রজত কান্তি রায়, ঢাকা
‘… আ-মরি বাংলা ভাষা!’
–অতুলপ্রসাদ সেন
আমাদের নদীর নাম ময়ূরাক্ষী, গোমতী, কপোতাক্ষ, গড়াই, যমুনা, সোনাভরি, দুধকুমার, জিঞ্জিরাম, নীলকমল, খাঁরুভাঁজ, ধানসিঁড়ি, চিত্রা, ডাহুক, রজত রেখা। সেই সব নদীর পাড়ে পাড়ে আমাদের গাঢ় সবুজ গ্রাম। গ্রামগুলোর নাম সুবর্ণখুলি, ফুলসরা, নীলক্ষা, নীলখী, শহরমূল, বকুলতলা, পলাশপুর। আমাদের বাড়ির নাম দামিনী দালান, পদ্মপাতা, কোমল গান্ধার, আরণ্যক, নীল নিশীথ, ঘুমের দেশে, সূর্য দিঘল বাড়ি, সাঁঝের মায়া, বসন্তবিলাস, ছায়াবীথি, চম্পক, মায়ের আঁচল।
ঢাকা শহরে যাঁরা বসবাস করেন তাঁরা জানেন, এ শহরে আছে শান্তিনগর, আছে লালমাটিয়া, আছে ধানমন্ডি, আছে বাসাবো, গোলাপবাগ, চামেলিবাগ, সবুজবাগ, গোপীবাগ। এ শহরে চলাচল করে মধুমতি, তুরাগ, বসুন্ধরা, তরঙ্গ, বিহঙ্গ, বাহন, মৌমিতা, ইতিহাস, বৈশাখী, প্রজাপতি নামের বাস। একসময় চলাচল করত ফাল্গুন নামের একটি বাস। খুবই বিখ্যাত ছিল সেটি। প্রতি পয়লা ফাল্গুনে সে বাসের ছবি দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
এই যে শব্দ, এই যে মাধুর্য—এগুলো অনুরণন তোলে মস্তিষ্কের নিউরনে। চিত্রকল্প তৈরি করে, বেঁচে থাকার রসদ জোগায়। এ সবকিছু মিলেই আমাদের ভাষা, বাংলা ভাষা। শুধু বাংলা ভাষাই কি? এ দেশে মণিপুরী, চাকমা, সাঁওতাল, গারো, ওঁরাও ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর যে ভাষা আছে, সেগুলোও কি কম মাধুর্যময়? রাজশাহীতে ওঁরাও ভাষার একটি শব্দ শিখেছিলাম, ধুমকুড়িয়া। এর অর্থ আড্ডাঘর। আমাদের কাছারি ঘর, নাকারি ঘর কিংবা ড্রয়িং রুমের যে ব্যঞ্জনা, ধুমকুড়িয়ার ব্যঞ্জনা তার চেয়ে একেবারে ভিন্ন। একটা আড্ডা আড্ডা ব্যাপার তো আছেই, সেই সূত্রে শব্দটিতেই গেঁথে আছে প্রাণ আর মানুষ। ভাষা এমনই। মিলিয়ে দেয় প্রাণে আর মানুষে।
আমাদের কলার নাম চম্পা, সাগর, মালভোগ, আমাদের আমের নাম হাঁড়িভাঙা, রাণিপছন্দ, হিমসাগর; আমাদের ধানের নাম কাজললতা, কাটারিভোগ, মোহনভোগ, ইলিশ পেটি, লক্ষ্মীজটা, ঝুমুর, হিজল দিঘি, লক্ষ্মীবিলাস, হনুমানজটা, ঝিংগাশাইল, লালঢেপা, যশোয়া, চিনিসাগর, সোনামুখী, সূর্যমুখী, কলসকাটি, দাদখানি, রাঁধুনিপাগল, মধুশাইল, ফুলমালা, মধুমালতী, বাবইঝাঁক, জলকুমারী। এসব ধান আমাদের উদরপূর্তি করে। আমাদের তৃপ্ত করে। তখন আমরা পাখিদের দিকে তাকাই। তাদের নাম চড়ুই, বাবুই, মুনিয়া, টিয়া, দোয়েল, শালিক, শ্যামা, ফিঙে, কাকাতুয়া, বক। এরা খায় বটের ফল। আর বট আমাদের মহিরুহ। বুড়ো বট আমাদের প্রগাঢ় চিত্রকল্প তৈরি করে। আমাদের ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বছরের পর বছর। ঝুরি নামিয়ে জানান দেয়, আমি তোমাদের প্রপিতামহ। আমাদের সুপার হিরোর নাম ডালিম কুমার, আমাদের রাজকুমারীর নাম কঙ্কাবতী। এই যুগলবন্দীতে আমাদের জীবন আটকে আছে নক্ষত্রদের সঙ্গে। চাঁদের সঙ্গে। এই চাঁদের নিচে খোলা প্রান্তরে বসে গানের আসর। সেখানে হাজির থাকে মহুয়া, মলুয়া, চন্দ্রাবতীরা। চাঁদের রুপালি আলোয় ভেসে যায় তাদের রূপ আর গুণের অগুনতি শব্দ।
ধিয়ান গিরি নামটি যখন শুনি, একটি ঘোরলাগা আমেজ কাজ করেছিল ভেতরে-ভেতরে। ধিয়ান গিরি—এক অদ্ভুত চিত্রকল্পময় নাম। যেমন সাধু নামের মানুষদের দেখলে মন ভালো হয়ে যায় আমার। কিংবা কনক। গাত্রবর্ণ যেমনই হোক, কেন যেন মনে হয় মানুষটি উজ্জ্বল ভেতরে বাইরে। প্রতিদিন খেতে বসলে ঝোলের কথা মনে পড়ে। ঝোল ছাড়া কি চলে? এই ঝোল শব্দটি ভেঙে কত শব্দ তৈরি হলো—ঝোল ঝোল, ঝাল ঝোল, ঝোলঝোলা, গাঢ় ঝোল। এসব শব্দ কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই মনে, মগজে বসে যায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। ‘খইয়ের ধান ছড়াতেছে শিশু’ যখন শুনি তখন অঘ্রান সন্ধ্যার কথাই মনে পড়ে, বর্ষার নয়।
এসব শব্দ শুনতে শুনতে সোনাভরি নদীর তীরে আরণ্যক নামের বাড়িটিতে শুয়ে-বসে নদীর মাছের ঝোল দিয়ে দাদখানি চালের ভাত খেয়ে একটা জীবন পার করে দেওয়া যায় অনায়াসে।
আফসোস হলো, এসব শব্দ কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে। শ্যামল, সহজ আর প্রবহমান ভাষার দেহে কোথায় যেন ফাটলের কালো রেখা দেখা যায়। সে রেখা ব্যাকুল করে আমাদের।
আমাদের শব্দেরা বহমান থাক। আমাদের ভাষা ব্রহ্মপুত্রের মতো দুই কূল ভাঙতে ভাঙতে প্রবহমান থাক।
‘… আ-মরি বাংলা ভাষা!’
–অতুলপ্রসাদ সেন
আমাদের নদীর নাম ময়ূরাক্ষী, গোমতী, কপোতাক্ষ, গড়াই, যমুনা, সোনাভরি, দুধকুমার, জিঞ্জিরাম, নীলকমল, খাঁরুভাঁজ, ধানসিঁড়ি, চিত্রা, ডাহুক, রজত রেখা। সেই সব নদীর পাড়ে পাড়ে আমাদের গাঢ় সবুজ গ্রাম। গ্রামগুলোর নাম সুবর্ণখুলি, ফুলসরা, নীলক্ষা, নীলখী, শহরমূল, বকুলতলা, পলাশপুর। আমাদের বাড়ির নাম দামিনী দালান, পদ্মপাতা, কোমল গান্ধার, আরণ্যক, নীল নিশীথ, ঘুমের দেশে, সূর্য দিঘল বাড়ি, সাঁঝের মায়া, বসন্তবিলাস, ছায়াবীথি, চম্পক, মায়ের আঁচল।
ঢাকা শহরে যাঁরা বসবাস করেন তাঁরা জানেন, এ শহরে আছে শান্তিনগর, আছে লালমাটিয়া, আছে ধানমন্ডি, আছে বাসাবো, গোলাপবাগ, চামেলিবাগ, সবুজবাগ, গোপীবাগ। এ শহরে চলাচল করে মধুমতি, তুরাগ, বসুন্ধরা, তরঙ্গ, বিহঙ্গ, বাহন, মৌমিতা, ইতিহাস, বৈশাখী, প্রজাপতি নামের বাস। একসময় চলাচল করত ফাল্গুন নামের একটি বাস। খুবই বিখ্যাত ছিল সেটি। প্রতি পয়লা ফাল্গুনে সে বাসের ছবি দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
এই যে শব্দ, এই যে মাধুর্য—এগুলো অনুরণন তোলে মস্তিষ্কের নিউরনে। চিত্রকল্প তৈরি করে, বেঁচে থাকার রসদ জোগায়। এ সবকিছু মিলেই আমাদের ভাষা, বাংলা ভাষা। শুধু বাংলা ভাষাই কি? এ দেশে মণিপুরী, চাকমা, সাঁওতাল, গারো, ওঁরাও ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর যে ভাষা আছে, সেগুলোও কি কম মাধুর্যময়? রাজশাহীতে ওঁরাও ভাষার একটি শব্দ শিখেছিলাম, ধুমকুড়িয়া। এর অর্থ আড্ডাঘর। আমাদের কাছারি ঘর, নাকারি ঘর কিংবা ড্রয়িং রুমের যে ব্যঞ্জনা, ধুমকুড়িয়ার ব্যঞ্জনা তার চেয়ে একেবারে ভিন্ন। একটা আড্ডা আড্ডা ব্যাপার তো আছেই, সেই সূত্রে শব্দটিতেই গেঁথে আছে প্রাণ আর মানুষ। ভাষা এমনই। মিলিয়ে দেয় প্রাণে আর মানুষে।
আমাদের কলার নাম চম্পা, সাগর, মালভোগ, আমাদের আমের নাম হাঁড়িভাঙা, রাণিপছন্দ, হিমসাগর; আমাদের ধানের নাম কাজললতা, কাটারিভোগ, মোহনভোগ, ইলিশ পেটি, লক্ষ্মীজটা, ঝুমুর, হিজল দিঘি, লক্ষ্মীবিলাস, হনুমানজটা, ঝিংগাশাইল, লালঢেপা, যশোয়া, চিনিসাগর, সোনামুখী, সূর্যমুখী, কলসকাটি, দাদখানি, রাঁধুনিপাগল, মধুশাইল, ফুলমালা, মধুমালতী, বাবইঝাঁক, জলকুমারী। এসব ধান আমাদের উদরপূর্তি করে। আমাদের তৃপ্ত করে। তখন আমরা পাখিদের দিকে তাকাই। তাদের নাম চড়ুই, বাবুই, মুনিয়া, টিয়া, দোয়েল, শালিক, শ্যামা, ফিঙে, কাকাতুয়া, বক। এরা খায় বটের ফল। আর বট আমাদের মহিরুহ। বুড়ো বট আমাদের প্রগাঢ় চিত্রকল্প তৈরি করে। আমাদের ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বছরের পর বছর। ঝুরি নামিয়ে জানান দেয়, আমি তোমাদের প্রপিতামহ। আমাদের সুপার হিরোর নাম ডালিম কুমার, আমাদের রাজকুমারীর নাম কঙ্কাবতী। এই যুগলবন্দীতে আমাদের জীবন আটকে আছে নক্ষত্রদের সঙ্গে। চাঁদের সঙ্গে। এই চাঁদের নিচে খোলা প্রান্তরে বসে গানের আসর। সেখানে হাজির থাকে মহুয়া, মলুয়া, চন্দ্রাবতীরা। চাঁদের রুপালি আলোয় ভেসে যায় তাদের রূপ আর গুণের অগুনতি শব্দ।
ধিয়ান গিরি নামটি যখন শুনি, একটি ঘোরলাগা আমেজ কাজ করেছিল ভেতরে-ভেতরে। ধিয়ান গিরি—এক অদ্ভুত চিত্রকল্পময় নাম। যেমন সাধু নামের মানুষদের দেখলে মন ভালো হয়ে যায় আমার। কিংবা কনক। গাত্রবর্ণ যেমনই হোক, কেন যেন মনে হয় মানুষটি উজ্জ্বল ভেতরে বাইরে। প্রতিদিন খেতে বসলে ঝোলের কথা মনে পড়ে। ঝোল ছাড়া কি চলে? এই ঝোল শব্দটি ভেঙে কত শব্দ তৈরি হলো—ঝোল ঝোল, ঝাল ঝোল, ঝোলঝোলা, গাঢ় ঝোল। এসব শব্দ কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই মনে, মগজে বসে যায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। ‘খইয়ের ধান ছড়াতেছে শিশু’ যখন শুনি তখন অঘ্রান সন্ধ্যার কথাই মনে পড়ে, বর্ষার নয়।
এসব শব্দ শুনতে শুনতে সোনাভরি নদীর তীরে আরণ্যক নামের বাড়িটিতে শুয়ে-বসে নদীর মাছের ঝোল দিয়ে দাদখানি চালের ভাত খেয়ে একটা জীবন পার করে দেওয়া যায় অনায়াসে।
আফসোস হলো, এসব শব্দ কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে। শ্যামল, সহজ আর প্রবহমান ভাষার দেহে কোথায় যেন ফাটলের কালো রেখা দেখা যায়। সে রেখা ব্যাকুল করে আমাদের।
আমাদের শব্দেরা বহমান থাক। আমাদের ভাষা ব্রহ্মপুত্রের মতো দুই কূল ভাঙতে ভাঙতে প্রবহমান থাক।
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১১ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫