ইরানের মিশন আরও জানিয়েছে, ইরান জোর-জবরদস্তিতে আলোচনা করে না, চাপিয়ে দেওয়া শান্তি গ্রহণ করবে না
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের আলোচকেরা তাঁকে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তারা ‘হোয়াইট হাউসে আসতে পারে’। যদিও তিনি এটিকে কঠিন বলেই মনে করেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ট্রাম্প আজ বুধবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তিনি নিশ্চিত নন, এই সংঘাত ‘কত দিন চলবে’।
ট্রাম্প বলেন, ‘দুটি সহজ শব্দ—নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ। আমি আর সহ্য করব না।’ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তাঁর বিশ্বাস, দেশটি ওই কর্মসূচির পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে।
ট্রাম্প যোগ করেন, তিনি ইরানিদের পছন্দ করেন এবং নিজের কর্মজীবনে অনেক ইরানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
গতকালও ট্রাম্প ইরানকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রুথ সোশ্যালে ইরানকে ঘিরে গতকাল কয়েকটি পোস্ট করেছিলেন ট্রাম্প। এর একটিতে ট্রাম্প দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র জানে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ঠিক কোথায় লুকিয়ে আছেন।
ট্রাম্প লিখেছেন,‘তিনি (খামেনি) সহজ লক্ষ্যবস্তু, তবে যে জায়গায় আছেন, নিরাপদ আছেন। আমরা তাঁকে ‘অপসারণ’ (হত্যা!) করব না। অন্তত এখনই না।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু আমরা চাই না বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বা মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হোক।’ এরপর হুঁশিয়ারি দিয়ে ট্রাম্প যোগ করেন, ‘আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে।’
একটি অন্য পোস্টে ট্রাম্প লিখেছিলেন, ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ!’। ইরানের প্রতি এই বার্তা দিয়েছিলেন তিনি।
হোয়াইট হাউসের নর্থ লনে, রোজ গার্ডেন থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে, বিশাল এক পতাকা স্তম্ভ উন্মোচনের সময় হাজির ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পতাকা উত্তোলন নিয়ে বেশ উৎসাহিত ছিলেন তিনি। নির্মাণকর্মীদের সঙ্গে হাস্যরসের পর প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউস প্রেস কর্পসকে কিছু সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।
প্রথমে তাঁর বক্তব্য ঘুরপাক খায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি, সুদের হার এবং সরকারি ঋণ নিয়ে। তবে যখন সাংবাদিকরা ইরান নিয়ে মার্কিন অবস্থান জানতে চান, তখন তিনি দ্রুত প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
ট্রাম্প বলেন, "আমি সেটা বলতে পারি না। আমি করতেও পারি, নাও করতে পারি। কেউ জানে না আমি কী করতে চাই। তবে এটা বলতে পারি—ইরানের অনেক সমস্যা আছে এবং তারা এখন আলোচনায় বসতে চায়।"
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল হামলা চালানোর আগেই ইরানের আলোচনায় আসা উচিত ছিল—এই বক্তব্য তিনি গত কয়েকদিনে বারবারই তুলে ধরেছেন।
ট্রাম্পের এই বক্তব্যে স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরান সংকটে জড়াবে কি না, তা নিয়ে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ধোঁয়াশা রাখছেন। কিন্তু একইসঙ্গে তেহরানের ওপর চাপও বজায় রাখছেন, যেন তারা আলোচনার টেবিলে ফিরে আসে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ দাবি করেছেন, তাদের যুদ্ধবিমান ইরানি সরকারের ‘অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সদর দপ্তর’ ধ্বংস করেছে।
ইসরায়েলি চ্যানেল ১২-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, তেহরান ও আশপাশে ইরানের সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী।
তবে ইরানের পক্ষ থেকে এখনো এই দাবির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ইরানের রাজধানী তেহরান ও এর আশপাশের এলাকায় নতুন করে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, করাজ শহরের পায়াম বিমানবন্দরের কাছে বিস্ফোরণ হয়েছে। এর আগে এই বিমানবন্দরটিই ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল।
এছাড়া তেহরানের পূর্বাঞ্চল থেকেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত এসব বিস্ফোরণের লক্ষ্যবস্তু বা ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে ইরানি সরকারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, দেশটির অন্তত দুটি ব্যাংকে সাইবার হামলা হয়েছে। ক্ষতির মাত্রা উল্লেখ না করলেও তিনি জানিয়েছেন, দেশের সাইবার অবকাঠামো যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্যই সাময়িকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারে কিছু সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে।
তেহরানে ইসরায়েল-ইরান চলমান উত্তেজনার মধ্যে এসব বিস্ফোরণ ও সাইবার হামলার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা গোলান মালভূমির দক্ষিণাঞ্চলে অনুপ্রবেশকারী একটি ইরানি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। ড্রোনটি ইরানি ভূখণ্ড থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল বলে জানানো হয়েছে।
এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, সিরিয়ার ইসরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমির দক্ষিণ অংশে ড্রোনটি ঢোকার পর সেখানে সতর্কতা সংকেত (অ্যালার্ট) চালু হয়। এরপরই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে সেটি গুলি করে নামানো হয়।
ড্রোনটি ইরান থেকে সরাসরি উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল বলেও বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে।
ঘটনার সময় বা ড্রোনের ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানায়নি সেনাবাহিনী। তবে ঘটনার সময় ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা তুঙ্গে থাকায় বিষয়টি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ইসরায়েল-ইরান সরাসরি সংঘাতের শুরু হয়েছে মাত্র ছয় দিন আগে, কিন্তু এরই মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতি কাঁপিয়ে দিয়েছে এই যুদ্ধ। শুক্রবার ইসরায়েল তাদের আক্রমণ শুরু করে। এর পর পাল্টা জবাবে ইরানও চালায় ব্যাপক হামলা।
রয়টার্স প্রকাশিত এক ড্রোন ছবিতে দেখা যায়, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের একটি আবাসিক এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র। নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো এখন পর্যন্ত কী কী ঘটেছে—
শুক্রবার:
ইসরায়েল একযোগে আঘাত হানে ইরানের রাজধানী তেহরানের একাধিক স্থাপনায়। হামলার লক্ষ্য ছিল একটি পারমাণবিক স্থাপনা, আবাসিক এলাকা ও ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (IRGC) ঘাঁটি। নিহত হন বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কমান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানী এবং সাধারণ নাগরিক।
এরপর ইরান পাল্টা জবাবে ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটি ও বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায়।
শনিবার ও রোববার:
শনিবার ও রোববার দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলায় যুদ্ধ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ইরান ও ইসরায়েল—উভয়ের তেল পরিকাঠামো লক্ষ্যবস্তু হয়। ইসরায়েল জানায়, তাদের বিভিন্ন স্থানে হামলায় কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২২৪ জন নিহত এবং ১,২৭৭ জন আহত হয়েছে।
সোমবার:
ইসরায়েল উত্তর তেহরান থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ‘সবাই যেন তৎক্ষণাৎ তেহরান ছেড়ে যায়।’
মঙ্গলবার:
১ কোটিরও বেশি জনসংখ্যা পালিয়ে যেতে শুরু করে, তেহরান শহরজুড়ে বিশাল যানজট সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরেকটি পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি ‘সহজ লক্ষ্য’, তবে আপাতত তাঁকে হত্যা করা হবে না।
রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ সতর্ক করেছেন, ইসরায়েলে সরাসরি মার্কিন সামরিক সহায়তা মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে মারাত্মকভাবে অস্থিতিশীল করতে পারে, যেখানে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ছয় দিন ধরে আকাশযুদ্ধ চলছে।
ইন্টারফ্যাক্স সংবাদ সংস্থা রিয়াবকভের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, রাশিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলে এ ধরনের সহায়তা সরবরাহ করা বা এমনকি এটি বিবেচনা করা থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করছে। তিনি বলেন, মস্কো ইসরায়েল এবং ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের পাশাপাশি চাপিয়ে দেওয়া শান্তির বিরুদ্ধেও ইরান দৃঢ়ভাবে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। আজ বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি বলেন, ‘এই জাতি কারও চাপের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না।’
খামেনি আরও বলেন, যারা ইরান ও এর ইতিহাস জানে, তারা বোঝে— ইরানিদের সঙ্গে হুমকির ভাষায় কথা বললে কোনো ফল হয় না।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে খামেনি বলেন, ‘আমেরিকানদের জানা উচিত, যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো সামরিক হস্তক্ষেপ করে, তার পরিণতি হবে অপূরণীয়।’
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের একটি দূরনিয়ন্ত্রিত আকাশযান (ইউএভি) ইরানে ভূপাতিত হয়েছে। ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সেটি ভূপাতিত হয়েছে।
সামরিক বাহিনী বলেছে, তথ্য ফাঁস হওয়ার কোনো ঝুঁকি নেই।
এর আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম দাবি করেছিল, ইরানি বাহিনী ১৪টি ইসরায়েলি ড্রোন এবং একটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এই খবরের পরপরই ইসরায়েলের এই বিবৃতি এলো।
ইসরায়েল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা নিয়ে ইরানের সর্বশেষ দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে এর আগে তারা বলেছিল, তাদের কোনো যুদ্ধবিমান ইরানি ভূখণ্ডে ভূপাতিত হয়নি।
সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, গত শুক্রবার ইসরায়েল ইরানে হামলা শুরু করার পর থেকে ইরান ইসরায়েলের দিকে ৪০০ টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র এবং শত শত ড্রোন ছুড়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, এসব হামলায় ইসরায়েলের ৪০টি স্থানে আঘাত হেনেছে, যার ফলে কর কর্তৃপক্ষের কাছে প্রায় ১৯ হাজার ক্ষতির দাবি জমা পড়েছে।
কার্যালয় আরও জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ইসরায়েলে ২৪ জন নিহত হয়েছেন, ৮০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন এবং ৩ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি মানুষকে বাড়িঘর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ইরানি কর্তৃপক্ষের মতে, শুক্রবার থেকে ইরানে অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের রাতভর ইরানে হামলা হামলা চালিয়ে। ইসরায়েল বলেছে, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে অর্ধশতাধিক বিমান নিয়ে ইরানের সেন্ট্রিফিউজ প্রস্তুত কারখানা ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।
আইআরআইবি রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম জানিয়েছে, ইরানি বাহিনী ইস্পাহান শহরে একটি ইসরায়েলি হার্মিস ড্রোন ভূপাতিত করেছে। সম্প্রচার মাধ্যমটি ভূপাতিত চালকবিহীন বিমানটির ফুটেজ প্রকাশ করেছে। বলা হচ্ছে, এটি নজরদারির জন্য ব্যবহৃত হয়।
এদিকে, সরকারি ইরনা সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ইরানি বাহিনী তেহরান প্রদেশের ভারমিন শহরের জাওয়াদাবাদ এলাকায় ইসরায়েলের একটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে।
এ বিষয়ে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরান থেকে উৎক্ষেপিত আরও সাতটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এর কিছুক্ষণ আগেই তারা আরও তিনটি ড্রোন ভূপাতিত করার খবর জানিয়েছিল।
ইরানের তাসনিম সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী, দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান মন্ত্রিসভার সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। এমন এক সময়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো যখন দেশটি ইসরায়েলি হামলার হুমকি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির মুখোমুখি।
তাসনিম জানিয়েছে, আজ বুধবার সকালে প্রেসিডেন্ট ভবনে এই বৈঠক শুরু হয়।
তাসনিম প্রকাশিত ছবিতে ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেজা আরেফ এবং মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যদের বৈঠকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।
ওমান সাগরে দুই তেলবাহী জাহাজের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত জানিয়েছে, নেভিগেশন ত্রুটির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
প্রাথমিক তথ্যের বরাত দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওমান সাগরে দুটি তেলবাহী ট্যাংকারের মধ্যে একটি দুর্ঘটনাজনিত সংঘর্ষ ইঙ্গিত দেয়, ঘটনাটি একটি জাহাজের নেভিগেশনে ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ঘটেছে।
গতকাল মঙ্গলবার হরমুজ প্রণালির কাছে ‘অ্যাডালিন’ এবং ‘ফ্রন্ট ইগল’ নামের দুটি ট্যাংকারের মধ্যে সংঘর্ষ হয় এবং আগুন ধরে যায়। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাতের মধ্যে এই এলাকায় ইলেকট্রনিক হস্তক্ষেপ বেড়েছে। এই কারণে জাহাজের নেভিগেশন ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। তবে জাহাজের কর্মীদের কোনো আঘাত বা তেল ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া যায়নি।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অ্যারো ইন্টারসেপ্টরের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এতে করে ইরান থেকে আসা দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করার ইসরায়েলের সক্ষমতা প্রভাবিত হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা সংবাদপত্রটিকে জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন কয়েক মাস ধরে এই সক্ষমতা সমস্যার বিষয়ে অবগত ছিল এবং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে স্থল, সমুদ্র এবং আকাশে থাকা সিস্টেম দিয়ে শক্তিশালী করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ‘গোলাবারুদ সম্পর্কিত বিষয়ে’ মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে।
চায়না নিউজ সার্ভিস জানিয়েছে, বেইজিং ইরান থেকে চীনা নাগরিকদের প্রথম ব্যাচকে সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে, চীনা নাগরিকেরা গতকাল মঙ্গলবার তেহরান থেকে স্থলপথে তুর্কমেনিস্তানের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
ইরানি রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের সর্বশেষ হামলা সম্পর্কে একটি বিবৃতি জারি করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাদের ‘শক্তিশালী ও কৌশলপূর্ণ’ ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা বর্ম ভেদ করেছে, যা প্রতিপক্ষ দেশকে ‘ইরানের কর্তৃত্বের বার্তা’ দিয়েছে।
ইরানের সংবাদ সংস্থাগুলোর মাধ্যমে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই হামলা ‘দেখিয়েছে যে আমরা দখলকৃত অঞ্চলগুলোর আকাশসীমার ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছি এবং এর বাসিন্দারা ইরানি হামলার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ অরক্ষিত।’
এ বিষয়ে আর কোনো বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়নি।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম অনুসারে, সর্বশেষ এই হামলা তেল আবিবে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, একটি পার্কিং লটে আগুন ধরেছে। ইসরায়েল কৌশলগত স্থানগুলোতে আঘাতের বিষয়ে তথ্য সেন্সর করায় অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি স্পষ্ট নয়।
আইআরজিসি-র এই বিবৃতি এমন সময় এল যখন ট্রাম্প ইরানের আকাশসীমার ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি করেছেন এবং ইরানকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের দাবি জানিয়েছেন।
ওয়াশিংটন ডিসি-ভিত্তিক মানবাধিকার গ্রুপ হিউম্যান রাইটস অ্যাকটিভিস্ট জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ইরানে অন্তত ৫৮৫ জন নিহত এবং ১ হাজার ৩২৬ জন আহত হয়েছেন।
মানবাধিকার গ্রুপ বলেছে, তারা নিহতদের মধ্যে ২৩৯ জনকে বেসামরিক নাগরিক এবং ১২৬ জনকে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ইরান এই সংঘাতের সময় নিয়মিতভাবে নিহতের সংখ্যা প্রকাশ করছে না। গত সোমবার প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যে নিহতের সংখ্যা ২২৪ জন এবং আহত ১ হাজার ২৭৭ জন বলে জানিয়েছে ইরান।
মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে ২০২২ সালের বিক্ষোভের সময়ও বিস্তারিত হতাহতের পরিসংখ্যান দিয়েছিল হিউম্যান রাইটস অ্যাকটিভিস্ট। গ্রুপটি জানিয়েছে, তারা ইরানে তাদের তৈরি করা সূত্রের একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে স্থানীয় প্রতিবেদনগুলো যাচাই করে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ৫০ টিরও বেশি যুদ্ধবিমান নিয়ে ইরানে হামলা চালানো হয়েছে। ইরানের কথিত ‘সেন্ট্রিফিউজ’ এবং ‘অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র’ লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে আইডিএফ।
টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, সর্বশেষ হামলাটি গোয়েন্দা বিভাগের ‘সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা নির্দেশনায়’ চালানো হয়েছে।
সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, এই হামলা ‘ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচির ক্ষতি করার ব্যাপক প্রচেষ্টার অংশ’।
তবে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার কোনো ধরনের পদক্ষেপের কথা অস্বীকার করে। জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে একই ধরনের মূল্যায়ন করেছে।
ইসরায়েলি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির ‘কাঁচামাল এবং উপাদান’ উৎপাদনে জড়িত কেন্দ্রগুলোতেও হামলা চালিয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে নিরসনে জরুরি পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে ‘জরুরি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি গুরুতর ও সুদূরপ্রসারী পরিণতিতে মোড় নেওয়া থেকে থামাতে’ কূটনীতি প্রয়োজন।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘বেপরোয়া এবং ভুল হিসাব করা পদক্ষেপ’ সংঘাতকে ইসরায়েল ও ইরানের সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে দিতে পারে এবং ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগে’ শত্রুতা বন্ধ করার জন্য জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানান।
সিএনএন জানিয়েছেন, ইরানের আধা-সরকারি মেহের সংবাদ সংস্থা দাবি করেছে, ইরান ইসরায়েলের দিকে ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তবে এই দাবির সত্যতা যাচাই করা যায়নি।
গত বছর, ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছিল, তেহরান ওই সময় ইসরায়েলে তাদের হামলায় নতুন ফাত্তাহ-১ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ‘এক্স’-এ একটি পোস্টে বলেছেন: ‘মহান হায়দারের নামে যুদ্ধ শুরু হলো।’
হায়দার নামটি প্রায়শই হজরত আলীর (রা.) জন্য ব্যবহৃত হয়। হজরত আলীকে শিয়া মুসলিমরা প্রথম ইমাম এবং নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর উত্তরসূরি হিসেবে গণ্য করেন।
ইরানের নেতা খামেনি ইংরেজি ভাষায় পোস্ট করেছেন: ‘আমরা সন্ত্রাসী ইহুদিবাদী শাসনকে কঠোর জবাব দেব। আমরা জায়নবাদীদের প্রতি কোনো দয়া দেখাব না।’
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের মাত্রা দিন দিন তীব্র হচ্ছে। যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কী করবেন সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। তিনি সোশ্যাল মিডিয়াতে ইরানকে হুমকি দিয়েই যাচ্ছে। সর্বশেষ তাঁর ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে, সরাসরি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হুমকি দিয়েছেন।
ট্রাম্প বলেছেন, খামেনি খুব সহজ টার্গেট। তিনি কোথায় আছেন যুক্তরাষ্ট্রে জানে। কিন্তু তাঁকে এখনোই হত্যা করা হবে না। ইরানের ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ দাবি করেছেন ট্রাম্প।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা আগামী এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ধ্বংসে তাদের সবকটি প্রধান লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে বলে আশাবাদী। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এমনটাই জানিয়েছেন আইডিএফ কর্মকর্তারা।
অপারেশনের লক্ষ্য হিসেবে ইসরায়েল শুরু থেকেই ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টাকে ‘অস্তিত্বের হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করে তা নির্মূল করার অঙ্গীকার করেছে।
এখন পর্যন্ত আইডিএফ দুটি প্রধান পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ কেন্দ্র নাতাঞ্জ ও ইসফাহানে বোমাবর্ষণ করে বড় ধরনের ক্ষতি সাধন করেছে। পাশাপাশি ইসরায়েলের দাবি, ইরানের অন্তত নয়জন শীর্ষ পারমাণবিক বিজ্ঞানী যাঁরা পরমাণু বোমা প্রকল্পে সরাসরি জড়িত ছিলেন, তাঁদের হত্যা করা হয়েছে। অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কার্যালয় ও কমান্ড সেন্টারেও হামলা চালানো হয়েছে।
তবে আইডিএফ জানিয়েছে, তেহরানের কাছে অবস্থিত ভূগর্ভস্থ ফরদো পারমাণবিক স্থাপনাটি এখনো লক্ষ্যবস্তু হয়নি, তবে তা তাদের ‘টার্গেট ব্যাংক’-এ রয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, ফরদো অবশ্যই মোকাবিলা করা হবে।
এ ছাড়া, আইডিএফ-এর হিসাবে, ইরানের মোট ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র লাঞ্চারের প্রায় ৪০ শতাংশ আনুমানিক ২০০টি এর মধ্যে ধ্বংস বা অকার্যকর করা হয়েছে। এর ফলে গত দুই দিনে ইরান থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অনেকটাই কমে গেছে।
আইডিএফ দাবি করেছে, তারা ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডের প্রায় সবাইকে হত্যা করেছে। সামরিক কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা প্রাথমিক পরিকল্পনার তুলনায় তিন গুণ বেশি ইরানি কমান্ডারকে হত্যা করতে পেরেছে।
আইডিএফ আরও জানায়, পুরো অভিযানের প্রস্তুতি মাসখানেক আগেই শুরু হয়েছিল, যেখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ইরানের শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অতিক্রম করা। বর্তমানে পশ্চিম ইরান ও তেহরান অঞ্চলে আকাশে ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে দাবি করেছে আইডিএফ।
ইরানের রাজধানী তেহরানে আবারও নতুন করে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। মধ্যরাতের পরপরই তেহরানজুড়ে একাধিক বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি।
বার্তাটিতে বলা হয়েছে, শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উচ্চ শব্দের বিস্ফোরণ শোনা গেছে। এদিকে, ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা জানাচ্ছে, বিস্ফোরণগুলো ছিল ‘টানা ও প্রচণ্ড’ শক্তিশালী।
তাৎক্ষণিকভাবে বিস্ফোরণের কারণ বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে রাজধানীতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, এবং বহু বাসিন্দা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিস্ফোরণের শব্দ ও কম্পনের কথা জানিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিস্ফোরক বার্তায় জানিয়েছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি কোথায় লুকিয়ে আছেন তা যুক্তরাষ্ট্র জানে, তবে আপাতত তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা নেই।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমরা জানি তথাকথিত ‘সুপ্রিম লিডার’ কোথায় লুকিয়ে আছেন। তিনি সহজ লক্ষ্য, তবে সেখানে নিরাপদে আছেন। আমরা তাঁকে এখনই হত্যা করছি, অন্তত এই মুহূর্তে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই না যে বেসামরিক জনগণের ওপর বা আমাদের সৈন্যদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হোক। আমাদের ধৈর্য শেষের দিকে। এই বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।’
এর আগে, ট্রাম্প একটি আরেকটি পোস্টে দাবি করেন, ‘আমাদের এখন ইরানের আকাশের পূর্ণ এবং সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ইরানের ভালো স্কাই ট্র্যাকার এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আছে, অনেক পরিমাণেও, কিন্তু তা আমেরিকান প্রযুক্তির তুলনায় কিছুই না। কেউই পুরোনো দিনের সেই আমেরিকার চেয়ে ভালো করতে পারে না।’
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স–এ (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে জেডি ভ্যান্স বলেন, ইরান নাগরিক প্রয়োজনে ব্যবহারে জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে, যা উদ্বেগজনক। তাঁর ভাষায়, এই সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও কিছু করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ‘আমরা এখন ইরানের আকাশের সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক নিয়ন্ত্রণ নিয়েছি।’
স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে পোস্ট করা এক বার্তায় তিনি লেখেন, ইরানের ভালো ধরনের স্কাই-ট্র্যাকার ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ছিল—সংখ্যাতেও কম ছিল না। কিন্তু সেগুলো আমেরিকান প্রযুক্তির তুলনায় কিছুই না। আমেরিকান চিন্তা, প্রযুক্তি আর নির্মাণ—এই তিনে মিলে যা দাঁড়ায়, তা কেউই টেক্কা দিতে পারে না। আমেরিকার চেয়ে ভালো কেউ করে না।
ইরানের রাজধানী তেহরান এবং ইসফাহান প্রদেশে ফের একাধিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের বরাতে জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যায় তেহরানের কেন্দ্র ও পশ্চিমাঞ্চলে কয়েক দফা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু বা ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ পাওয়া যায়নি।
ইসফাহানে বিস্ফোরণ, আকাশে ধোঁয়ার কুন্ডলী
অন্যদিকে, ইসফাহান প্রদেশের বিভিন্ন অংশ থেকে আকাশে ঘন ধোঁয়ার কুন্ডলী উঠতে দেখা গেছে। আল জাজিরা কর্তৃক যাচাই করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিস্ফোরণের পর ইসফাহানের বেশ কিছু এলাকায় ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে চারপাশ।
এই বিস্ফোরণগুলো এমন সময় ঘটল, যখন ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের পশ্চিমাঞ্চলে নতুন করে একাধিক সামরিক হামলা চালিয়েছে। দেশটির দাবি, এসব অভিযানে তারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক সক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু করেছে।
তবে ইরানি কর্তৃপক্ষ এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। পরিস্থিতির দ্রুত আপডেট জানার জন্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও উপগ্রহচিত্রের ওপর নজর রাখছে বিশ্লেষকরা।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সাআর বলেছেন, ইরানে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের লক্ষ্য নয়। তবে সংঘাতের ফলে সেটি ঘটে যেতে পারে, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি তিনি।
আজ মঙ্গলবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় শহর রিশন লেজিওনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সাআর বলেন, ‘আমাদের তিনটি মূল লক্ষ্য রয়েছে— প্রথমত, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে ভয়াবহ আঘাত হানা, যা এখনো শেষ হয়নি। আমাদের সামনে আরও লক্ষ্য রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের বিমানবাহিনী এখন ইরানের আকাশে কৌশলগত আধিপত্য অর্জন করেছে।’
দ্বিতীয় লক্ষ্য হিসেবে সাআর উল্লেখ করেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে বিপর্যস্ত করা। তৃতীয়ত, ইসরায়েল রাষ্ট্র হিসেবে ধ্বংস করে দেওয়ার যে পরিকল্পনা ইরান করছে, সেটিকে চূর্ণ করা।
বিশ্লেষকদের মতে, সাআরের বক্তব্য ইঙ্গিত দেয়— ইসরায়েল বর্তমানে প্রতিরোধের বদলে আক্রমণাত্মক কৌশল গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে কৌশলগত লক্ষ্য স্পষ্ট থাকলেও সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
ইরানে চলমান যুদ্ধকে নিজেদের যুদ্ধ মনে করছেন না অনেক নাগরিক। বরং তাঁরা বলছেন, এটি কেবলমাত্র শাসকগোষ্ঠীর লড়াই। বিবিসি পার্সিয়ানের সাংবাদিক জিয়ার গোল জানিয়েছেন, কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকা সত্ত্বেও অনলাইনে বহু ইরানি প্রকাশ্যে সরকারবিরোধী মত দিচ্ছেন। অনেকে এমনকি বলছেন, তাঁরা নেতানিয়াহুর পক্ষ নন, কিন্তু এতটাই বিরক্ত যে এই শাসনব্যবস্থার অবসান চান।
সরকারবিরোধী পোস্ট, এমনকি মিম শেয়ারের কারণে গ্রেপ্তার ও হয়রানির ঘটনাও ঘটছে। একজন ব্যক্তি জানিয়েছেন, তাঁর ১৪ বছর বয়সী ছেলেকে শুধু একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার অপরাধে গোয়েন্দারা তুলে নিয়ে যায়। পরে ছেলেকে ছাড়িয়ে আনতে তাঁকে অনুনয় করতে হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধের পাশাপাশি ইসরায়েল ইরানি নিরাপত্তা বাহিনীকে দুর্বল করতেই হামলা চালাচ্ছে, যারা দেশের ভেতরে বিক্ষোভ দমন করে থাকে।
গত শুক্রবার থেকে ইরানে ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৫২ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা অলাভজনক সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস ইন ইরান।
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে ২২৪ জন ছিলেন বেসামরিক নাগরিক। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ১৮৮ জন বেসামরিক ব্যক্তি।
এছাড়া ইরানের সামরিক বাহিনীর ১০৯ জন সদস্য নিহত এবং ১২৩ জন আহত হয়েছেন।
এছাড়াও ১১৯ জন নিহত এবং ৩৩৫ জন আহত ব্যক্তি এখনো শনাক্ত হননি বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস ইন ইরান।
সব মিলিয়ে হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস ইন ইরানের হিসাব অনুযায়ী, এই যুদ্ধের ফলে এখন পর্যন্ত মোট ৪৫২ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৬৪৬ জন আহত হয়েছেন।
কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, সংকট নিরসনে দোহা মধ্যস্থতা করছে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি দোহায় একটি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। চলমান ইসরায়েল-ইরান সংঘাত নিয়ে এখন দোহায় আলোচনা চলছে।
মাজেদ আল-আনসারি বলেছেন, কাতার ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলার ‘তীব্র নিন্দা’ জানাচ্ছে এবং এটিকে ‘একটি অপরিণামদর্শী পদক্ষেপ যা অত্যন্ত ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এই হামলা এমন এক সময়ে হয়েছে যখন ইরান ওয়াশিংটনের সঙ্গে ‘একটি ইতিবাচক কূটনৈতিক পথে অগ্রসর হচ্ছে’, এবং এই প্রক্রিয়ায় অনেক আঞ্চলিক দেশ জড়িত ছিল। তিনি আরও বলেছেন, কাতার এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মধ্যস্থতায় সম্পৃক্ত এবং বিশ্বাস করে যে, একটি চুক্তির জন্য আমেরিকানদের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধরত পক্ষগুলোর—ইসরায়েল এবং ইরান—মধ্যে যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ চালিয়ে যাব।’
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) দাবি করেছে, ইসরায়েলি সেনা কেন্দ্র, মোসাদ অপারেশনস হাবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে।
বার্তা সংস্থা তাসনিমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে, ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) দাবি করেছে, ইসরায়েলে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা একটি সামরিক গোয়েন্দা কেন্দ্র এবং একটি মোসাদ অপারেশন পরিকল্পনা কেন্দ্রে আঘাত হেনেছে।
এর আগে, ইসরায়েলি প্রতিবেদনগুলোতে হার্জলিয়ার মধ্যাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহরে একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার ঘটনাকে ‘একটি সংবেদনশীল স্থানকে লক্ষ্যবস্তু’ করার কথা বলা হয়েছিল। এ ধরনের বিশেষণ সাধারণত একটি সামরিক বা কৌশলগত লক্ষ্যের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সাংকেতিক ভাষা।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইরান এখনো ইসরায়েলের মাটিতে হামলা চালানোর ইচ্ছা ও সক্ষমতা রাখে। যেখানে আজ মঙ্গলবার দুই দেশের মধ্যে সংঘাত পঞ্চদশ দিনে গড়িয়েছে।
ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র এফি ডেফ্রিন বলেছেন, ‘ইরানিদের এখনো ইসরায়েলের অভ্যন্তরে আঘাত হানার সক্ষমতা ও উদ্দেশ্য রয়েছে।’
ডেফ্রিন আরও বলেন, ইরান গত রাতে ইসরায়েলের দিকে প্রায় ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। বেশির ভাগই প্রতিহত করা হয়েছে, তবে কয়েকটি স্থানে আঘাত হেনেছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
ডেফ্রিন ইসরায়েলি নাগরিকদের ‘জীবন রক্ষার’ লক্ষ্যে আইডিএফের নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘দেশের অভ্যন্তরে আপনাদের আচরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি আবারও জোর দিয়ে বলছি, আমরা আত্মতৃপ্তিতে ভুগতে পারি না।’
গত শুক্রবার ভোরে ইরানি ভূখণ্ডে প্রথম হামলার পর থেকে ইসরায়েল ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণাগার এবং উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। তেহরানের পাল্টা আঘাত হানার সক্ষমতা নষ্ট করার চেষ্টা করছে আইডিএফ। কিন্তু আজও ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত হেনেছে।
ইরানের বিচার বিভাগ জানিয়েছে, ইসরায়েলের পক্ষে কাজ করা ‘গুপ্তচর ও ভাড়াটে সৈন্যদের’ বিরুদ্ধে প্রসিকিউটররা ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নিতে প্রস্তুত হচ্ছেন।
আধা-সরকারি মেহের নিউজ এজেন্সির খবরে বিচার বিভাগের মুখপাত্র আসগর জাহাঙ্গিরকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে যাদের গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িত বলে শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের বিচার শুরু করা হয়েছে। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে তাদের এই ঘৃণ্য কাজের জন্য শাস্তি দেওয়া হবে।
এরই মধ্যে ইসরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের সঙ্গে যোগসূত্রের অভিযোগের ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে ইরান। মিজান অনলাইনের তথ্যমতে, গতকাল সোমবার এক ব্যক্তিকে ‘ইরানের শত্রুদের কাছে’ গোপনীয় ও সংবেদনশীল তথ্য সরবরাহের অভিযোগে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইসরায়েলের দিকে সম্প্রতি ‘আরও শক্তিশালী’ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।
সামরিক বাহিনীর স্থলবাহিনীর কমান্ডার কিওমার্স হেইদারিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘সশস্ত্র বাহিনীর, বিশেষ করে সেনাবাহিনীর স্থলবাহিনীর, নতুন এবং উন্নত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তীব্র হামলার একটি নতুন ঢেউ শুরু হয়েছে এবং আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এটি আরও তীব্র হবে।’
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা সেনাবাহিনীর বিশাল উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে এবং সেনা ও সরঞ্জাম ক্রমশ বাড়ছে।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, এর মধ্যে দুটি বিমানবাহী রণতরী স্ট্রাইক গ্রুপ রয়েছে। একটি হলো ইউএসএস কার্ল ভিনসন, যা আরব সাগরে আছে। আরেকটি হলো ইউএসএস নিমিজ।
নিমিজকে মূলত দক্ষিণ চীন সাগর থেকে ইউএসএস কার্ল ভিনসনের স্থলাভিষিক্ত করার জন্য পুনরায় মোতায়েন করা হচ্ছিল। কিন্তু এখন উভয়কেই মধ্যপ্রাচ্যের কাছাকাছি জলসীমায় রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিমিজের পৌঁছাতে সম্ভবত আরও প্রায় এক সপ্তাহ সময় লাগবে।
এ ছাড়া, তিনটি ডেস্ট্রয়ার রয়েছে যা বিশেষভাবে ক্ষেপণাস্ত্রকে আকাশেই প্রতিহত করতে পারে।
ইউরোপ জুড়ে কৌশলগতভাবে দুই ডজন জ্বালানি ট্যাংকার স্থাপন করা হচ্ছে।
ইরানের অন্তত দুটি ক্ষেপণাস্ত্রের একটি তেল আবিব এলাকায় এবং অন্যটি হার্জলিয়ায় আঘাত হেনেছে। ইসরায়েলি প্রতিবেদনগুলোতে হার্জলিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে একটি সংবেদনশীল স্থানে ‘লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে’ বলে বর্ণনা করা হচ্ছে।
এটি সামরিক বা কৌশলগত গুরুত্বের কোনো কিছুর ইঙ্গিত। ইসরায়েলের সামরিক সেন্সর ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সংক্রান্ত সংবাদমাধ্যমের কভারেজের সীমাবদ্ধতা হালনাগাদ করেছে এবং আরও কঠোর করেছে। তাই খুব কম তথ্যই বাইরে প্রকাশ পাচ্ছে।
এ ছাড়া ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ আলি শাদমানিকে হত্যা করেছে। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সংঘাত আরও তীব্র হতে পারে।
এদিকে আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ধেয়ে আসছে জানিয়ে ইসরায়েল জুড়ে সাইরেন বাজানোর পর তেল আবিব ও পশ্চিম জেরুজালেমে বড় বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলের ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের চারটি স্থানে আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে হার্জলিয়ার একটি আটতলা ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং উপকূলীয় শহরের একটি খালি বাসে আগুন ধরে গেছে।
জরুরি পরিষেবার বরাত দিয়ে তারা জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রের এই সর্বশেষ দফা হামলায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ইরানের নতুন যুদ্ধকালীন সেনাপ্রধানকে হত্যার দাবি করেছে ইসারয়েল। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী—আইডিএফের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে কাতারি সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। এর মাত্র কয়েকদিন আগেই তাঁকে আগের হামলায় নিহত কমান্ডারের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছিল।
ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ‘সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের’ ভিত্তিতে এবং ‘সোমবার দিবাগত রাতে একটি আকস্মিক সুযোগের’ পর ইসরায়েলি বিমান বাহিনী তেহরানের কেন্দ্রে একটি কমান্ড সেন্টারে হামলা চালিয়ে আলী শাদমানিকে হত্যা করেছে।
একটানা সাইরেন বাজছিল। ফলে ইসরায়েলিরা প্রায় সারা রাত আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া-আসা করেছে। কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের কোথায় আঘাত হেনেছে সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। নেগেভের খোলা জায়গায় ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বলে কিছু রিপোর্টে জানানো হয়েছে।
তবে বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ইসরায়েলের অর্থ মন্ত্রণালয়ে, এরই মধ্যে ১৪ হাজারটি ক্ষতিপূরণের আবেদন জমা পড়েছে। ২৪টি ভবন ইতিমধ্যেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
এটি এমন এক সময় ঘটল যখন তেল শোধনাগার এবং অন্যান্য শোধনাগার, বিশেষ করে বন্দরনগরী হাইফাতে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হাইফার বিদ্যুৎ কেন্দ্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইরান আরও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করতে পারে বলে উদ্বিগ্ন ইসরায়েল। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইরান ইসরায়েলের দিকে আরও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। প্রতিরক্ষা বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রতিহত করতে কাজ করছে।
এর আগে গত রাতে ইসরায়েলের দিকে ছোড়া ৩০টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে আইডিএফ।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সদর দপ্তরে ইসরায়েলের বিমান হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন। বোমা হামলার একদিন পর সম্প্রচারমাধ্যমটি এই খবর জানিয়েছে।
চ্যানেলটি বলেছে, গতকাল সোমবারের ইসরায়েলি হামলায় টিভি স্টেশনের তিন কর্মচারী নিহত এবং অন্যরা আহত হয়েছেন।
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাজ করার জন্য জি৭ সম্মেলন ছেড়ে তাড়াতাড়ি দেশে ফিরেছেন—এমন খবর অস্বীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এই দাবিটিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর বলে উল্লেখ করে ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়াতে লিখেছেন, ‘প্রচার-সন্ধানী ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ভুল করে বলেছেন, আমি কানাডার জি৭ সম্মেলন ছেড়ে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাজ করার জন্য (ওয়াশিংটন) ডিসিতে ফিরে এসেছি। ভুল! আমি কেন এখন ওয়াশিংটনে যাচ্ছি সে সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা নেই, তবে এর সঙ্গে যুদ্ধবিরতির কোনো সম্পর্ক নেই।’
তিনি বলেন, তাঁর ফেরাটা ‘যুদ্ধবিরতির চেয়ে অনেক বড়’ কিছুর সঙ্গে সম্পর্কিত। সেই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘সঙ্গে থাকুন!’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট এর আগে তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে একটি অশুভ সতর্কতা জারি করে বলেছিলেন, ‘সবার অবিলম্বে তেহরান ত্যাগ করা উচিত!’
নাতানজ পরমাণু কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি ড্রোন ভূপাতিত ও ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইরানের স্থানীয় কর্মকর্তারা।
সিএনএনের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইরানের সংবাদ সংস্থা ফার্স একজন স্থানীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ইরানের নাতানজ পারমাণবিক কেন্দ্রের কাছে একটি ইসরায়েলি ড্রোন গুলি করে নামানো হয়েছে।
ফার্স-এর মতে, ইরানের মধ্যাঞ্চলের ইস্পাহান প্রদেশের ডেপুটি গভর্নর বলেছেন, নাতানজ স্থাপনার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি প্রতিরক্ষামূলক বলয়ের (অপারেশনাল এলাকা) মধ্যে ড্রোনটিকে গুলি করে নামানো হয়েছে।
এই ঘোষণাটি টেলিগ্রামে ধ্বংসাবশেষ এবং ভাঙা যন্ত্রপাতির একটি ছবিসহ পোস্ট করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) অনুসারে, নাতানজকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখানে ইরান ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধতার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে আসছে। বোমা বানাতে ৯০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম দরকার।
সাম্প্রতিক সংঘাতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল নাতানজ। স্যাটেলাইট চিত্রগুলোতে এটি উল্লেখযোগ্য ক্ষতি দৃশ্যমান। নাতানজের প্রধান বিদ্যুৎ সরবরাহ ভবন এবং জরুরি ও ব্যাক-আপ জেনারেটর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আইএইএ জানিয়েছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় সেন্ট্রিফিউজগুলোর মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।
জেরুজালেমে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, তাদের কার্যক্রম আজও বন্ধ থাকবে। সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাঁদের বাসস্থান এবং এর আশপাশে আশ্রয় নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দূতাবাস আরও জানিয়েছে, তেল আবিবের শাখাও বন্ধ থাকবে।
মার্কিন দূতাবাস বর্তমানে ইসরায়েল থেকে আমেরিকানদের সরিয়ে নিতে বা সরাসরি সহায়তা করতে সক্ষম নয় বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়া তার নাগরিকদের ইরান ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছে।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইরানের সব অঞ্চল থেকে দক্ষিণ কোরীয়দের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশটি ছেড়ে যাওয়া উচিত।
গতকাল সোমবার দক্ষিণ কোরিয়ার ইরান দূতাবাস কনস্যুলার সেবা স্থগিত করার ঘোষণার পর এই সতর্কতা জারি করা হলো।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, ইরানে জোরপূর্বক সরকার পরিবর্তন একটি ‘কৌশলগত ভুল’ হবে।
এর আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে।
জি-৭ সম্মেলনের ফাঁকে মাখোঁ সাংবাদিকদের বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতি অর্জন করতে পারে, তবে তা খুবই ভালো।’ তিনি ইসরায়েল ও ইরান উভয়কেই বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা ‘বন্ধ’ করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং সতর্ক করে বলেছেন, তেহরানের সরকার উৎখাত করার লক্ষ্য একটি ‘কৌশলগত ভুল’ হবে।
তিনি ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘যারা ভেবেছিল যে বাইরে থেকে বোমা হামলা করে একটি দেশকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে রক্ষা করা যায়, তারা সর্বদা ভুল করেছে।’
কানাডায় চলমান জি-৭-এর সম্মেলনে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইরানের কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারে না।’
কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে গঠিত এই অর্থনৈতিক জোট ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘাতে ‘উত্তেজনা প্রশমনের’ আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে, দক্ষিণ গাজা উপত্যকায় একজন সেনা নিহত এবং তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
সামরিক বাহিনী নিহত সেনাকে ইসরায়েলের গোলানি ব্রিগেডের ১২ তম ব্যাটালিয়নের ২০ বছর বয়সী সার্জেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ‘গুরুতর আহত’ তিনজন সেনাও একই ইউনিটের। আহত তিনজনকেই ফিলিস্তিনি অঞ্চল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এর আগে গতকাল সোমবার, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছিল, গোলানি ব্রিগেডের প্রকৌশল ব্যাটালিয়নের ২৮ বছর বয়সী একজন ক্যাপ্টেন দক্ষিণ গাজায় নিহত হয়েছেন।
ইরানের রাজধানী তেহরান খালি করার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর এমন আহ্বানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেস ইরানি-আমেরিকান আইনপ্রণেতা ইয়াসামিন আনসারি।
গত বছর মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসে নির্বাচিত দ্বিতীয় ইরানি বংশোদ্ভূত ব্যক্তি আনসারি। ট্রাম্পের এই পরামর্শকে ‘শীতল ও ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করেছেন তিনি। ট্রাম্প এক্স হ্যান্ডলের বলেছেন, প্রত্যেকের তেহরান ছেড়ে যাওয়া উচিত।
এর প্রতিবাদে আনসারি এক্স-এ বলেছেন, ‘তেহরান প্রায় ১ কোটি মানুষের একটি বিশাল শহর। ইরানি জনগণের স্বাধীনতা প্রাপ্য, কিন্তু ট্রাম্পের এই যে নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা, একটি গণ-হত্যাকাণ্ড বা আরেকটি অন্তহীন যুদ্ধের হুমকি, সেটি কোনো সমাধান নয়।’
সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের ‘নো ওয়ার অ্যাগেইনস্ট ইরান অ্যাক্ট’ বিলে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগের জন্য ফেডারেল তহবিল ব্যবহার নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অবশ্য এটি মার্কিন কংগ্রেসে বিশেষভাবে অনুমোদিত হতে হবে।
ভারমন্টের প্রতিনিধিত্বকারী স্বতন্ত্র সিনেটর স্যান্ডার্স এক্স হ্যান্ডলে একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘নেতানিয়াহুর বেপরোয়া এবং অবৈধ হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে এবং একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করে। কংগ্রেসকে এটি পরিষ্কার করতে হবে যে যুক্তরাষ্ট্রকে নেতানিয়াহুর পছন্দের যুদ্ধে টেনে আনা হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠাতা পিতারা যুদ্ধ ও শান্তির ক্ষমতা কংগ্রেসের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতেই অর্পণ করেছিলেন। এটি অপরিহার্য যে, আমরা পরিষ্কার করে দিই, কংগ্রেসের সুস্পষ্ট অনুমোদন ছাড়া প্রেসিডেন্টের একক সিদ্ধান্তে আরেকটি ব্যয়বহুল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার কোনো ক্ষমতা নেই।’
এই বিলের পক্ষে আছেন বেশ কয়েকজন ডেমোক্রেটিক সিনেটরও। এর মধ্যে ম্যাসাচুসেটস সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেনও আছেন। তবে এটি আইনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ রিপাবলিকানরা সিনেট এবং হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস উভয়ই নিয়ন্ত্রণ করে। যদিও মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়ুক অনেক রিপাবলিকান সেটি চান না। আবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে তাঁর ডেস্কে আসা যেকোনো বিলের ওপর ভেটো ক্ষমতা রয়েছে।
মিসরের নেতৃত্বাধীন ২১টি মুসলিম দেশের একটি গ্রুপ ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে। এই গ্রুপটি ইসরায়েলের হামলার নিন্দা করেছে এবং জরুরি ভিত্তিতে উত্তেজনা প্রশমন ও ‘বাছবিচারহীনভাবে’ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছে। তারা ইসরায়েলের পারমাণবিক কর্মসূচির প্রতি ইঙ্গিত করেছে, যদিও ইসরায়েল জাতিসংঘের পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার নিয়ন্ত্রণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। ।
গ্রুপটি সতর্ক করেছে, সংঘাত আরও বাড়তে পারে এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে তারা। তারা পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিও তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে। এই অঞ্চলের সমস্ত দেশকে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে (এনপিটি) যোগদানের আহ্বান জানিয়েছে।
স্বাক্ষরকারী দেশগুলো হলো: আলজেরিয়া, বাহরাইন, ব্রুনেই, চাদ, কোমোরোস, জিবুতি, মিসর, গাম্বিয়া, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, লিবিয়া, মৌরিতানিয়া, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, সুদান, সোমালিয়া, তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।
ইসরায়েলের পক্ষে ইরানের হামলায় মার্কিন জেট বিমান অংশ নিয়েছিল—এমন খবর অস্বীকার করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পার্নেল বলেছেন, এই দাবিটি ‘সত্য নয়’।
পার্নেল ডমিনিক মাইকেল ট্রিপির একটি এক্স পোস্টের জবাবে এই কথা বলেছেন। পার্নেল নিজেকে একজন রাজনৈতিক ভাষ্যকার এবং ওয়ার্ল্ড ইন্ডিপেন্ডেন্ট নিউজের সিইও হিসেবে নিজেকে বর্ণনা করেছেন।
পার্নেল ট্রিপির পোস্টে ইসরায়েলের চ্যানেল ১৪-এর উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছিল। এই চ্যালেনটি উগ্র-জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচিত।
অবশ্য চ্যানেল ১৪-এর ওয়েবসাইটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় যোগদানের কোনো তথ্য খুঁজে পায়নি আল-জাজিরা। ট্রিপিও পরে কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই পোস্টটি মুছে ফেলেন।
ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের পরিধি বাড়াতে চায় না ইরান। তবে কোনো আক্রমণের সমানমাত্রায় পাল্টা জবাব দেবে।
সোমবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে ফোনালাপে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান এ কথা বলেন।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার বরাত দিয়ে সিএনএন এ কথা জানিয়েছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ইরান এই যুদ্ধ শুরু করেনি। কিন্তু প্রতিটি আক্রমণের জবাব সমানভাবে দেওয়া হবে। ইসরায়েলের আগ্রাসনে ইরানে বেসামরিক মানুষ, বিজ্ঞানী ও সামরিক কর্মকর্তারা নিহত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান বলেন, এই আলোচনা এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ হওয়ার ওপর নির্ভর করছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, তুরস্ক উত্তেজনা প্রশমনে এবং পারমাণবিক আলোচনায় ফেরার ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তেহরান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চালানো এক হামলায় তারা ইরানের দুটি এফ-১৪ যুদ্ধবিমান সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে আইডিএফের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফি ডেফরিন এ তথ্য জানান।
এই দুটি মার্কিন-উৎপাদিত এফ-১৪ টমক্যাট যুদ্ধবিমান ইরানকে সরবরাহ করা হয়েছিল ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের আগে। এগুলো বিশ্বের শেষ সক্রিয় এফ-১৪ হিসেবে পরিচিত ছিল।
আইডিএফ হামলার ভিডিওচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যায়—একটি ড্রোন হামলার মাধ্যমে যুদ্ধবিমান দুটি ধ্বংস করা হয়।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা নূর নিউজ দাবি করেছে, তারা ইসরায়েলের একটি এফ-৩৫ স্টেলথ যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তাবরিজের কাছে।
তবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, তারা এমন কোনো ঘটনার খবর জানে না। আইডিএফ-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমাদের কোনো যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার খবর আমাদের কাছে নেই।
এর আগেও ইরান এ ধরনের দাবি করেছিল, তবে সেগুলোকে ইসরায়েল ‘ভুয়া খবর’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, ‘দেখুন, আমরা যা প্রয়োজন তাই করছি।’
নেতানিয়াহু আরও বলেন, ‘আমি বিস্তারিত বলতে চাই না, তবে আমরা এরই মধ্যে তাদের শীর্ষ পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের টার্গেট করেছি। ওটা মূলত হিটলারের নিউক্লিয়ার টিম।’
তিনি দাবি করেন, খামেনিকে হত্যা সংঘাতকে আরও তীব্র করবে না, বরং ‘এটাই হবে এই যুদ্ধের শেষ।’
ইরান জরুরি ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি এবং পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার পুনরারম্ভ চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে বার্তা পাঠাচ্ছে। আজ সোমবার একাধিক কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রভাবশালী গণমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং বার্তাসংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেহরান আরব মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কাছে বার্তা পাঠিয়েছে, যাতে যুদ্ধবিরতির পথ খুলে দেওয়া হয় এবং আলোচনার টেবিলে ফিরে আসা যায়। এ লক্ষ্যে কাতার, সৌদি আরব এবং ওমানকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর প্রভাব খাটাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিনিময়ে ইরান পারমাণবিক আলোচনা নিয়ে নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে।
রয়টার্সকে দেওয়া এক বিবৃতিতে দুজন ইরানি এবং তিনজন আঞ্চলিক সূত্র নিশ্চিত করেন যে, তেহরান যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে এবং আলোচনার পরিবেশ তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকা চায়।
ইরান থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। দেশটির সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উত্তরের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশঙ্কায় সাইরেন বেজে উঠেছে এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে।
সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, আক্রমণ প্রতিহত করতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে দেশটির নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে প্রবেশ করতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা সরাসরি সামরিক সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা বাড়ছে। তবে এখনো ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
কানাডায় অনুষ্ঠিত জি৭ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরান ‘এই যুদ্ধে জয়ী নয়’ এবং তারা ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাত নিরসনে আলোচনা চায়।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনির সঙ্গে এক যৌথ ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘এই সংঘাত দুই পক্ষের জন্যই বেদনাদায়ক। তাদের অবিলম্বে কথা বলা উচিত, সময় শেষ হওয়ার আগেই।’
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে যখন ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করা হয়, এই সংঘাতে সামরিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র কখন সম্পৃক্ত হতে পারে, তখন তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে এখন কথা বলতে চাই না।’
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই মন্তব্য ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক সমাধানে উৎসাহ দেওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে। তবে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল দাবি করেছে, রাজধানী তেহরানে চালানো সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তরঙ্গে তাদের সম্প্রচারকেন্দ্র ইসরায়েলের হামলার শিকার হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রথমবারের মতো ইরানের রাজধানী তেহরানের একটি নির্দিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের সর্তক করে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। উত্তরের ডিস্ট্রিক্ট থ্রি—যা রাজধানীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা—তাতে এই সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
আল জাজিরার সাংবাদিক ডোরসা জাব্বারির বরাতে জানা গেছে, তেহরানের এই অংশে কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর রয়েছে। এখানেই অবস্থিত ব্রিটিশ দূতাবাসের আবাসিক ভবন, জাতিসংঘের কার্যালয় এবং আরও কয়েকটি পশ্চিমা দেশের দূতাবাস।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ পর্যন্ত কী লক্ষ্যবস্তুতে হামলার হুমকি দিচ্ছে, তা স্পষ্টভাবে না জানালেও এ ধরনের সরাসরি ‘এভাকুয়েশন থ্রেট’ এই প্রথম বলে জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। এই হুমকির কারণে ইরানজুড়ে আতঙ্ক আরও বেড়েছে।
ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, রাজধানী তেহরানের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি সামরিক ঘাঁটিতে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে।
একইসঙ্গে তেহরানের পূর্ব অংশেও বিস্ফোরণের খবর দিয়েছে দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।
এর আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তেহরানের কিছু অংশে হামলার হুমকি দিয়েছিল। সেই প্রেক্ষিতে আজকের বিস্ফোরণকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।
এখনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতির উন্নয়নের দিকে নজর রাখছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, তাঁর দেশের বিমানবাহিনী ‘তেহরানের আকাশসীমায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ’ প্রতিষ্ঠা করেছে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, তিনি কেন্দ্রীয় ইসরায়েলের তেল নফ বিমানঘাঁটি পরিদর্শনে গিয়ে এই মন্তব্য করেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এবং চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট-জেনারেল এয়াল জামির।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা আমাদের দুটি লক্ষ্য অর্জনের পথে রয়েছি: পারমাণবিক হুমকি নির্মূল এবং ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি নির্মূল।’
তেহরানের নাগরিকদের সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘রাজধানী ছেড়ে চলে যান।’
পাকিস্তান প্রতিবেশী দেশ ইরানের সঙ্গে সকল সীমান্ত পারাপার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে বলে জানিয়েছেন বেলুচিস্তান প্রদেশের কর্মকর্তারা।
বেলুচিস্তানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কাদির বখশ পিরকানি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, চাগাই, ওয়াশুক, পাঞ্জগুর, কেচ ও গওাদার—এই পাঁচটি জেলার সব সীমান্ত কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
চাগাই জেলার একটি সীমান্ত চৌকির কর্মকর্তা আতাউল মুনিম বলেন, ইরানে প্রবেশ স্থগিত করা হয়েছে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত।
তবে সীমান্তে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, এবং ইরানে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিকরা প্রয়োজন হলে দেশে ফিরতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
মুনিম আরও বলেন, আমরা আজকের মধ্যে প্রায় ২০০ পাকিস্তানি শিক্ষার্থী দেশে ফিরবে বলে আশা করছি।
পাকিস্তান প্রতিবেশী দেশ ইরানের সঙ্গে সকল সীমান্ত পারাপার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে বলে জানিয়েছেন বেলুচিস্তান প্রদেশের কর্মকর্তারা।
বেলুচিস্তানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কাদির বখশ পিরকানি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, চাগাই, ওয়াশুক, পাঞ্জগুর, কেচ ও গওাদার—এই পাঁচটি জেলার সব সীমান্ত কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
চাগাই জেলার একটি সীমান্ত চৌকির কর্মকর্তা আতাউল মুনিম বলেন, ইরানে প্রবেশ স্থগিত করা হয়েছে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত।
তবে সীমান্তে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, এবং ইরানে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিকরা প্রয়োজন হলে দেশে ফিরতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
মুনিম আরও বলেন, আমরা আজকের মধ্যে প্রায় ২০০ পাকিস্তানি শিক্ষার্থী দেশে ফিরবে বলে আশা করছি।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ তেহরানের বাসিন্দাদের উদ্দেশ্য করে হুমকি দিয়েছিলেন যে, তাদের চরম ‘মূল্য চোকাতে’ হবে। তবে সেই বক্তব্যের কিছুক্ষণ পরেই তিনি তাঁর অবস্থান সংশোধন করে পিছু হটেছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজ বলেছেন, তেহরানের বাসিন্দাদের ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করার কোনো উদ্দেশ্য তাঁর দেশের নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক বিবৃতিতে কাটজ বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই—তেহরানের বাসিন্দাদের শারীরিকভাবে আঘাত করার কোনো উদ্দেশ্য নেই, যেমনটা খুনি স্বৈরশাসক ইসরায়েলের বাসিন্দাদের সাথে করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তেহরানের বাসিন্দাদের স্বৈরশাসনের মূল্য দিতে হবে এবং তেহরানে শাসনব্যবস্থার লক্ষ্যবস্তু ও নিরাপত্তা অবকাঠামোতে হামলা চালানো প্রয়োজন এমন এলাকা থেকে তাদের বাড়িঘর খালি করতে হবে।’
এর আগে কাৎজ সতর্ক করে বলেছিলেন, ইরানের রাজধানীতে বসবাসকারী মানুষ ইসরায়েলে ইরানের মারাত্মক প্রতিশোধমূলক হামলার জন্য তেহরানবাসী চরম ‘মূল্য দেবে—এবং সেটা খুব শিগগির।’
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ৫০ টিরও বেশি যুদ্ধবিমান ও অন্যান্য বিমান হামলা চালিয়ে ইরানের ১২০ টিরও বেশি ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে তারা। সংঘাত চতুর্থ দিনে প্রবেশ করার পর এই দাবি করল ইসরায়েল।
সামরিক মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফফি দেফরিন টেলিভিশনে প্রচারিত এক বিবৃতিতে বলেছেন, এটি ইরানি শাসনের হাতে থাকা ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ব্যবস্থাগুলোর এক-তৃতীয়াংশের সমান।
ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায় কয়েক দিনের হামলার পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের বিমানগুলো এখন পশ্চিম ইরান থেকে তেহরান পর্যন্ত আকাশ নিয়ন্ত্রণ করছে।
ডেফরিন বলেন, এখন আমরা বলতে পারি যে, তেহরানের আকাশসীমায় আমরা আধিপত্য অর্জন করেছি।
ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জেরে ইসরায়েলের আকাশপথ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এর ফলে প্রায় ৪০ হাজার পর্যটক ইসরায়েলে আটকা পড়েছেন।
মন্ত্রণালয় পর্যটকদের তথ্যসেবা দিতে একটি ২৪/৭ ভার্চুয়াল অফিস চালু করেছে। এটি তারা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় ডিজিটাল মাধ্যমে সেবা দিচ্ছে।
পর্যটন মন্ত্রণালয় হোটেলসহ অন্যান্য আবাসনের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। আটকা পড়া পর্যটকদের আবাসন ও অন্যান্য চাহিদা পূরণে তাদের সহায়তা করা হচ্ছে।
পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা পর্যটকদের ইসরায়েল ত্যাগেও সহায়তা করার চেষ্টা করছি। বিদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য জর্ডান ও মিসরের স্থল সীমান্ত খোলা আছে। আমরা তাদের কাছে এই বিকল্পগুলো তুলে ধরছি।’
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই জানিয়েছেন, ইরানের পার্লামেন্ট পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে বেরিয়ে আসতে একটি বিল নিয়ে কাজ করছে। তবে তিনি যোগ করেন, তেহরান এখনও গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির বিরোধিতা করে।
১৯৬৮ সালে স্বাক্ষরিত এবং ১৯৭০ সালে কার্যকর হওয়া ১৯০ সদস্যের এনপিটি চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ব্রিটেন ও ফ্রান্স ছাড়া অন্য দেশগুলোর পরমাণু অস্ত্র অর্জন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর বিনিময়ে তাদের জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়।
২০১৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পর এবং ইরানের অর্থনীতিতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন কঠোর নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করার পর ইরান ধীরে ধীরে চুক্তিটির অধীনে তাদের বাধ্যবাধকতা থেকে সরে এসেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, চার দিনের সংঘাতে ইরান ইসরায়েলের দিকে ৩৭০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং শত শত ড্রোন নিক্ষেপ করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত ইসরায়েলে ২৪ জন নিহত এবং আরও ৫৯২ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর।
ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের ৩০টি স্থানে সফলভাবে আঘাত হেনেছে।
ইরানি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল রোববার জানিয়েছে, গত শুক্রবার সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইরানে অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইয়েমেন থেকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।
সামরিক বাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রতিহত করেছে।
আগের একটি সামরিক আপডেটে বলা হয়েছিল, ইয়েমেন থেকে নিক্ষেপ করা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি ভূপাতিত করার জন্য ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অংশে সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে উঠেছে।
সেনাবাহিনী একটি বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি এলাকায় কিছুক্ষণ আগে সাইরেন বাজার পর, ইয়েমেন থেকে নিক্ষেপ করা একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশের আগেই ভূপাতিত করা হয়েছে
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর একটি ইউনিট আনসার আল-মাহদি কর্পস। তারা জানিয়েছে, জানজান প্রদেশে ইসরায়েলি হামলায় তাদের একজন কমান্ডার ও একজন সেনা নিহত হয়েছেন।
আইআরজিসি-র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংবাদ সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন জানজানের ইজরুদ জেলার আইআরজিসি কমান্ডার রেজা নাজাফি এবং সেনা হাসান রাসূলি।
গত শুক্রবার ইসরায়েল হামলা শুরু করার পর থেকে ইরানে সামরিক কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী এবং নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ২২০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘাত চতুর্থ দিনে প্রবেশ করেছে। রাতভর ইসরায়েলে প্রাণঘাতী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ইরান। উভয় পক্ষের হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। উত্তেজনা কমানোর জন্য ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক আহ্বানের মধ্যে সংঘাত আরও তীব্র হচ্ছে।
নিচে সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরা হলো:
রাতভর হামলা
ইরান রাতভর মধ্য ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে। তেল আবিব এবং জেরুজালেমসহ সারা দেশে সাইরেন বাজানো হয়েছে এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে। উপকূলীয় শহর হাইফার একটি তেল শোধনাগারের আশপাশে বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বিস্ফোরণ দেখা গেছে। মধ্য ইসরায়েলের বিদ্যুৎ গ্রিডও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এর আগে গতকাল রোববার, ইরান ইসরায়েলের আবাসিক ভবন ও অবকাঠামো লক্ষ্য করে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।
মাঠের পরিস্থিতি
দিনের আলোতে ইসরায়েলি বাসিন্দাদের মধ্যে আরও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কারণ তাঁরা ক্ষতির পরিমাণ প্রত্যক্ষ করছেন। কর্তৃপক্ষ ধ্বংসাবশেষের মধ্যে তল্লাশি চালাচ্ছে। রাস্তায় বেরিয়ে মানুষ একে অপরকে জড়িয়ে ধরছে। তেল আবিবের ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে, রাস্তা ধ্বংসাবশেষে ভরে গেছে, দোকানপাটের জানালা ভাঙা এবং ভবন ও গাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা
রাতভর হামলায় ইসরায়েলে অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। এতে গত শুক্রবার সংঘাত শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৯ জনে। ইরানি কর্তৃপক্ষ এবং রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে যে, ইরানে অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন এবং ১ হাজার ২৭৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।
নিশানায় বিপ্লবী গার্ড
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের যুদ্ধবিমানগুলো ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের গোপন শাখা কুদস ফোর্সের সদর দপ্তরে আঘাত হেনেছে। গতকাল রোববার ইসরায়েলি হামলায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণ এলাকা এবং সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়। হামলায় রেভল্যুশনারি গার্ডের গোয়েন্দা প্রধান নিহত হন।
খামেনিকে হত্যা পরিকল্পনা
দুই মার্কিন কর্মকর্তা সিএনএন-কে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এমন পরিকল্পনার খবর দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছেন। ট্রাম্প আরও বলেছেন, তিনি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে একটি চুক্তি দেখতে চান এবং বিশ্বাস করেন, এটি ঘটার ‘একটি ভালো সম্ভাবনা’ রয়েছে। তবে ট্রাম্প এও বলেছেন যে, কখনো কখনো তাদের যুদ্ধ করতে হয়!
সতর্কতা জারি
ইরান এবং ইসরায়েল উভয়ই অন্য দেশের বাসিন্দাদের তাঁদের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনার কাছাকাছি এলাকা থেকে সরে যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছে।
তেহরানবাসীদের আতঙ্ক
ইসরায়েলি হামলার কয়েক দিন পর তেহরানের আতঙ্কিত বাসিন্দারা রাজধানী শহর ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন। গতকাল রোববার তেহরান জুড়ে গ্যাস স্টেশনগুলোর বাইরে গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।
তেলের দাম বৃদ্ধি
সংঘাত বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহে বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় গতকাল রোববার জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় ৭ শতাংশ বেড়েছে তেলের দাম।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান দেশটির পার্লামেন্টে চলমান ইসরায়েলি হামলা নিয়ে কথা বলেছেন। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা এ তথ্য জানিয়েছে। তিনি বলেন, ‘শত্রুরা মারধর, হত্যা ও গুপ্তহত্যার মাধ্যমে আমাদের এবং জাতিকে দৃশ্যপট থেকে সরাতে পারবে না। কারণ, যে বীরের পতাকা পড়ে যায়, তার জন্য শত শত অন্য বীর সেই পতাকা তুলে নেয় এবং এই কাপুরুষদের সংঘটিত নিষ্ঠুরতা, অন্যায়, অপরাধ ও বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়।’
ইরানের এই নেতা বলেছেন, ইরানিরা ‘আক্রমণকারী নয়।’ তিনি উল্লেখ করেন, তার সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পারমাণবিক অস্ত্র চাই না।’
পেজেশকিয়ান যোগ করেন, পশ্চিমা বিশ্ব বলছে ইরানের এমন অস্ত্র পাওয়া উচিত নয়, ‘অথচ আমাদের এই অস্ত্র পাওয়ার কোনো উদ্দেশ্যই নেই।’ তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাঁর দেশ জ্বালানির উদ্দেশ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ইরানের ‘পারমাণবিক শক্তি থেকে সুবিধা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।’
ইরানের তেহরান প্রদেশে ২০০ কেজি বিস্ফোরক ও ২৩টি ড্রোন এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামসহ ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের আরও দুই চরকে আটক করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, পৃথক অভিযানে দুই মোসাদ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকও জব্দ করা হয়েছে। ইরানি বার্তা সংস্থা ইরনার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ইরানের পুলিশ কমান্ডের মুখপাত্র সাঈদ মোন্তাজের আল-মাহদি রোববার বলেছেন, তেহরান প্রদেশের রে কাউন্টির ফাশাফুয়েহ জেলায় ওই দুই সদস্যকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি জানান, তাদের কাছ থেকে ২০০ কিলোগ্রামের বেশি বিস্ফোরক, ২৩টি ড্রোনের সরঞ্জাম, লঞ্চার এবং অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া একটি নিসান পিকআপ ট্রাকও আটক করা হয়েছে।
গত ১৩ জুন রাতে ইসরায়েলি বাহিনী বিনা উসকানিতে ইরানের ভূখণ্ডে, আবাসিক ভবন লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে। এরপর থেকে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ইরানে অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ছোট ড্রোন ব্যবহার করে বিভিন্ন স্থানে হামলা চালানো হয়েছে।
এর আগে, রোববার তেহরান সংলগ্ন আলবোরজ প্রদেশের সাভোজবোলাগ কাউন্টি থেকে আরও দুই মোসাদ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে, ইরান ইসরায়েলের ভেতরে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে তেল আবিব, জেরুজালেম এবং হাইফাসহ অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে ইরান। ইসরায়েলিরা দিনের পর দিন ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে দিন কাটাচ্ছে বলে অধিকৃত অঞ্চলে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে।
ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি এক্স পোস্টে জানিয়েছেন, তেহরান থেকে আসা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে তেল আবিবে মার্কিন দূতাবাস ভবনে ‘সামান্য ক্ষতি’ হয়েছে। দূতাবাস ভবনের কাছাকাছি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের ধাক্কার প্রভাব এখানেও পড়েছে।
তিনি আরও যোগ করেন, মার্কিন কর্মীদের কোনো ক্ষতি হয়নি। জেরুজালেম ও তেল আবিবে মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলো আজ বন্ধ থাকবে।
দ্য টাইমস অব ইসরায়েল এবং ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, পেতাহ তিকভা শহরে একটি মরদেহ পাওয়া গেছে। এর ফলে আজ সোমবার ইরানের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে পাঁচজনে দাঁড়িয়েছে।
এখন পর্যন্ত পেতাহ তিকভাতে চারজন এবং বেনি ব্রাকে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদম জানিয়েছে, মোট ৯২ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই সামান্য আহত।
উত্তর ইসরায়েলের হাইফা শহরে তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মতো অস্ত্রশস্ত্র ও সক্ষমতা ইরানের কম। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে এমনটাই বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সিনা আজোদি। তাঁর মতে, ইসরায়েলের কাছে ইরানের চেয়ে গুণগত ও সংখ্যাগত উভয় দিক থেকেই অস্ত্রশস্ত্রের সুবিধা রয়েছে। ইরান স্বল্পমেয়াদে সফল আক্রমণ চালাতে পারলেও দীর্ঘ সময় ধরে সংঘাত চালিয়ে যাওয়ার মতো রসদ তাদের নেই।
আজোদি বলেন, ‘ইসরায়েল অত্যাধুনিক মার্কিন ও ইউরোপীয় অস্ত্র ব্যবস্থা পেয়ে থাকে। তাদের কাছে আর্থিক সংস্থানও অনেক বেশি।’ আজোদি যোগ করেন, ইরান কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং পঙ্গু করে দেওয়া অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার শিকার। এর অর্থ হলো, এমনকি রাশিয়া ও চীনের মতো বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোও তাদের প্রয়োজনীয় সামরিক সহায়তা দিতে পারবে না সেই অর্থে।
এই বিশ্লেষক বলেন, ‘ইরানকে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি এবং ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষাকে পরাস্ত করতে বড় ধরনের হামলা চালানোর জন্য অভ্যন্তরীণ সক্ষমতার ওপর নির্ভর করতে হয়। আমার মনে হয় না ইরান দীর্ঘ সময় ধরে এটি চালিয়ে যেতে পারবে।’
আজ সোমবার ভোরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সর্বশেষ ঢেউয়ের পর তেল আবিবের রাস্তায় আতঙ্ক, বিশৃঙ্খলা এবং উদ্বেগের চিত্র দেখা গেছে।
সিএনএন-এর জেরুজালেম সংবাদদাতা জেরেমি ডায়মন্ড জানিয়েছেন, রাস্তাঘাট ধ্বংসাবশেষে ভরে আছে। উদ্ধারকারী ও সামরিক কর্মীরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তল্লাশি চালাচ্ছেন। চারটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
একজন নারী বলেন, তিনি বেসমেন্টে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেখান থেকে হামলার ‘আঘাত অনুভব’ করেছেন।
তিনি ডায়মন্ডকে বলেন, ‘আমরা খুব ধীরে ধীরে বেরিয়ে এসেছি কারণ ভয় পেয়েছিলাম। আমরা যখন হাঁটছিলাম তখন ভবনগুলো ভেঙে পড়ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধোঁয়ার গন্ধ আসছিল...আমাকে টি-শার্ট দিয়ে নাক ঢাকতে হয়েছিল। ধোঁয়া যাতে নিশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে না ঢোকে তা নিশ্চিত করে রাস্তা ধরে হেঁটেছিলাম।’
ডায়মন্ড জানান, ঘটনাস্থলের কাছাকাছি একটি আবাসিক ভবন আংশিকভাবে ধসে পড়েছে এবং কয়েক ব্লক দূর থেকেও ধ্বংসাবশেষ দেখা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, অন্তত ১০ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
মানুষ ক্ষয়ক্ষতি দেখতে বেরিয়ে আসছে। পরিবার ও বন্ধুরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরছে। হামলার ধাক্কা বাসিন্দাদের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী, এক্স-এ একটি পোস্টে জানিয়েছে, তারা ইরানের রাজধানী তেহরানে কুদস ফোর্সের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছে।
কুদস ফোর্স হলো ইসলামি বিপ্লবী গার্ডের (আইআরজিসি) বিদেশি শাখা, যা লেবানন থেকে ইরাক, ইয়েমেন এবং সিরিয়া পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে তাদের মিত্র মিলিশিয়াদের ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করে।
হামলার ব্যাপারে ইরানের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সিএনএন-এর লরেন ইজসো এবং লেক্স হার্ভের প্রতিবেদন অনুসারে, ইরানের হামলায় মধ্য ইসরায়েলের স্থানীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের ক্ষতি হয়েছে বলে ইসরায়েল ইলেকট্রিক করপোরেশন জানিয়েছে।
ইসরায়েল ইলেকট্রিক করপোরেশন বলেছে, নিরাপত্তা ঝুঁকি, বিশেষ করে বিদ্যুতের ছেঁড়া তার থেকে বিদ্যুতায়িত হওয়ার ঝুঁকি দূর করতে তাদের একাধিক দল মাঠে কাজ করছে। একই সময়ে, অবকাঠামো মেরামত এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে।
জেরুজালেম পোস্ট, চ্যানেল ১২ নিউজ এবং ওয়াইনেট-এর তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে ইরানের সর্বশেষ হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত আরও অনেকে।
ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলা তীব্র করেছে ইরান। ব্যাপক হতাহত এবং ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে।
উত্তর ইসরায়েলের বন্দর নগরী হাইফায় হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। আল-জাজিরা জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের সামুদ্রিক নিরাপত্তা সংস্থা অ্যামব্রে জানিয়েছে, ইসরায়েলের হাইফা বন্দরের কাছে বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগুন দেখা গেছে। তারা আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলা প্রতিহত করার ভিডিও ফুটেজ তারা দেখেছে, এরপর দুটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতও দেখা গেছে।
ইরানের ওপর ইসরায়েলের চলমান হামলা নিয়ে ইসরায়েলি জনগণের মনোভাব কেমন, সে বিষয়ে আল-জাজিরা কথা বলেছে ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওরি গোল্ডবার্গের সঙ্গে।
গোল্ডবার্গ জানান, ইসরায়েলিরা দীর্ঘদিন ধরেই ইরানকে ‘এক নম্বর শত্রু’ হিসেবে দেখে আসছে, কারণ হামাস এবং হিজবুল্লাহকে অর্থায়ন, সহায়তা ও উসকানি দেওয়ার ক্ষেত্রে ইরানের ভূমিকা রয়েছে। তাই তেহরানের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধের জন্য ইসরায়েলিদের সাধারণ সমর্থন ‘বেশ ব্যাপক’।
তবে, তিনি যোগ করেন, অন্যদিকে, নেতানিয়াহু সরকারের প্রতি খুব বেশি আস্থা নেই। ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক উভয় সমস্যায় নেতানিয়াহু জর্জরিত।
গোল্ডবার্গ আরও বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্ষেত্রে ‘কোনো দৃশ্যমান চূড়ান্ত লক্ষ্য’ নেই। তিনি উল্লেখ করেন, যদিও জনগণ নেতানিয়াহুকে বিশ্বাস করে না, তবে তারা চলমান অভিযান পরিচালনার জন্য সামরিক বাহিনীর ওপর আস্থা রাখে।
ইসরায়েলি সাংবাদিক গিদিওন লেভি ইসরায়েলে সর্বশেষ হামলার সময়কার অভিজ্ঞতা জানিয়ে আল-জাজিরাকে বলেন, আমি খুবই কৃতজ্ঞ যে, ওই দৃশ্য দেখিনি কিন্তু শুনেছি। আমি শুনেছি এবং এটা আমার সবচেয়ে কাছের অভিজ্ঞতা। আমি আমার বাড়ির পাশের পাবলিক শেল্টারে ছিলাম এবং এবারের শব্দগুলো আগের চেয়ে অনেক, অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল।
তেল আবিবে যখন তিনি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসেন, তখন লেভি বলেন, ‘আমরা প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানালা ভেঙে পড়ার খবর পেয়েছি।’
লেভি বলেন, ‘বেশি দূরে ছিল না। আমি ঠিক জানি না কোথায়। তবে হামলা খুব গুরুতর ছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এরপর অ্যাম্বুলেন্স এবং অন্যান্য সাহায্যকর্মীদের সাইরেন শোনা যায়। এর বেশি কিছু আমি জানি না, তবে এটা খুব, খুব শক্তিশালী এবং বেশ ভীতিকর ছিল।’
ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম কান (Kan) জানিয়েছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলের অন্তত চারটি এলাকায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্য ইসরায়েলে অন্তত একজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
এর আগে, ইসরায়েলের ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছিল যে মধ্য ইসরায়েলে ১২ জন আহত হয়েছেন এবং তাদের সবার আঘাত মাঝারি বা হালকা। তারা আরও জানিয়েছে, পেতাহ তিকভা শহরে অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলের ধারাবাহিক বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন।
এ তথ্য রোববার ভোরে স্থানীয় সময় ২ টা ৩০ মিনিটে প্রকাশ করা হয়। এর আগে শনিবার দুপুর পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ছিল ১২৮। মাত্র একদিনের ব্যবধানে প্রায় ১০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর এলে পরিস্থিতির ভয়াবহতা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে যে, রোববার ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর গোয়েন্দা প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কাজেমি এবং তাঁর উপপ্রধান হাসান মোহাক্কিক নিহত হয়েছেন।
এছাড়া হামলায় আরও একজন ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা, মোহসেন বাঘেরী, নিহত হন বলে জানিয়েছে ইরানি রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থাগুলো। এই আক্রমণ তেহরানের অভ্যন্তরেই সংঘটিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রধান এয়াল জামির এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ইরানে চলমান সামরিক অভিযান আরও ‘তীব্র ও ব্যাপক’ করা হবে। তিনি এই অভিযানকে ‘একটি ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন, যার লক্ষ্য হচ্ছে ইসরায়েলের অস্তিত্বের হুমকি প্রতিহত করা।
জামির বলেন, “আমরা আমাদের অভিযান আরও জোরদার করব এবং এর মাধ্যমে আগামী বহু বছরের জন্য আমাদের নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করব। আমরা জানতাম এর একটা মূল্য থাকবে, আর সেটাই দেখাচ্ছে—এখনই পদক্ষেপ নেওয়া কেন জরুরি ছিল, না হলে অনেক দেরি হয়ে যেত।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, শুক্রবার ও শনিবার—এই দুই দিনে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১২৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ৯০০ জন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তেহরানভিত্তিক ইত্তেমাদ ডেইলি জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৪০ জন নারী রয়েছেন। এ ছাড়াও বেশ কিছু শিশু হতাহতদের মধ্যে রয়েছে।
ইসরায়েলের কার্যত রাজধানী তেল আবিব, ঘোষিত রাজধানী জেরুসালেম এবং বন্দর নগরী হাইফাসহ পুরো দেশজুড়ে ইরানি ক্ষেপাণস্ত্র হামলা চলছে। ইসরায়েলি বাহিনী ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ব্যাপক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে, রোববার সন্ধ্যায় রয়টার্স একটি ভিডিও বিবৃতি পর্যালোচনা করেছে। সেখানে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ইসরায়েলিদের ‘গুরুত্বপূর্ণ এলাকা’ ছেড়ে যেতে সতর্ক করেছে।
সরায়েলি সামরিক বাহিনী স্থানীয় সময় আজ রোববার এক বিবৃতিতে বলেছে, ইরান থেকে কিছুক্ষণ আগে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পর তাদের বিমানবাহিনী ‘যেখানে প্রয়োজন সেখানেই প্রতিহত ও হামলা’ চালানোর কাজ করছে।
ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে হিমশিম খাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রকাশিত এক পোস্টে তারা জানিয়েছে, ‘প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্ছিদ্র নয়। তাই, হোম ফ্রন্ট কমান্ডের নির্দেশনা মেনে চলা অত্যাবশ্যক।’
ইরান ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েই যাচ্ছে। এই হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হচ্ছে। স্থানীয় ইসরায়েলিরাই বলছেন, ইসরায়েল সরকার প্রকৃত তথ্য চেপে যাচ্ছে। তবে এবার ইসরায়েলি বাহিনীই স্বীকার করেছে, তারা ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী স্থানীয় সময় আজ রোববার এক বিবৃতিতে বলেছে, ইরান থেকে কিছুক্ষণ আগে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পর তাদের বিমানবাহিনী ‘যেখানে প্রয়োজন সেখানেই প্রতিহত ও হামলা’ চালানোর কাজ করছে।
ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে হিমশিম খাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রকাশিত এক পোস্টে তারা জানিয়েছে, ‘প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্ছিদ্র নয়। তাই, হোম ফ্রন্ট কমান্ডের নির্দেশনা মেনে চলা অত্যাবশ্যক।’
ইসরায়েলেও স্থানীয় সময় আজ রোববার ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এই হামলার কারণে ইসরায়েলজুড়ে সতর্ক সংকেত বাজানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুসালেম পোস্ট জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাজেন ডেভিড অ্যাডামের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই হামলায় এখন পর্যন্ত তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে, ইরানি হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েলি সিভিল অ্যাভিয়েশন অথোরিটি দেশটির সবগুলো বিমানবন্দর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।
ইরানের রাজধানী তেহরানে নতুন করে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। ইসরায়েলের তরফ থেকে তেহরানের বাসিন্দাদের জন্য নজিরবিহীন সতর্কবার্তা জারির কয়েকঘণ্টা পর এই হামলার ঘটনা ঘটে। দখলদার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এবং ইরানের স্থানীয় সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ এই হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ রোববার বিকেলে ইরানের রাজধানী তেহরানে ইজরায়েলি বিমানবাহিনীর ব্যাপক হামলার খবর পাওয়া গেছে। ইসরায়েল ইরানের বেসামরিক নাগরিকদের অস্ত্র কারখানার আশপাশের এলাকা খালি করতে নজিরবিহীন সতর্কবার্তা জারির কয়েক ঘণ্টা পর এই হামলা চালানো হয়।
এদিকে, তেহরানে ইসরায়েলি হামলা চালাকালে বেশ কয়েকটি গাড়ি বোমা বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে এবং প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরও কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর শিরাজেও ইরানের সামরিক স্থাপনায় হামলার খবর পাওয়া গেছে।
ইজরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর আরবি ভাষার মুখপাত্র কর্নেল আভিচাই আদ্রায়ী হামলার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক ফার্সি বার্তায় বলেন, ‘বর্তমানে সামরিক অস্ত্র উৎপাদনকারী কারখানা এবং তাদের সহায়ক প্রতিষ্ঠানে বা তার আশেপাশে উপস্থিত সকল ব্যক্তি অবিলম্বে এই এলাকাগুলো খালি করুন এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ফিরে আসবেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই স্থাপনাগুলোর কাছাকাছি থাকা আপনার জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।’ আইডিএফের ফার্সি ভাষার মুখপাত্র মাস্টার সার্জেন্ট (রিজার্ভ) কামাল পেনহাসিও সামরিক বাহিনীর ফার্সি এক্সঅ্যাকাউন্টে একই সতর্কবার্তা জারি করেন।
ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র তথা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে ইরানের বিপুল পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানায় হতবাক দেশটির জনগণ। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ‘দ্য লোকাল কল’-এর সম্পাদক মেরন রাপোপোর্ট এ কথা বলেছেন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে রাপোপোর্ট বলেন, ‘যদিও সামরিক বাহিনী এটাকে প্রত্যাশিত হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে, ইসরায়েলিরা বেশ অবাক যে, এত ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে এবং ক্ষয়ক্ষতিও অনেক বেশি।’
তিনি আরও বলেন, ‘হামলায় কিছু কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত হানা সম্ভব হয়েছে এবং কিছু ঘটনা সম্ভবত জনগণের কাছে প্রকাশ করা হয়নি। আমরা সবকিছু জানি না কারণ সেন্সরশিপ বেশ কঠোর এবং যদি আমরা তা জানিও, তাহলে আমাদের তা বলার অনুমতি নেই।’
রাপোপোর্ট মনে করেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিসংক্রান্ত একটি চুক্তিই এই সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র সম্ভাব্য উপায়। তিনি বলেন, ‘ইরান আত্মসমর্পণ করবে না, অদূর ভবিষ্যতে শাসন পরিবর্তন হবে না এবং ইসরায়েলও অবশ্যই আত্মসমর্পণ করবে না। তাই ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি চুক্তি ছাড়া আমি অন্য কোনো পথ দেখছি না।’
তেহরানে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর একাধিক গাড়িবোমার বিস্ফোরণ ঘটেছে। ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, পাঁচটি বোমা বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরিত হয়েছে। বেশ কয়েকটি সরকারি ভবনের কাছে একই সময়ে বোমাগুলো বিস্ফোরিত হয়েছে বলে অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজে দেখা গেছে, একটি জ্বলন্ত গাড়ি থেকে কালো ধোঁয়া উঠছে এবং আশেপাশের ভবনগুলোর জানালা ভেঙে গেছে।
ইরানি গণমাধ্যম জানিয়েছে, রোববার তেহরান পুলিশ সদর দফতরও হামলার শিকার হয়েছে। ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ তৃতীয় দিনে গড়ালে আরও কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়।
উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সূত্র দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ বলেছে, গত শুক্রবার সংঘাত শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ১৪ জন ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুটি গাড়িবোমা হামলাও রয়েছে।
১৯৮৮ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে এমন তীব্র যুদ্ধের মুখে আর কখনোই পড়েনি ইরান। গত বছরও ইসরায়েলের এমন হামলা দেখা গিয়েছিল, তবে শুক্রবার থেকে যা ঘটছে, তার সঙ্গে সেগুলোর কোনো তুলনাই চলে না।
ইরানি সরকার আজ সকালে জানিয়েছে, মেট্রো স্টেশন, স্কুল ও মসজিদগুলো মানুষকে আশ্রয় দিতে প্রস্তুত রাখা হবে। তবে মসজিদ ও স্কুলসহ এসব স্থাপনার কিছু অংশ আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট নিরাপদ মনে হচ্ছে না।
ইরান থেকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদক জানিয়েছেন, তা সত্ত্বেও, আমরা যা শুনছি তা হলো, বিভিন্ন স্থাপনা প্রস্তুত করা হচ্ছে। আপাতত, এ বিষয়ে পরবর্তী নির্দেশনার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের ‘জাতীয় প্রতিশোধ’ প্রক্রিয়া সবে শুরু হয়েছে। এমনটাই হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা ইসলামিক রেভল্যুশন গার্ডস কর্পস (আইআরজিসি)। ইরানের এই এলিট বাহিনী বলেছে, ইসরায়েলকে এর অপরাধের মূল্য দিতে হবে। ইরানের সংবাদ সংস্থা ইরনা এবং সংবাদমাধ্যম তাসনিম নিউজের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
আইআরজিসি আজ রোববার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলি হামলায় আইআরজিসি এরোস্পেস ফোর্সের কমান্ডার মেজর জেনারেল আমির আলী হাজিজাদেহসহ সাত জ্যেষ্ঠ কমান্ডার শহীদ হয়েছেন। বিবৃতিতে মাহমুদ বাকেরি, দাভুদ শেখিয়ান, মোহাম্মদ বাকের তাহেরপুর, মনসুর সাফারপুর, মাসুদ তাইয়েব, খোসরো হাসানি এবং জাভেদ জারসারা ইসরায়েলি বাহিনীর সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ হওয়ার খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।
আইআরজিসির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলার পরপরই কঠোর জবাব দেওয়া হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, ‘এটি জাতীয় প্রতিশোধের প্রক্রিয়ার শুরু মাত্র। জায়নবাদী শাসনকে মনে রাখতে হবে, বিনা শাস্তিতে অপরাধ করার দিন শেষ।’
আইআরজিসি জানিয়েছে, ‘ভুয়া ও দখলদার জায়নবাদী শাসন ধ্বংস ও পতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে।’ আইআরজিসি এরোস্পেস ফোর্সের কমান্ডারদের শাহাদাত জায়নবাদী শাসন ও এর সমর্থকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য ইরানি জাতির সংকল্পকে আরও দৃঢ় করবে বলে বিবৃতিতে জোর দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ—৩’ এর অংশ হিসেবে নতুন করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করেছে ইরান। আজ রোববার স্থানীয় সময় দিনের বেলাতেই তেল আবিব, হাইফা এবং আশকেলনে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরায়েলি শাসনের তৃতীয় দিনের আগ্রাসনে তেহরানের বিভিন্ন স্থানে হামলার পরপরই এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। ইরানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যতক্ষণ প্রয়োজন হবে, এই অভিযান চলবে।
ইরান-সমর্থিত ইরাকি সশস্ত্র গোষ্ঠী কাতাইব হিজবুল্লাহ আজ রোববার সতর্ক করে বলেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে হস্তক্ষেপ করলে তারা এই অঞ্চলে মার্কিন সেনাদের ওপর হামলা আবার শুরু করবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
কাতাইব হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি-জেনারেল আবু হুসেইন আল-হামিদাভি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা এই অঞ্চলে মার্কিন শত্রু সেনাবাহিনীর গতিবিধি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি আমেরিকা যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে, আমরা দ্বিধা ছাড়াই এই অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা তাদের স্বার্থ এবং ঘাঁটিগুলোর বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ নেব।’
২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ইরাক আক্রমণের পর গঠিত কাতাইব হিজবুল্লাহ ইরানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ইরাকি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অন্যতম। এই গোষ্ঠীটি ইরানের আঞ্চলিক প্রক্সি বাহিনীর নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। তারা ইসরায়েল এবং ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন বাহিনীকে লক্ষ্য করে চালানো ডজনখানেক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার দায় স্বীকার করেছে।
গত বছরের শুরুর দিকে কাতাইব হিজবুল্লাহ ইরাকি সরকারের প্রচেষ্টার প্রতিক্রিয়ায় এই অঞ্চলে মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে তাদের সমস্ত সামরিক অভিযান স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। কাতাইব হিজবুল্লাহ ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর জোট ‘প্রতিরোধ অক্ষের’।
ইরানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দুই ইসরায়েলি ইহুদিকে গতকাল শনিবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত। পুলিশ ও শিন বেত মুখপাত্ররা জানিয়েছেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইরান সংশ্লিষ্ট গুপ্তচরবৃত্তির ২২টি ঘটনা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ প্রতিহত করেছে।
ইসরায়েলি সংবাদ সংস্থা টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, তদন্তের ওপর গোপনীয়তার আদেশ থাকায় গ্রেপ্তারকৃতদের পরিচয় প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
শিন বেত এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইসরায়েলের জনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং কৌশলগত অবস্থানে ইরানের হামলার বিরুদ্ধে অভিযান পুরোদমে চলছে। আমরা দেখছি ইরানি শত্রুদের সাথে সহযোগিতা কতটা ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক। এই ইসরায়েলিরা যে তথ্য সরবরাহ করেছে, ইরান তা ইসরায়েলের ক্ষতি করার জন্য ব্যবহার করছে।’
শিন বেতের এজেন্ট এবং বর্ডার পুলিশের কাউন্টার-টেরর ইউনিট ইয়ামামের কর্মকর্তারা রাতে অভিযান চালিয়ে দুই সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশের লাহভ-৪৩৩ ইউনিটের তদন্তকারীরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। গুরুতর নিরাপত্তা লঙ্ঘনের সন্দেহে তাদের আটক রাখা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এই সংঘাতে জড়াতে পারি, এমনটা সম্ভব।’ তবে তিনি এও জানান যে, ‘এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতে জড়িত নয়।’
এছাড়া, ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দেখতে ‘উন্মুখ’ বলে মন্তব্য করেছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি (পুতিন) প্রস্তুত। তিনি আমাকে এ বিষয়ে ফোন করেছিলেন। আমাদের দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ‘খুব শিগগিরই’ শান্তি আসবে। নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে শেয়ার করা এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘ইরান ও ইসরায়েলের একটি চুক্তি করা উচিত এবং তারা একটি চুক্তি করবে।’
ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ‘ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে খুব শিগগিরই শান্তি আসবে! ব্যাপক ফোন কল ও বৈঠক চলছে।’ তবে এ বিষয়ে তিনি কোনো বিস্তারিত তথ্য দেননি।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরানের সঙ্গে নতুন করে পরমাণু আলোচনা শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছিল, ঠিক তখনই ইরান হামলা শুরু করে। তবে শুক্রবার ইসরায়েলের ব্যাপকভিত্তিক হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্প এই হামলাকে ‘চমৎকার’ ও ‘ব্যাপক সফল’ বলে আখ্যা দেন।
ইসরায়েলে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া, ইরানের হামলায় এখন পর্যন্তস আহত হয়েছেন অন্তত ৩৮০ জন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এই তথ্য জানিয়েছে।
ইসরায়েল সরকারের বিবৃতি অনুসারে, ইরানের ইসরায়েলে হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত এবং ৩৮০ জন আহত হয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। আহতদের মধ্যে ৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকিদের আঘাত সামান্য বা মাঝারি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলে ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে হামলা করেছে ইরান। এতে ইসরায়েলের ২২টি স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইসরায়েলে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে জেরুজালেমে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস সব কর্মী ও তাঁদের পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ইসরায়েলে নিযুক্ত দূতাবাসের কর্মীদের পরিবার এবং কিছু সাধারণ কর্মী চাইলে দেশ ত্যাগ করতে পারবেন।
এই মুহূর্তে তেলআবিবের কাছাকাছি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ। ফলে ইসরায়েল ছাড়ার একমাত্র পথ হচ্ছে— স্থলপথে পার্শ্ববর্তী দেশ– যেমন জর্ডানের– দিকে যাওয়া।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) নিশ্চিত করেছে, গত শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলের হামলায় তাদের অ্যারোস্পেস ফোর্সের প্রধান আমির আলী হাজিজাদেহ-সহ সাতজন শীর্ষ কমান্ডার নিহত হয়েছেন।
অভিজাত এই বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা আমাদের সাতজন কমান্ডারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি, যার মধ্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির হাজিজাদেহও রয়েছেন।’
গতকাল শনিবার সাইয়্যেদ মাজিদ মুসাভিকে আইআরজিসি-এর অ্যারোস্পেস ফোর্সের নতুন প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ইরান জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের দুই সদস্যকে আটক করেছে।
আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, অভিযুক্তদের আলবোরজ প্রদেশে আটক করা হয়েছে। তাঁরা বিস্ফোরক এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইস প্রস্তুত করছিলেন।
ইসরায়েলের সঙ্গে কয়েক দশক ধরে চলা ছায়াযুদ্ধে জড়িত ইরান মোসাদের সঙ্গে কথিত সংযোগের অভিযোগে অসংখ্য ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার ও মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। বিশেষ করে পারমাণবিক কর্মসূচিকে দুর্বল করার লক্ষ্যে নাশকতা ও গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছে ইরান।
ইরান জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী টানা তৃতীয় দিনের মতো হামলা অব্যাহত রেখেছে। আজ রোববার গুরুত্বপূর্ণ শহর ইস্পাহানে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি স্থাপনায় আক্রমণ করেছে।
সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ (আইএসএনএ) প্রাদেশিক ডেপুটি গভর্নর আকবর সালেহিকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ইস্পাহানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি কেন্দ্রে কিছুক্ষণ আগে হামলা চালানো হয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
তিনি আরও বলেন, বিশেষজ্ঞ দল বর্তমানে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি পরীক্ষা করছে।
এর আগে, ইসরায়েলি বাহিনী শিরাজ শহরে একটি ইলেকট্রনিকস কারখানায় হামলা চালায়। ওই এলাকায় আকাশে বিশাল কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গিয়েছিল।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম অনুসারে, বাত ইয়াম শহরে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার স্থান থেকে জীবিতদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। সেনাবাহিনীর হোম ফ্রন্ট কমান্ড অনুমান করছে, উদ্ধার অভিযান শেষে করতে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা লাগবে।
তেল আবিবের ঠিক দক্ষিণে অবস্থিত এই শহরে গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে একটি আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন, প্রায় ২০০ জন আহত এবং সাতজন নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া সম্ভাব্য জীবিতদের উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে বলেছে, ইরানের নাগরিকদের অস্ত্র উৎপাদন অবকাঠামো এবং সহায়ক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে দূরে থাকা উচিত।
সামরিক বাহিনীর ফার্সি ভাষার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্টটি জানিয়েছে, ইরানি নাগরিকদের জন্য জরুরি সতর্কতা: যারা বর্তমানে বা অদূর ভবিষ্যতে সামরিক অস্ত্র উৎপাদন কারখানা এবং এর সহায়ক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বা তার আশপাশে অবস্থান করছেন, তাঁদের অবিলম্বে এই এলাকা ত্যাগ করা উচিত এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ফিরে আসা উচিত নয়।
তেহরানে এক সংবাদ সম্মেলনে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেছেন, যদি ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হয়, তাহলে আমাদের জবাবও বন্ধ হয়ে যাবে।
গত শুক্রবার ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর আজ রোববার তেহরানে কূটনীতিকদের সামনে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরাকচি এই মন্তব্য করেন। যুদ্ধ শুরুর পর এটি তাঁর প্রথম প্রকাশ্য উপস্থিতি।
আরাকচি বলেন, ‘যদি আগ্রাসন বন্ধ হয়, আমাদের জবাবও বন্ধ হবে।’
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ইসরায়েল আজও ইরানজুড়ে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলের রেহোভোতে অবস্থিত একটি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় ইরানি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হামলায় তাদের বেশ কয়েকটি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইসরায়েলের ওয়াইনেট সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ইনস্টিটিউটটি জানিয়েছে, ক্যাম্পাসের ভবনগুলোতে বেশ কয়েকটি আঘাত লেগেছে।
তেহরানে এক সংবাদ সম্মেলনে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেছেন, আসালুইয়েহের জ্বালানি অবকাঠামোতে ইসরায়েলের হামলা সংঘাতকে উপসাগরীয় অঞ্চলে টেনে এনেছে।
গতকাল শনিবার তেহরানে ইরানের বৃহত্তম তেলের ডিপো ও শোধনাগারের হামলা চালিয়েছে ইরান। এতে সেখানে আগুন ধরে যায়। তবে ইরান জানিয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। সেখানে জ্বালানি উৎপাদন স্বাভাবিক রয়েছে।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়েডেফুল, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য সফরে রয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতে উত্তেজনা কমাতে সহায়তা করার জন্য তিনি কাজ করছেন।
জার্মান পাবলিক ব্রডকাস্টার এআরডিকে ওয়েডেফুল বলেন, ‘আমি আশা করি এটি এখনো সম্ভব। জার্মানি ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের সঙ্গে প্রস্তুত রয়েছে। আমরা ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তাৎক্ষণিক আলোচনার প্রস্তাব দিচ্ছি, আমি আশা করি (এই প্রস্তাব) গৃহীত হবে।’
ওয়েডেফুল উল্লেখ করেন, এই সংঘাত থামানোর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত হলো ইরান এই অঞ্চল, ইসরায়েল রাষ্ট্র বা ইউরোপের জন্য কোনো বিপদ তৈরি করবে না।
ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রে ইসরায়েল ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী হাইফা এবং তেল আবিবের নিকটবর্তী বাত ইয়ামেও বহু ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে। হতাহতের খবরও আসছে। বেইসানের কাছে উত্তরে ড্রোন উড়তে দেখা গেছে। অন্তত চারটি স্থানে গণমাধ্যমকে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করতে দেয়নি সেনাবাহিনী।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, বাত ইয়ামে কয়েক ডজন ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরের মেয়র জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অনেকে আটকে পড়ে আছেন। বাত ইয়ামে এখন পর্যন্ত ৬ জন নিহত এবং ৩৫ জন নিখোঁজের তথ্য নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল।
সংঘর্ষের প্রথম রাতের (গত শুক্রবার রাত) এবং ইসরায়েলের ওপর ইরানের প্রথম প্রতিশোধমূলক হামলার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিক্ষতি অনুমান করা হচ্ছে। বিশেষ করে হাইফার মতো স্পর্শকাতর এলাকায় হামলাগুলো বেশ মারাত্মক। এই বন্দরনগরীতে বেশ কয়েকটি জ্বালানি শোধনাগার রয়েছে। ফলে বোঝা যাচ্ছে, ইসরায়েল যদি বেসামরিক ও জ্বালানি অবকাঠামোতে আঘাত হানে, তাহলে ইরানেরও একইভাবে প্রত্যাঘাত করার সক্ষমতা রয়েছে।
ইরানের স্টুডেন্ট নিউজ নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, তেহরান তেল শোধনাগারে জ্বালানি উৎপাদন, সরবরাহ এবং বিতরণ স্বাভাবিক রয়েছে।
ইসরায়েলের হামলার পর রাতারাতি শোধনাগারের সঙ্গে সম্পর্কহীন একটি জ্বালানি ট্যাংকে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। কিছু ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, শোধনাগারটির পাশে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।
এর আগে রাজধানী তেহরানের উত্তর-পশ্চিমে একটি তেলের ডিপোতে আগুনের কথা নিশ্চিত করে ইরান কর্তৃপক্ষ। ইরানের মেহর নিউজ এজেন্সি ঘটনাস্থল থেকে একটি প্রতিবেদনে নিশ্চিত করে, তেলের ডিপোটি ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এরপর ইসরায়েলের হাইফা তেল শোধনাগারে হামলা করে ইরান। সেখানেও আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।
টাইমস অব ইসরায়েল এবং ওয়াইনেট নিউজ আউটলেট জানাচ্ছে, বাত ইয়াম শহরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিশ্চিতভাবে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা এখন ছয়জনে উন্নীত হয়েছে।
শহরটি রাজধানী তেল আবিবের ঠিক দক্ষিণে অবস্থিত।
এ ছাড়া ওই শহরে ইরানি হামলায় বহু ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে। অন্তত ৩৫ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
ট্রাম্প বললেন, ইরানের ওপর হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘কিছুই করার ছিল না।’
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে দিয়েছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ‘ইরানের দ্বারা কোনোভাবে, কোনো রূপে বা ফরমে আক্রান্ত হয়, তাহলে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর পূর্ণ শক্তি ও ক্ষমতা এমন মাত্রায় নেমে আসবে যা আগে কখনো দেখা যায়নি।’
নিজের ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে এসব লিখেছেন ট্রাম্প। তিনি আরও লিখেছেন, ‘যাইহোক, আমরা সহজেই ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে একটি চুক্তি করতে পারি এবং এই রক্তাক্ত সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারি!!!’
রাজধানী তেহরানের উত্তর-পশ্চিমে একটি তেলের ডিপোতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে—এমন ভিডিও শেয়ার করেছেন ইরানিরা। পরে ডিপোতে আগুনের কথা নিশ্চিত করেছে ইরান কর্তৃপক্ষ।
বিবিসির যাচাই করা একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, উত্তর-পশ্চিম তেহরানের সাইমন বলিভার স্ট্রিট থেকে ধারণ করা একটি ভিডিওতে দুজন বাসিন্দা শাহরান তেল ডিপোতে আগুন জ্বলতে দেখছেন।
সাইমন বলিভার স্ট্রিট থেকে ধারণ করা আরেকটি ক্লিপে দেখা যায়, একটি তেলের ট্যাংকার জ্বলছে। একজন ব্যক্তি ভিডিওটির সময় ও স্থান নিশ্চিত করছেন।
ইরানের মেহর নিউজ এজেন্সি ঘটনাস্থল থেকে একটি প্রতিবেদনে নিশ্চিত করেছে, তেলের ডিপোটি ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইরানের তেল মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরিস্থিতি ‘নিয়ন্ত্রণে’ রয়েছে। তবে ইরানি গণমাধ্যমগুলো জনগণকে ডিপো থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
এদিকে, অনলাইনে শেয়ার করা একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ইরান থেকে গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইসরায়েলের হাইফা তেল শোধনাগারের কাছে আগুন জ্বলছে। বিবিসি ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেছে।
যদিও ক্লিপটি দূর থেকে ধারণ করা হয়েছে, তবে এর আশপাশে পরিচিত ল্যান্ডমার্কগুলো মিলিয়ে এবং যে নির্দিষ্ট অবস্থান থেকে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে সেটি খুঁজে বের করে তেল শোধনাগারটি চিহ্নিত করেছে বিবিসি।
গত শুক্রবার ভোর থেকে ইরানের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে একাধিকবার ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বেশ গভীরে একাধিক হামলা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইরানও অবশ্য তেলআবিব ও হাইফাসহ ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ অনেক শহরে হামলা চালাচ্ছে।
ইসরায়েলের হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল ইস্পাহান। মধ্য ইরানের ইস্পাহানে অবস্থিত ইরানের রূপান্তর প্ল্যান্ট (কনভারশন প্ল্যান্ট) দেশটির বিশাল পারমাণবিক অবকাঠামোর একটি অংশ। অন্যান্য শহরে ছড়িয়ে থাকা খনি ও প্ল্যান্টগুলোর পাশাপাশি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু অবকাঠামো এই ইস্পাহানে অবস্থিত।
এ ছাড়া এর কাছাকাছি উল্লেখযোগ্য ইরানি সামরিক অবকাঠামো রয়েছে ইস্পাহানে। এর মধ্যে একটি বড় বিমান ঘাঁটি এবং একটি প্রধান ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কমপ্লেক্স উল্লেখযোগ্য।
২০২৪ সালের এপ্রিলে, ইসরায়েলের হামলায় ইস্পাহানের একটি বিমান ঘাঁটিতে একটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইরানের দাবি, ইস্পাহানের পরমাণু অবকাঠামোগুলো সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ইসরায়েল এবং পশ্চিমা দেশগুলোর দাবি, তেহরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য এটি ব্যবহার করছে।
গতকাল শনিবার রাত থেকে আজ রোববার ভোর পর্যন্ত ইসরায়েলে মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। বারবার আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটতে হয়েছে ইসরায়েলিদের।
ইসরায়েল বলছে, এবার ক্ষেপণাস্ত্র শুধু ইরান থেকেই নয়, ইয়েমেনের হুতিদের কাছ থেকেও আসছে। এটি হুতিদের দ্বিতীয়বারের মতো হামলা। তারা গত মঙ্গলবার প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল। তারা দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের কথা জানিয়েছিল। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল ইয়েমেনে হুতিদের দখলে থাকা হোদেইদা বন্দরে বোমা হামলা চালায়।
হুতিরা বলছে, তারা গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে ইসরায়েলে এই হামলা চালাচ্ছে। গত মার্চে যুদ্ধবিরতি চলাকালীন হুতিদের ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ ছিল। কিন্তু ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করার সঙ্গে সঙ্গে হুতিরা আবার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ শুরু করে। তারা ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত একটি গোষ্ঠী।
* মেডিকস এবং ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ইরান ইসরায়েলে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর দেশটিতে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আরও ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছেন। বহু মানুষ নিখোঁজের খবরও পাওয়া যাচ্ছে।
* এর আগে ইসরায়েল ইরানের বেশ কয়েকটি স্থানে হামলা চালায়। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা পারমাণবিক স্থাপনাগুলো, যার মধ্যে ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরও রয়েছে, শুধু সেগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। যদিও বেসামরিক আবাসিক স্থানে হামলায় নারী ও শিশুসহ অনেক বেসামরিক নাগরিক নিহতের কথা জানিয়েছে ইরান।
* ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, যুক্তরাজ্য মধ্যপ্রাচ্যে আরও সামরিক সরঞ্জাম, যার মধ্যে ফাইটার জেটও রয়েছে, পাঠাচ্ছে। এই অঞ্চলে ‘আকস্মিক সহায়তা’ দেওয়ার জন্যই এই প্রস্তুতি বলে জানিয়েছেন তিনি।
* মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওয়াশিংটনে একটি সামরিক কুচকাওয়াজে ‘দেশের শত্রুদের’ প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ইরানের প্রতি এটিকে একটি প্রচ্ছন্ন হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
* বার্তা সংস্থা এপি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, পশ্চিম ইরাকের আইন আল-আসাদ বিমানঘাঁটির দিকে (যেখানে মার্কিন সেনারা অবস্থান করছেন) তিনটি ড্রোন নিক্ষেপ করা হয়েছিল। সেগুলোকে গুলি করে নামানো হয়েছে। কোনো গোষ্ঠী এখনো এর দায় স্বীকার করেনি।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট (ওয়াইনেট)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, তেল আবিবের ঠিক দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়ামে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর বেশ কিছু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। হোম ফ্রন্ট কমান্ডের অনুমান, নিখোঁজের সংখ্যা ৩৫ জন হবে।
ওয়াইনেট জানিয়েছে, ওই হামলায় আহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ১০০ জনে দাঁড়িয়েছে, তাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর।
নিহতদের মধ্যে ১০ বছর বয়সী বালক এবং ৬৯ ও ৮০ বছর বয়সী দুই বৃদ্ধা রয়েছেন বলে ইসরায়েলি জরুরি পরিষেবা ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডোমকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
ওয়াইনেট আরও জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত আরেকটি শহর রেহোভোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৩৭ জন আহত হয়েছেন।
সারা বিশ্বে যখন ইসরায়েল-ইরান সংঘাত বাড়ছে, তখন ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত আইন আল-আসাদ বিমানঘাঁটির দিকে তিনটি ড্রোন নিক্ষেপ করা হয়েছিল। ওই ঘাঁটিতে মার্কিন সেনারা আছেন। ড্রোনগুলো ভূপাতিত করা হয়েছে।
এপি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই মার্কিন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, কোনো গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।
ইসরায়েলের হাইফা ও রাজধানী তেলআবিব শহর-সহ বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ইরান। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সহায়কদের তথ্য অনুযায়ী, এসব হামলায় অন্তত সাতজন নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী গত শুক্রবার ভোরে ইরানের সামরিক ও পরমাণু অবকাঠামো এবং গতকাল শনিবার বেসামরিক ও জ্বালানি অবকাঠামোতে বোমা হামলা চালানোর প্রতিক্রিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা জোরদার করেছে তেহরান।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে।
ইরানের চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের পশ্চিম গ্যালিলির একটি বাড়িতে ধসে পড়া ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা এক তরুণীর (২০-এর ঘরে বয়স) মৃত্যু হয়েছে।
ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা মাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) জানিয়েছে, দুই তলা ওই ভবনে তিনি অবস্থান করছিলেন। এ ঘটনায় আহত সাতজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
ইরানের পুনরায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মুখে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর নিরাপত্তা ক্যাবিনেটের জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছেন।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকটি একটি সুরক্ষিত ও গোপন কক্ষে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে বর্তমান পরিস্থিতি এবং প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা চলছে।
ইসরায়েল বর্তমানে ইরানের ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার মুখে পড়েছে, যার ফলে দেশটির সামরিক ও কূটনৈতিক মহলে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
তেহরানের শাহরান এলাকায় অবস্থিত একটি তেল ডিপোতে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বিবিসি। একইসঙ্গে ইরানের তেল মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দক্ষিণ তেহরানের একটি জ্বালানির ট্যাংকেও হামলা হয়েছে।
তবে মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, হামলার শিকার দুটি ডিপোতে জ্বালানির মজুত তুলনামূলক কম এবং বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
উল্লেখ্য, তেহরানের দমকল বিভাগ পূর্বেই শাহরান তেল ডিপোকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, কারণ এটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত। পরিস্থিতি আরও খারাপ না হলে বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে বেঁচে গেছে শহরটি।
এই ঘটনায় নতুন কোনো তথ্য পাওয়া গেলে তা জানানো হবে।
ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা মাগেন ডেভিড অ্যাডম (MDA) জানিয়েছে, পশ্চিম গালিলি অঞ্চলে একটি দুইতলা বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ১৪ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, বাকি আহতরা বিভিন্ন মাত্রার আঘাতে আক্রান্ত হয়েছেন।
এর আগে ইসরায়েলি পুলিশ জানায়, উত্তরাঞ্চলের একটি আবাসিক এলাকায় একটি বিস্ফোরক ডিভাইস পড়ে যাওয়ার খবর পেয়েছে তারা। প্রাথমিক তথ্যে বেশ কয়েকজন হতাহত এবং সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলেছে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
ইরানের ছোড়া শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন আঘাত হেনেছে ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায়। দেশটির ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, উপকূলীয় ও উত্তরাঞ্চলে একাধিক আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং খোলা জায়গায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষও পড়েছে বেশ কিছু এলাকায়। ফায়ার সার্ভিসের দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা মাগেন ডেভিড অ্যাডম (MDA) জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত তাদের ১০১ হটলাইনে কোনো হতাহতের খবর আসেনি। যদিও দুটি স্থানে অনুসন্ধানের জন্য তাদের দল পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের দাবি, শুক্রবার রাতের এই হামলা ছিল “ট্রু প্রমিজ থ্রি” অভিযানের দ্বিতীয় ধাপ, যাতে ব্যবহৃত হয়েছে ১০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন। লক্ষ্য করা হয়েছে তেলআবিব ও হাইফা শহরকে। হামলায় শহর দুটির সাধারণ মানুষের “ঘুম বিঘ্নিত হবে” বলেও জানিয়েছে তারা।
বর্তমানে ইসরায়েলজুড়ে জারি রয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রাখা হয়েছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তেহরানে সামরিক স্থাপনায় আক্রমণের পাশাপাশি ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
তাদের ভাষ্যে, “বর্তমানে বিমান বাহিনী তেহরানে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাচ্ছে, একই সময়ে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে কাজ করছে।”
এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি চলমান সংঘর্ষে একটি নতুন পর্বের সূচনা হতে পারে।
স্থানীয় সময় রাত ২টার কিছু পর ইরান থেকে ইসরায়েলের দিকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ)। সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আইডিএফ নিশ্চিত করেছে, ইরান থেকে ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এগুলো প্রতিহত করতে সক্রিয় রয়েছে।”
সাধারণ জনগণকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, সতর্কবার্তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সবাইকে সুরক্ষিত আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হবে এবং নতুন নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করতে হবে। আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করা যাবে কেবল স্পষ্ট নির্দেশ পাওয়ার পরই। হোম ফ্রন্ট কমান্ডের নির্দেশনা অনুসরণ করাও বাধ্যতামূলক।
এই হামলার জেরে মধ্যরাতে ইসরায়েলে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পর্যবেক্ষকদের মতে, দুই দেশের চলমান উত্তেজনায় এই হামলা একটি বড় মোড় আনতে পারে।
ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের বুশেহর প্রদেশে দুটি গুরুত্বপূর্ণ গ্যাসক্ষেত্রে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে তেহরানের তেল মন্ত্রণালয়।
দেশটির গণমাধ্যমগুলো প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করে জানায়, দক্ষিণ পার্স গ্যাসক্ষেত্রের ফেইজ ১৪-তে ক্ষুদ্র ড্রোন বা মিনিয়েচার ইউএভি দিয়ে হামলা চালানো হয়। একই প্রদেশে অবস্থিত ফজর জাম গ্যাস পরিশোধন কোম্পানির একটি স্থাপনাও আঘাতের শিকার হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এটাই প্রথমবার, ইসরায়েল ইরানের গ্যাসক্ষেত্রে সরাসরি হামলা চালিয়েছে বলে কোনো তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির অনুসন্ধানী শাখা BBC Verify এ সংক্রান্ত চিত্র ও তথ্য যাচাই করছে। হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ওমানের মাসকটে রোববার অনুষ্ঠেয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের পরবর্তী পরমাণু আলোচনা বাতিল করা হয়েছে।
ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদর আলবুসাইদি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক বার্তায় বলেন, ‘রোববার মাসকটে অনুষ্ঠেয় ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা এখন আর হচ্ছে না। তবে স্থায়ী শান্তির একমাত্র পথ রয়ে গেছে কূটনীতি ও সংলাপ।’
বাতিল হওয়া আলোচনাটি ছিল ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নির্ধারিত ষষ্ঠ দফা পরমাণু আলোচনা। এর আগে ইসরায়েলের হামলার পর ইরান আলোচনায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেছিল।
এই হামলাগুলোতে ইরানের একাধিক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।
শনিবার ইরানের পশ্চিমাঞ্চলে একটি গোয়েন্দা ও নজরদারি অভিযানের সময় ড্রোন হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন আসাদাবাদের গণনিরাপত্তা পুলিশের প্রধান মেজর হাবিবুল্লাহ আকবারিয়ান এবং সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট আমিরহোসেইন সেইফি। হামাদান প্রদেশে এ হামলা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রাদেশিক পুলিশ কমান্ডার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি একটি পরিকল্পিত হামলা বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, তবে ঠিক কারা এর পেছনে রয়েছে সে বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। পরিস্থিতি ঘিরে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য। ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার আজ সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ফোনালাপে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট নিয়ে আলোচনা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র জানান, উভয় নেতা ‘গভীর উদ্বেগজনক পরিস্থিতি’ নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং উত্তেজনা প্রশমনের প্রয়োজনীয়তার ওপর একমত হয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাজ্য আগামী দিনে কূটনৈতিক সমাধানে মিত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে।
এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো যখন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলায় অঞ্চলজুড়ে নতুন করে সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার প্রেক্ষিতে আসন্ন পারমাণবিক আলোচনা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে ইরান। তেহরান জানিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেওয়া ‘অর্থহীন।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাকাঈ শনিবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, রোববার ওমানে অনুষ্ঠিতব্য যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনার ষষ্ঠ দফায় তেহরান অংশ নেবে কি না, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
তিনি বলেন, "ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের মৌন সমর্থন থাকায় এই আলোচনা অর্থহীন হয়ে গেছে।"
এর আগে শুক্রবার বাকাঈ বলেছিলেন, ইসরায়েলি হামলায় একাধিক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যু আলোচনার পরিবেশকে ধ্বংস করেছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর বোর্ড অফ গভর্নরস ২০ বছর পর প্রথমবারের মতো ইরানকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির লঙ্ঘনকারী হিসেবে ঘোষণা করে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে, ইরানের ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র মধ্য ইসরায়েলে আঘাত হানার পর তাদের সাত সেনা সদস্য ‘হালকা আহত’ হয়েছেন।
বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, আহত সেনাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল এবং প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এই হামলার ঘটনা এমন সময়ে ঘটল, যখন ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি আক্রমণে পরিস্থিতি উত্তেজনাকর হয়ে উঠেছে।
টিকে নামে তেহরানের এক কিশোরী স্কুল শিক্ষার্থী বিবিসিকে জানান, তিনি এতটাই আতঙ্কিত যে এখন বাসা ছেড়ে বের হতেই সাহস পাচ্ছেন না।
গত রাত ও দিনজুড়ে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনার কথা জানান তিনি। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে সেই শব্দ যেন আরও তীব্র হয়ে উঠছে।
টিকে বলেন, তার মতো অনেকেই পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সারাক্ষণ যোগাযোগ রাখছেন, শুধুমাত্র নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে তারা নিরাপদে আছেন।
“সবাই মূলত একটা কথাই বলছে – ঘুমানো যাচ্ছে না,” বলেন তিনি।
ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যেও তিনি চেষ্টা করছেন দুই সপ্তাহ পর হতে যাওয়া কলেজ ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে, যেটার জন্য তিনি বহু বছর ধরে পরিশ্রম করছেন।
তবে এখন সে স্বপ্নও যেন ধূসর হয়ে যাচ্ছে।
“অবশ্যই আমি যত দ্রুত সম্ভব ইরান ছাড়তে চাই,” বলেন টিকে। “কিন্তু আমার সে সামর্থ্য নেই।”
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র এফি ডেফরিন জানিয়েছেন, ইসরায়েল এখনও ইরানের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ইরানে ১৫০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে ‘ধারাবাহিক হামলা’ চালানো হয়েছে।
তেহরানে লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ও আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিট ছিল বলে জানান ডেফরিন। এছাড়াও ইসফাহানে অবস্থিত একটি পারমাণবিক স্থাপনাতেও আঘাত হানা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
বিবিসির লাইভ প্রতিবেদক টম জয়নার লিখছেন: তেহরানের এক পাড়ায় বসবাসকারী ৬৭ বছর বয়সী সাংবাদিক রামিন মোস্তাগিম বলছেন, সুপারমার্কেটের তাকগুলো দ্রুত খালি হয়ে যাচ্ছে। মানুষ আতঙ্কে চালসহ জরুরি পণ্য মজুত করছে।
রাতে মোস্তাগিম বিস্ফোরণের শব্দে ঘুমাতে পারেন না। দিনের বেলায় রাস্তা অনেকটা নিস্তব্ধ—ক্যাফে কিংবা দোকানে আগের মতো ভিড় নেই।
এক দোকানে কথোপকথনে এক ব্যক্তি অভিযোগ করছিলেন, যুদ্ধ পরিস্থিতির মাঝেও তাকে মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে।
“কিছুই স্বাভাবিক নয়,” মোস্তাগিম বলেন। “মানুষ বুঝে উঠতে পারছে না, সামনে কী হতে যাচ্ছে।”
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) জানিয়েছে, ইরানে চালানো সাম্প্রতিক হামলায় ৯ জন পরমাণু বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞকে হত্যা করেছে তাঁরা। বৃহস্পতিবার রাতে শুরু হওয়া প্রথম দফার হামলায় ৬ জন বিজ্ঞানী নিহত হয়েছিলেন বলে এর আগে জানানো হয়েছিল।
ইসরায়েলি বাহিনী এখন বলছে, এই ৯ জন বিজ্ঞানী হামলার ‘শুরুতেই’ নিহত হন।
অন্যদিকে ইসরায়েলের এক সামরিক কর্মকর্তার বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইরানের এসফাহান ও নাতাঞ্জে অবস্থিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলো হামলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ইরানে ১৫০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে। তবে ইসরায়েলের দিকে ছোড়া বেশিরভাগ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে সফলভাবে প্রতিহত করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সিরিয়ার জেনারেল সিভিল এভিয়েশন অথরিটি দেশটির আকাশপথ সম্পূর্ণরূপে বিমান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা জানিয়েছে, পরিস্থিতির কারণে কিছু বিমান করিডর অস্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়েছিল। এখন আকাশপথ খোলা হয়েছে।
এর আগে লেবানন এবং জর্ডান আকাশপথ খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
গতকাল শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ইরানের ওপর হামলা চালায়। ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানে ইসরায়েল। হামলায় শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ও পরমাণু বিজ্ঞানীসহ অন্তত ৮০ জন নিহত হন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ইরান যদি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রাখে তবে তেহরান পুড়ে ছারখার হবে।
সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফের সঙ্গে একটি মূল্যায়ন বৈঠকের পর কাৎজ বলেন, ইসরায়েলিদের ক্ষতি করায় ইরানকে ‘চড়া মূল্য’ দিতে হবে।
কাৎজ সরাসরি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে উদ্দেশ করে বলেন, ইরানি স্বৈরশাসক ইরানের নাগরিকদের জিম্মি করছেন, এমন একটি বাস্তবতা তৈরি করছেন যেখানে তাঁরা এবং বিশেষ করে তেহরানের বাসিন্দারা, ইসরায়েলি নাগরিকদের ওপর চালানো ভয়াবহ ক্ষতির জন্য চড়া মূল্য দেবে। যদি খামেনি ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রাখেন, তাহলে তেহরান পুড়ে ছারখার হবে।
ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইসরায়েল ও ইরান দ্বিতীয় দিনের মতো চলমান হামলা-পাল্টা হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা জানালেন সরকারের একজন মুখপাত্র।
বিমানবন্দরের মুখপাত্র লিসা ডাইভার বলেন, বিমানবন্দর পুনরায় খোলার জন্য কোনো তারিখ বা দিন নির্ধারিত হয়নি।
বিমানবন্দরের ছবিগুলোতে জনশূন্য চেক-ইন কাউন্টার এবং যাত্রী লাউঞ্জ দেখা গেছে। ফ্লাইটের তথ্য বোর্ডগুলোতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, সমস্ত ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে লেবানন এবং জর্ডানসহ এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশ জানিয়েছে, তারা আজ শনিবার তাদের আকাশপথ পুনরায় খুলে দিয়েছে।
পোপ লিও ইরান ও ইসরায়েলের কর্তৃপক্ষকে ‘যুক্তি’ মেনে চলার এবং সংলাপের পথ অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছেন।
সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকাতে উপস্থিত শ্রোতাদের উদ্দেশে পোপ বলেন, তিনি ‘গভীর উদ্বেগের’ সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সকে সতর্ক করে দিয়েছে ইরান। এসব দেশ যদি ইসরায়েলের ওপর হামলা ঠেকাতে সাহায্য করে, তাহলে এই অঞ্চলে তাদের ঘাঁটি ও জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে এ খবর জানানো হয়েছে।
ইরানের আধা-সরকারি মেহর নিউজ এজেন্সি সরকারের একটি বিবৃতির বরাত দিয়ে বলেছে, যে কোনো দেশ ইসরায়েলের ওপর ইরানি হামলা প্রতিহত করতে অংশ নেবে, সেই দেশের সব আঞ্চলিক ঘাঁটি, যার মধ্যে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সামরিক ঘাঁটি এবং পারস্য উপসাগর ও লোহিত সাগরের জাহাজ ও নৌযান অন্তর্ভুক্ত, ইরানি বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফের দুই ডেপুটি কমান্ডার নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন—জেনারেল গোলামরেজা মেহরাবি এবং জেনারেল মেহেদি রাব্বানি।
তবে কখন এই দুই কমান্ডার নিহত হয়েছেন তা পরিষ্কার নয়। গতকাল শুক্রবার থেকে ইরানে ইসরায়েলের হামলায় ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাসহ অন্তত ১৩৮ জন নিহত হয়েছেন।
নিহত সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে আছেন— সেনাপ্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান কমান্ডার জেনারেল হোসেইন সালামি, আইআরজিসির বিমানবাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আলি হাজিজাদেহ এবং সশস্ত্র বাহিনীর উপসর্বাধিনায়ক জেনারেল গোলামালি রাশিদ।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আজ শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে গাজা সীমান্তের বেড়ার আশেপাশে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, দুটি রকেট শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি খোলা জায়গায় পড়েছে। এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে রাতভর ব্যাপক পাল্টাপাল্টি হামলার পর গাজার দিক থেকে এই রকেট হামলা চালানো হলো।
ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ে সামরিক ও আর্থিক সহায়তার জন্য ইরানকে বারবার ধন্যবাদ জানিয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ইরানের রাজধানী তেহরানের একটি আবাসিক কমপ্লেক্সে প্রায় ৬০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ২০টি শিশুও রয়েছে।
এর আগে, গতকাল শুক্রবার (১৩ জুন) জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছিলেন, ইসরায়েলের প্রথম দফা হামলায় ৭৮ জন নিহত এবং ৩২০ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। এর মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
ইরানের পক্ষ থেকে দেশের নাগরিকদের প্রতিরক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানি জনগণকে তাঁদের সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ইসরায়েল শুক্রবার ভোরে ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করে। ইসরায়েলের এই ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’- এর জবাবে ইরানও ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
জর্ডান নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, আকাশ থেকে আছড়ে পড়া বস্তুর আঘাতে কয়েকজন জখম হয়েছে। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল।
তবে কী ধরনের বস্তু পড়েছিল, তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। তবে, গতকাল শুক্রবার থেকে ইসরায়েলের দিকে ছোড়া ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনগুলো জর্ডানের ওপর দিয়ে উড়ে গিয়েছিল।
জর্ডান কর্তৃপক্ষ বিষয়টির তদন্ত শুরু করেছে।
ইরানের বার্তা সংস্থা আইএসএনএ (ইসনা) দেশটির আণবিক শক্তি সংস্থার একজন মুখপাত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্রে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সংস্থার মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দি বলেন, ফোরদো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রের কিছু এলাকায় সীমিত ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আগেই সরঞ্জাম ও উপকরণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সরিয়ে নিয়েছিলাম। বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বা তেজস্ক্রিয় দূষণ নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই।
লেবাননের রাষ্ট্রীয় ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি (এনএনএ) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা) তারা আকাশপথ পুনরায় খুলেছে।
এনএনএ গণপূর্ত ও পরিবহন মন্ত্রী ফায়েজ রাসমানির উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তিনি যাত্রীদের কাছে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
রাসমানি বলেন, এই সিদ্ধান্ত এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যতিক্রমী পদক্ষেপগুলো সম্পূর্ণরূপে নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তার কারণে আরোপিত হয়েছিল।
লেবাননের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে এনএনএ জানিয়েছে যে, আকাশপথটি আবার আগামীকাল রোববার রাত সাড়ে ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার লেবানন সরকার বিমান চলাচল স্থগিত করেছিল।
উল্লেখ্য, এর আগে জর্ডানের বেসামরিক বিমান চলাচল কমিশন জানিয়েছে যে, স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টা) দেশটির আকাশপথ পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছে।
ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা অব্যাহত থাকবে। গতকাল শুক্রবার ভোরে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিমান হামলা চালানোর পর উভয় দেশ পরস্পরের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা শুরু করেছে।
ফার্স বার্তা সংস্থা এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই সংঘাত গত রাতের সীমিত পদক্ষেপের মাধ্যমে শেষ হবে না এবং ইরানের হামলা অব্যাহত থাকবে। এই পদক্ষেপ আগ্রাসনকারীদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক হবে। ইসরায়েল এর জন্য অনুতাপ করবে।
ইসরায়েল গতকাল শুক্রবার ভোরের দিকে ইরানের বিভিন্ন সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। এর জবাবে ইরানও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, এতে ইসরায়েলে অন্তত দুইজন নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হয়েছেন। ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা ইরানের মেহরাবাদ বিমানবন্দরে একটি যুদ্ধবিমানের হ্যাঙ্গার লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, ইসরায়েল আজ শনিবার সকালে তেহরানের মেহরাবাদ বিমানবন্দরে একটি যুদ্ধবিমানের হ্যাঙ্গার লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, হামলায় বিমানবন্দরে বিস্ফোরণ ঘটলেও, রানওয়ে, অন্যান্য ভবন বা স্থাপনার কোনো ক্ষতি হয়নি।
ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘ভোরে শত্রুতামূলক হামলা প্রতিহত করতে সক্রিয় ছিল,’ বলে জানিয়েছে ইরনা।
উল্লেখ্য, ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলার পর ইরান আজ সকাল পর্যন্ত ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এতে অন্তত দুইজন নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হন। এই হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও তীব্র হয়েছে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার সম্ভাব্যতাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে এমন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে প্রাথমিকভাবে সতর্ক করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কয়েক ঘণ্টা পরই ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলাকে ‘চমৎকার’ বলে অভিহিত করলেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইরানের সঙ্গে একটি পারমাণবিক চুক্তির জন্য ইসরায়েলকে ইরান হামলা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখন বলছেন, তিনি এবং তাঁর প্রশাসন হামলার বিষয়ে আগে থেকেই অবগত ছিল। রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সবকিছু জানতাম এবং আমি ইরানকে অপমান ও মৃত্যু থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলাম। আমি অনেক চেষ্টা করেছি কারণ আমি একটি চুক্তি সম্পন্ন হওয়া দেখতে চেয়েছিলাম।’
ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো ইরানের ওপর ইসরায়েলের বোমা হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি এটিকে একটি ‘অপরাধমূলক হামলা’ আখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, এটি আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন।
এক বিবৃতিতে মাদুরো বলেন, ‘যুদ্ধ নয়, ফ্যাসিবাদ নয়, নব্য-নাৎসি জায়নবাদ নয়।’
মাদুরো ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও ‘একবিংশ শতাব্দীর হিটলারকে’ সমর্থন করার অভিযোগ এনেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ইঙ্গিত করে বলেন, তারা ‘মহৎ ও শান্তিপূর্ণ ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে’ কাজ করছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা দেশটির মধ্যাঞ্চলে বেশ কয়েকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
সামরিক বাহিনী আরও জানায়, ড্রোনগুলো শনাক্ত হওয়ার পর দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় বিমান হামলার সতর্কতা সাইরেন বেজে ওঠে।
তবে, সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি, হতাহত বা ড্রোনগুলোর উৎস সম্পর্কে কোনো বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়নি।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সামরিক বাহিনী উত্তর-পশ্চিম ইরানে একটি গোয়েন্দা ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, সালমাস সীমান্ত অঞ্চলে ইসলামিক যোদ্ধারা (ইরানি বাহিনী) বেশ কিছু ইসরায়েলি ড্রোন সফলভাবে ভূপাতিত করেছে। ড্রোনগুলো আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছিল। ড্রোনগুলো গুপ্তচরবৃত্তি ও গোয়েন্দা মিশনে ইরানি আকাশসীমায় প্রবেশ করেছিল।
ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলার পর ইরান আজ শনিবার সকালে ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত দুজন নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হয়েছেন।
আলফ্রেড ডেকিন ইনস্টিটিউটের মিডল ইস্ট স্টাডিজ ফোরামের পরিচালক শাহরাম আকবরজাদেহ বলেছেন, তিনি মনে করেন, আরও হামলা হবে। ইসরায়েল এবং ইরান দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছে।
আল-জাজিরাকে শাহরাম বলেন, এই সংঘাত পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এতে টেনে আনার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
আকবরজাদেহ আরও বলেন, ইসরায়েল আসলে চাচ্ছে, একবার সামগ্রিক সংঘাত শুরু হলে, ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাধ্যবাধকতা এবং প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে।
জর্ডানের বেসামরিক বিমান চলাচল কমিশন জানিয়েছে যে, স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টা) দেশটির আকাশপথ পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনার জেরে কমিশন ফ্লাইট স্থগিত করার একদিন পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো।
জর্ডানের সরকারি মুখপাত্র মোহাম্মদ আল-মোমানি এর আগে বলেছিলেন, তাঁর দেশ কাউকে আকাশপথ লঙ্ঘন করতে দেবে না। জর্ডানের আকাশ কোনো সংঘাতের যুদ্ধক্ষেত্র হবে না।
যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো উত্তর ইরানের তেহরান থেকে প্রায় ৩২৫ কিলোমিটার (২০০ মাইল) দূরে জাঞ্জান শহরের একটি সেনাঘাঁটিতে বোমা হামলা চালিয়েছে।
ওই সংবাদমাধ্যম প্রকাশিত ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, হামলার কয়েক ঘণ্টা পরও ঘন ধোঁয়া এবং ভয়াবহ আগুন জ্বলছে।
হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা ইজ্জত আল-রিশেক ইসরায়েলের নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে ইরানের সফল হামলার প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আয়রন ডোম এবং ডেভিডের স্লিং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে যত প্রচারই করা হোক না কেন, সেগুলো ব্যর্থ হয়েছে।’
ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত বিবৃতিতে আল-রিশেক বলেন, ইসরায়েলের অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, ইসরায়েল আগুনে পুড়বে, তারা দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের মানুষকে জ্বালিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইরানের শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করে যে: অহংকারের জবাব দেওয়া হবে এবং আগ্রাসনের সমুচিত জবাব তারা পাবে।
ইসরায়েলি ব্রডকাস্টিং অথরিটি এবং সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, ইরানের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়েছে।
এ ছাড়া মধ্য ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১৯ জন আহত হয়েছেন।
টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এতে তিনজন নিহত হয়েছে। আইডিএফ (ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী) জানিয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্রই ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তা টিভি সংবাদে বলেছেন, ‘বেসামরিক এলাকায় গুলি চালানোর জন্য ইরানকে অসহনীয়ভাবে চড়া মূল্য দিতে হবে।’
তাসনিম সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকায়ী যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে ইরানে হামলায় সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেন, ওয়াশিংটনের অনুমতি ছাড়া এই হামলা সম্ভব হতো না।
কয়েক মাস ধরে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তেহরানের যে আলোচনা চলছিল, সে প্রসঙ্গে বাকায়ী বলেন, ‘অন্য পক্ষ (যুক্তরাষ্ট্র) এমনভাবে কাজ করেছে যা সংলাপকে অর্থহীন করে তুলেছে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আপনারা আলোচনার দাবি করতে পারেন না এবং একই সঙ্গে জায়নবাদী শাসকগোষ্ঠী (ইসরায়েলকে) ইরানের ভূখণ্ডে হামলা চালানোর অনুমতি দিয়ে কাজ ভাগ করে নিতে পারেন না।’
যারা এখন আমাদের লাইভে যোগ দিচ্ছেন, তাঁদের জন্য চলমান ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের গত কয়েক ঘণ্টার ঘটনাপ্রবাহের সারাংশ নিচে তুলে ধরা হলো:
এই সংঘাতের পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, তাৎক্ষণিক ও সর্বশেষ খবর জানতে সঙ্গেই থাকুন।
ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার জবাবে ইরানের প্রতি সংযম প্রদর্শনের আহ্বানকে ‘অন্যায্য’ বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি। শুক্রবার এক টেলিগ্রাম বার্তায় তিনি এই প্রতিক্রিয়া জানান।
বার্তায় আরাকচি উল্লেখ করেন, তিনি ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। সেই বৈঠকে তিনি স্পষ্টভাবে জানান, ইসরায়েল ইরানের জাতীয় সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোর ইসরায়েলপন্থী অবস্থানেরও সমালোচনা করেন।
আরাকচি আরও বলেন, “ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রতিক্রিয়া হবে কঠোর ও নির্ধারিত। আমরা আমাদের ভূখণ্ডে আগ্রাসনের জবাব দেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করি।”
এদিকে, ইউরোপীয় ও পশ্চিমা নেতারা ইরান-ইসরায়েল চলমান উত্তেজনায় শান্ত থাকার আহ্বান জানালেও, ইরান বলছে এটি তার আত্মরক্ষার অধিকার। ইরান দাবি করছে, ইসরায়েলই প্রথমে তাদের ওপর আগ্রাসন চালিয়েছে এবং তেহরানের জবাব ছিল প্রতিরক্ষামূলক ও ন্যায়সঙ্গত।
মার্কিন নাগরিক, ঘাঁটি কিংবা অবকাঠামোর ওপর হামলা হলে ইরানের জন্য ‘ভয়াবহ পরিণতি’ অপেক্ষা করছে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মার্কিন কর্মকর্তা ম্যাককয় পিট। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তিনি বলেন, ‘আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে—এই অঞ্চলে মার্কিন নাগরিক ও বাহিনীগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যদি ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে, তবে পরিণতি হবে চরম।’
তিনি জানান, ইসরায়েল তাদের অভিযানের আগে যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করেছিল। তবে এ অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে জড়িত ছিল না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। পিট বলেন, ‘ইসরায়েল আমাদের জানায় যে এটি তাদের আত্মরক্ষার জন্য জরুরি।’
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র আবারও ইরানকে কূটনৈতিক সমাধানে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে। ম্যাককয় পিট বলেন, ‘এই মুহূর্তে ইরানের নেতৃত্বের জন্য সবচেয়ে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত হবে আলোচনায় ফেরার।
প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন বেশ কিছুদিন ধরেই ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণে আনতে চুক্তির জন্য চাপ দিচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সমঝোতা চূড়ান্ত হয়নি। ট্রাম্প এরই মধ্যে আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষও প্রকাশ করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের প্রশাসন একদিকে যেমন ইসরায়েলকে সমর্থন দিচ্ছে, অন্যদিকে কূটনৈতিক সমাধানের জন্য আহ্বান জানিয়ে ইরানকে আলোচনায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত ও পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কণ্ঠে উত্তেজনা প্রশমনের ডাক জোরালো হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক্স-এ (পূর্বে টুইটার) পোস্ট করে ইসরায়েল ও ইরান উভয় পক্ষকেই সংঘর্ষ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘ইরানির পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ। তেল আবিবে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। যথেষ্ট হয়েছে। এবার থামার সময়। শান্তি ও কূটনীতি জয়ী হোক।’
এছাড়া ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েন জানিয়েছেন, তিনি ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজকের সঙ্গে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার এবং জনগণের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করেছি। একইসঙ্গে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি আরও বলেন, সব পক্ষ যেন ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখায় এবং উত্তেজনা হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা নেয় — এই আহ্বান জানিয়েছি।
এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি অত্যন্ত টালমাটাল এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সংঘাত নিয়ন্ত্রণে তৎপর।
ইরানের রাজধানী তেহরানে একটি বিমানবন্দরে আগুন লাগার ও ঘন ধোঁয়া উঠার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
AFP জানিয়েছে, তাদের এক সাংবাদিকের বরাতে তেহরানের মেহরাবাদ (Mehrabad) বিমানবন্দরে আগুন ও ঘন কালো ধোঁয়া দেখা গেছে।
ইরানের আধা-সরকারি মেহর নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, বিমানবন্দর এলাকা সংলগ্ন স্থানে “একটি বিস্ফোরণ” হয়েছে। সংস্থাটি একটি ছবি প্রকাশ করেছে, যেখানে ঘন ধোঁয়া উড়তে দেখা যাচ্ছে।
পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে। আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেলে তা জানানো হবে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) জনগণকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সুরক্ষিত আশ্রয়স্থলে অবস্থান করতে বলেছে।
এক বিবৃতিতে IDF জানায়, ইরান থেকে ইসরায়েলের দিকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে।
তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কিছুক্ষণ আগেই IDF ইরান থেকে ইসরায়েল অভিমুখে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে।’
IDF আরও জানায়: ‘স্পষ্টভাবে নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কেউ যেন আশ্রয়স্থল ত্যাগ না করে।’
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মানুষ জনসাধারণের আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছেন, যা এই মুহূর্তে নিরাপদে থাকার একমাত্র উপায় হিসেবে বিবেচিত।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বক্তব্য রেখেছেন জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন। তিনি ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হামলার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
ড্যানন বলেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য হলো ‘নিজেদের ধ্বংস ঠেকানো’, আর তা সম্ভব ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংসের মাধ্যমেই।
তিনি বলেন, “আমরা আমাদের শত্রুদের চিনি। তাদের আদর্শ চিনি। যখন একটি শাসনব্যবস্থা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে, ইউরেনিয়াম প্রায় অস্ত্রমান পর্যন্ত সমৃদ্ধ করে এবং খোলাখুলিভাবে আমাদের ধ্বংসের ঘোষণা দেয় — তখন আমরা তাদের বিশ্বাস করি।”
তিনি আরও বলেন, ইরান যেভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিয়োগ দিচ্ছে — তাতে ইসরায়েলের সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না।
“আমরা কাজ করেছি যাতে আমাদের জনগণ বেঁচে থাকতে পারে। আমরা কাজ করেছি যাতে জেরুজালেমের ইহুদি শিশুদের আর পারমাণবিক হামলার সতর্ক সাইরেন শুনে ঘুম ভাঙতে না হয়,” — বলেন ড্যানন।
এর আগে ইরানের রাষ্ট্রদূত জাতিসংঘে ইসরায়েলের হামলাকে “বর্বর ও অপরাধমূলক” বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
ইরানের পাল্টা হামলার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ একটি বাঙ্কারের মধ্যে অবস্থান করছেন এবং সেখান থেকেই তারা চলমান পরিস্থিতির মূল্যায়ন করছেন — এমন তথ্য সিএনএনকে জানিয়েছেন এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা।
ওই কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, আলোচনায় একাধিক ইসরায়েলি মন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারাও অংশ নিচ্ছেন। পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত ও দ্রুতগতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে।
এই ছবিগুলো কিছুক্ষণ আগে আমাদের নিউজরুমে পৌঁছেছে — ইসরায়েলের সর্বশেষ পাল্টা হামলার আগেই এগুলো তোলা হয়েছে।
ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে, ইরানের রাজধানী তেহরানের রাস্তায় বহু মানুষ জড়ো হয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলার জবাবে ইরানের প্রতিক্রিয়া উদযাপন করছেন।
মানুষের হাতে ইরানি পতাকা, পোস্টার ও ব্যানার, অনেকে শ্লোগান দিচ্ছেন এবং আকাশে আতশবাজিও ছোঁড়া হয়েছে।
উল্লাস প্রকাশ করা এই মুহূর্তগুলো ইরানে প্রচলিত সরকারি বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ — যেখানে দেশটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধকে জাতীয় গর্বের অংশ হিসেবে তুলে ধরে।
তবে এই চিত্রগুলো ছিল ইসরায়েলের সর্বশেষ পাল্টা আক্রমণের আগের মুহূর্তের। বর্তমান পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, আমরা আরও তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছি।
আমরা তেহরান থেকে আসা সর্বশেষ খবরের দিকে নজর রাখছি, তবে এর মধ্যে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের খবর দিতে পারি। ইসরায়েলের হামলার পরপরই এই বৈঠক ডেকেছিল ইরান।
জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি আমির-সাঈদ ইরাভানি বলেন, ইসরায়েলের “বর্বর ও অপরাধমূলক” হামলাগুলো ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, বেসামরিক অবকাঠামো এবং আবাসিক এলাকাগুলোকে লক্ষ্য করেছে।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত ৭৮ জন নিহত হয়েছেন এবং ৩২০ জনের বেশি আহত, যাদের “বড় অংশই বেসামরিক নাগরিক”।
ইরাভানি বলেন, এই “ইচ্ছাকৃত ও সংগঠিত হত্যাকাণ্ড” এক ভয়ঙ্কর ও পরিকল্পিত আগ্রাসনের বহিঃপ্রকাশ।
তিনি আরও দাবি করেন, এই অপরাধে যুক্তরাষ্ট্রও জড়িত, কারণ তারা ইসরায়েলকে “সাহায্য ও সমর্থন” দিয়েছে।
“আমরা ভুলে যাব না যে, আমাদের জনগণ ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছে, আর সেই হামলায় ব্যবহৃত হয়েছিল মার্কিন অস্ত্র,” বলেন তিনি।
ইরান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন ইসরায়েলের এই কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানায় এবং এর জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করে।
আমরা খবর পাচ্ছি যে, ইরানের রাজধানী তেহরানে আরও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানাচ্ছে, ইসরায়েলি হামলা প্রতিহত করতে তেহরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে।
কিছু ইরানি গণমাধ্যমে এক ইসরায়েলি পাইলটকে বন্দী করার দাবি প্রকাশ পেলেও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তা সরাসরি অস্বীকার করেছে।
ইরানের তাসনিম নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী দুটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে এবং “সেই দুটি যুদ্ধবিমানের মধ্যে একটি নারী পাইলট আটক হয়েছেন”।
তবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (IDF) আরবিভাষী মুখপাত্র আভিখাই আদ্রায়ি এক বিবৃতিতে বলেন: ‘ইরানি ভুয়া মিডিয়া। ইরানি সংবাদমাধ্যমে যেসব খবর ছড়ানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’
বিবিসি স্বাধীনভাবে উভয় পক্ষের কোনো দাবিই এখনো যাচাই করতে পারেনি।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, ইরান শুক্রবার যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, তাতে বেসামরিক এলাকাগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে — যা ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করার শামিল।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের বেসামরিক জনপদে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে ইরান লাল রেখা পার হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের নাগরিকদের সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং নিশ্চিত করব বর্বর কর্মকাণ্ডের জন্য যেন আয়াতুল্লাহর সরকারকে চরম মূল্য দিতে হয়। এখানে তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোলাহ আলি খামেনির কথা উল্লেখ করেন।
এর আগে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের “ডজন খানেক লক্ষ্যবস্তু, সামরিক ঘাঁটি এবং বিমান ঘাঁটি” লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি জানিয়েছেন, ইরানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের ফরদো ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে তিনি বলেন, এই তথ্য ইরানি কর্তৃপক্ষ তাদের (IAEA) জানিয়েছে, তবে সংস্থাটির কাছে এর চেয়ে বেশি কোনো তথ্য বর্তমানে নেই।
গ্রোসি আরও জানান, নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনাটির কিছু অংশ — বিশেষ করে স্থলভাগের ওপর থাকা কেন্দ্রটি — শুক্রবার ভোরের দিকে চালানো হামলায় “ধ্বংস” হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ওইসব স্থাপনায় তেজস্ক্রিয় ও রাসায়নিক দূষণ ঘটেছে, তবে তা বর্তমানে নিয়ন্ত্রণযোগ্য অবস্থায় রয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (IDF) মুখপাত্র আভিখাই আদ্রায়ি জানিয়েছেন, ইরান দুই দফায় ইসরায়েলের দিকে ১০০টিরও কম ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ পোস্ট করা এক বার্তায় তিনি লিখেছেন, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর অধিকাংশই মাঝপথে প্রতিহত করা হয়েছে অথবা লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি আরও জানান, “সীমিত সংখ্যক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার কিছু আবার বাধাগ্রস্ত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ কার্যক্রম থেকে ছিটকে পড়া শার্পনেলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
উপরে থাকা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কিছু ভবনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে ইরান ‘ট্রু প্রমিস ৩’ (True Promise 3) নামে যে অপারেশন চালিয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে তারা এখনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি — সে তথ্যের অপেক্ষায় আছি আমরা।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরায়েলের বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ৩৪ জনের চিকিৎসা চলছে — এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তেল আবিবের ইচিলোভ হাসপাতাল ১৮ জন রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছে। পেতাহ টিকভার বেইলিনসন হাসপাতাল ৭ জনকে চিকিৎসা দিচ্ছে, যার মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকা রোগীও রয়েছেন। রামাত গানের শেবা হাসপাতালে ৯ জন রোগী চিকিৎসাধীন।
আহতদের মধ্যে কেউ কেউ শরীরে শার্পনেল আঘাত, ধোঁয়া ও শ্বাসজনিত সমস্যা এবং মানসিক ধাক্কার (শক) মতো ভিন্নধর্মী জখম নিয়ে ভর্তি হয়েছেন।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, অন্তত দুটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ইরানের আকাশসীমায় ভূপাতিত হয়েছে। তবে এ তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি। পরিস্থিতি দ্রুত গতিতে উত্তেজনাকর রূপ নিচ্ছে।
ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেতজ জানিয়েছে, রাজধানী তেল আবিবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। জরুরি পরিষেবার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা মাঝারি মাত্রার বলে জানা গেছে।
এদিকে, রয়টার্স সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, জেরুজালেমে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। বিস্তারিত তথ্য এখনো প্রকাশ হয়নি।
ভোর থেকে শুক্রবার দিনভর ইসরায়েলি হামলার এবার পাল্টা হামলা শুরু করেছে ইরান। দেশটির ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) জানিয়েছে, পাল্টা হামলায় ডজনেরও বেশি লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটি এবং বিমানঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে আঘাত হানা হয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেতজ জানিয়েছে, রাজধানী তেল আবিবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। জরুরি পরিষেবার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা মাঝারি মাত্রার বলে জানা গেছে।
এদিকে, রয়টার্স সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, জেরুজালেমে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। বিস্তারিত তথ্য এখনো প্রকাশ হয়নি।
পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া মাত্রই জানানো হবে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম প্রেস টিভি জানিয়েছে, ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী একটি ইসরায়েলি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাতে সিএনএন-এর একটি লাইভ প্রতিবেদনে এই খবর জানানো হয়েছে।
ড্রোনটি ইরানের ফরদো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট–এর আশপাশে শনাক্ত হয়। এটি একটি ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনা, যা কোম শহর থেকে প্রায় ২০ মাইল উত্তর-পূর্বে অবস্থিত।
একই সময়ে প্রেস টিভি আরও জানায়, ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের হামেদান বিমানঘাঁটিতে ইসরায়েল বিমান হামলা চালিয়েছে। এ ছাড়া উত্তর-মধ্য ইরানের শহর ফার্দিজেও ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা চালিয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে সিএনএন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে মন্তব্য জানতে চাইলেও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
তেহরানের বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। পশ্চিম তেহরানে আল-জাজিরার ব্যুরো অফিস থেকে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে সাংবাদিকেরা জানিয়েছেন।
সেই সঙ্গে রাজধানীর দক্ষিণাঞ্চলেও আরেকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
ইরানের নূর নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, তেহরানের পশ্চিমে অবস্থিত আলবোর্জ প্রদেশ থেকেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং সেখানে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে।
তাৎক্ষণিকভাবে বিস্ফোরণের উৎস ও ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত জানা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে, এটি ইসরায়েলের নতুন হামলার অংশ হতে পারে। বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেলে তা দ্রুত জানানো হবে।
ইসরায়েলের আজ সকালের হামলার পর ইরানের নাতানজ পরমাণু কেন্দ্রে রাসায়নিক বা তেজস্ক্রিয় দূষণ শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থা। তবে এই দূষণ শুধু কেন্দ্রটির অভ্যন্তরে সীমাবদ্ধ এবং বাইরের পরিবেশে এর প্রভাব পড়েনি বলে আশ্বস্ত করেছে সংস্থাটি।
পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলামি বলেছেন, ‘আমাদের যত দূর জানা, ক্ষয়ক্ষতি শুধু পৃষ্ঠতলের কিছু এলাকায় সীমিত। কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।’
তিনি জানান, কেন্দ্রের অভ্যন্তরে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে এবং বাইরে তেমন কোনো উদ্বেগের কারণ নেই।
ইসলামি জোর দিয়ে বলেন, ‘বহু বছর ধরে এই (ইসরায়েলি) শাসকগোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সহায়তায় বেপরোয়াভাবে বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা ধ্বংসের পথে এগিয়ে চলেছে।’ ইসরায়েলের হামলাকে তিনি আন্তর্জাতিক আইন ও নিরাপত্তার পরিপন্থী আখ্যা দিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
নাতানজ ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। ইসরায়েলের সামরিক হামলায় এটির ওপর আঘাত হানার পর বৈশ্বিকভাবে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে, পরমাণু নিরাপত্তা ও মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা নিয়ে। এখন পর্যন্ত ঘটনাস্থল ঘিরে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
উত্তর ইসরায়েলের গ্যালিলি অঞ্চলে শুক্রবার বিকেলে বিমান হামলার সতর্কতামূলক সাইরেন বাজতে শুরু করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর রেডিও এই তথ্য জানিয়েছে। পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষণিক নজর রাখছে।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১২-এর বরাতে জানা গেছে, ইরান থেকে পাঠানো দুটি ড্রোন ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’-এর মাধ্যমে ভূপাতিত করা হয়েছে। এসব ড্রোন উত্তর ইসরায়েলের দখলীকৃত গোলান মালভূমির দিকে এগোচ্ছিল।
ড্রোনগুলোর টুকরো পড়ে একটি উন্মুক্ত এলাকায় আগুন ধরে যায় বলে চ্যানেল ১২ জানিয়েছে। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।
তবে ইসরায়েলি পত্রিকা হারেৎজ এবং সেনাবাহিনীর রেডিও দাবি করছে, একটিমাত্র ড্রোন ভূপাতিত হয়েছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইরানের বিভিন্ন পরমাণু ও সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পক্ষ থেকে পাল্টা হামলার আশঙ্কা আগেই করা হয়েছিল। উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে এই ড্রোন হানার ঘটনা আঞ্চলিক নিরাপত্তা উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
ইসরায়েলের আজকের (শুক্রবার) হামলায় পশ্চিম ইরানের কেরমানশাহ প্রদেশের একটি ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণাগারেও বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আল জাজিরার যাচাইকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ইরাক সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত এই এলাকায় ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই গোপন স্থাপনায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মজুত রাখা ছিল। হামলার পর পরই সেখান থেকে ঘন কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা যায় এবং আশপাশের এলাকা কেঁপে ওঠে।
এটি ইসরায়েলের পক্ষ থেকে শুক্রবার ভোরে ইরানের বিভিন্ন সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় চালানো একাধিক হামলার অংশ। এই হামলাগুলোকে ইরানের সামরিক সক্ষমতা ভেঙে দেওয়ার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকেরা।
কেরমানশাহর এই হামলার বিষয়ে এখনো ইরান সরকার কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, বিস্ফোরণের পরপরই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে।
এই হামলার পর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা নতুন করে চরমে পৌঁছেছে, এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ আরও বাড়ছে।
শুক্রবার ভোরে ইরানের ৮টি শহরে একযোগে হামলার পর দুপুরে নতুন আরেক দফা হামলা চালিয়েছে ইরান। নতুন হামলায় লক্ষ্যবস্তু করা হয় ইরানের শিরাজ ও তাবরিজ শহর। পাশাপাশি নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনায়ও নতুন করে হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানি সংবাদমাধ্যম।
এর আগেই আজ দিনের শুরুতে ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসরায়েলের বিস্তৃত হামলার খবর পাওয়া যায়। এরপর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তাবরিজে নতুন করে হামলার খবর আসে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই হামলার পরিধি আরও বিস্তৃত হয়েছে—যার মধ্যে আছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রও।
তবে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল নতুন হামলা নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং নতুন তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা হালনাগাদ করা হবে।
ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তাবরিজে ইসরায়েল আবারও হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় ও আধা সরকারি সংবাদমাধ্যম।
তাসনিম নিউজ এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, তাবরিজ শহরের বিমানবন্দরের কাছাকাছি এলাকায় একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বলছে, ‘কয়েক মিনিট আগে পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে নতুন বিস্ফোরণ ঘটেছে।’
তাসনিম আরও জানায়, আগের হামলার ঢেউয়ে প্রদেশটির অন্তত ১০টি স্থানে আঘাত হানা হয় এবং এতে কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েল কর্তৃক হামলার নতুন এই তরঙ্গ ইরানজুড়ে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতির আরও আপডেট পাওয়ামাত্র জানানো হবে।
তাসনিম সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, হোসেইন সালামি নিহত হওয়ার পর আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ পাকপুরকে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) নতুন কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করেছেন।
ইসরায়েলি হামলায় ইরানের সামরিক শাখার সাবেক প্রধানসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান শিগগির জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বলে জানানো হয়েছে তাঁর অফিশিয়াল এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘জিয়োনিস্ট শাসকগোষ্ঠী আজকের কর্মকাণ্ডের জন্য অনুশোচনা করবে।’
পশ্চিম ইরানে ইরানি শাসকগোষ্ঠীর আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ওপর বড় ধরনের হামলা চালানোর দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এক্স মাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তারা এ তথ্য জানায়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই হামলার অংশ হিসেবে ডজনখানেক রাডার ও ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংস করা হয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এই হামলাগুলো ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর আকাশে অভিযান পরিচালনার স্বাধীনতা আরও বাড়িয়ে দেবে।’
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বৃদ্ধিতে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ নিন্দা জানিয়েছেন। রাশিয়ার ইন্টারফ্যাক্স সংবাদ সংস্থা অনুসারে, ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখার লক্ষ্যে একটি অভিযানের শুরুতে তারা পারমাণবিক স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা এবং সামরিক কমান্ডারদের লক্ষ্যবস্তু করেছে।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, তারা ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় ইস্পাহান শহরের পারমাণবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, ফোরদো-তে অবস্থিত একটি পরমাণু জ্বালানি সমৃদ্ধকরণ প্ল্যান্টও এখন পর্যন্ত অক্ষত রয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান আজ শুক্রবার ভোরে হামলায় নাতানজ শহরের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা বর্ষণ করলেও আইএইএ বলেছে, বর্তমানে ওই স্থানে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ মাত্রার কোনো বৃদ্ধি হয়নি।
সংস্থাটি নিশ্চিত করেছে, বুশেহরের একটি পারমাণবিক কেন্দ্রও হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
ইরান জানিয়েছে, আজ শুক্রবার ইসরায়েল ছয়জন পরমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে এবং নাতানজ পারমাণবিক কেন্দ্রে আঘাত হেনেছে। এই হামলা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এবং ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে আরও জোরালো করেছে।
ইসরায়েলকে ইঙ্গিত করে ইরান সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এমন শিকারি রাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতার ভাষা ছাড়া কথা বলা উচিত নয়।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ, পারমাণবিক প্রযুক্তি এবং ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা অর্জনের ওপর জোর দেওয়ার বিষয়টি এখন বিশ্ব আরও ভালোভাবে বুঝতে পারছে।’
ইরান স্পষ্ট করে বলছে, ইসরায়েলি হামলা তাদের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বিকাশের ন্যায্যতা তৈরি করেছে বলে তারা মনে করে।
ইসরায়েলি হামলায় ইরানের ছয়জন পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। দেশটির বার্তা সংস্থা তাসনিমের বরাত নিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। নিহত ছয় বিজ্ঞানী হলেন আব্দুল্লাহ মিনৌচেহর, আহমাদ রেজা জলফাঘারি, সায়েদ আমির হোসেন ফাকহি, মোতলাবিজাদেহ, ফেরেদুন আব্বাসি এবং মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচি।
ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলকে ‘প্রতিহত করতে’ এবং ‘এর অপরাধ বন্ধ করতে’ বিশ্বের প্রতি ‘একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান’ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ (ইসরায়েলের) আগ্রাসন একটি বিপজ্জনক উত্তেজনা সৃষ্টি করছে, যা অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার হুমকি দিচ্ছে। এটি চরমপন্থী নেতানিয়াহু সরকারের অঞ্চলকে উন্মুক্ত সংঘাতের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার জেদের প্রতিফলন।’
হামাস এই হামলাকে ‘একটি নৃশংস আগ্রাসন যা আন্তর্জাতিক নিয়ম ও প্রথার চরম লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছে। তারা বলেছে, এই হামলা আবারও নিশ্চিত করল যে ইসরায়েল ‘সমগ্র অঞ্চলের জন্য একটি অস্তিত্বের হুমকি’।
হামাস ‘ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতি পূর্ণ সংহতি’ প্রকাশ করেছে এবং সিনিয়র কমান্ডার ও পরমাণুবিজ্ঞানীদের মৃত্যুর জন্য ইরানি নেতৃত্ব ও জনগণের প্রতি ‘গভীর সমবেদনা’ জানিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের নতুন সংকটে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ইরানে ইসরায়েলের হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
স্টারমার ইসরায়েলের হামলাকে উদ্বেগজনক অভিহিত করে ‘সব পক্ষকে দ্রুত উত্তেজনা কমাতে ও পিছু হটতে’ আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এখন সংযম, শান্ত থাকা এবং কূটনীতিতে ফিরে আসার সময়।’
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, হামলায় ইরানের তিনজন সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডারকে হত্যা করা হয়েছে।
এক্সে একটি পোস্টে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাদের গুপ্তহত্যার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মোহাম্মদ বাঘেরি; ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের কমান্ডার হোসেইন সালামি; এবং খাতাম আল-আম্বিয়া সেন্ট্রাল সদর দপ্তরের কমান্ডার মেজর জেনারেল গোলাম আলী রশিদের নাম উল্লেখ করেছে।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর ২০০টির বেশি যুদ্ধবিমান ইরানের ১০০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে ‘ইরানের সিনিয়র সামরিক নেতাদের গোপন আস্তানাও’ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
পোস্টটিতে বলা হয়েছে, এই হামলাগুলো ইসরায়েলের গোয়েন্দা বিভাগের ‘নির্ভুল গোয়েন্দা নির্দেশনার’ ভিত্তিতে চালানো হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে, ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মোহাম্মদ বাঘেরি ইসরায়েলের হাতে নিহত হওয়ার খবর অস্বীকার করেছিল। কিন্তু এখন বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম নিশ্চিত করেছে, তিনি ইসরায়েলি গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন।
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইরানে ইসরায়েলি হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে।
মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, সৌদি সরকার এই জঘন্য হামলার নিন্দা জানাচ্ছে এবং একই সঙ্গে এটি নিশ্চিত করছে যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও নিরাপত্তা পরিষদের এই আগ্রাসন অবিলম্বে বন্ধ করার বিশাল দায়িত্ব রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফক্স নিউজকে বলেছেন, ইরানে ইসরায়েলের হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি আগে থেকেই জানতেন। তবে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, মার্কিন সামরিক বাহিনী এই অভিযানে কোনো ভূমিকা রাখেনি। তিনি আশা করেন, ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে।
ফক্স নিউজকে ট্রাম্প বলেন, ‘ইরান পারমাণবিক বোমা রাখতে পারে না এবং আমরা আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আশা করছি। আমরা দেখব।’
ট্রাম্প উল্লেখ করেন, হামলায় একাধিক ইরানি নেতার মৃত্যু হয়েছে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘নেতৃত্বে থাকা বেশ কয়েকজন আর ফিরে আসবেন না।’
তিনি জানান, তাঁর প্রশাসন হামলার আগে মধ্যপ্রাচ্যের একজন গুরুত্বপূর্ণ মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরও অবহিত করেছিল। তবে তিনি কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী ইসরায়েলের এই হামলার জবাব দেওয়ার ‘আইনি ও বৈধ’ অধিকার তেহরানের রয়েছে।
মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি ইরানের বিরুদ্ধে জায়নবাদী শাসনের আগ্রাসনের বিপজ্জনক এবং সুদূরপ্রসারী প্রভাব ও পরিণতির জন্য এই শাসন এবং এর সমর্থকেরা দায়ী থাকবে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ইরানের বিরুদ্ধে জায়নবাদী শাসনের আগ্রাসী পদক্ষেপগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয় ও অনুমোদন ছাড়া চালানো সম্ভব নয়। অতএব, এই শাসনের প্রধান সমর্থক হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারও জায়নবাদী শাসনের এই দুঃসাহসিকতার বিপজ্জনক প্রভাব ও পরিণতির জন্য দায়ী থাকবে।’
ইসরায়েলের এই হামলাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখছে না ইরান, বরং এর পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে বলে মনে করছে তেহরান। এটি মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
চীন ইসরায়েল ও ইরানে অবস্থানরত তার নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা পরিস্থিতিসংক্রান্ত পরামর্শ জারি করেছে। ইসরায়েলে অবস্থানরতদের সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার জন্য প্রস্তুত থাকতে সতর্ক করা হয়েছে।
ইসরায়েলে অবস্থিত চীনা দূতাবাস আজ শুক্রবার সেখানে থাকা নাগরিকদের তাদের নিরাপত্তা সতর্কতা জোরদার করতে, অপ্রয়োজনে বাইরে না যেতে বা সামরিক ইউনিট এবং সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর আশপাশের এলাকায় যেতে নিষেধ করেছে। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, নিরাপত্তা পরিস্থিতি জটিল এবং গুরুতর।
একটি পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে ইরানে অবস্থিত চীনা দূতাবাসও সেখানে থাকা নাগরিক ও সংস্থাগুলোকে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে এবং তাদের নিরাপত্তা সচেতনতা ও সতর্কতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে।
ইসরায়েলের পরিবহন মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, তারা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দেশের আকাশপথ বন্ধ করে দিয়েছে।
ইসরায়েলের একজন সামরিক কর্মকর্তা টাইমস অব ইসরায়েলকে জানিয়েছেন, তাঁরা ইরানের লক্ষ্যবস্তুতে পাঁচ দফায় হামলা চালিয়েছেন।
শত শত অস্ত্রের মাধ্যমে হামলা চালানো হয়েছে। অন্তত আটটি অবস্থানকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েল তেহরানে প্রথম দফা হামলা শুরু করার প্রায় ৩০ মিনিট আগে, ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি এক্সে লিখেছেন, ‘জেরুজালেমে আমাদের দূতাবাসে এবং পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছি। আমরা সারা রাত এখানেই থাকব। জেরুজালেমের শান্তির জন্য প্রার্থনা করুন!’
এই মন্তব্য কয়েক ঘণ্টা আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কর্তৃক পোস্ট করা একটি বার্তায় বলা হয়, এই অঞ্চলের আমেরিকান দূতাবাসগুলোকে উচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে।