Ajker Patrika

শিরোনামে নন্দীগ্রাম

তরুণ চক্রবর্তী, কলকাতা
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২১, ১০: ৩৫
শিরোনামে নন্দীগ্রাম

নন্দীগ্রাম। কলকাতা থেকে ৭০ কিমি দূরের এই আধা-শহরবেষ্টিত গ্রামটিই এখন খবরের শিরোনামে। পশ্চিমবঙ্গের রজনীতিতে তো বটেই, গোটা ভারতেই নন্দীগ্রামের গুরুত্ব এখন অনেকটাই। হ্যাঁ, এখনও।
আগেও গুরুত্ব ছিল নন্দীগ্রামের। বহুকাল ধরেই খবরের শিরোনামে। তবে এবার একটু বেশি। কারণ এই নন্দীগ্রামই হয়ে উঠতে পারে ভারতীয় রাজনীতির নয়া ভরকেন্দ্র।

বিজেপির অশ্বমেধের ঘোড়া থমকে যেমন যেতে পারে নন্দীগ্রামে, তেমনি ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম তারকা, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির রাজনৈতিক ভবিষ্যতও অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে উঠতে পারে এই নন্দীগ্রাম থেকেই।

২০০৭ সালে প্রথম খবরের শিরোনামে উঠে আসে নন্দীগ্রাম। তখনকার বামপন্থি মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ইন্দোনেশিয়ার সেলিম গোষ্ঠীর জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে হাজার একর জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা করেন। বাধা দিতে গড়ে ওঠে ভূমি উচ্ছেদ কমিটি।

গ্রামবাসীদের প্রতিরোধকে কাজে লাগাতে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস মাঠে নামে। অভিযোগ, মাওবাদীদের সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলা হয় প্রতিরোধ। সংঘর্ষ বাঁধে পুলিশের সঙ্গে।

১৪ মার্চ, ২০০৭ হিংসায় প্রাণ হারান ১৪ জন গ্রামবাসী। অভিযোগ, পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন তাঁরা। এমনকি, পুলিশের ছদ্মবেশে সিপিএমের হার্মাদরাও নাকি হাওয়াই চটি পায়ে গুলি চালিয়েছিল।

শুরু হয় প্রতিবাদ। পশ্চিমবঙ্গের বিদ্বজ্জনেরাও বুদ্ধদেব বাবুর বিরুদ্ধে পথে নামেন। সেলিম গোষ্ঠী পিছু হঠে। বাড়তে থাকে তৃণমূলের দাপট। সিপিএমের শক্ত দুর্গ বলে পরিচিত নন্দীগ্রামেও ফুটতে থাকে ঘাসফুল (তৃণমূলের প্রতীক)।

২০০৮ সালে ঘুষ কেলেঙ্কারীতে জড়িয়ে পড়েন স্থানীয় সিপিআই বিধায়ক মহ. ইলিয়াস শেখ। তাই ২০০৯-এ হয় উপনির্বাচন। জিতেন তৃণমূল প্রার্থী। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি মমতা ব্যানার্জিকে। ২০১১ সালে তাঁর ক্ষমতা দখলের প্রিলিউড কিন্তু নন্দীগ্রামেই শোনা গিয়েছিল।

এই নন্দীগ্রাম আন্দোলন মমতাকে উপহার দিয়েছিল এক তরুণ নেতাকে। শুভেন্দু অধিকারী। মেদিনীপুরের অধিকারী পরিবারের তরতাজা যুবক। বিয়ে-থা করেননি। রাজনীতিই ধ্যান-জ্ঞান। কংগ্রেসি ছাত্র রাজনীতির হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ। বাবা শিশির অধিকারীও কংগ্রেসি ঘরানার দীর্ঘদিনের পরিচিত মুখ।

মমতার হাত ধরে শুভেন্দুর রাজ্য-রাজনীতিতে উত্থান। দু-বার ভারতের জাতীয় সংসদের সদস্যও নির্বাচিত হন তৃণমূলের টিকিটে। গতবার বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম থেকে জিতে তিনি বিধায়ক হন তৃণমূলের। মমতা তাঁকে পরিবহনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মন্ত্রীও করেন। এক সময়ে যুব তৃণমূলের প্রদেশ সভাপতিও হয়েছিলেন শুভেন্দু। তাঁর বাবা ও দাদা তৃণমূলের সাংসদ। এক ভাইকে পুরসভার চেয়ারম্যানও করেছিলেন মমতা।

কিন্তু সেই শুভেন্দুই এখন মমতার প্রতিপক্ষ। নির্বাচনের মাস ছয়েক আগে শিবির বদল করেন তিনি। বেছে নেন ঘাসফুল ছেড়ে পদ্মফুল (বিজেপির প্রতীক)। মেনে নিতে পারেননি মমতা। তাই শুভেন্দুর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করেন তিনি। জানিয়ে দেন, কলকাতার ভবানীপুর থেকে নয়, শুভেন্দুর খাসতালুক নন্দীগ্রামেই তিনি লড়বেন।

শুভেন্দুও সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। বিজেপি তাঁকে টিকিট দেওয়ায় জমে ওঠে নন্দীগ্রামের ভোট। ভোটের দিনও দেখা গেল, তাই দুই হেভিওয়েটের জমজমাট লড়াই। ১ এপ্রিলের ভোটে একে অন্যকে এপ্রিল ফুল করার প্রতিযোগিতা বহুদিন মনে রাখবেন নন্দীগ্রামের মানুষ।

৬৬ বছরের মমতার বিরুদ্ধে শুভেন্দু ছাড়া আরও এক তারুণ্যের লড়াই দেখতে পেলো নন্দীগ্রাম। মিডিয়ার ফোকাস তেমন একটা না পেলেও বামপন্থি যুবনেত্রী মিনাক্ষী মুখার্জিও কিন্তু মানুষের কাছে পৌঁছে দিলেন নিজের রাজনৈতিক চেতনা। দুই হেভিওয়েটের লড়াইয়ের মাঝে নন্দীগ্রামে এটাও একটা বড় অভিজ্ঞতা।

৩৬ বছরের মিনাক্ষী ভোট যাই পান না কেন, মানুষের মন ছুঁতে পেরেছেন, সাংবাদিকরা নিশ্চিত। বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের মধ্যেও ঠান্ডা মাথায় মানুষের কাছে গিয়ে নিজের দলের কথা প্রচার করেছেন তিনি। বামপন্থি আন্দোলনের এক সময়ের স্বর্গরাজ্য নন্দীগ্রামে নতুন করে লাল পতাকা তোলার কাজটা করতে তিনি ভুল করেননি, নিশ্চিত বিদ্বজ্জনেরা।

ভারতের কৃষক আন্দোলন ছাড়াও বিভিন্ন কারণে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট বিজেপির কাছে অগ্নিপরীক্ষা। বিহারে কোনোরকমভাবে সরকার টিকিয়ে রাখতে পারলেও করোনাকালে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা পাঁচ রাজ্যের চলমান ভোট প্রক্রিয়া।

কেরালা, তামিলনাডু ও পন্ডীচেরীতে বিজেপির জেতার কোনও সম্ভাবনা নেই। জনবিন্যাস ও মহাজোটের কারণে আসামেও বিজেপি শক্ত পরীক্ষার মুখে। তাই পশ্চিমবঙ্গে দলের সরকার গঠনে মরিয়া বিজেপি।
কিন্তু এখানে প্রধান প্রতিপক্ষ মমতা ব্যানার্জি। তাঁকে হারাতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে বিজেপি। দল ভাঙানো তো আছেই, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বলিউডের তারকা মিঠুন চক্রবর্তী থেকে শুরু করে আস্তিনের সব তাসই বের করে ফেলেছিল নন্দীগ্রামের ভোটে।

অন্যদিকে, মমতা একাই একশ প্রমাণে ব্যস্ত ছিলেন। তাই মমতা জিতলে নন্দীগ্রাম থেকেই ভারতীয় রাজনীতির মোড় অন্যদিকে বইতে পারে। হারলে গোটা দেশেই বিজেপির দাপট বাড়বে।
ভোট শেষ। মানুষের মতামত ধরা আছে বৈদ্যুতিক ভোটযন্ত্রে (ইভিএম)। ২ মে গণনা। ততোদিন নন্দীগ্রাম নিয়ে মানুষের কৌতূহল থাকবেই। আপাতত চলবে দু-পক্ষই জেতার বিষয়ে নিজেদের আত্মবিশ্বাস জাহিরের প্রতিযোগিতা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত