Ajker Patrika

ডিএনএ বিশ্লেষণে বেরিয়ে এল নেপোলিয়নের সেনাদের মৃত্যুর নতুন রহস্য

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০০: ০৮
চিত্রকর্মে দুর্দশাগ্রস্ত নেপোলিয়নের সেনাবাহিনী। ছবি: সংগৃহীত
চিত্রকর্মে দুর্দশাগ্রস্ত নেপোলিয়নের সেনাবাহিনী। ছবি: সংগৃহীত

১৮১২ সালে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট রাশিয়া আক্রমণের উদ্দেশ্যে অর্ধ লক্ষাধিক সেনা নিয়ে যাত্রা করেন। কিন্তু ছয় মাস পর সেই অভিযানের এমন পরিণতি হয় যে, এটিকে ইউরোপের ইতিহাসের এক ভয়াবহ বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যুদ্ধ, অনাহার, তীব্র শীত ও টাইফাস মহামারির কারণে হাজার হাজার সৈন্য মারা যায়। অবশেষে মাত্র কয়েক হাজার সৈন্য ফ্রান্সে বেঁচে ফিরতে সক্ষম হয়।

তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা নেপোলিয়নের সৈন্যদের দেহাবশেষের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে নতুন তথ্য পেয়েছেন। ২০০১ সালে লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে উদ্ধার হওয়া একটি গণকবর থেকে পাওয়া দাঁতের নমুনা পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, সৈন্যদের মৃত্যু শুধু টাইফাস মহামারিতে হয়নি, বরং আরও অন্তত দুই ধরনের ব্যাকটেরিয়া তখন মারাত্মক ভূমিকা রেখেছিল।

গত শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) ‘কারেন্ট বায়োলজি’ সাময়িকীতে প্রকাশিত ওই গবেষণায় ব্যাকটেরিয়া দুটিকে ‘সালমোনেলা এন্টেরিকা’ ও ‘বোরেলিয়া রিকারেন্টিস’ নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘সালমোনেলা এন্টেরিকা’ প্যারাটাইফয়েড জ্বর ঘটায় এবং ‘বোরেলিয়া রিকারেন্টিস’ রিল্যাপসিং বা পুনরাবৃত্ত জ্বর ঘটায়।

গবেষণার প্রধান লেখক ও বর্তমানে এস্তোনিয়ার টার্টু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রেমি বারবিয়েরি বলেন, আগে মনে করা হতো, টাইফাসই ছিল সৈন্যদের মৃত্যুর একমাত্র কারণ। কিন্তু নতুন ডিএনএ বিশ্লেষণ প্রমাণ করছে, সেখানে একাধিক সংক্রমণ একযোগে কাজ করেছিল।

২০০৬ সালে প্রথমবার টাইফাস ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছিল নেপোলিয়নের সৈন্যদের দাঁতে। তবে তখনকার প্রযুক্তি সীমিত ছিল। এবার গবেষকেরা ব্যবহার করেছেন ‘হাই-থ্রুপুট সিকোয়েন্সিং’ পদ্ধতি, যা একসঙ্গে লাখ লাখ ডিএনএ খণ্ড বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। ফলে দুই শতাব্দী পুরোনো জিনগত উপাদান থেকেও নতুন তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়েছে।

গবেষণায় ১৩টি দাঁতের নমুনা বিশ্লেষণ করা হলেও তাতে টাইফাসের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। গবেষক নিকোলাস রাসকোভান জানান, এটি আগের গবেষণাকে অস্বীকার করছে না, বরং নতুন প্রমাণ দিচ্ছে যে, নেপোলিয়নের সৈন্যদের মধ্যে একাধিক সংক্রামক রোগ ছড়িয়েছিল। হয়তো আরও অনেক অজানা রোগ তখন ছিল, যা এখনো শনাক্ত হয়নি।

বিশেষজ্ঞ সিসিল লুইস বলেন, এই গবেষণা ইতিহাস বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। কারণ, প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণ এখন অতীতের রোগবালাই ও তার বিবর্তন সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিচ্ছে।

প্যারাটাইফয়েড ও রিল্যাপসিং জ্বর পৃথিবীতে এখনো বিরাজমান। তবে এ জ্বরগুলো অতীতের মতো আর প্রাণঘাতী নয়। নেপোলিয়ন নিজে বেঁচে গেলেও তাঁর পরাজিত ও রুগ্‌ণ সেনাবাহিনীই শেষপর্যন্ত তাঁর পতনের পথ তৈরি করে দিয়েছিল।

গবেষকদের মতে, মাত্র এক দশকের মধ্যেই ডিএনএ প্রযুক্তির এই অগ্রগতি ভবিষ্যতে ইতিহাস ও জীববিজ্ঞানের আরও বহু অজানা রহস্য উন্মোচনের সুযোগ এনে দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় বিএনপির প্রার্থীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

উত্তরায় জুলাই রেভেলসের দুই সদস্যকে কুপিয়ে জখম

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: তিন দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...