Ajker Patrika

ড. ইউনূসের ছবিসংবলিত মার্কিন মুদ্রার ছবি ভাইরাল! সত্যি জানুন

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৮: ২২
ড. ইউনূসের ছবিসংবলিত মার্কিন মুদ্রার ছবি ভাইরাল! সত্যি জানুন

গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছবিসংবলিত মুদ্রা প্রচলন করেছে যুক্তরাষ্ট্র—এমন একটি তথ্য ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ, পেজ ও অ্যাকাউন্টে প্রচার হচ্ছে। তাতে ড. ইউনূসের ছবিসংবলিত একটি ধাতব বস্তুর ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত লন্ডনপ্রবাসী বিএনপি নেতা তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের ছবি ও নাম ব্যবহার করে তৈরি কটি গ্রুপ থেকে এটি বেশি ছড়িয়েছে। প্রায় চার লাখ সদস্যের এই গ্রুপে গতকাল বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ৪৭ মিনিটে এম মামুন নামের অ্যাকাউন্ট থেকে এমন পোস্ট দেওয়া হয়। তাতে লেখা, ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যারের ছবিসংবলিত মুদ্রা প্রচলন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমি গর্ব বোধ করি। আপনি করতে না পারলে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের কেউ কি না—এ বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে।’

পোস্টটি আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) বেলা ১টা পর্যন্ত ৫০০ বারের বেশি শেয়ার হয়েছে। এতে রিঅ্যাকশন পড়েছে তিন হাজার।যুক্তরাষ্ট্র ড. ইউনূসের ছবিসংবলিত মুদ্রা প্রচলন করেছে দাবিতে প্রচারিত পোস্ট। ছবি: ফেসবুক ড. ইউনূসের ছবিসংবলিত মুদ্রা সদৃশ একটি বস্তুর ছবিটি রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের টাঁকশালের সরকারি ওয়েবসাইট ইউনাইটেড স্টেট মিন্টের ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া যায়। এতে ছবিটি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ড. ইউনূসের ছবিসংবলিত মুদ্রা সদৃশ বস্তুটি একটি ব্রোঞ্জ পদক। এটি বৈশ্বিক দারিদ্র্য বিমোচনে অসামান্য অবদানের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেওয়া কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদকের প্রতিলিপি। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর পদকটির অনুমোদন দেয়। পরে ২০১৩ সালের ১৭ এপ্রিল তাঁকে এটি প্রদান করা হয়।বৈশ্বিক দারিদ্র্য বিমোচনে অসামান্য অবদানের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেওয়া কংগ্রেশনাল স্বর্ণ পদকের প্রতিলিপি। ছবি: যুক্তরাষ্ট্রের টাঁকশাল অর্থাৎ এটি কোনো মুদ্রা নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেওয়া একটি ব্রোঞ্জ পদক; যা কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদকের প্রতিলিপি। তবে কেবল ড. ইউনূসই নয়, আরও বেশ কিছু খ্যাতিমান ব্যক্তিকে কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদকের প্রতিলিপি দেওয়ার তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় সাইটটিতে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের বেসবল খেলোয়াড় জ্যাকি রবিনসনকে দেশটির নাগরিক অধিকারের অগ্রগতিতে অবদান রাখায় ২০০৫ সালে কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদকের প্রতিলিপি হিসেবে ব্রোঞ্জ পদক দেওয়া হয়। যেটি ২০০৩ সালের ২৯ অক্টোবর কংগ্রেস অনুমোদন দেয়। একইভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অবদানের জন্য ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নাবিকদের (মার্চেন্ট মেরিনার্স) জন্যও কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদকের প্রতিলিপি হিসেবে অনুরূপ ব্রোঞ্জ পদক ইস্যু করা হয়। 

যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের একটি পাবলিক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিসের কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদক-সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর থেকে জানা যায়, কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদক (সিজিএমস) কংগ্রেসের অনুমোদিত একটি অ্যাওয়ার্ড। দেশপ্রেম, কোনো নির্দিষ্ট খাতে অসামান্য অবদানের মতো বিষয়গুলোকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং বিশিষ্টজনদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে কংগ্রেস এই অ্যাওয়ার্ড দিয়ে থাকে। এটি দেশটির সর্বোচ্চ পদকগুলোর একটি। কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদক সর্বপ্রথম দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনকে। 

কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিসের কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদক-সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর থেকে আরও জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস দেশটির টাঁকশালকে কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদকের প্রতিলিপি তৈরি এবং সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রির অনুমোদন দেয়। টাঁকশাল কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদকের অনুরূপ ব্রোঞ্জ পদক তৈরি করে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করে থাকে। 

ওপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট, ফেসবুকে যুক্তরাষ্ট্রের ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছবিসংবলিত মুদ্রা প্রচলন করার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। পোস্টগুলোতে যে ছবি প্রচার করা হচ্ছে, সেটি দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখার জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদকের ব্রোঞ্জের তৈরি প্রতিলিপি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত