Ajker Patrika

অকেজো স্লুইসগেট, সচলের দাবি

সাগর হোসেন তামিম, মাদারীপুর
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২২, ১০: ৫০
অকেজো স্লুইসগেট, সচলের দাবি

মাদারীপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতায় ৩৪টি স্লুইসগেট রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই বর্তমানে জরাজীর্ণ। তদারকির অভাবে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। এদিকে স্লুইসগেটের কারণে নদীর প্রবাহ বদলে গেছে। এতে নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নদীপারের বাসিন্দারা। তাঁরা স্লুইসগেট মেরামত করে সচলের দাবি জানিয়েছেন।

পরিবেশবাদী সংগঠন ফ্রেন্ডস অব নেচারের সাধারণ সম্পাদক রাজন মাহমুদ বলেন, ‘নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ রক্ষায় স্লুইসগেটগুলো অবশ্যই মেরামত করা উচিত। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

মাদারীপুর জেলা প্রশাসন সরেজমিন স্লুইসগেটগুলো পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। আর পাউবোর দাবি, নতুন প্রকল্প পেলে মেরামত করে সচল করা হবে স্লুইসগেট।

জানা গেছ, সদর উপজেলার মস্তফাপুর স্লুইসগেটটি ব্রিটিশ আমলে নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেখানে পলি জমায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। স্লুইসগেটের তিন মুখের কোনোটিতে নেই ডালা। প্রতিটি ডালার মুখ ভাঙা, কাটা এবং গাছগাছালিতে ভরা। দেখলে মনে হয়, দীর্ঘদিন ধরে অকেজো পড়ে রয়েছে স্লুইসগেটটি।

মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ব্রিটিশ আমলে মাদারীপুরের মস্তফাপুর, সমাদ্দার ও রাজৈর উপজেলার চৌকদার, আমগ্রাম ও রাজৈর গণ উন্নয়ন এলাকায় বড় ৫টি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। এরপরে ১৯৮৪ সালে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কালকিনির উত্তর-দক্ষিণ দুই দিকে ছোট-বড় মিলে আরও ২৯টি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। এসব স্লুইসগেটের মধ্যে বড় পাঁচটিই পুরোপুরি অকেজো, আর কালকিনির ২৯টির মধ্যে কার্যক্রম বন্ধ ২০টি। বাকি নয়টি ভঙ্গুর হলেও তা মেরামতযোগ্য।

স্থানীয়দের দাবি, পাউবোর তদারকির অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে স্লুইসগেটগুলো। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে।

মস্তফাপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে স্লুইসগেটটা পড়ে আছে। জরাজীর্ণ আর ঝোপঝাড়ে পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। ফলে গেটের অন্য পাশ দিয়ে নৌপথ তৈরি হয়েছে। পাউবোর কর্মকর্তারা পরিদর্শন করলেও কোনো কাজে আসেনি। ফলে এই গেট এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

শাওন নামের এক যুবক বলেন, ‘জন্মের পর থেকেই দেখছি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে গেটটা। কৃষিকাজ তো দূরের কথা, বরং এই গেটের কারণে অন্য দিকের নদী ভাঙছে। এখন যদি গেটটা উঠিয়ে নিয়ে যায়, তাহলে মূল নদীতে পানি প্রবাহিত হবে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কেউ এদিকে নজর দিচ্ছে না।’

মাদারীপুরে ছোট-বড় মিলে ১৩টি নদ-নদী রয়েছে। কৃষিকাজে বছরজুড়ে পানি সরবরাহ করার জন্যই স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। অথচ অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকায় গেটগুলো কৃষিতে কোনো কাজে আসছে না। স্লুইসগেট সচল থাকলে সারা বছরই নদীর পানি ব্যবহার করা যাবে বলে মনে করেন প্রান্তিক চাষিরা।

রাজৈর উপজেলার আমাগ্রামের কৃষক মনোয়ার বয়াতি বলেন, ‘এ গেট কোনো কাজে আসে না। বর্ষার সময়ে যেমন পানি আসে, তেমনি খরার সময়েও পানি আসে। গেট যে পানি ধরে রাখবে, তার কোনোই ব্যবস্থা নেই; বরং গেট থাকায় জঙ্গলে পরিণত হয়েছে।’

আর মেরামতযোগ্য গেটগুলো নতুন প্রকল্প পেলে সচল করার দাবি পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘মাদারীপুরে ছোট-বড় ৩৪টি পানিরোধক গেট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ব্রিটিশ আমলে তৈরি গেটগুলো সম্পূর্ণ অকেজো। আর যেগুলো পরে নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে মাত্র ৯টি মেরামতযোগ্য। বিষয়টি এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন মহল সরেজমিন পরিদর্শন করে গেছে। আশা রাখি, নতুন প্রকল্প অনুমোদিত হলে গেটগুলো মেরামত করে সচল করা হবে।’

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাউবোর কর্মকর্তারাও থাকবেন। কৃষি ও কৃষকদের কথা চিন্তা করে স্লুইসগেট যাতে সচল রাখা যায়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কারও গাফিলতি থাকলে সেটাও খুঁজে বের করা হবে। আর যেসব জায়গায় পানিপ্রবাহ নেই, সেগুলো প্রয়োজনে ভেঙে ফেলা উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আস্থায় বাজিমাত ইসলামী ব্যাংক

‘ফের ধর্ষণচেষ্টার ক্ষোভে’ বাবাকে খুন, ৯৯৯-এ কল দিয়ে আটকের অনুরোধ মেয়ের

চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে গেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

আ. লীগের ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের বিএনপির সদস্য হতে বাধা নেই: রিজভী

১৫ স্থাপনায় পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আকাশেই ধ্বংসের দাবি ভারতের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত