Ajker Patrika

বছরে আক্রান্ত হচ্ছেন ১৩ হাজার নারী

আজাদুল আদনান, ঢাকা
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২১, ১৩: ০০
বছরে আক্রান্ত হচ্ছেন ১৩ হাজার নারী

শুরুতে ফোঁড়া ভেবে নেননি চিকিৎসা। স্তনে হওয়া টিউমার এখন অপারেশন করতে গিয়ে রোগীকে বাঁচানো নিয়ে শঙ্কায় চিকিৎসকেরা। বর্তমানে রাজধানীর ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বারান্দায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ৩০ বছর বয়সী সালমা। দীর্ঘ ৯ মাস মরণব্যাধি স্তন ক্যানসারে কষ্ট পাচ্ছেন ঝিনাইদহের এই নারী।

সালমা বলেন, ‘শনাক্ত হলে প্রথমে জেলা শহরে অপারেশন করাই। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখন ঘা হয়েছে। দিনদিন বড় হচ্ছে। প্রতি মাসে কেমোথেরাপি, ওষুধসহ ১০ হাজারের বেশি টাকা লাগছে। ডাক্তাররা বলেছেন অনেক সময় লাগবে।’

শুধু সালমা আক্তার নন, তাঁর মতো অনেক নারী অসচেতনতার অভাবে স্তন ক্যানসারে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। আর এর সঙ্গে আছে চিকিৎসার অপ্রতুলতা। বিশেষ করে  গ্রামের নারীরা এই অবস্থার শিকার। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চিকিৎসক ডা. উম্মে হুমায়রা কানেতা বলেন, ‘ক্যানসারের কথা শুনলেই অনেকে আঁতকে ওঠেন। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই জানেন না এটি প্রতিরোধযোগ্য। সচেতনতা না থাকায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রাথমিকেই যদি চিহ্নিত করা যায়, তবে প্রায় ৫০ ভাগই নিরাময় সম্ভব।’

দেশে চারটি বিশেষায়িত হাসপাতাল, কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ও কিছু সংস্থা ক্যানসারের চিকিৎসা দিয়ে থাকে। তবে রোগীর তুলনায় সক্ষমতা অনেক কম থাকায় সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেয়েও প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে।

ক্যানসার চিকিৎসায় দেশের প্রধান স্বাস্থ্যকেন্দ্র রাজধানীর মহাখালীর এই হাসপাতালে প্রতিবছর মোট রোগীর ৩-৪ শতাংশ সেবা নিতে আসেন। প্রতিদিন আউটডোরে ২ হাজারের মতো রোগী সেবা নেন।

কিন্তু চিকিৎসক ও শয্যার সংকট অনেক বেশি। হাসপাতালটিতে স্তন ক্যানসারের জন্য ১০০ শয্যা থাকলেও দৈনিক কেমো দেওয়া হয় ২৫০ থেকে ৩০০ পর্যন্ত। শুধু সেপ্টেম্বরেই দেওয়া হয়েছে ৭ হাজার ৪২টি। এ থেকে স্পষ্ট হয়, দেশে কী হারে স্তন ক্যানসারের রোগী বাড়ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি আটজনে একজন নারী স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বহন করছেন। প্রতিবছর ১৫ লাখের বেশি নারী স্তন ক্যানসারের শিকার হন। মারা যান প্রতি লাখে ১৫ জন।

অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসারের (আইএআরসি) হিসাবমতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৩ হাজারের বেশি নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। মারা যান ৬ হাজার ৭৮৩ জন। শুধু নারী নন, পুরুষও আছেন স্তন ক্যানসারের তালিকায়। তবে নারীদের ঝুঁকি অনেক বেশি।

ক্যানসার বিশেষজ্ঞ হাবিবুর রহমান তালুকদার রাসকিন বলছেন, রোগী তো বাড়ছেই। আগে মানুষ এড়িয়ে যেত, এখন কিছুটা কমেছে। বিশেষ করে শহরের নারীরা সচেতন হয়েছেন। কিন্তু প্রান্তিক এলাকার মানুষ এখনো আগের মতোই রয়েছে। পাশাপাশি চিকিৎসা গ্রাম পর্যায়ে না পৌঁছানো সবচেয়ে বড় সংকট।

গোটা বিশ্বে অক্টোবর মাস স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এবারও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হবে। উদ্দেশ্য একটাই—মানুষকে সচেতন করা।

স্তন ক্যানসার এখন গোটা পৃথিবীর জন্য ঝুঁকি উল্লেখ করে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী মোশতাক হোসেন বলেন, ‘স্তন ক্যানসার কীভাবে নির্মূল করা যায়, সে চেষ্টাই আমাদের লক্ষ্য। এই চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি। ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। কিছুদিন পরপর দেখতে হয় ফিরে এসেছে কি না। এমনকি পাঁচ বছর যদি দেখা যায় নেই, তখন তাঁকে মুক্ত হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। তারপরও তিনি যত দিন বাঁচবেন, তাঁকে পরীক্ষা করাতে হবে।’ দেশে এই চিকিৎসায় সক্ষমতার ঘাটতি আছে। সারা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা যত সম্প্রসারিত হবে, ততই এ চাপ কমবে। এ জন্য প্রতিটি বিভাগে আরও ৮টি ক্যানসার হাসপাতাল হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বৈপ্লবিক পরিবর্তন করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে

শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনাল চালুতে বাধা রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে টানাপোড়েন

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নিয়ম ভঙ্গের জন্য ট্রান্স নারী শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার, জানতে চান ১৬২ নাগরিক

ব্যাংকের চাকরি যায় জাল সনদে, একই নথি দিয়ে বাগালেন স্কুল সভাপতির পদ

ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে এবি ব্যাংক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত