Ajker Patrika

সুইজারল্যান্ডের ‘সবচেয়ে পছন্দের দেশের’ তালিকা থেকে বাদ ভারত, বাড়বে করের বোঝা

আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩: ৫৩
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সবচেয়ে পছন্দেরে দেশের (এমএফএন) তালিকা থেকে ভারতের নাম বাদ দিয়েছে সুইজারল্যান্ড। ভারতের সুপ্রিম কোর্টে নেসলে-সংক্রান্ত একটি মামলার রায়ের পর সুইজারল্যান্ড ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থেকে সরে গিয়ে ডাবল ট্যাক্সেশন এভয়ডেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট (ডিটিএএ) চুক্তির আওতায় ভারতকে ‘সর্বাধিক পছন্দের দেশ’ বা এমএফএন তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, সুইজারল্যান্ডের এই পদক্ষেপ দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। এর ফলে, সুইজারল্যান্ডে কার্যক্রম পরিচালনাকারী ভারতীয় কোম্পানি ও ভারতে সুইস বিনিয়োগে বড় প্রভাব পড়বে।

গত ১১ ডিসেম্বর এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে সুইজারল্যান্ডের অর্থ মন্ত্রণালয় ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ২০২৩ সালে নেসলে-সংক্রান্ত একটি মামলার রায়কে ভারতের এমএফএন মর্যাদা প্রত্যাহারের কারণ হিসেবে তুলে ধরেছিল। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সেই রায়ে বলা হয়েছিল, কোনো দেশ যদি অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বা ওইসিডিতে যোগ না দেয় এবং ভারতের সঙ্গে যদি সেই দেশের চুক্তি থাকে, তবে সেই দেশের ওপর এমএফএন ধারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রযোজ্য হবে না।

ওইসিডি বা অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর সদর দপ্তর প্যারিসে অবস্থিত। এটি তথ্য, বিশ্লেষণ এবং নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে শক্তিশালী, ন্যায়পরায়ণ এবং পরিচ্ছন্ন সমাজ গঠনে সাহায্য করে। এটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড স্থাপন ও সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে নীতিনির্ধারক, অংশীদার এবং নাগরিকদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে।

লিথুয়ানিয়া এবং কলম্বিয়ার সঙ্গে ভারতের কর চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট প্রকারের আয়ের ওপর করহার ওইসিডি দেশগুলোর তুলনায় কম ছিল। পরে এই দুই দেশ ওইসিডিতে যোগ দেয়। ওইসিডির আওতায় এমএফএন ধারার প্রভাব হলো, একটি দেশ তার চুক্তির অংশীদারকে আরও ‘সুবিধাজনক’ কর ব্যবস্থা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

সুইজারল্যান্ড মনে করেছিল, কলম্বিয়া ও লিথুয়ানিয়া ওইসিডিতে যোগ দেওয়ার ফলে ভারত-সুইজারল্যান্ড কর চুক্তির অধীনে ১০ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ লভ্যাংশ কর প্রযোজ্য হবে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায় ভিন্ন নির্দেশনা দেয়। আদালত বলেন, এমএফএন ধারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রযোজ্য নয় এবং আগের কর চুক্তি অগ্রাধিকার পাবে।

সুইস অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে দিল্লি হাইকোর্ট নেসলের মামলায় ডিটিএএ চুক্তির অধীনে এমএফএন ধারা বিবেচনায় এনে অবশিষ্ট কর হারের প্রয়োগের পক্ষে রায় দেয়, যা সুইজারল্যান্ডের ব্যাখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। তবে ২০২৩ সালের ১৯ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায় উল্টে দেয় এবং জানায়, এমএফএন ধারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রযোজ্য নয়। শীর্ষ আদালত রায় দেয় যে, এমএফএন ধারা ‘ইনকাম ট্যাক্স অ্যাক্টের ৯০—ধারা অনুযায়ী ‘বিজ্ঞপ্তির’ অনুপস্থিতিতে সরাসরি প্রযোজ্য নয়। এই রায় নেসলের বিরুদ্ধে যায় এবং সেই সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের প্রত্যাশার বিপরীত ফল বয়ে আনে।

সেই রায়ের পর সুইজারল্যান্ড সম্প্রতি ভারতের এমএফএন মর্যাদা প্রত্যাহার করেছে এবং এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে সরাসরি ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কথা উল্লেখ করেছে। এর মানে হলো, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সুইজারল্যান্ড ভারতীয় করদাতা এবং বিভিন্ন এনটিটির জন্য—যারা সুইস হোল্ডিং করের রিফান্ড বা বিদেশি কর ছাড়ের দাবি করেন, তাদের লভ্যাংশের ওপর বিদ্যমান ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ কর আরোপ করবে।

সুইস ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্ট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আয়কর বিষয়ে দ্বৈত কর নিরসনের জন্য সুইস কনফেডারেশন এবং ভারতের মধ্যে চুক্তির প্রটোকলে এমএফএন ধারা প্রয়োগ স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।’

কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, সুইজারল্যান্ডের এই পদক্ষেপ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রতিক্রিয়া, আবার কেউ কেউ একে পারস্পরিকতার (রিসিপ্রোসিটি) পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। নানজিয়া অ্যান্ডারসেন এমঅ্যান্ডএর ট্যাক্স পার্টনার সন্দীপ ঝুনঝুনওয়ালা সুইজারল্যান্ডের পদক্ষেপকে একতরফা বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, ‘এই স্থগিতাদেশ সুইজারল্যান্ডে কার্যক্রম পরিচালনাকারী ভারতীয় পক্ষগুলোর জন্য করের দায়বদ্ধতা বাড়াতে পারে।’

ঝুনঝুনওয়ালা আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক কর কাঠামোয় পূর্বাভাসযোগ্যতা, সাম্য এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য কর চুক্তির ধারা ব্যাখ্যা ও প্রয়োগে চুক্তিভুক্ত দেশগুলির মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজনীয়।’

একেএম গ্লোবাল ট্যাক্স পার্টনার অমিত মহেশ্বরী বলেন, ‘এমএফএন প্রত্যাহারের পেছনে প্রধান কারণ হলো পারস্পরিকতা, যা উভয় দেশের করদাতাদের সমান এবং ন্যায্য আচরণ নিশ্চিত করে।’ তিনি পিটিআইকে বলেন, ‘২০২১ সালের আগস্টে সুইস কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছিল যে, সুইজারল্যান্ড এবং ভারতের মধ্যে এমএফএন ধারা অনুযায়ী যোগ্য শেয়ার হোল্ডিং থেকে লভ্যাংশের কর হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হবে, যা ৫ জুলাই ২০১৮ থেকে কার্যকর হবে। তবে, ২০২৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী রায় এর বিপরীতে গিয়েছিল।’

অমিত মহেশ্বরী বলেন, ‘এটি সুইজারল্যান্ডে ভারতীয় বিনিয়োগে প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ লভ্যাংশ এখন বেশি হোল্ডিং করের আওতায় পড়বে এবং ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি বা এর পর থেকে অর্জিত আয় সুইজারল্যান্ড এবং ভারতের মধ্যে মূল দ্বৈত কর নিরসন চুক্তি অনুযায়ী কর আরোপণীয় হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত