Ajker Patrika

যেভাবে জলদস্যুদের কাছ থেকে জাহাজ উদ্ধার করেছিল ভারতীয় নৌবাহিনী

যেভাবে জলদস্যুদের কাছ থেকে জাহাজ উদ্ধার করেছিল ভারতীয় নৌবাহিনী

সোমালিয়ার উপকূলে গত সপ্তাহে জলদস্যুদের হাত থেকে একটি বাণিজ্যিক জাহাজ উদ্ধার করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী। বিশ্লেষকদের মতে, দিল্লির সামরিক বাহিনী যে বিশ্বের সেরা কয়েকটি বিশেষ বাহিনীর সমান সক্ষমতা অর্জন করেছে তারই প্রমাণ এই ঘটনা। সংবাদমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে।

ভারতীয় নৌবাহিনী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে যে, প্রায় দুই দিন ধরে চলা জলদস্যু বিরোধী অভিযানের সময় বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি রুয়েনের ১৭ জন নাবিককে উদ্ধার করেছে নৌবাহিনী। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। কয়েক ডজন জলদস্যুকে ভারতীয় বিশেষ বাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

জলদস্যু বিরোধী এই অভিযানে অংশ নিয়েছিল নৌবাহিনীর একটি ডেস্ট্রয়ার, একটি টহল জাহাজ, ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি সি-১৭ ট্রান্সপোর্টার, একটি নৌ ড্রোন, একটি উদ্ধারকারী ড্রোন এবং একটি পি-৮ নজরদারি যুদ্ধবিমান।

কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স ফেলো জন ব্র্যাডফোর্ড এই অভিযান সম্পর্কে বলেন, অভিযানটির সাফল্য প্রশিক্ষণ, কমান্ড, নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যান্য ক্ষমতার দিক থেকে ভারতীয় নৌবাহিনীকে একটি শীর্ষ শ্রেণির বাহিনী হিসেবে তুলে ধরেছে। যুদ্ধজাহাজ, ড্রোন, বিভিন্ন ধরনের এয়ারক্র্যাফট এবং নৌবাহিনীর কমান্ডোদের সমন্বিত শক্তি ব্যবহার করে যেভাবে ঝুঁকি হ্রাস করা হয়েছিল সেটাই এই অভিযানের সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক।

ইয়েমেন-ভিত্তিক হুতি বিদ্রোহীদের বাণিজ্যিক জাহাজে আক্রমণের কারণে লোহিত সাগরে অস্থিতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক বাহিনীর একজোট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। আর এতে নিকটবর্তী হর্ন অব আফ্রিকাতে সোমালিয়ার জলদস্যুরা অনেকটাই অরক্ষিত হয়ে পড়তে পারে। এতে বিশ্ব বাণিজ্যের কয়েকশ কোটি ডলারের ব্যবসা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিশ্লেষকেরা।

এই অঞ্চলের সবচেয়ে দরিদ্র দেশের মধ্যে আছে ইয়েমেন এবং সোমালিয়া। বছরের পর বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের কারণে দুটি দেশই বিধ্বস্ত। গত বছরের ডিসেম্বরে সোমালিয়ার জলদস্যুরা মাল্টার পতাকাবাহী এবং বুলগেরীয়দের দ্বারা পরিচালিত এমভি রুয়েন নামের বাণিজ্যিক জাহাজটি আটক করেছিল। ২০১৭ সালের পর থেকে সোমালিয়ার উপকূলে এটিই প্রথম সফল ছিনতাইয়ের ঘটনা।

স্প্যানিশ, জাপানি এবং ভারতীয় যুদ্ধজাহাজগুলো অনুসরণ করছিল এমভি রুয়েনকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর ডিসেম্বরের প্রতিবেদন অনুসারে, মাল্টার পতাকাযুক্ত জাহাজটিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সোমালিয়ার আঞ্চলিক জলসীমায়। কিন্তু গত সপ্তাহে গভীর সমুদ্রে জলদস্যুতার উদ্দেশ্যে জাহাজটি নিয়ে সোমালিয়ার জলসীমা ছেড়ে যায় এমভি রুয়েন। তখন ভারতীয় নৌবাহিনী এটিকে আটকানোর জন্য পদক্ষেপ নেয়।

ভারত সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওই এলাকায় কাজ করছিল ডেস্ট্রয়ার আইএনএস কলকাতা। এমভি রুয়েনের পরিচালনায় সশস্ত্র জলদস্যুরা আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে আইএনএস কলকাতা ড্রোন ব্যবহার করেছিল। সেই ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করেছিল এমভি রুয়েনের জলদস্যুরা। তারপর ভারতীয় যুদ্ধজাহাজও আক্রমণের শিকার হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় রুয়েনের ওপর আক্রমণ করে আইএনএস কলকাতা। এতে রুয়েনের স্টিয়ারিং এবং নেভিগেশন নষ্ট হয়ে যায়।

জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ করতে বলেছিল আইএনএস কলকাতা। ভারতের বিমানবাহিনী সামাজিক প্ল্যাটফর্মে বলেছে, জলদস্যুদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে ভারত থেকে ১০ ঘণ্টার ফ্লাইট করে আসেন কমান্ডোরা। এরপর তারা প্যারাস্যুটের সাহায্য নেন। এমভি রুয়েনে প্রবেশ করতে কয়েকটি ভেলাও নামানো হয়েছিল সাগরে। ভারতের এই শক্তি প্রদর্শনের সামনে আর টিকতে পারেনি সোমালিয়ার জলদস্যুরা।

ভারতীয় নৌবাহিনী এরপর এক বিবৃতিতে ঘোষণা দেয় যে, গত ৪০ ঘণ্টা ধরে ভারতীয় নৌবাহিনীর অব্যাহত চাপ এবং পদক্ষেপের কারণে এমভি রুয়েনে থাকা সোমালিয়ার ৩৫ জন জলদস্যুই আত্মসমর্পণ করেছে।

প্রেসিডেন্ট রুমেন রাদেভসহ বুলগেরিয়ার নেতারা এই অভিযানের জন্য ভারত ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে রাদেভ বলেন, ‘অপহরণের শিকার বুলগেরিয়ার জাহাজ রুয়েন এবং এর নাবিকসহ ৭ জন বুলগেরীয় নাগরিককে উদ্ধারের সাহসী পদক্ষেপের জন্য (মোদির) প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।’

মার্কিন নৌবাহিনীর প্রাক্তন ক্যাপ্টেন এবং বিশ্লেষক কার্ল শুস্টার বলেছেন যে, ঘটনাটি ভারতীয় নৌবাহিনীর পেশাদারিত্বকে তুলে ধরেছে। মারকোস নামে পরিচিত দিল্লির মেরিন কমান্ডো বাহিনী যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের নৌবাহিনীর কাছ থেকে অনেক কৌশল শিখেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শুস্টার বলেন, ভারতীয় নৌবাহিনী একটি উচ্চ প্রশিক্ষিত এবং সুশৃঙ্খল পেশাদার বাহিনী। ৮ মাসের প্রশিক্ষণের পর যুক্তরাজ্যের এসএসের অনুকরণে মারকোস গঠন করা হয়েছে। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়াদের মধ্যে মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশই এই বাহিনীতে ঢুকতে পেরেছিল।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতীয় নৌবাহিনী জলদস্যু বিরোধী অভিযানে অভিজ্ঞ। তাদের আছে ২০ বছরেরও বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা। তা ছাড়া, বিশ্বের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক সমুদ্রপথের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন অনেকটাই অস্থিতিশীল। সে ক্ষেত্রে, আবারও ডাকা হতে পারে ভারতীয় নৌবাহিনীকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’ খ্যাত গণেশ উইকে এনকাউন্টারে নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত

ওডিশার কান্ধামাল জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা গণেশ উইকে (৬৯) নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোরে এই অভিযানে গণেশসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ওডিশা পুলিশ। নিহত গণেশ উইকে মাওবাদীদের ‘সেন্ট্রাল কমিটি’র (সিসি) সদস্য এবং ওডিশার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ছিলেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ওডিশায় মাওবাদী বিরোধী অভিযানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এএনও) সঞ্জীব পান্ডা জানান, কান্ধামাল জেলার চাকাপাদা থানা এলাকায় রাম্ভা বন রেঞ্জের কাছে এই এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত দুই দিনে কান্ধামাল জেলায় মোট ছয়জন মাওবাদী নিহত হলেন।

গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। গণেশ উইকে ‘রূপা’, ‘রাজেশ তিওয়ারি’ এবং ‘পাক্কা হনুমন্তু’সহ একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। গণেশ উইকেকে ধরতে তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ রুপি।

তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ের কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার রাতে বেলঘর থানা এলাকার গুম্মা জঙ্গলে প্রথম সংঘর্ষে দুজন মাওবাদী নিহত হন। এরপর আজ সকালে চাকাপাদা এলাকায় দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় ওডিশা পুলিশের এসওজি, সিআরপিএফ এবং বিএসএফের যৌথ বাহিনী। আজকের অভিযানে দুই নারী এবং দুই পুরুষসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। নিহতদের পরনে ইউনিফর্ম ছিল।

এনকাউন্টার স্থল থেকে দুটি ইনসাস রাইফেল এবং একটি পয়েন্ট থ্রি জিরো থ্রি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সফলতাকে ‘নকশালমুক্ত ভারত’ গড়ার পথে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদী সন্ত্রাস নির্মূল করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গণেশ উইকের নিধন ওডিশাকে মাওবাদী মুক্ত করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’

উল্লেখ্য, এ অভিযানের ঠিক দুই দিন আগে মালকানগিরি জেলায় ২২ জন মাওবাদী ওডিশা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। শীর্ষ নেতৃত্বের এ পতন এই অঞ্চলে মাওবাদী সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে ৩৫০০ কিমি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নিজেদের পারমাণবিক সক্ষমতার প্রদর্শন হিসেবে পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে একটি মধ্যপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রটি গত মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে ভারতের পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন আইএনএস আরিঘাত থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। বিশাখাপত্তনম উপকূলের কাছে এই পরীক্ষা চালানো হয়।

এনডিটিভি জানিয়েছে, সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের নৌভিত্তিক পারমাণবিক সক্ষমতাকে বেশ শক্তিশালী করেছে।

কে-৪ সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট ভারতীয় নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এর মাধ্যমে স্থল, আকাশ ও সমুদ্র—এই তিন মাধ্যম থেকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম দেশগুলোর তালিকায় জায়গা করে নেয় ভারত।

অগ্নি-৩ স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে তৈরি কে-৪ বর্তমানে ভারতের সর্বাধিক পাল্লার সমুদ্রভিত্তিক কৌশলগত অস্ত্র। স্থল সংস্করণটিকে সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণের উপযোগী করে পরিবর্তন করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে সাবমেরিনের উৎক্ষেপণ সাইলো থেকে বেরিয়ে পানির ভেতর ভেসে উঠে সমুদ্রপৃষ্ঠে পৌঁছানোর পর রকেট ইঞ্জিন চালু করে আকাশে ছুটে যাওয়ার সক্ষমতা।

এই ক্ষেপণাস্ত্র ২ দশমিক ৫ টন ওজনের পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম এবং ভারতের অরিহন্ত শ্রেণির সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়।

কে-৪ হলো ভারতের পারমাণবিক ত্রিমাত্রিক প্রতিরোধব্যবস্থার সবচেয়ে নীরব অংশ। কারণ, অরিহন্ত শ্রেণির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিনগুলো দীর্ঘ সময় ধরে অচেনা সমুদ্রাঞ্চলে সম্পূর্ণ নীরবে প্রতিরোধ টহল পরিচালনার জন্য তৈরি।

কে-সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর নামের ‘কে’ অক্ষরটি ভারতের সাবেক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির রূপকার এ পি জে আবদুল কালামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাখা হয়। ভারতের সমন্বিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চীনে এক সন্তান নীতির প্রবক্তার মৃত্যু, শ্রদ্ধার চেয়ে সমালোচনাই বেশি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫৬
চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক প্রধান পেং পেইইউন (মাঝে)। ছবি: সংগৃহীত
চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক প্রধান পেং পেইইউন (মাঝে)। ছবি: সংগৃহীত

চীনে বিতর্কিত এক সন্তান নীতির প্রবক্তা পেং পেইইউনের মৃত্যুতে শ্রদ্ধা নিবেদনের বদলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নীতিটি ঘিরে তীব্র সমালোচনা দেখা গেছে। গত রোববার বেইজিংয়ে ৯৬তম জন্মদিনের ঠিক আগমুহূর্তে পেংয়ের মৃত্যুতে চীনাদের প্রতিক্রিয়া অনেকটা নেতিবাচক।

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে পেং পেইইউনকে নারী ও শিশুবিষয়ক কাজে ‘একজন অসাধারণ নেতা’ হিসেবে প্রশংসা করা হয়েছে। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান ছিলেন তিনি।

তবে চীনের জনপ্রিয় মাইক্রো ব্লগিং ওয়েবসাইট ওয়েইবোতে একজন লিখেছেন, ‘ভূমিষ্ঠ হতে না পারা শিশুরা ওপারে নগ্ন দেহে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।’

এনডিটিভি জানিয়েছে, ১৯৮০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চীনে দম্পতিদের কেবল একটি সন্তান নেওয়ার যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা কার্যকর করতে স্থানীয় কর্মকর্তারা অনেক ক্ষেত্রে নারীদের গর্ভপাত ও বন্ধ্যাকরণ করতে বাধ্য করতেন।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় বেইজিং এই এক সন্তান নীতি চালু করেছিল।

এর ফলে দীর্ঘ সময় বিশ্বের সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশ থাকার পর চীনের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শ্লথ হয়ে পড়ে এবং গত বছর টানা তৃতীয়বারের মতো জনসংখ্যা পড়তির দিকে ছিল।

ওয়েইবোতে একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘যদি এই নীতি অন্তত ১০ বছর আগে শেষ করা হতো, তাহলে চীনের জনসংখ্যা আজ এভাবে ধসে পড়ত না!’

গত বছর চীনের জনসংখ্যা কমে ১৩৯ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সামনের বছরগুলোতে এই নিম্নগতি আরও ত্বরান্বিত হবে।

জনসংখ্যার নীতিনির্ধারক হিসেবে পেং জোর দিয়েছিলেন গ্রামীণ এলাকায়। একসময় চীনের গ্রামগুলোতে বড় পরিবার গড়ে তোলা দম্পতিদের প্রধান লক্ষ্য ছিল, যাতে বৃদ্ধ বয়সে সন্তানেরা তাঁদের দেখাশোনা করতে পারে। এ ছাড়া বংশ রক্ষার জন্য ছেলেসন্তানের প্রতি ঝোঁক বেশি থাকায় মেয়েশিশুদের অবহেলা, এমনকি কন্যা ভ্রূণ হত্যার মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটত।

ওয়েইবোতে একজন লিখেছেন, ‘ওই শিশুগুলো যদি জন্ম নিত, তাহলে আজ তাদের বয়স প্রায় ৪০ হতো—জীবনের সেরা সময়।’

২০১০-এর দশকে এসে পেং প্রকাশ্যে তাঁর অবস্থান বদলান এবং বলেন, এক সন্তান নীতি শিথিল করা উচিত। বর্তমানে বেইজিং কমে যাওয়া জন্মহার বাড়াতে শিশু পরিচর্যা ভর্তুকি, দীর্ঘ মাতৃত্বকালীন ছুটি ও করছাড়ের মতো উদ্যোগ নিচ্ছে।

জনসংখ্যা হ্রাস ও বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চীনের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। দেশটিতে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে গেলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কম্বোডিয়ায় বিষ্ণুমূর্তি গুঁড়িয়ে দিল থাই সেনারা, ভারতের তীব্র নিন্দা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৫৫
একটি ব্যাকহো লোডার দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি: স্ক্রিনশট
একটি ব্যাকহো লোডার দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি: স্ক্রিনশট

কম্বোডিয়ায় হিন্দু দেবতার মূর্তি ধ্বংসের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘাতের জেরে থাই সেনাবাহিনী এটি ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই ঘটনাকে ‘অসম্মানজনক’ বলে অভিহিত করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সীমান্ত বিরোধপূর্ণ এলাকায় সম্প্রতি নির্মিত একটি হিন্দু দেবতার মূর্তি ধ্বংসের খবর আমাদের নজরে এসেছে। এই অঞ্চলের মানুষের কাছে হিন্দু ও বৌদ্ধ দেবতারা অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র এবং এটি আমাদের অভিন্ন সভ্যতার ঐতিহ্যের অংশ। এই ধরনের কাজ সারা বিশ্বের অনুসারীদের মনে আঘাত দেয়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি ব্যাকহো লোডার দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কম্বোডিয়ার প্রেহ বিহারের মুখপাত্র লিম চানপানহা জানান, ২০১৪ সালে নির্মিত মূর্তিটি থাইল্যান্ড সীমান্ত থেকে মাত্র ১০০ মিটার ভেতরে কম্বোডিয়ার সীমানায় ছিল। তিনি এই ঘটনাকে প্রাচীন ও পবিত্র স্থাপত্যের ওপর আঘাত হিসেবে নিন্দা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত জুলাই মাস থেকে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি হলেও চলতি মাসে পুনরায় সংঘাত শুরু হয়েছে। নয়াদিল্লি মনে করে, কূটনৈতিক সংলাপের মাধ্যমেই জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পদের বিনাশ রোধ করা সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত