Ajker Patrika

ইসরায়েলে শ্রমিক-সংকট: হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ভারতীয়রা, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১: ২২
ইসরায়েলে শ্রমিক-সংকট: হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ভারতীয়রা, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে চাকরিচ্যুত করেছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনের (আইএলও) হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ৮২ হাজার গাজাবাসী চাকরি হারিয়েছেন। এ ছাড়া পশ্চিম তীরে প্রায় ২৪ শতাংশ কর্মজীবী কাজ হারিয়েছেন। সে হিসাবে ২ লাখ ৮ হাজার মানুষের চাকরি গেছে। আইএলওর হিসাবে, শুধু পশ্চিম তীরের ১ লাখ ৬০ হাজার কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাঁরা ইসরায়েলি বা বসতি স্থাপনকারী ইহুদিদের প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিলেন। 

নির্বিচারে ফিলিস্তিনিদের চাকরিচ্যুত করার কারণে এরই মধ্যে ভয়াবহ কর্মী সংকটে পড়েছে ইসরায়েল। শুধু নির্মাণ খাতেই ভারত ও চীন থেকে ৭০ হাজার কর্মী নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে ইসরায়েল। এই সুযোগ লুফে নিতে চাচ্ছে ভারত। ইসরায়েল ভারত থেকে কয়েক লাখ শ্রমিক নিতে চায়। ভারত সরকার এরই মধ্যে সে প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। 

তবে ইসরায়েলে শ্রমিক নিয়োগে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ভারতের শ্রম অধিকারকর্মী ও শ্রমিক সংগঠনগুলো। অধিকারকর্মীদের অভিযোগ, ভারত সরকার শ্রমিকদের নিজ দেশে নিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব সাধারণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়, ইসরায়েলের মতো সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলেও তার চেয়ে বাড়তি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ শ্রমিকদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পোর্টাল ই-মাইগ্রেটেও নিবন্ধন করার প্রয়োজন হবে না। সরকারের বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও সংস্থা ইসরায়েলে শ্রমিকদের কল্যাণ ও নিরাপত্তার বিষয়ে দায় নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। 

গত ডিসেম্বরে, উত্তর প্রদেশ ও হরিয়ানা রাজ্য সরকার ইসরায়েলে নির্মাণশ্রমিক পাঠাতে আবেদনের জন্য আহ্বান জানায়। ভারত সরকার সংঘাতপূর্ণ এ দেশটিতে অন্তত ১০ হাজার শ্রমিক পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। ভারতের ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (এনএসডিসি) শ্রমিকদের বাছাই করবে। 

ইসরায়েলে আকর্ষণীয় বেতনের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। প্রতি মাসে ১ লাখ ৩৭ হাজার রুপির প্রস্তাব করা হলেও এতে নিরাপত্তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু উল্লেখ করা নেই। আবাস, খাদ্য ও চিকিৎসা বিমার ব্যয় বেতন থেকে কেটে রাখা হবে। এ ছাড়া বিমান টিকিটের খরচও শ্রমিকদের দিতে হবে। আবার এনএসডিসি শ্রমিক প্রতি ১০ হাজার রুপি চার্জ করছে। 

ইসরায়েলে এভাবে শ্রমিক পাঠানোর পদক্ষেপকে অমানবিক বলে উল্লেখ করেছেন ভারতের অধিকারকর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি অভিযান চলাকালীন ভারতীয় শ্রমিক, নার্স ও সেবাদানকারীদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তাড়াহুড়ো করার কারণে বরং তাঁদের বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। 

অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের (এআইটিইউসি) সাধারণ সম্পাদক অমরজিত কর দ্য হিন্দুকে বলেন, ‘এই পদক্ষেপ ভারতীয় নৈতিকতার পরিপন্থী। আমরা ইসরায়েলে যুদ্ধবিরতির পক্ষে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’ শ্রমিক সংগঠনগুলো এখন আদালতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে বলেও জানান তিনি। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন শহরে নিয়োগ প্রক্রিয়া শিগগির শুরু হবে বলে বিভিন্ন সরকারি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এনএসডিসিকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে সংস্থার প্রধান নির্বাহী মণি তিওয়ারি বলেন, শ্রমিক সংগ্রহের বিজ্ঞাপন করছে রাজ্য সরকার, এনএসডিসি নয়। 

তিওয়ারি বলেন, ‘ইসরায়েল বা নিয়োগকর্তাদের ওপর আমাদের কোনো এখতিয়ার নেই। আমরা কোনো নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান নই। কিছু রাজ্য সরকার ইসরায়েলে কাজে যেতে আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করেছে। আমাদের দায়িত্ব হলো কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দেওয়া।’ 

হরিয়ানার শ্রমমন্ত্রী অনুপ ধানকে এবং কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রণালয় এ কার্যক্রমের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এমইএ শ্রমিকদের এ ধরনের অভিবাসন পর্যবেক্ষণ করে।’ তবে এমইএও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। 

বর্তমানে, পর্যাপ্ত শ্রম সুরক্ষা ছাড়াই বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে যাওয়া সমস্ত শ্রমিককে এমইএ-এর ‘ই-মাইগ্রেট’ পোর্টালে নিবন্ধন করতে হবে। তবে ইসরায়েলকে এর আওতাভুক্ত করা হয়নি। 

এরই মধ্যে বিপুলসংখ্যক ভারতীয় ইসরায়েলে যাওয়ার আবেদন করেছেন। বিবিসির প্রতিবেদনে অনুযায়ী, উত্তর প্রদেশ এবং হরিয়ানা রাজ্য থেকে প্রায় ১০ হাজার জন এরই মধ্যে চাকরির অফার পেয়েছেন। 

এ নিয়ে ভারতে নরেন্দ্র মোদি সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের বিজ্ঞাপনও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে, ভারতের বিপুলসংখ্যক শিক্ষিত তরুণ বেকার। তাঁরা এখন বিদেশে চাকরির সুযোগ খুঁজছেন। 

আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনা মহামারির পর স্নাতক ডিগ্রিধারী ১৫ শতাংশের বেশি এবং ২৫ বছরের বয়সী স্নাতকধারী ৪২ শতাংশের চাকরি নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত