Ajker Patrika

মানিকগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল: তত্ত্বাবধায়ক ও নার্সের দ্বন্দ্বে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত

মঞ্জুর রহমান, মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল: তত্ত্বাবধায়ক ও নার্সের দ্বন্দ্বে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত

মানিকগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন এবং সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহীনুর রহমান শাহীনের দ্বন্দ্বের কারণে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এই দুই কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে হাতাহাতির ঘটনার পর জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে দুজনের পক্ষে দুই রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা পাল্টাপাল্টি অপসারণ ও শাস্তির দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন। 

এ ঘটনায় হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স এবং সেবা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঝামেলা এড়াতে গত সাত দিনে অনেক নার্স এবং চিকিৎসক নানা অজুহাতে কাজে আসেননি। অনুপস্থিত এসব নার্স এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও তাঁরা এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। 

এক রোগীর স্বজন সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের আওলাদ হোসেন বলেন, ‘আমার বোনের স্বামী সার্জারি বিভাগে ভর্তি আছে। এমনিতে সার্জারির চিকিৎসককে নিয়মিত পাওয়া যায় না। এর মধ্যে আবার শুনেছি নার্স এবং চিকিৎসকদের কী যেন হয়েছে। এখন ডাক্তারদের পাশাপাশি নার্সদের ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না।’ 

গাইনি বিভাগে ভর্তি থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী বলেন, ‘গত চার দিন হাসপাতালে ভর্তি আছি। ঠিকমতো চিকিৎসা পাই না। নার্স যারা দায়িত্ব পালন করে, তাদের মুখের দিকে তাকালে কথা বলতে ভয় লাগে। এর মধ্যে আবার শুনেছি, সেবা রেখে দায়িত্বরত নার্সরা কার বিরুদ্ধে যেন মানববন্ধন করতে গেছে। চিকিৎসক-নার্সদের এমন অমানবিক কার্যক্রম দেখার মতো কেউ যেন নেই।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমি এই হাসপাতালে যোগদান করার পর থেকে দেখতেছি, এখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তা, নার্স এবং কর্মচারী কারও মধ্যে কোনো চেইন অব কমান্ড নেই। কেউ কাউকে গোনেন না।’ 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারি সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহীনুর রহমান শাহীন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বদলি হয়ে আসেন। শাহীন বিএনপি মতাদর্শের অভিযোগ করে তাঁর যোগদানে নানা অজুহাত দেখাতে থাকেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন। একপর্যায়ে হাসপাতালের আরেক প্রভাবশালী সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং তত্ত্বাবধায়কের বিশ্বস্ত জান্নাত আরা শিমুলের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ককে ম্যানেজ করে যোগদান করেন শাহীন। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক এবং তাঁর অনুসারী নার্সদের নানা অনিয়মের বিষয় নিয়ে শাহীনের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়কের বিরোধ বাড়তে থাকে। 

এর জেরে ২০ ফেব্রুয়ারি শাহীনকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে গালাগাল করেন তত্ত্বাবধায়ক বাহাউদ্দিন। প্রতিবাদ জানালে একপর্যায়ে তত্ত্বাবধায়ক তাঁর কোমরের বেল্ট খুলে শাহীনকে পেটাতে থাকেন। এ সময় দুজনের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। তখন তত্ত্বাবধায়ক তাঁর অনুসারী সিনিয়র স্টাফ নার্স সাইফুল ইসলাম এবং আউটসোর্সিংয়ের কর্মচারীদের ফোনে ডেকে এনে শাহীনকে মেরে লাশ গুম করার হুমকি দেন। খবর পেয়ে সদর থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষকে শান্ত করে। 

পরে শাহীন তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। একই দিন তত্ত্বাবধায়কের পক্ষে হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হাবু মিয়া নার্স শাহীনের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দেন। 

এ ঘটনার সাত দিন পর গত মঙ্গলবার সকালে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন এবং তাঁর অনুসারী সাইফুল ইসলামের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে নার্স শাহীনের গ্রামবাসীর ব্যানারে মানববন্ধন হয়। এরপর দুপুরে আবার শাহীনের অপসারণের দাবিতে হাসপাতাল চত্বরে মানববন্ধন করেন তত্ত্বাবধায়কের অনুসারী নার্স ও আউটসোর্সিংয়ের কিছু কর্মচারী। 

এ বিষয়ে সিনিয়র নার্স শাহীনুর রহমান বলেন, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের অনুসারী কিছু নার্স আগত রোগীদের ক্লিনিকে পাঠিয়ে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ করলে সংশ্লিষ্টরা সবাই তাঁর প্রতি ক্ষিপ্ত ছিলেন। এর জেরে তত্ত্বাবধায়ক তাঁর কক্ষে ডেকে নিয়ে লোকজন দিয়ে তাঁকে মারধর করেন। 

শাহীনুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতালের ডিউটি রোস্টার অনুযায়ী আমি হাসপাতালের ডিউটিতে গিয়েছিলাম। তিনি (তত্ত্বাবধায়ক) আমাকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকতে বলেন। আমি তাঁর অধস্তন হলেও আমি নবম গ্রেডের একজন স্টাফ। তিনি আমাকে সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা দিতে পারেন কি না, এটা আমার প্রশ্ন।’ আজ বৃহস্পতিবার তত্ত্বাবধায়ক বাহাউদ্দিনের বিরুদ্ধে হাসপাতালের আচরণবিধি এবং শৃঙ্খলাবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেবেন বলেও জানান নার্স শাহীন। 

তবে শাহীনের অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের নেতা পরিচয়দানকারী নার্স শাহীনুর হাসপাতালে আসা রোগীদের ক্লিনিকে পাঠিয়ে কমিশন (টাকা) গ্রহণ, হাসপাতালে চাকরি দেওয়ার কথা বলে অর্থ গ্রহণসহ সহকর্মীদের শারীরিক নির্যাতন করে আসছিলেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে তাঁর কক্ষে শাহীনকে ডেকে নেওয়ার পর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও ভয়ভীতি দেখান। আচরণবিধি এবং শৃঙ্খলাবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে শাহীনের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর বরাবর আলাদা দুটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’ 

ডিউটিরত অবস্থায় রোগীদের চিকিৎসাসেবা বন্ধ রেখে হাসপাতালের কিছু নার্স এবং আউটসোর্সিংয়ের কর্মচারীরা তাঁর পক্ষে মানববন্ধনে নামতে পারেন কি না, জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, ‘আমি কাউকে আমার পক্ষে মানববন্ধন করতে বলিনি। তা ছাড়া কারা কার পক্ষে কী করেছে, তা জানা নেই।’ 

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাবিল হোসেন বলেন, এসব ঘটনায় উভয় পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে। অভিযোগ দুটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত