অনলাইন ডেস্ক
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে ভারতের উগ্র ডানপন্থী কিছু গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ব্যক্তি-সংগঠন ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুদের বিরুদ্ধে একপ্রকার যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগ ছিলেন হিন্দু পর্যটক। তবে সন্ত্রাস প্রতিহত করতে ঐক্যের পরিবর্তে ডানপন্থী এসব সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এ হামলার জন্য ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুদের দায়ী করছেন। তাঁরা এই সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুদের ‘দেশের শত্রু’ বলছেন এবং বেছে বেছে এমন হিন্দুদের বিরুদ্ধে এই আক্রমণ চালাচ্ছেন, যা ভারতের সাংবিধানিক ধর্মনিরপেক্ষতাকেও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
পেহেলগামে হামলার দায় স্বীকার করেছে দ্য রেসিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। ভারতের দাবি, গোষ্ঠীটি পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়েবার একটি অঙ্গসংগঠন। ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ওই দিন হামলাকারীরা পর্যটকদের ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করে শুধু হিন্দু পুরুষদের হত্যা করেছিল। এ সময় এক মুসলিম ব্যক্তি হিন্দুদের বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারান। পরে এ ঘটনা জানাজানি হলে জাতীয় ক্ষোভ জাগে, কিন্তু ডানপন্থী গণমাধ্যমগুলো সন্ত্রাসবাদের পরিবর্তে ধর্মনিরপেক্ষতাকে নিশানা করেছে। এর মধ্যে কিছু উল্লেখ করার মতো। যেমন—
রিপাবলিক বাংলার জনপ্রিয় উপস্থাপক ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ, যিনি তাঁর উত্তেজনাপূর্ণ, বিদ্বেষপূর্ণ এবং কখনো কখনো হাস্যকর উপস্থাপনার জন্য পরিচিত। গত ২৪ এপ্রিল তিনি সন্ধ্যার একটি অনুষ্ঠানে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতীয়দের দেশ ছাড়তে বলেন। উত্তেজিত কণ্ঠে তিনি বলেন, ভারতের সংবিধান থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটি মুছে ফেলতে হবে। তিনি চিৎকার করে বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা! এটা আবার কিসের জন্য?’। তাঁর মতে, ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুরা দেশের অভ্যন্তরীণ শত্রু ও সন্ত্রাসবাদের চেয়েও বড় হুমকি। তিনি দাবি করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭৬ সালে জরুরি অবস্থায় শব্দটি সংবিধানে যুক্ত করেছিলেন। তবে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ভারতের সংবিধান সব সময় ধর্মনিরপেক্ষ ছিল, শব্দটি যুক্ত হওয়ার আগেও।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সেও ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আগের তুলনায় বিষোদ্গার বেড়েছে অনেক। গত ২৫ এপ্রিল হিন্দুত্ববাদী ‘নিরাপত্তা বিশ্লেষক’ রাকেশ কৃষ্ণন সিমহা এক্সের এক পোস্টে লেখেন, ‘মুসলিমরা মুসলিম বাড়িতে, খ্রিষ্টানরা খ্রিষ্টান বাড়িতে জন্মায়। কিন্তু বোকা ধর্মনিরপেক্ষরা শুধু হিন্দু বাড়িতেই জন্মায়।’ এই পোস্ট ১২ ঘণ্টায় ১ হাজার ৩০০ বার শেয়ার হয়।
আরেক কট্টোর হিন্দু জাতীয়তা শিবানিয়া লেখেন, ‘ইসরায়েল শত্রুদের দ্বারা ঘেরা। আর আমাদের ভারত শত্রুদের দ্বারা ভরা।’ তাঁর পোস্টটি ৪ হাজারবার শেয়ার হয়। কমেন্টে অনেকে ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুদের শাস্তিরও দাবি জানান।
বরুণ বাহল নামে একজন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারের ২১ হাজার ফলোয়ার। তিনি লেখেন, ‘ভারতের সবচেয়ে বড় সমস্যা ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুরা। তারা আমাদের ধ্বংস করতে চায়।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ধরনের প্রচারণার পেছনে ২০১৩ সাল থেকে চলে আসা হিন্দু জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রভাব রয়েছে। গত এক দশকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ (secular) শব্দটি ‘সিক-উলার’ (sickular—যার অর্থ অসুস্থ মস্কিষ্কের কেউ) এবং ‘লিবারেল’ (liberal) শব্দটি ‘লিবটার্ড’ (libtard—এর অর্থ যে ব্যক্তির জন্ম বা মা-বাবা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে) হিসেবে বিকৃত হয়েছে।
ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা মনে করেন, ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুরা মুসলিমদের রক্ষা করে, তাদেরকে তারা ভারতের সব সমস্যার জন্য দায়ী মনে করে। ভারতের জনসংখ্যার মাত্র ১৪ শতাংশ মুসলিম, তাই তারা হিন্দুরাষ্ট্র গঠনে বাধা দিতে পারে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষ ও উদার হিন্দুরা তাদের প্রধান প্রতিবন্ধক।
২০২৩ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান ও ক্ষমতাসীন বিজেপির পৃষ্ঠোপোষক মোহন ভাগবত বিজয়া দশমীর একটি অনুষ্ঠানে সরাসরি ‘সাংস্কৃতিক মার্ক্সবাদী’ ও ‘ওয়োক’ (চরম উদারপন্থী) ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, তারা গণমাধ্যম ও শিক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে দেশের সংস্কৃতি ও রাজনীতি নষ্ট করছে।
ভারতে বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হয়, কিছুদিন পর এটি স্বাভাবিক হয়ে যায়। কারণ হিসেবে বলা হয়, বিশ্বের অনেক বড় বড় নেতা এই ‘ওয়োকিজম’বিরোধী, যেমন আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইলন মাস্ক, ইতালির জর্জিয়া মেলোনি ও আর্জেন্টিনার হাভিয়ের মিলেই এই ‘ওয়োকিজম’বিরোধী। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মেলোনি বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতা, জাতি, পরিবার ও বিশ্বাস রক্ষা করি। আমরা ওয়োকিজমের (চরম উদার পন্থার) বিরুদ্ধে লড়ি।’
নিজেকে ‘ধার্মিক হিন্দুত্ববাদী যোদ্ধা’ দাবি করেন গিরিশ ভরদ্বাজ নামের এক আইনজীবী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁর ১ লাখ ১৭ হাজার ফলোয়ার। তিনি পেহেলগামের হামলার পর একটি কবিতা পোস্ট করেন। তিনি এ কবিতায় লেখেন, ‘প্রতিবার রক্ত ঝরে, তারা বলে, ধর্ম নিয়ে কথা বলব না। না, আমরা ধর্ম নিয়েই কথা বলব। তারা নাম জিজ্ঞেস করেছে, পোশাক খুলেছে, গুলি চালিয়েছে। আর তুমি টেনেছ ধর্মনিরপেক্ষতার লজ্জার পর্দা। ধর্মনিরপেক্ষদের হাতও হিন্দুদের রক্তে রঞ্জিত।’
আরএসএস-সমর্থিত পোর্টাল রিতম ইংলিশ দাবি করে, সর্বভারতীয় মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি পেহেলগামের হামলার পর স্বীকার করেছেন, সন্ত্রাসীরা শুধু হিন্দুদের লক্ষ্য করে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। রিতম ইংলিশ বলে, অথচ ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুরা ‘মুসলিম তোষণের’ জন্য ওয়াইসির এ সত্যকে অস্বীকার করেছে।
আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতার সম্পাদক সেমন্তী ঘোষ সম্প্রতি একটি কলামে লিখেছেন, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম না থাকলে আমরা জানতাম না, ধর্মের নামে অধর্ম ও রাজনীতির নামে মগজধোলাই ভারতের সামাজিক মনস্তত্ত্বকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার পর ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিরা প্রতিনিয়ত আক্রমণের শিকার হচ্ছে, যেন সবকিছুর জন্য তারাই দায়ী।’
কেন ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুরা লক্ষ্য?
পেহেলগামে হামলার পর ধর্মনিরপেক্ষদের নিশানা করার কারণ স্পষ্ট। মুসলিমরা ভারতের জনসংখ্যার মাত্র ১৪ শতাংশ এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদের চাপে ইতিমধ্যে তাঁরা কোণঠাসা। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুরা হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের বিরোধিতা করেন, সরকারের কাশ্মীর নীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তাই তাঁদের চুপ করানো ডানপন্থীদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে।
আউটলুক ইন্ডিয়া থেকে অনূদিত,
মূল লেখক: স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য (সাংবাদিক)
অনুবাদ: জগৎপতি বর্মা
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে ভারতের উগ্র ডানপন্থী কিছু গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ব্যক্তি-সংগঠন ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুদের বিরুদ্ধে একপ্রকার যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগ ছিলেন হিন্দু পর্যটক। তবে সন্ত্রাস প্রতিহত করতে ঐক্যের পরিবর্তে ডানপন্থী এসব সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এ হামলার জন্য ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুদের দায়ী করছেন। তাঁরা এই সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুদের ‘দেশের শত্রু’ বলছেন এবং বেছে বেছে এমন হিন্দুদের বিরুদ্ধে এই আক্রমণ চালাচ্ছেন, যা ভারতের সাংবিধানিক ধর্মনিরপেক্ষতাকেও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
পেহেলগামে হামলার দায় স্বীকার করেছে দ্য রেসিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। ভারতের দাবি, গোষ্ঠীটি পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়েবার একটি অঙ্গসংগঠন। ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ওই দিন হামলাকারীরা পর্যটকদের ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করে শুধু হিন্দু পুরুষদের হত্যা করেছিল। এ সময় এক মুসলিম ব্যক্তি হিন্দুদের বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারান। পরে এ ঘটনা জানাজানি হলে জাতীয় ক্ষোভ জাগে, কিন্তু ডানপন্থী গণমাধ্যমগুলো সন্ত্রাসবাদের পরিবর্তে ধর্মনিরপেক্ষতাকে নিশানা করেছে। এর মধ্যে কিছু উল্লেখ করার মতো। যেমন—
রিপাবলিক বাংলার জনপ্রিয় উপস্থাপক ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ, যিনি তাঁর উত্তেজনাপূর্ণ, বিদ্বেষপূর্ণ এবং কখনো কখনো হাস্যকর উপস্থাপনার জন্য পরিচিত। গত ২৪ এপ্রিল তিনি সন্ধ্যার একটি অনুষ্ঠানে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতীয়দের দেশ ছাড়তে বলেন। উত্তেজিত কণ্ঠে তিনি বলেন, ভারতের সংবিধান থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটি মুছে ফেলতে হবে। তিনি চিৎকার করে বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা! এটা আবার কিসের জন্য?’। তাঁর মতে, ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুরা দেশের অভ্যন্তরীণ শত্রু ও সন্ত্রাসবাদের চেয়েও বড় হুমকি। তিনি দাবি করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭৬ সালে জরুরি অবস্থায় শব্দটি সংবিধানে যুক্ত করেছিলেন। তবে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ভারতের সংবিধান সব সময় ধর্মনিরপেক্ষ ছিল, শব্দটি যুক্ত হওয়ার আগেও।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সেও ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আগের তুলনায় বিষোদ্গার বেড়েছে অনেক। গত ২৫ এপ্রিল হিন্দুত্ববাদী ‘নিরাপত্তা বিশ্লেষক’ রাকেশ কৃষ্ণন সিমহা এক্সের এক পোস্টে লেখেন, ‘মুসলিমরা মুসলিম বাড়িতে, খ্রিষ্টানরা খ্রিষ্টান বাড়িতে জন্মায়। কিন্তু বোকা ধর্মনিরপেক্ষরা শুধু হিন্দু বাড়িতেই জন্মায়।’ এই পোস্ট ১২ ঘণ্টায় ১ হাজার ৩০০ বার শেয়ার হয়।
আরেক কট্টোর হিন্দু জাতীয়তা শিবানিয়া লেখেন, ‘ইসরায়েল শত্রুদের দ্বারা ঘেরা। আর আমাদের ভারত শত্রুদের দ্বারা ভরা।’ তাঁর পোস্টটি ৪ হাজারবার শেয়ার হয়। কমেন্টে অনেকে ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুদের শাস্তিরও দাবি জানান।
বরুণ বাহল নামে একজন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারের ২১ হাজার ফলোয়ার। তিনি লেখেন, ‘ভারতের সবচেয়ে বড় সমস্যা ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুরা। তারা আমাদের ধ্বংস করতে চায়।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ধরনের প্রচারণার পেছনে ২০১৩ সাল থেকে চলে আসা হিন্দু জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রভাব রয়েছে। গত এক দশকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ (secular) শব্দটি ‘সিক-উলার’ (sickular—যার অর্থ অসুস্থ মস্কিষ্কের কেউ) এবং ‘লিবারেল’ (liberal) শব্দটি ‘লিবটার্ড’ (libtard—এর অর্থ যে ব্যক্তির জন্ম বা মা-বাবা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে) হিসেবে বিকৃত হয়েছে।
ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা মনে করেন, ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুরা মুসলিমদের রক্ষা করে, তাদেরকে তারা ভারতের সব সমস্যার জন্য দায়ী মনে করে। ভারতের জনসংখ্যার মাত্র ১৪ শতাংশ মুসলিম, তাই তারা হিন্দুরাষ্ট্র গঠনে বাধা দিতে পারে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষ ও উদার হিন্দুরা তাদের প্রধান প্রতিবন্ধক।
২০২৩ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান ও ক্ষমতাসীন বিজেপির পৃষ্ঠোপোষক মোহন ভাগবত বিজয়া দশমীর একটি অনুষ্ঠানে সরাসরি ‘সাংস্কৃতিক মার্ক্সবাদী’ ও ‘ওয়োক’ (চরম উদারপন্থী) ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, তারা গণমাধ্যম ও শিক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে দেশের সংস্কৃতি ও রাজনীতি নষ্ট করছে।
ভারতে বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হয়, কিছুদিন পর এটি স্বাভাবিক হয়ে যায়। কারণ হিসেবে বলা হয়, বিশ্বের অনেক বড় বড় নেতা এই ‘ওয়োকিজম’বিরোধী, যেমন আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইলন মাস্ক, ইতালির জর্জিয়া মেলোনি ও আর্জেন্টিনার হাভিয়ের মিলেই এই ‘ওয়োকিজম’বিরোধী। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মেলোনি বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতা, জাতি, পরিবার ও বিশ্বাস রক্ষা করি। আমরা ওয়োকিজমের (চরম উদার পন্থার) বিরুদ্ধে লড়ি।’
নিজেকে ‘ধার্মিক হিন্দুত্ববাদী যোদ্ধা’ দাবি করেন গিরিশ ভরদ্বাজ নামের এক আইনজীবী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁর ১ লাখ ১৭ হাজার ফলোয়ার। তিনি পেহেলগামের হামলার পর একটি কবিতা পোস্ট করেন। তিনি এ কবিতায় লেখেন, ‘প্রতিবার রক্ত ঝরে, তারা বলে, ধর্ম নিয়ে কথা বলব না। না, আমরা ধর্ম নিয়েই কথা বলব। তারা নাম জিজ্ঞেস করেছে, পোশাক খুলেছে, গুলি চালিয়েছে। আর তুমি টেনেছ ধর্মনিরপেক্ষতার লজ্জার পর্দা। ধর্মনিরপেক্ষদের হাতও হিন্দুদের রক্তে রঞ্জিত।’
আরএসএস-সমর্থিত পোর্টাল রিতম ইংলিশ দাবি করে, সর্বভারতীয় মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি পেহেলগামের হামলার পর স্বীকার করেছেন, সন্ত্রাসীরা শুধু হিন্দুদের লক্ষ্য করে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। রিতম ইংলিশ বলে, অথচ ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুরা ‘মুসলিম তোষণের’ জন্য ওয়াইসির এ সত্যকে অস্বীকার করেছে।
আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতার সম্পাদক সেমন্তী ঘোষ সম্প্রতি একটি কলামে লিখেছেন, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম না থাকলে আমরা জানতাম না, ধর্মের নামে অধর্ম ও রাজনীতির নামে মগজধোলাই ভারতের সামাজিক মনস্তত্ত্বকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার পর ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিরা প্রতিনিয়ত আক্রমণের শিকার হচ্ছে, যেন সবকিছুর জন্য তারাই দায়ী।’
কেন ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুরা লক্ষ্য?
পেহেলগামে হামলার পর ধর্মনিরপেক্ষদের নিশানা করার কারণ স্পষ্ট। মুসলিমরা ভারতের জনসংখ্যার মাত্র ১৪ শতাংশ এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদের চাপে ইতিমধ্যে তাঁরা কোণঠাসা। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুরা হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের বিরোধিতা করেন, সরকারের কাশ্মীর নীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তাই তাঁদের চুপ করানো ডানপন্থীদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে।
আউটলুক ইন্ডিয়া থেকে অনূদিত,
মূল লেখক: স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য (সাংবাদিক)
অনুবাদ: জগৎপতি বর্মা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধীদের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত আলকাতরাজ কারাগার ১৯৬৩ সালেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তবে দীর্ঘদিন ধরে এটি শুধুমাত্র পর্যটকদের জন্যই উন্মুক্ত ছিল। কিন্তু এবার পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ৬২ বছর পর এটি আবারও...
৫ ঘণ্টা আগেপারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। এর মধ্যে আজ সোমবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উভয় দেশকে ‘সর্বোচ্চ সংযমী’ এবং ‘যুদ্ধের পথ থেকে সরে আসার’ আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার এ দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সর্বোচ্চ...
৫ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর স্ত্রী সারা নেতানিয়াহু মাইকে কথা বলার সময় অসাবধানতাবশত বলে ফেলেছেন, গাজায় ‘২৪ জনের কম’ জিম্মি এখনো জীবিত রয়েছেন। তাঁর এই মন্তব্য জিম্মি পরিবারগুলোকে ক্ষুব্ধ করেছে। তারা বলছে, প্রিয়জনদের ভাগ্য সরকারের হাতে; অথচ তারা এমনভাবে সে তথ্য প্রকাশ করছ
৫ ঘণ্টা আগেসৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় হজ ভিসা সংক্রান্ত নিয়ম লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এসব আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ১ লাখ সৌদি রিয়াল পর্যন্ত জরিমানা (৩২ লাখ টাকার বেশি) এবং সৌদি আরবে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে।
৭ ঘণ্টা আগে