গাম অ্যারাবিক! একাশিয়া গাছ থেকে প্রাপ্ত একধরনের প্রাকৃতিক পদার্থ, যা কোকা-কোলা, এমঅ্যান্ডএমের তৈরি মিষ্টি চকলেট, ল’রিয়েলের লিপস্টিক, নেসলের পশুখাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের উপাদান মিশ্রণ স্থিতিস্থাপক ও ঘন করতে ব্যবহৃত হয়। বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পণ্য। সম্প্রতি এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের বাণিজ্য সুদানের গৃহযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।
বিদ্রোহী গোষ্ঠী এই গাম অ্যারাবিকের উৎপাদন অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে এবং পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর জন্য এই পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিতের প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলছে। বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ গাম অ্যারাবিক উৎপাদনকারী দেশ সুদান। গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটি থেকে এই পণ্য সরবরাহ ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
২০২৩ সালের এপ্রিলে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)। এই বাহিনী গত বছর সুদানের প্রধান গাম সংগ্রহ এলাকা কর্দোফান ও দারফুরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই অঞ্চলগুলোতে কাঁচামালটির নিয়ন্ত্রণ এখন একচেটিয়াভাবে সুদানি ব্যবসায়ীদের হাতে। অবশ্য তাদের আরএসএফকে বখরা দিতে হয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, এই গাম প্রায়শই অনানুষ্ঠানিক চ্যানেল ও সীমান্ত বাজারের মাধ্যমে সঠিক সার্টিফিকেশন ছাড়াই পাচার করা হয়।
সংঘাত শুরুর আগে কাঁচা গাম রাজধানী খার্তুমে বাছাই করা হতো এবং এরপর পোর্ট সুদান থেকে সুয়েজখালের মাধ্যমে জাহাজে করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হতো। কিন্তু আরএসএফ মূল উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে পশ্চিম কর্দোফান এবং দক্ষিণ সুদানের সীমান্ত বরাবর চোরাচালান বাজারে বিপুল পরিমাণে গাম অ্যারাবিক দেখা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা স্থানীয় ভূমিমালিকদের কাছ থেকে গাম সংগ্রহ করে এবং মার্কিন ডলারের বিনিময়ে দক্ষিণ সুদানের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে।
আরএসএফ এই পুরো প্রক্রিয়ার ‘সুরক্ষা’ দেওয়ার বিনিময়ে কেবল নগদ অর্থই গ্রহণ করে না, পাশাপাশি সোনা, গবাদিপশু, কৃষি এবং ব্যাংকিংয়ের মতো অন্যান্য লাভজনক উপাদান গ্রহণ করে।
গাম অ্যারাবিকের এই নতুন, অস্পষ্ট বাণিজ্য শিল্পের উৎস এবং ক্রেতাদের মধ্যে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, পাচারকৃত পণ্যটি বিশ্বব্যাপী উপাদান প্রস্তুতকারকদের ক্রয়ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশ করতে পারে।
শিল্প প্রতিনিধিরা উল্লেখ করেছেন, ঐতিহ্যগত সরবরাহ শৃঙ্খল সংঘাতের কারণে বিপর্যস্ত হয়েছে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিশেষ খাদ্য উপাদান সরবরাহকারী ইকো-এগ্রির গ্লোবাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ হার্ভে ক্যানেভেট সুদানে ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতার প্রভাব সম্পর্কে বলেন: ‘আজ, সুদানের গামের সবটাই পাচার করা হয়। কারণ, দেশে কোনো প্রকৃত কর্তৃপক্ষ নেই।’
মূলত আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে থাকা বেশির ভাগ গাম অ্যারাবিক উৎপাদন কোনো কার্যকর সরকারি কর্তৃপক্ষ তদারকি করে না। ফলে ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে চোরাবাজারের আশ্রয় নেন, যেখানে বৈধতা যাচাই করা কঠিন। এই অবস্থায় ক্রেতারা ক্রমশ সতর্ক হয়ে উঠছেন সেডেক্স সার্টিফিকেশন ছাড়া সরবরাহ গ্রহণ করতে। সেডেক্স সার্টিফিকেশন সরবরাহকারীদের টেকসই এবং নৈতিক মানদণ্ড পূরণের মূল নিশ্চয়তা।
কিছু ব্যবসায়ী এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অস্বাভাবিক কম দামে পণ্য সরবরাহ করছেন। এই কমদামি পণ্যের মূল উৎস প্রায়শই চাদ এবং সেনেগালের মতো প্রতিবেশী দেশগুলো। মিসর, দক্ষিণ সুদানের মতো দেশগুলো থেকেও বিক্রি হচ্ছে এই উপাদান। অথচ নিকট অতীতেও গাম অ্যারাবিকের রপ্তানি বাজারে এসব দেশের তেমন কোনো ভূমিকা ছিল না।
চোরাচালান হওয়ার কারণে গাম অ্যারাবিকের দাম যথেষ্ট কমে যাচ্ছে। যেমন—এক হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় এক বিক্রেতা জানান, তিনি প্রতি মেট্রিক টন গাম অ্যারাবিক বিক্রি করতে চান ১ হাজার ৯০০ ডলারে, যেখানে ক্রেতার অনুমান ছিল, প্রতি মেট্রিক টনের দাম হতে পারে ৩ হাজার ডলার। এ ছাড়া, এই বাজার এমনভাবে পরিচালিত হয়, যার ফলে মূল্য নির্ধারণ, সময়সূচি নির্ধারণ এমনকি সরবরাহ রুটের বিষয়েও অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করা হয় এবং সঠিক ডকুমেন্টেশনের অনুপস্থিতি পণ্যের উৎস ট্রেস করা কঠিন করে তোলে।
খার্তুমভিত্তিক ইউনিটি অ্যারাবিক গামের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ হুসেইন সর্জের কথায় এই চোরাচালানের সঙ্গে আরএসএফের সম্পৃক্ততা আরও স্পষ্ট হয়। সর্জে জানান, ডিসেম্বরে সেনেগাল ও চাদের ব্যবসায়ীরা তাঁর কাছে গাম অ্যারাবিক বিক্রি করতে চান। তার আগে আরএসএফ ২০২৩ সালে সর্জের সব গাম সরবরাহ বাজেয়াপ্ত করে। পরে তিনি মিসরে পালিয়ে যান। কম দাম এবং সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্টেশনের অভাবের কারণে সর্জে পণ্য ক্রয় করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।
সর্জে বলেন, ‘পাচারকারীরা আরএসএফের মাধ্যমে গাম অ্যারাবিক পাচার করতে সক্ষম হয়। কারণ, আরএসএফ পুরো উৎপাদন অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে।’
মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে আরএসএফের এক কর্মকর্তা তাঁর গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডের সমর্থনে বলেন, তারা ‘গাম অ্যারাবিকের’ বাণিজ্য সুরক্ষিত করেছে এবং এটি করতে গিয়ে নামমাত্র ‘ফি গ্রহণ’ করেছে। তিনি জানান, আরএসএফের বিরুদ্ধে আনা আইন ভঙ্গের অভিযোগ মূলত সম্মানহানির লক্ষ্যে প্রচারিত।
তবে গাম অ্যারাবিক সংশ্লিষ্ট শিল্প খাতের লোকজন এই পণ্যের ওপর বৈধ কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ না থাকার বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। নেক্সিরা, অ্যালান্ড অ্যান্ড রবার্ট এবং ইনগ্রেডিয়নের মতো বেশ কয়েকটি কোম্পানি সুদান থেকে গাম অ্যারাবিকা না কিনে বিকল্প উৎসের কথা ভাবছেন। নেক্সিরা সুদান ছাড়াও আরও ১০টি দেশ থেকে কেনার প্রচেষ্টা শুরু করেছে। ইনগ্রেডিয়ন সরবরাহ শৃঙ্খলে লেনদেনে বৈধতা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর প্রোটোকল বজায় রাখার চেষ্টা করছে এখনো।
প্রচলিত বাজার ছাড়াও, গাম অ্যারাবিকের অবৈধ বাণিজ্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও ছড়িয়ে পড়েছে। ইসম সিদ্দিক নামে ব্রিটেনে আশ্রয় নেওয়া এক সুদানি জানান, ২০২৩ সালের এপ্রিলে তিনি নমুনা হিসেবে তিন সুটকেস গাম নিয়ে দেশ ছাড়েন। পরে তার খার্তুমে তাঁর গুদামগুলো লুট করে আরএসএফ।
ইসম সিদ্দিক জানান, এক বছর পরে তাঁর ব্র্যান্ডেড গাম একটি অনলাইন ফেসবুক গ্রুপে বিক্রির জন্য দেখা যায়। তিনি জানান, এ থেকে এটি স্পষ্ট যে, আরএসএফ কেবল প্রচলিত বাণিজ্য পথই নয় বরং আধুনিক বিক্রয় চ্যানেলগুলোকেও ব্যবহার করছে ফায়দা তোলার কাজে। এই অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য পদ্ধতি, সীমান্ত পাচার এবং অনলাইন বিক্রি বিশ্বব্যাপী বৈধভাবে গাম অ্যারাবিক কেনা কোম্পানিগুলোর জন্য জটিল চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
সুদানের সংকট বিশ্বব্যাপী গাম অ্যারাবিকের বাজারকে অবৈধ চ্যানেল এবং সন্দেহজনক অনুশীলনের এক গোলকধাঁধায় পরিণত করেছে। আরএসএফের প্রভাব সরবরাহ শৃঙ্খলের প্রতিটি ধাপে থাকায় ক্রেতারা ঝুঁকি গ্রহণ বা বিকল্প উৎস থেকে পণ্য ক্রয়ে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু উৎস কম থাকায় পুরো বিষয়টি এখন আরএসএফের দয়ার ওপর নির্ভর করছে।
আরও খবর পড়ুন:
গাম অ্যারাবিক! একাশিয়া গাছ থেকে প্রাপ্ত একধরনের প্রাকৃতিক পদার্থ, যা কোকা-কোলা, এমঅ্যান্ডএমের তৈরি মিষ্টি চকলেট, ল’রিয়েলের লিপস্টিক, নেসলের পশুখাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের উপাদান মিশ্রণ স্থিতিস্থাপক ও ঘন করতে ব্যবহৃত হয়। বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পণ্য। সম্প্রতি এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের বাণিজ্য সুদানের গৃহযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।
বিদ্রোহী গোষ্ঠী এই গাম অ্যারাবিকের উৎপাদন অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে এবং পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর জন্য এই পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিতের প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলছে। বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ গাম অ্যারাবিক উৎপাদনকারী দেশ সুদান। গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটি থেকে এই পণ্য সরবরাহ ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
২০২৩ সালের এপ্রিলে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)। এই বাহিনী গত বছর সুদানের প্রধান গাম সংগ্রহ এলাকা কর্দোফান ও দারফুরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই অঞ্চলগুলোতে কাঁচামালটির নিয়ন্ত্রণ এখন একচেটিয়াভাবে সুদানি ব্যবসায়ীদের হাতে। অবশ্য তাদের আরএসএফকে বখরা দিতে হয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, এই গাম প্রায়শই অনানুষ্ঠানিক চ্যানেল ও সীমান্ত বাজারের মাধ্যমে সঠিক সার্টিফিকেশন ছাড়াই পাচার করা হয়।
সংঘাত শুরুর আগে কাঁচা গাম রাজধানী খার্তুমে বাছাই করা হতো এবং এরপর পোর্ট সুদান থেকে সুয়েজখালের মাধ্যমে জাহাজে করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হতো। কিন্তু আরএসএফ মূল উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে পশ্চিম কর্দোফান এবং দক্ষিণ সুদানের সীমান্ত বরাবর চোরাচালান বাজারে বিপুল পরিমাণে গাম অ্যারাবিক দেখা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা স্থানীয় ভূমিমালিকদের কাছ থেকে গাম সংগ্রহ করে এবং মার্কিন ডলারের বিনিময়ে দক্ষিণ সুদানের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে।
আরএসএফ এই পুরো প্রক্রিয়ার ‘সুরক্ষা’ দেওয়ার বিনিময়ে কেবল নগদ অর্থই গ্রহণ করে না, পাশাপাশি সোনা, গবাদিপশু, কৃষি এবং ব্যাংকিংয়ের মতো অন্যান্য লাভজনক উপাদান গ্রহণ করে।
গাম অ্যারাবিকের এই নতুন, অস্পষ্ট বাণিজ্য শিল্পের উৎস এবং ক্রেতাদের মধ্যে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, পাচারকৃত পণ্যটি বিশ্বব্যাপী উপাদান প্রস্তুতকারকদের ক্রয়ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশ করতে পারে।
শিল্প প্রতিনিধিরা উল্লেখ করেছেন, ঐতিহ্যগত সরবরাহ শৃঙ্খল সংঘাতের কারণে বিপর্যস্ত হয়েছে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিশেষ খাদ্য উপাদান সরবরাহকারী ইকো-এগ্রির গ্লোবাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ হার্ভে ক্যানেভেট সুদানে ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতার প্রভাব সম্পর্কে বলেন: ‘আজ, সুদানের গামের সবটাই পাচার করা হয়। কারণ, দেশে কোনো প্রকৃত কর্তৃপক্ষ নেই।’
মূলত আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে থাকা বেশির ভাগ গাম অ্যারাবিক উৎপাদন কোনো কার্যকর সরকারি কর্তৃপক্ষ তদারকি করে না। ফলে ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে চোরাবাজারের আশ্রয় নেন, যেখানে বৈধতা যাচাই করা কঠিন। এই অবস্থায় ক্রেতারা ক্রমশ সতর্ক হয়ে উঠছেন সেডেক্স সার্টিফিকেশন ছাড়া সরবরাহ গ্রহণ করতে। সেডেক্স সার্টিফিকেশন সরবরাহকারীদের টেকসই এবং নৈতিক মানদণ্ড পূরণের মূল নিশ্চয়তা।
কিছু ব্যবসায়ী এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অস্বাভাবিক কম দামে পণ্য সরবরাহ করছেন। এই কমদামি পণ্যের মূল উৎস প্রায়শই চাদ এবং সেনেগালের মতো প্রতিবেশী দেশগুলো। মিসর, দক্ষিণ সুদানের মতো দেশগুলো থেকেও বিক্রি হচ্ছে এই উপাদান। অথচ নিকট অতীতেও গাম অ্যারাবিকের রপ্তানি বাজারে এসব দেশের তেমন কোনো ভূমিকা ছিল না।
চোরাচালান হওয়ার কারণে গাম অ্যারাবিকের দাম যথেষ্ট কমে যাচ্ছে। যেমন—এক হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় এক বিক্রেতা জানান, তিনি প্রতি মেট্রিক টন গাম অ্যারাবিক বিক্রি করতে চান ১ হাজার ৯০০ ডলারে, যেখানে ক্রেতার অনুমান ছিল, প্রতি মেট্রিক টনের দাম হতে পারে ৩ হাজার ডলার। এ ছাড়া, এই বাজার এমনভাবে পরিচালিত হয়, যার ফলে মূল্য নির্ধারণ, সময়সূচি নির্ধারণ এমনকি সরবরাহ রুটের বিষয়েও অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করা হয় এবং সঠিক ডকুমেন্টেশনের অনুপস্থিতি পণ্যের উৎস ট্রেস করা কঠিন করে তোলে।
খার্তুমভিত্তিক ইউনিটি অ্যারাবিক গামের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ হুসেইন সর্জের কথায় এই চোরাচালানের সঙ্গে আরএসএফের সম্পৃক্ততা আরও স্পষ্ট হয়। সর্জে জানান, ডিসেম্বরে সেনেগাল ও চাদের ব্যবসায়ীরা তাঁর কাছে গাম অ্যারাবিক বিক্রি করতে চান। তার আগে আরএসএফ ২০২৩ সালে সর্জের সব গাম সরবরাহ বাজেয়াপ্ত করে। পরে তিনি মিসরে পালিয়ে যান। কম দাম এবং সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্টেশনের অভাবের কারণে সর্জে পণ্য ক্রয় করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।
সর্জে বলেন, ‘পাচারকারীরা আরএসএফের মাধ্যমে গাম অ্যারাবিক পাচার করতে সক্ষম হয়। কারণ, আরএসএফ পুরো উৎপাদন অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে।’
মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে আরএসএফের এক কর্মকর্তা তাঁর গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডের সমর্থনে বলেন, তারা ‘গাম অ্যারাবিকের’ বাণিজ্য সুরক্ষিত করেছে এবং এটি করতে গিয়ে নামমাত্র ‘ফি গ্রহণ’ করেছে। তিনি জানান, আরএসএফের বিরুদ্ধে আনা আইন ভঙ্গের অভিযোগ মূলত সম্মানহানির লক্ষ্যে প্রচারিত।
তবে গাম অ্যারাবিক সংশ্লিষ্ট শিল্প খাতের লোকজন এই পণ্যের ওপর বৈধ কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ না থাকার বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। নেক্সিরা, অ্যালান্ড অ্যান্ড রবার্ট এবং ইনগ্রেডিয়নের মতো বেশ কয়েকটি কোম্পানি সুদান থেকে গাম অ্যারাবিকা না কিনে বিকল্প উৎসের কথা ভাবছেন। নেক্সিরা সুদান ছাড়াও আরও ১০টি দেশ থেকে কেনার প্রচেষ্টা শুরু করেছে। ইনগ্রেডিয়ন সরবরাহ শৃঙ্খলে লেনদেনে বৈধতা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর প্রোটোকল বজায় রাখার চেষ্টা করছে এখনো।
প্রচলিত বাজার ছাড়াও, গাম অ্যারাবিকের অবৈধ বাণিজ্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও ছড়িয়ে পড়েছে। ইসম সিদ্দিক নামে ব্রিটেনে আশ্রয় নেওয়া এক সুদানি জানান, ২০২৩ সালের এপ্রিলে তিনি নমুনা হিসেবে তিন সুটকেস গাম নিয়ে দেশ ছাড়েন। পরে তার খার্তুমে তাঁর গুদামগুলো লুট করে আরএসএফ।
ইসম সিদ্দিক জানান, এক বছর পরে তাঁর ব্র্যান্ডেড গাম একটি অনলাইন ফেসবুক গ্রুপে বিক্রির জন্য দেখা যায়। তিনি জানান, এ থেকে এটি স্পষ্ট যে, আরএসএফ কেবল প্রচলিত বাণিজ্য পথই নয় বরং আধুনিক বিক্রয় চ্যানেলগুলোকেও ব্যবহার করছে ফায়দা তোলার কাজে। এই অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য পদ্ধতি, সীমান্ত পাচার এবং অনলাইন বিক্রি বিশ্বব্যাপী বৈধভাবে গাম অ্যারাবিক কেনা কোম্পানিগুলোর জন্য জটিল চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
সুদানের সংকট বিশ্বব্যাপী গাম অ্যারাবিকের বাজারকে অবৈধ চ্যানেল এবং সন্দেহজনক অনুশীলনের এক গোলকধাঁধায় পরিণত করেছে। আরএসএফের প্রভাব সরবরাহ শৃঙ্খলের প্রতিটি ধাপে থাকায় ক্রেতারা ঝুঁকি গ্রহণ বা বিকল্প উৎস থেকে পণ্য ক্রয়ে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু উৎস কম থাকায় পুরো বিষয়টি এখন আরএসএফের দয়ার ওপর নির্ভর করছে।
আরও খবর পড়ুন:
কানাডা ও ইংল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মার্ক কার্নি গত মার্চে কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এর মাধ্যমে তিনি সেই বিরল গোষ্ঠীতে যোগ দেন, যারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান থাকার পর দেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন। কার্নি ছাড়াও আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাবেক গভর্নর নিজ দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়
১ ঘণ্টা আগেনেদারল্যান্ডসের রটারডামে একটি জাদুঘরে আমেরিকান শিল্পী মার্ক রথকোর আঁকা একটি চিত্রকর্ম নষ্ট করেছে এক শিশু। চিত্রকর্মটির বর্তমান মূল্য কয়েকটি কোটা পাউন্ড!
২ ঘণ্টা আগেবিভ্রাটের কারণে ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হয় জনজীবন। স্পেনের মাদ্রিদে শহরজুড়ে বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২০০টি লিফট আটকে পড়ে। আটকে পড়াদের বেশির ভাগই শ্বাসকষ্ট এবং অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, শহরজুড়ে প্রায় ১৬৭টি জরুরি সেবা দিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। বিদ্যুৎ বিভ্রাটে
২ ঘণ্টা আগেকানাডার জাতীয় নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির নেতৃত্বাধীন লিবারেল পার্টি ক্ষমতা ধরে রেখেছে। তবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয়েছে দলটি। এ নিয়ে দলটি টানা চতুর্থবার জিতল। বিপরীতে বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পলিয়েভর হার স্বীকার করে নিয়েছেন।
২ ঘণ্টা আগে