Ajker Patrika

তালিকায় নাম নেই তাঁদের

সদর দক্ষিণ প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ৪০
তালিকায় নাম নেই তাঁদের

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ। ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল, শুক্রবার। মসজিদে জুমার নামাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন মুসল্লিরা। পথে কুমিল্লা সদর দক্ষিণের পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড সংলগ্ন উত্তর রামপুর (মিস্ত্রি পুকুর পাড়)। পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধরা পড়েন ১১ জন। তাঁদের মধ্যে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েও প্রাণ নিয়ে ফিরে আসেন মাত্র দুজন। কিন্তু অন্য নয়জনের খোঁজ আজও মেলেনি। স্বজনদের ধারণা, তাঁরা শহীদ হয়েছেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের লাশ কী করেছে, তা আজও তাঁরা জানতে পারেননি। বিজয়ের ৫০ বছরেও, শহীদদের নামের তালিকায় তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাঁদের নামে নেই কোনো স্মৃতিস্তম্ভ।

সেই নয়জন হলেন আলী মিয়া মজুমদার, গণি মিয়া মজুমদার, আহমদ আলী, আছমত আলী, সুলতান আহমদ আর্মি, মফিজ উদ্দিন, আব্দুল গফুর, আব্দুল খালেক ও অজ্ঞাতনামা একজন।

বেঁচে ফেরা দুজন হলেন মো. সায়েদ আলী ও মো. আব্দুল মজিদ। উত্তর রামপুরের সায়েদ আলী আজও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সেই নির্যাতনের শিকার হওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানিরা আমাকে আটক করে প্রথমে কুমিল্লা এয়ারপোর্টে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে বাছাই করে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে একদিন এক রাত আমার হাত-পা বেঁধে ঝুলিয়ে আমার ওপর ভয়ংকর নির্যাতন চালায়। জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম।’

উত্তর রামপুর মধ্যমপাড়া শহীদ আলী মিয়া মজুমদারের ছেলে ফরিদ আহমদ মজুমদার বলেন, ‘সেদিন জুম্মার নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বাড়ি ফেরার পথে আমার বাবা আলী মিয়া মজুমদার, তাঁর সহোদর গণি মিয়া মজুমদারসহ মোট ১১ জনকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানিরা। ভাগ্যক্রমে দুজন ফিরে আসতে পারলেও, বাকি নয়জনকে জীবন বিলিয়ে দিতে হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বহু সরকার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু ওই ৯ শহীদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এমনকি কোনো সরকারের পক্ষে এ পর্যন্ত উত্তর রামপুর এলাকার শহীদ পরিবারগুলোর কোনো খোঁজ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। বিজয়ের ৫০ বছরপূর্তিতে এসে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একটাই চাওয়া, উত্তর রামপুরের শহীদদের স্মরণে যেন মিস্ত্রি পুকুরপাড় এলাকায় একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়। তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম এই শহীদদের স্মরণ রাখতে পারবে।’

শহীদ আহমেদ আলীর নাতি রুহুল আমিন মজুমদার বলেন, ‘আমার দাদা আহমদ আলী শহীদ হন। আমার এক চাচা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। এ জন্য পর পর তিনবার আমাদের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদারেরা। একজন শহীদ পরিবারের সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়াটা খুবই দুঃখজনক। আর্থিক সহযোগিতা নয়, শহীদ হিসেবে সরকারের তালিকায় যেন তাঁদের নাম তোলা হয় সেই দাবি জানাচ্ছি।’

শহীদ আছমত আলীর ছেলে হাজী সেলিম মিয়া জানান, শহীদ পরিবারের সদস্য হয়েও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে এসেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো স্বীকৃতি কিংবা সুযোগ-সুবিধা পাইনি। এটা খুবই দুঃখজনক।

কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুল বলেন, শহীদদের নাম তালিকাভুক্ত না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। শহীদ পরিবারকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করার জন্য পরামর্শ দেন তিনি।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ইউএনও শুভাশিস ঘোষ বলেন, তালিকাভুক্ত শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কী লিখেছিলেন মাহফুজ আলম, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ডিলিট করলেন কেন

প্রশাসনিক আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ ভুল, আ.লীগের কার্যক্রম বন্ধ সঠিক: বিএনপি

এবার ‘পাকিস্তানপন্থার’ বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন আসিফ মাহমুদ

সমাবেশে দলীয় স্লোগান ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে এনসিপির বিবৃতি

পাকিস্তানে হামলায় ভারত কি ‘ব্রহ্মস’ ছুড়েছিল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত