Ajker Patrika

কৃমি থেকে বাঁচবেন কীভাবে

আলমগীর আলম
কৃমি থেকে বাঁচবেন কীভাবে

কৃমি অন্ত্রে বসবাস করে। অতিরিক্ত হলে পায়ুপথে এসে বাসা বাঁধতে থাকে। এতে পায়ুপথে চুলকানি হয়। নানান ওষুধ সেবনে কিছু কমে; কিন্তু শেষ হয় না। শেষ না হওয়ার কারণ এই পরজীবীর ডিমের বাসা অন্ত্রের ত্বকে লেগে থাকে, যা নির্মূল করা কঠিন।

কীভাবে কৃমি আমাদের শরীরে বাসা বাঁধে

  • কৃমির ডিম বা লার্ভামিশ্রিত অপরিষ্কার খাবার বা পানি পান করার মাধ্যমে এগুলো শরীরে ঢুকতে পারে।
  • ভালোভাবে রান্না না করা মাংস, মাছ বা শাকসবজির মাধ্যমেও কৃমি ঢুকতে পারে।
  • কৃমিতে আক্রান্ত ব্যক্তির মলমূত্রের মাধ্যমে এর ডিম মাটিতে মেশে। এরপর সেই মাটি থেকে ডিম বা লার্ভা মানুষের হাত বা খাবারের মাধ্যমে মুখে ঢোকে।
  • কিছু কৃমির লার্ভা যেমন হুকওয়ার্ম, সরাসরি ত্বকের মাধ্যমে শরীরে ঢুকতে পারে, বিশেষ করে খালি পায়ে হাঁটলে।
  • কৃমির ডিম বাতাসে মিশে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে ঢুকতে পারে।
  • মাছি বা অন্য পোকামাকড় খাবারের ওপর বসলে কৃমির ডিম খাবারের সঙ্গে মিশে শরীরে চলে যেতে পারে।

কৃমি মানবদেহে কী ক্ষতি করে

  • কৃমি অন্ত্রে বসবাস করে। ফলে আক্রান্তরা প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়। এর কারণে অপুষ্টি দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এটি বেশি ক্ষতিকর।
  • কিছু কৃমি যেমন হুকওয়ার্ম, অন্ত্রের প্রাচীর থেকে রক্ত শোষণ করে এবং আয়রন ও প্রোটিনের ঘাটতি তৈরি করে। এর দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ রক্তশূন্যতার কারণ হতে পারে, যা দুর্বলতা ও ক্লান্তি সৃষ্টি করে।
  • প্রোটোজোয়া অন্ত্রের ভিলাই ক্ষতিগ্রস্ত করে বলে শর্করা ও ফ্যাট শোষণে বাধা দেয়।
  • কৃমির কারণে পেটে ব্যথা, গ্যাস ও হজমের সমস্যা হতে পারে।
  • পরজীবীর মেটাবোলাইট (বর্জ্য) ও সংযুক্তি অঙ্গ অন্ত্রের মিউকোসায় প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং কলাজীবী এনজাইম নিঃসরণ করে। ফলে

অন্ত্রে আলসার ও রক্তমিশ্রিত ডায়রিয়া হয়।

  • অতিরিক্ত কৃমি জমা হলে অন্ত্রের পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা গুরুতর অবস্থা।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে কৃমির সংক্রমণ শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া এটি পড়ালেখায় অমনোযোগিতা ও দুর্বল স্মৃতিশক্তির কারণ হতে পারে।
  • কৃমির কারণে শরীরে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া ও ত্বকে চুলকানি দেখা দিতে পারে।
  • কিছু কিছু কৃমি শরীরের অন্যান্য অংশে, যেমন যকৃৎ কিংবা মস্তিষ্কে ছড়িয়ে গিয়ে গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

পরজীবী বাড়ার জন্য দায়ী খাবার

  • পরজীবীরা অ্যানেরোবিক গ্লাইকোলাইসিসের মাধ্যমে শক্তি উৎপাদন করে। চিনি তাদের মেটাবলিজমের জন্য আদর্শ, যা ছত্রাক গ্লুকোজের উপস্থিতিতে দ্রুত বংশ বাড়ায়।
  • গরুর টেপওয়ার্ম, যা গরুর মাংস থেকে আসে এবং মাছের টেপওয়ার্ম, যা মাছ থেকে আসে। এর লার্ভা কাঁচা অবস্থায় সিস্ট আকারে থাকে এবং এটি রান্নার তাপে মারা যায় না।
  • দূষিত খাবার ও ফাস্ট ফুড খাওয়ার মাধ্যমে মানুষ সংক্রমিত হয়। কারণ, এই খাবারগুলোর প্রস্তুত বা সংরক্ষণের সময় অপরিশোধিত পানি ব্যবহৃত হয়, যা রোগজীবাণু ছড়ায়।

পরজীবী নির্মূল করার উপায়

রসুন: অ্যালিসিন নামক সালফার যৌগ পরজীবীর কোষের লিপিড মেমব্রেন ভেঙে দেয়, এনজাইম অ্যাকটিভিটি বাধাগ্রস্ত করে। প্রতিদিন রাতে এক কোষ কাঁচা রসুন খান।

কুমড়ার বীজ: বিকেলে এক মুঠ কুমড়ার বীজ খেতে পারেন।

পেঁপের বীজ: পাপাইন প্রোটিয়োলাইটিক এনজাইম পরজীবীর কাইটিনযুক্ত এক্সোস্কেলেটন ভেঙে দেয়। এটি কৃমির ডিম ধ্বংস করে দেয়। রাতে এক চামচ পেঁপের বীজের গুঁড়া চায়ের মতো করে খান।

প্রোবায়োটিক দই, কেফির: অন্ত্রের পিএইচ কমিয়ে অ্যাসিডিক পরিবেশ তৈরি করে। এতে পরজীবীর বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যায়। দুপুরের খাবার খাওয়ার পর এক বাটি টক দই খান।

হলুদ: কারকুমিন প্রদাহবিরোধী ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি লেশম্যানিয়া এবং প্লাজমোডিয়ামের বৃদ্ধি রোধ করে। সকালে নাশতার আগে এক কাপ পানিতে আধা চামচ বিশুদ্ধ হলুদগুঁড়া মিশিয়ে খান।

নতুন গবেষণা: নিমপাতা ও বারবেরিন পরজীবী চিকিৎসায় ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সফল হয়েছে।

পরজীবীর জীবনচক্র, হোস্টের শরীরে তাদের প্রভাব, খাদ্য এবং ওষুধের মোলিকুলার মেকানিজম বোঝা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি। প্রাকৃতিক উপাদান এবং আধুনিক চিকিৎসার সমন্বয় করাটাই হলো সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে স্টুল টেস্ট এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি। এতে স্থায়ীভাবে মুক্তি পাবেন।

পরামর্শ দিয়েছেন: খাদ্যপথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত