Ajker Patrika

শাক-ডাল ও ভাতে পিকনিক!

সম্পাদকীয়
শাক-ডাল ও ভাতে পিকনিক!

প্রতিদিনের কাজ এবং তার প্রাপ্য মজুরি দিয়েই নিম্ন আয়ের মানুষজন তাঁদের সংসারের ব্যয় নির্বাহ করে থাকেন। যেখানে তিন বেলা পেট পুরে খাওয়াকে ভাগ্যের লিখন বলে মনে করা হয়, সেখানে মাছ-মাংস তো দূর কল্পনার বিষয়। আর আনন্দ উদ্‌যাপন তো ইউটোপিয়ার মতো। কোনোমতে পেট পুরে ভাত খাওয়া তাঁদের কাছে পিকনিকের মতো। ১ নভেম্বর আজকের পত্রিকায় ছাপা হয়েছে খবরটি।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় রাস্তা সংস্কারের কাজ করছিলেন একদল নারী শ্রমিক। দুপুরের খাবার তাঁরা একসঙ্গে খাচ্ছিলেন। তাঁদের ভাতের পাতে ছিল শুধু শাক আর ডাল। একজন সাংবাদিক তাঁদের এই দল বেঁধে খেতে দেখে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনারা কি পিকনিক করছেন?’ উত্তরে তাঁরাও মজা করেই বলেন, ‘শাক-ডাল দিয়ে ভাত খাওয়াই আমাদের কাছে পিকনিক।’ প্রতিদিন তাঁরা এভাবেই দল বেঁধে যেমন কাজ করেন, তেমনি দল বেঁধে খাবারও খান। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কাজ করে একেকজন মজুরি পান ৩০০ টাকা। বর্তমান বাজারমূল্যে এই টাকায় শুধু নিজের খাবার নয়, সন্তানসহ পরিবারের ভরণপোষণও করতে হয়। ফলে শাক-ডাল-ভাতের বেশি তাঁদের পক্ষে জোটানো সম্ভব হয় না।

বাজারে সবকিছুর দামই বাড়ছে ক্রমাগত। কিন্তু তাঁদের আয় বাড়ছে না। গত কোরবানির ঈদের পর আর মাংস খাওয়া হয়নি এই নারী শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের।

এ ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের বাস্তব অবস্থাই ফুটে উঠেছে। এ থেকেই বোঝা যায়, দেশের দরিদ্র ও দিনমজুর শ্রেণির মানুষজন ভালো নেই। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের ভারসাম্য রাখতেই তাঁদের শাক-ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। এটুকুতেই তাঁরা খুশি। এতেই তাঁদের পিকনিকের আনন্দ।

সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য নানা ধরনের কর্মসূচি চলমান আছে। যেমন অতিদরিদ্র ও দুস্থদের জন্য বিনা মূল্যে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি, কাজের বিনিময়ে খাদ্য ও টেস্ট রিলিফ ছাড়াও বয়স্ক ভাতা, দুস্থ মহিলা ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা। তবে বলতেই হয়, শুধু কর্মসূচি গ্রহণ জরুরি বিষয় নয়। যাঁদের জন্য এসব কর্মসূচি, সেই সব দুস্থ জনগোষ্ঠীর কাছে সেবাগুলো যথাযথভাবে পৌঁছাচ্ছে কি না, সেটা দেখাও জরুরি। দুস্থদের ভাতা নিয়েও নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। নজরদারি ও তদারকি ব্যবস্থার দুর্বলতায় এসব ঘটে। তাই শুধু ভাতা বরাদ্দ নয়, তা সঠিক মানুষটির হাতে পৌঁছানো নিশ্চিত করাটাও জরুরি। আমাদের দেশে এমনিতেই রয়েছে প্রচণ্ড আয়বৈষম্য। ব্যবস্থাপনা ও বণ্টনপদ্ধতি যথাযথ না হওয়ায় অনেক মানুষকেই দুঃখ-কষ্টে দিন কাটাতে হয়। এবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ঘাটতি আমাদের সংকটের মাত্রা বাড়িয়েছে। এ অবস্থায় স্বল্প 
আয় এবং একেবারেই উপার্জনহীন মানুষের কথা সরকারকে বেশি করে ভাবতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত