Ajker Patrika

গাঁজা বৈধ করা এশিয়ার প্রথম দেশ থাইল্যান্ডে চালু হলো নতুন নিয়ম

অনলাইন ডেস্ক
থাইল্যান্ডে ব্যাংককে রাস্তার পাশে এভাবেই অসংখ্য গাঁজা বিক্রির দোকান রয়েছে। ছবি: এএফপি
থাইল্যান্ডে ব্যাংককে রাস্তার পাশে এভাবেই অসংখ্য গাঁজা বিক্রির দোকান রয়েছে। ছবি: এএফপি

এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে ২০২২ সালে গাঁজা বৈধ করে আলোচনায় আসে থাইল্যান্ড। উদ্দেশ্য ছিল চিকিৎসায় ওষধি এই উদ্ভিদটির উপকারিতা কাজে লাগানো ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সৃষ্টি। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টোটা। দেশজুড়ে হাজার হাজার গাঁজা বিক্রির দোকান, ক্যাফে গড়ে উঠেছে। উৎসব আর পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে এক প্রকার ‘সবুজ উন্মাদনা’ ছড়িয়ে পড়েছে। তিন বছর পর তাই দেশটির সরকার সেই অবাধ ব্যবহারে লাগাম দিতে কঠোর নতুন নীতিমালা জারি করেছে।

সিএনএন জানিয়েছে, আজ রোববার (২৯ জুন) থেকে কার্যকর হওয়া নতুন নিয়মে থাইল্যান্ডে কেউ গাঁজা কিনতে চাইলে তাঁকে অবশ্যই থাইল্যান্ড কিংবা নিজ দেশের চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ এটি এখন শুধুমাত্র চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যগত প্রয়োজনে ব্যবহারের অনুমোদন পাচ্ছে।

থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সোমসাক থেপসুতিন জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে গাঁজাকে আবারও মাদকদ্রব্য হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তিনি বলেন, ‘গাঁজা এখন থেকে শুধু চিকিৎসার জন্য অনুমোদিত। এই বিষয়টি সকলের স্পষ্টভাবে বোঝা উচিত।’

থাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন নিয়ম অনুযায়ী—শুধুমাত্র লাইসেন্সধারী দোকানগুলোই এখন প্রেসক্রিপশনধারীদের কাছে গাঁজা বিক্রি করতে পারবেন।

দোকানগুলোকে বিক্রির বিস্তারিত নথিপত্রও রাখতে হবে এবং নিয়মিত পরিদর্শনের মুখে পড়তে হবে। অনলাইন বা ভেন্ডিং মেশিনে গাঁজা বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা হয়েছে।

বলা হয়েছে, থাইল্যান্ড জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ১৮ হাজারের বেশি গাঁজা দোকানকে নতুন নিয়ম মেনে চলতে হবে। তা না হলে, দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। আইন লঙ্ঘন করলে এক বছরের কারাদণ্ড বা ২০ হাজার বাত (৭৫ হাজার টাকা) জরিমানা হতে পারে। তবে আরও কঠোর শাস্তির বিধান রেখে নতুন আইন প্রণয়নের কথাও ভাবছে সরকার।

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের জনপ্রিয় খাও সান রোড বা পাতায়ার মতো পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে গাঁজার দোকানের ছড়াছড়ি। নতুন নীতিমালা প্রণয়নের ফলে এসব স্থানের দৃশ্যপট এখন বদলে যেতে পারে। এমনকি অনেক পর্যটক যারা গাঁজা সেবনের জন্য থাইল্যান্ডে ছুটে আসতেন, তাঁরাও হতাশ হতে পারেন। এখন শুধু নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসার জন্যই ব্যবহারের অনুমতি মিলবে—যেমন, কেমোথেরাপির বমি বমি ভাব, স্নায়ুর ব্যথা বা ড্রাগ-প্রতিরোধী মৃগীরোগ।

কিন্তু কেন এই হঠাৎ পরিবর্তন?

২০১৮ সালেই চিকিৎসার জন্য গাঁজা বৈধ করে থাইল্যান্ড। কিন্তু ২০২২ সালের উদারীকরণ ছিল আরও বিস্তৃত। এর ফলে দেশটিতে গাঁজা চাষ, উৎপাদন ও ব্যবহারে আর কোনো অপরাধ ছিল না। কিন্তু পরিকল্পিত নিয়ন্ত্রণের অভাবে এটি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে ওঠে। বিনা নিয়ন্ত্রণে গড়ে ওঠে অসংখ্য দোকান, বিউটি স্পা থেকে শুরু করে গাঁজাভিত্তিক বিভিন্ন ব্যবসা।

কিন্তু এই দ্রুত বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ে ঝুঁকিও। দেশটির শিশুদের মধ্যে গাঁজার ব্যবহার, গন্ধের কারণে অভিযোগ, আসক্তি এবং পর্যটকদের রাস্তার ধারে ধূমপানের প্রবণতা বেড়ে যায়। ফুকেট দ্বীপে গাঁজা বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট এলাকা নির্ধারণেরও প্রস্তাব উঠেছে।

ছবি: এএফপি
ছবি: এএফপি

গাঁজা বৈধ করার ফলে থাইল্যান্ড থেকে গাঁজা পাচারও বেড়ে গেছে। ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ৮০০-এর বেশি পাচারকারী ধরা পড়ে এবং ৯ মেট্রিক টনের বেশি গাঁজা জব্দ করা হয়। যুক্তরাজ্যের একাধিক তরুণীর এসবে জড়িয়ে পড়ার কিছু ঘটনা আন্তর্জাতিক মনোযোগও আকর্ষণ করেছে।

তবে সরকারের গৃহীত নতুন নীতিমালার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন গাঁজা-অধিকার কর্মীরা। দেশটির চোংবুরি প্রদেশের এক দোকান মালিক বিষয়টিকে ‘আইনের অস্পষ্টতা’ বলে উল্লেখ করেন। অনেকেই বলছেন, এখন প্রেসক্রিপশন জোগাড় করাই হবে নতুন ব্যবসা। ছোট খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আর দুর্নীতির সুযোগ বাড়বে।

‘রাইটিং থাইল্যান্ডস ক্যানাবিস ফিউচার নেটওয়ার্ক’-এর ক্যাটি চোপাকা বলেন, ‘যেসব আইন আগেই ছিল, সেগুলোর বাস্তবায়নই যদি হতো, আজকের এই জটিলতা তৈরি হতো না।’ তাঁর মতে, এখন যেসব দোকান বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে, তাদের অনেকেই বিনা লাইসেন্সে চলছিল—যেটি সরকার আগে প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছে।

থাইল্যান্ডের মন্ত্রী সোমসাক জানিয়েছেন, এই নতুন আইন কোনো স্থায়ী সিদ্ধান্ত নয়। পার্লামেন্টে বিল পাস হতে সময় লাগবে। তবে কোনো দেশে যদি বিনিয়োগ বা ব্যবসা মাদকদ্রব্যের সঙ্গে যুক্ত হয়, তাহলে সেখানে স্পষ্ট আইন থাকা জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চিৎকার শুনে ছুটে আসা স্থানীয়রা ধর্ষণের শিকার নারীকেই মারধর করে

বিমানবন্দরের প্রকল্পে ‘অসম’ চুক্তি, স্বার্থের সংঘাতে জড়িয়েছেন ঢাকায় ইউএই রাষ্ট্রদূত

মন্ত্রীর আত্মীয়তাই ‘যোগ্যতা’

আদানিকে আরও ৩৮৪ মিলিয়ন ডলার দিল বাংলাদেশ, মোট পরিশোধ ১.৫ বিলিয়ন

অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে স্কুলছাত্রীকে দুই বন্ধুর ধর্ষণ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত