Ajker Patrika

মণিপুরে জাতিগত সহিংসতায় বাবা ছেলেসহ নিহত ৬

আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২৩, ১৮: ৪৭
মণিপুরে জাতিগত সহিংসতায় বাবা ছেলেসহ নিহত ৬

ভারতের মণিপুরে নতুন করে জাতিগত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার পর্যন্ত এক দিনে বাবা, ছেলেসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ভারতের এনডিটিভি জানিয়েছে।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিষ্ণুপুর-চুরাচাঁদপুরের সীমানা অঞ্চলে মেইতি ও কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে আজ সকাল থেকে দিনব্যাপী এই সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ১৬ জন আহত হয়েছেন।

সহিংসতার পর এই অঞ্চলে চিরুনি অভিযান শুরু করেছে ভারতের সেনাবাহিনী, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে পূর্ব ও পশ্চিম ইম্ফলে কারফিউ অব্যাহত থাকবে।  

গতকাল শনিবার ছিল মণিপুরে সংঘর্ষের সবচেয়ে ভয়ংকর দিন। বিষ্ণুপুর-চুরাচাঁদপুরে সারা দিন ধরে মর্টার শেল ছোড়া হয় এবং গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। দুপক্ষের মধ্যে গোলাগুলিও হয়। 

গতকাল শেষ রাতের দিকে এক হামলার ঘটনায় বিষ্ণুপুরের কোয়াক্তার অঞ্চলে নিরস্ত্র বাবা, ছেলেসহ গ্রামের তিন বাসিন্দা মারা যান। গত ৩ মে মনিপুরে সহিংসতা শুরু হয়। এরপর গ্রামবাসী পালিয়ে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নেন। চলমান সহিংসতার মধ্যে তাঁরা সেখানেই ছিলেন। গ্রামটি নির্জন হয়ে পড়েছিল। গত শুক্রবার তাঁরা গ্রাম পাহারা দিতে ফিরে আসেন। 

নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা জানান, দুজনকে গুলি করার আগে তাঁদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। এর পরপরই পাল্টা হামলা শুরু হয়। কোয়াক্তার দুটি পার্শ্ববর্তী গ্রাম, ফুজাং এবং সোংডোতে মর্টার শেল ও গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়। এর ফলে দুজন নিহত হয় এবং বেশ কিছু লোক আহত হয়।

এদিকে বিষ্ণুপুরের তেরখাংসাংবিতে একযোগে হামলায় একজন নিহত ও একজন পুলিশ কমান্ডোসহ তিনজন বন্দুকের গুলিতে আহত হন বলে এনডিটিভি জানিয়েছে।

ইম্ফলের পূর্বাঞ্চলের জেলা সানসাবি ও থামনাপোকপি গ্রামে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের গুলি করার খবরও পাওয়া গেছে। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা ইম্ফল পশ্চিম জেলার ল্যাংগোলে বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে ইম্ফলেও। 

গতকাল মণিপুরের বিজেপি বিধায়ক রাজকুমার ইমো সিং (মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের জামাতা) কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘নিরাপত্তাব্যবস্থার ত্রুটি’র অভিযোগ তুলেন। বিষ্ণুপুর জেলায় যে হামলায় তিনজন নিহত হয়েছিল, সেখানে ‘দায়িত্বে অবহেলার’ জন্য আধা সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

মণিপুর পুলিশ বলছে, রাজ্যের ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রান্তিক এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে যৌথ বাহিনী। বিভিন্ন জেলায় নতুন করে সহিংসতা শুরুর পরে সাতটি অবৈধ বাংকার ধ্বংস করা হয়েছে। 

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এ রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী মেইতিরা সম্প্রতি তফসিলি উপজাতিভুক্ত হওয়ার দাবি তুলেছে। এই নিয়ে সংখ্যালঘু কুকিদের সঙ্গে তাদের জাতিগত দাঙ্গা শুরু হয়।

তিন দিন ধরে মণিপুরে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার বিষ্ণুপুরে পুলিশের অন্তত দুটি নিরাপত্তা ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে স্বয়ংক্রিয় বন্দুকসহ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করে নিয়ে যায় উচ্ছৃঙ্খল জনতা। ইম্ফলে ওয়েস্টে আরেক ঘটনায় গোলাগুলিতে এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন।

পুলিশ জানিয়েছে, মণিপুরের পাহাড়ি ও উপত্যকার জেলাগুলোতে মোট ১২৯টি চেকপয়েন্ট বসানো হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে প্রায় ১ হাজার ৪৭ জনকে আটক করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্ষেপণাস্ত্রসহ মিগ–৩১ যুদ্ধবিমান চুরির চেষ্টা করেছিল ইউক্রেন–যুক্তরাজ্য, দাবি রাশিয়ার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্রসহ রাশিয়ার মিগ–৩১ যুদ্ধবিমান চুরি করতে চেয়েছিল যুক্তরাজ্য ও ইউক্রেন। ছবি: সংগৃহীত
কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্রসহ রাশিয়ার মিগ–৩১ যুদ্ধবিমান চুরি করতে চেয়েছিল যুক্তরাজ্য ও ইউক্রেন। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি) জানিয়েছে, ইউক্রেন ও ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের এক পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিয়েছে তারা। ওই পরিকল্পনায় রুশ এক পাইলটকে ৩০ লাখ ডলারের প্রলোভন দেখিয়ে কিনঝাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রযুক্ত মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান চুরি করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো মঙ্গলবার এই তথ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। রুশ বার্তা সংস্থা রিয়া নাভোস্তি জানিয়েছে, এফএসবি বলেছে—চুরি করা ওই যুদ্ধবিমানটি রোমানিয়ার কনস্টান্টা শহরের একটি ন্যাটো ঘাঁটির দিকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে যুদ্ধবিমানটিকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে গুলি করে নামিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও ছিল।

সোভিয়েত আমলের ডাকসাইটে গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির উত্তরসূরি এফএসবি জানিয়েছে, ইউক্রেন ও ব্রিটেন ওই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে বড় ধরনের ‘উসকানিমূলক অভিযান’ চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। ইউক্রেনীয় সামরিক গোয়েন্দারা রুশ পাইলটদের ৩০ লাখ ডলার ঘুষ দিয়ে বিমান চুরির চেষ্টা চালিয়েছিল বলেও সংস্থাটি দাবি করে।

রিয়া নাভোস্তির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এফএসবির গৃহীত পদক্ষেপে ইউক্রেন ও ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার বড় ধরনের উসকানিমূলক পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।’

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে কিছু বার্তা ও রেকর্ডিং দেখানো হয়। যেখানে দেখা যায় এক ব্যক্তি ইউক্রেন ও ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের হয়ে কাজ করছিল। সে একজন রুশ পাইলটকে ৩০ লাখ ডলার প্রস্তাব দেয় মিগ যুদ্ধবিমানটি ইউরোপে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ওই পাইলটকে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল। তবে রয়টার্স এই ঘটনার স্বাধীনভাবে সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

রাশিয়ার কিনঝাল হলো আকাশ থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। মস্কো দাবি করে এটি হাইপারসনিক অস্ত্র, যার গতি অত্যন্ত বেশি এবং এটি এমনভাবে উড়ে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে শনাক্ত বা আটকানো কঠিন।

রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই ব্রিটেনকে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখে আসছে। মস্কোর অভিযোগ, ইউক্রেন যুদ্ধকে উসকে দিতে ব্রিটেন ভূমিকা রাখছে এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দারা ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভেতরে নানা অভিযান চালাতে সহায়তা করছে। অন্যদিকে, ব্রিটেন রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণকে সাম্রাজ্যবাদী ভূমি দখলের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখে। লন্ডনের দাবি, রুশ গোয়েন্দারা ইচ্ছে করে ব্রিটেন ও ইউরোপজুড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, যাতে গণতন্ত্র দুর্বল হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হোয়াইট হাউসে আল–শারার ঐতিহাসিক সফর, সিরিয়াকে সফল করার প্রতিশ্রুতি ট্রাম্পের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ৪১
হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আহমেদ আল–শারা। ছবি: এএফপি
হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আহমেদ আল–শারা। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার জানিয়েছেন, সিরিয়াকে সফল রাষ্ট্রে পরিণত করতে তিনি সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈঠকের পর এ কথা বলেন ট্রাম্প।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, শারার ওয়াশিংটন সফর তাঁর জন্য অসাধারণ এক সফল বছর শেষের প্রতীক। বিদ্রোহী থেকে রাষ্ট্রনায়ক হয়ে ওঠা শারা গত বছর দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এরপর থেকেই তিনি বিশ্ব সফরে গিয়ে নিজেকে মধ্যপন্থী নেতা হিসেবে পরিচয় করানোর চেষ্টা করছেন। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে চান এবং আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা দূর করতে চান।

ওয়াশিংটনে শারার প্রধান লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া। বৈঠকের সময়ে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, সিজার অ্যাক্ট-এর আওতায় থাকা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার স্থগিতাদেশ আরও ১৮০ দিনের জন্য বাড়ানো হয়েছে। তবে এই নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত কংগ্রেসের।

শারার ওয়াশিংটন সফর ছিল কোনো সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের প্রথম সফর। ছয় মাস আগে সৌদি আরবে ট্রাম্প ও শারার প্রথম সাক্ষাৎ হয়। সেখানেই ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলার ইঙ্গিত দেন। কয়েক দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছে, শারা আর ‘বিশ্বব্যাপী বিশেষভাবে চিহ্নিত সন্ত্রাসী’ নন।

হোয়াইট হাউসে শারাকে স্বাগত জানানোর পরিবেশ ছিল অস্বাভাবিকভাবে নীরব। একসময় যার মাথার দাম ছিল যুক্তরাষ্ট্রে ১ কোটি ডলার, তিনি প্রবেশ করেন পাশের দরজা দিয়ে। অর্থাৎ, হোয়াইট হাউসের মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করেননি তিনি।

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, শারা একজন ‘শক্তিশালী নেতা’। তিনি শারার প্রতি আস্থা রাখেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যা কিছু পারি, তা করব, যাতে সিরিয়া সফল হয়।’ তবে শারার অতীত প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন, ‘আমাদের সবারই কঠিন অতীত আছে।’

শারা গত বছর ক্ষমতায় আসেন। এরপর সিরিয়া দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। আসাদের পুরোনো মিত্র ইরান ও রাশিয়ার দিক থেকে দেশটি সরে এসেছে। নতুনভাবে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে তুরস্ক, উপসাগরীয় দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে।

নিরাপত্তা আলোচনাও বৈঠকের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার নাজুক রাজনৈতিক পরিবর্তনে সহায়তা করতে চায়। দেশটি ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ‘গ্লোবাল কোয়ালিশন টু ডিফিট আইএস’-এর সঙ্গে একটি রাজনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র দামেস্কের এক বিমানঘাঁটিতে সামরিক উপস্থিতি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মার্কিন সরকারের শাটডাউন অবসানের বিল সিনেটে পাস, নিম্নকক্ষে অনুমোদনের অপেক্ষা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিল। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিল। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দেশটির সরকারের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের শাটডাউন বা অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে গতকাল সোমবার এক সমঝোতা চুক্তি অনুমোদন করেছে দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেট। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা এই অচলাবস্থায় লাখো মানুষ খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে, কয়েক লাখ সরকারি কর্মচারী বেতন পাননি, আর বিমান চলাচল ব্যবস্থাও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

৬০–৪০ ভোটে পাস হওয়া এই প্রস্তাবে প্রায় সব রিপাবলিকান সিনেটর ও আট ডেমোক্র্যাট সিনেটর সমর্থন দেন। যদিও ডেমোক্র্যাটরা সরকারে অর্থায়নের সঙ্গে বছরের শেষে মেয়াদোত্তীর্ণ হতে যাওয়া স্বাস্থ্য ভর্তুকি যুক্ত করতে চেয়েছিলেন, সেটি গৃহীত হয়নি। সমঝোতা অনুযায়ী ডিসেম্বর মাসে এই ভর্তুকি নিয়ে ভোট হবে, তবে তা বহাল থাকবে কি না, তার নিশ্চয়তা নেই।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, নতুন চুক্তির মাধ্যমে ১ অক্টোবর মেয়াদোত্তীর্ণ ফেডারেল সংস্থাগুলোর অর্থায়ন পুনরায় চালু হবে। একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফেডারেল কর্মীসংখ্যা কমানোর পরিকল্পনাও অন্তত ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। বিলটি এখন রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদে যাবে। স্পিকার মাইক জনসন জানিয়েছেন, তিনি বুধবারের মধ্যেই এটি পাস করিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পাঠাতে চান। ট্রাম্প চুক্তিটিকে ‘খুব ভালো’ বলে প্রশংসা করেছেন।

এই সমঝোতায় সরকারের অর্থায়ন ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হবে। ফলে আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার বছরে প্রায় ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার নতুন ঋণ যোগ করে ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলারের মোট ঋণের পথে এগিয়ে যাবে।

চুক্তিটি এমন এক সময় হলো, যখন ডেমোক্র্যাটরা নিউ জার্সি, ভার্জিনিয়া এবং নিউ ইয়র্ক সিটিতে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে জয় পেয়েছে। তবে এই সমঝোতায় ডেমোক্র্যাটদের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, এতে স্বাস্থ্য ভর্তুকি চালু রাখার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা ডিক ডারবিন বলেন, ‘আমরা আরও কিছু করতে চেয়েছিলাম। সরকার বন্ধ হওয়াকে আমরা ভালো নীতির পথে নেওয়ার সুযোগ ভেবেছিলাম। কিন্তু সেটা হয়নি।’

রয়টার্স–ইপসসের অক্টোবরের শেষ দিকের এক জরিপে দেখা যায়, ৫০ শতাংশ মার্কিন নাগরিক শাটডাউনের জন্য রিপাবলিকানদের দায়ী করেন, আর ৪৩ শতাংশ দায় দেন ডেমোক্র্যাটদের।

এর আগে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একতরফাভাবে কয়েক বিলিয়ন ডলার ব্যয় বাতিল করেছেন এবং লক্ষাধিক ফেডারেল কর্মী ছাঁটাই করেছেন, যা কংগ্রেসের আর্থিক ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ হিসেবে সমালোচিত হয়েছে। এতে পূর্বে কংগ্রেস অনুমোদিত ব্যয় আইনও ভঙ্গ হয়েছে। তাই অনেক ডেমোক্র্যাট এখন প্রশ্ন তুলছেন, ভবিষ্যতে এমন কোনো ব্যয় চুক্তিতে তারা কেন ভোট দেবেন।

চুক্তিতে ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ ব্যয় কমানোর পদক্ষেপ ঠেকানোর কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। তবে এতে স্ন্যাপ (SNAP) খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির অর্থায়ন আগামী বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিশ্চিত করা হয়েছে, যাতে সরকার আবার বন্ধ হলেও এই সহায়তা ব্যাহত না হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিহার বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ চলছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিহারে বিধানসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণের দিনে একটি কেন্দ্রের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
বিহারে বিধানসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণের দিনে একটি কেন্দ্রের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

বিহারে বিধানসভার নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ আজ মঙ্গলবার সকালে শুরু হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ১২২টি আসনে ভোটগ্রহণ চলছে। এ দফায় মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমারের মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বিরোধী দলগুলোর জোট মহাগাঠবন্ধন বা মহাজোটে ভাঙনের খবর ছড়ালেও বিকাশশীল ইনসান পার্টির প্রধান ও উপমুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী মুকেশ সাহানি সে খবর পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। এই পর্বকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স বা এনডিএ–এর ছোট অংশীদারদের জন্য শক্তি পরীক্ষার লড়াই হিসেবে দেখা হচ্ছে। জিতন রাম মাঞ্জির নেতৃত্বাধীন হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা ও রাজ্যসভার সদস্য উপেন্দ্র কুশওয়াহার নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় লোক মোর্চা—দুটি দলই ছয়টি করে আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমারের মন্ত্রিসভার নয় মন্ত্রী এই পর্বে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন—বিজেন্দ্র প্রসাদ যাদব (সুপৌল), সুমিত কুমার সিং (চাকাই), মোহাম্মদ জামা খান (চেইনপুর), লেশি সিং (ধামদহা), কৃষ্ণ নন্দন পাসওয়ান (হরসিধি), রেণু দেবী (বেতিয়া), নীরজ কুমার বাবলু (ছাটাপুর), নিতীশ মিশ্র (ঝনঝারপুর), প্রেম কুমার (গয়া), শীলা মণ্ডল (ফুলপরাস), বিজয় মণ্ডল (সিকতি) এবং জয়ন্ত রাজ কুশওয়াহা (আমরপুর)।

আজ যেসব জেলায় ভোট হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে পশ্চিম চম্পারণ, পূর্ব চম্পারণ, সীতামারহি, মধুবনী, সুপৌল, আরারিয়া ও কিষাণগঞ্জ। এসব জেলার সীমানা নেপালের সঙ্গে যুক্ত। এই ভোটপর্বে সীমাঞ্চল অঞ্চলের বহু জেলা অন্তর্ভুক্ত। এখানে মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপস্থিতি বেশি, ফলে এ পর্বটি সরকার ও বিরোধী—দুই জোটের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সবচেয়ে নজরকাড়া আসনের মধ্যে একটি হলো ভাগলপুর জেলার কাহালগাঁও। এখানে চারদলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। মহাগঠবন্ধনের শরিক আরজেডি ও কংগ্রেসের মধ্যে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ দেখা যাবে। লড়াইয়ে রয়েছে শাসক দল জনতা দল ইউনাইটেডও। অন্যদিকে, বিজেপির বর্তমান বিধায়ক পবন কুমার যাদব দল থেকে বিদ্রোহ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

অন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি রাজেশ কুমার, যিনি সংরক্ষিত কুটুম্বা আসন দ্বিতীয়বারের মতো ধরে রাখতে চান। এ ছাড়া প্রার্থী হয়েছেন প্রাক্তন বিধানসভার স্পিকার উদয় নারায়ণ চৌধুরী (আরজেডি), কংগ্রেস বিধায়ক দলনেতা শাকিল আহমেদ খান এবং সিপিআই-এমএল বিধায়ক দলনেতা মেহবুব আলম।

দ্বিতীয় দফার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রায় ৪ লাখ নিরাপত্তা সদস্য দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার ভোটে ৬৫ শতাংশের বেশি ভোটার অংশ নিয়েছিলেন, যা রেকর্ড পরিমাণ ভোটার উপস্থিতি। ভোট গণনা হবে আগামী ১৪ নভেম্বর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত