Ajker Patrika

পায়রা কখনোই ভালো সমুদ্রবন্দর হবে না

ড. মইনুল ইসলাম
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১: ১৫
পায়রা কখনোই ভালো সমুদ্রবন্দর হবে না

৮ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকের এক খবরে বলা হয়েছে, পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের জন্য দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে যে ৫০০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে, সেগুলো স্রেফ অপচয় করা হয়েছে। কারণ, ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ওই চ্যানেলের গভীরতা ১০.৫ মিটারে উন্নীত করার এক মাসের মধ্যেই পলি পড়ে গভীরতা আবার ৭ মিটারে নেমে এসেছে। ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পটি সমাপ্ত হয়েছিল ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট, আর এক মাস না পেরোতেই সাড়ে ৩ মিটার গভীরতা হ্রাস পেয়েছে চ্যানেলের।

দেশের নেতৃস্থানীয় প্রকৌশলী প্রফেসর আইনুন নিশাত মত ব্যক্ত করেছেন, পায়রা নদের যে বিপুল পলিবহন প্রবণতা রয়েছে, সেটা বিবেচনায় নিলে প্রতিবছর রাবনাবাদ চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রয়োজন হবে, নয়তো পায়রা বন্দর সমুদ্রবন্দর থাকবে না, একটা নদীবন্দরে পরিণত হয়ে যাবে। তাঁর মতে, পায়রা কখনোই ভালো সমুদ্রবন্দর হতে পারবে না, গভীর সমুদ্রবন্দর তো দূরের কথা। কোনো বন্দর-চ্যানেলের কমপক্ষে সাড়ে ৮ মিটার গভীরতা না থাকলে ওই চ্যানেলে সমুদ্রগামী জাহাজ প্রবেশ করতে পারে না।

২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল দুটি জাতীয় দৈনিকে আমার প্রকাশিত কলামে আমি একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম। কিন্তু হাসিনা সরকার সেটাকে পাত্তাই দেয়নি। আমার ওই কলামের হুবহু বক্তব্য আমি নিচে তুলে ধরছি—

‘২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে পায়রা বন্দরের নৌপথের পলির বিপদ সম্পর্কে জার্মানির বিশ্বখ্যাত ভূতাত্ত্বিক প্রফেসর হারম্যান কুদরাসের নেতৃত্বাধীন পাঁচজন আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান গবেষকের একটি টিমের গবেষণা প্রতিবেদনের বক্তব্যগুলো প্রকাশিত হয়েছে, যেটা বাংলাদেশের জনগণের জানা উচিত মনে করি এবং বিষয়টি নিয়ে সরকারেরও গভীর পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে। গবেষণা প্রতিবেদনটি ২০১৯ সালের ১১-১২ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থাপিত হয়েছিল।

পায়রা বন্দরকে চালু রাখা বাংলাদেশের জন্য একটি মহা-অপচয়মূলক বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। ছবি: সংগৃহীতপ্রফেসর কুদরাস জার্মান সরকারের ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান ছিলেন, বর্তমানে জার্মানির ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। গবেষণা দলের অন্য চার সদস্য হলেন বেলজিয়ামের জেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মেয়ের, জার্মানির ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর পালমেনাচি, জার্মানির হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ম্যাচালেট এবং বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর হুমায়ুন আখতার। প্রফেসর কুদরাস ২০ বছর ধরে বঙ্গোপসাগরের পলি ও পানির প্রবাহ নিয়ে গবেষণা করছেন।

২০১২ ও ২০১৪ সালে বাংলাদেশ যখন মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল অন ল’জ অব দ্য সিজ (ইটলস) এবং হল্যান্ডের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে আইনি লড়াই চালিয়ে বিজয় অর্জন করেছিল, তখন প্রফেসর কুদরাস ওই মামলাগুলোতে বাংলাদেশের দুজন পরামর্শকের অন্যতম ছিলেন। পায়রা বন্দর সম্পর্কিত তাঁদের গবেষণার মূল বক্তব্য হলো, পায়রা এলাকায় সমুদ্রবন্দর করা হলে সারা বছর ওই বন্দরকে পলিমুক্ত রাখা প্রচণ্ড ব্যয়বহুল হবে। কারণ, বিশ্বের যতগুলো উপকূলীয় এলাকা আছে, তার মধ্যে পটুয়াখালীর পায়রা এলাকায় সবচেয়ে বেশি পলি জমা হয়। পায়রা নদীর ওই চ্যানেল দিয়ে প্রতিবছর প্রায় ৪০ কোটি কিউবিক মিটার পলি প্রবাহিত হওয়ায় জোয়ার-ভাটায় এক বছরের মধ্যেই বারবার চ্যানেলটি ভরাট হয়ে যাবে। একবার ভরাট হলে খনন করতে ৮-১০ হাজার কোটি টাকা লাগবে, যে ব্যয় নিয়মিতভাবে বহন করা যেকোনো দেশের জন্যই বিশাল বোঝা।

গবেষণা অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগর থেকে পায়রা বন্দরে ভিড়তে হলে একটি জাহাজকে ৬০ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দিতে হবে। ওই পথের ২৪ কিলোমিটারে ৫ মিটার, ২২ কিলোমিটারে ১০ মিটার এবং ১৪ কিলোমিটারে ১৫ মিটার গভীরতা রয়েছে। বড় জাহাজ চলাচল নির্বিঘ্ন করতে যেহেতু এই রাবনাবাদ নৌপথটিতে ১৫ মিটার গভীরতা ও ৩০০ মিটার প্রস্থ থাকতে হবে, তাই প্রতিবছর কমপক্ষে ১০ কোটি কিউবিক মিটার পলি খননের প্রয়োজন হবে, যার খরচ পড়বে ৮-১০ হাজার কোটি টাকা। আরও বিপজ্জনক হলো, একটা বড়সড় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস হলে বিপুল পলি পড়ে নৌপথটি একেবারেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যার অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে ভয়াবহ। গবেষকদের স্থির সিদ্ধান্ত হলো, পায়রা বন্দরকে সংবৎসর চালু রাখা বাংলাদেশের জন্য একটি মহা-অপচয়মূলক বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। এসব বক্তব্যের সারকথা হলো, পায়রা বন্দর কখনোই একটি যৌক্তিক ব্যয়ের “গভীর সমুদ্রবন্দর” হবে না।

পায়রা বন্দরকে চালু রাখা বাংলাদেশের জন্য একটি মহা-অপচয়মূলক বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। ছবি: সংগৃহীতআমরা দেখতে পাচ্ছি, কয়লা আমদানি এবং এলএনজি আমদানির জন্য মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলা হচ্ছে, যেখানে জাপান অর্থায়নে সম্মত হয়েছে। মাতারবাড়ীর সে বন্দরটি বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রয়োজন হয়তো কিছুটা মেটাবে, প্রধানত কয়লা ও এলএনজি আমদানির জন্য। কিন্তু মাতারবাড়ীতে সোনাদিয়ার মতো ১৫ মিটার গভীরতা পাওয়া যাবে না। অন্যদিকে পটুয়াখালীতে পায়রা বন্দর গড়ে তোলার জন্য জোরেশোরে কাজ শুরু হয়েছে এবং চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব ফান্ড থেকে বন্দরটি গড়ে তোলার জন্য অর্থায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুতরাং পায়রা বন্দর এবং চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভারতের সেভেন সিস্টার্সের সমুদ্রের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের বন্দরসুবিধা ব্যবহারের প্রয়োজন বেশ কিছুটা মিটবে।

শেখ হাসিনার নিজস্ব রাজনীতির প্রয়োজনে যেহেতু দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলোর প্রতি তাঁর একটি বিশেষ দুর্বলতা থাকাই স্বাভাবিক, সেহেতু পায়রা বন্দরটি দ্রুতগতিতে গড়ে তোলা হচ্ছে। এমনকি এ রকমও বলা হচ্ছে, পায়রা বন্দর আঞ্চলিক গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রয়োজন মেটাবে। কিন্তু প্রথম থেকেই বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো, পায়রা বন্দর গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রয়োজন মেটাবে বলে যে দাবি করা হচ্ছে তার কোনো ভিত্তি নেই। ওপরে বর্ণিত বিশ্বখ্যাত বিশেষজ্ঞদের গবেষণা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে পায়রা বন্দর কখনোই একটি ব্যয়সাশ্রয়ী গভীর সমুদ্রবন্দর হতে পারবে না। এই বিষয়ে শেখ হাসিনার জেদাজেদি বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি বড়সড় আর্থিক বোঝাই ডেকে আনছে। আল্লাহর ওয়াস্তে এই অপরিণামদর্শী ও মহা-অপচয়মূলক প্রকল্প পরিত্যাগ করুন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। দেশের আরেকটি সমুদ্রবন্দর হিসেবে পায়রা গড়ে উঠুক, কিন্তু গায়ের জোরে এটাকে “গভীর সমুদ্রবন্দর” বানাতে পারবেন না আপনি।’

আমার দুঃখ হচ্ছে, সাড়ে পাঁচ বছর আগে আমি যে সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছিলাম, সেটাই এখন সত্য প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু পায়রা বন্দরের উন্নয়ন এবং রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের জন্য ইতিমধ্যেই যে এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি খরচ হয়ে গেছে, সেটা তো স্রেফ অপচয় হয়ে গেল! দেশ তো এই বন্দর থেকে ভবিষ্যতে কোনো উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ফায়দা পাবে না, ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ রাজ্যগুলো পায়রা বন্দরকে আঞ্চলিক সমুদ্রবন্দর হিসেবে ব্যবহার করে প্রভূত ফায়দা হাসিল করবে বলে যে গলাবাজি করা হয়েছিল, সেগুলোও একেবারেই বেফজুল প্রমাণিত হবে। যথাযথ ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি’ ছাড়া একক খামখেয়ালিতে যত্রতত্র মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে অর্থ অপচয় ও অর্থ আত্মসাতের যে উন্মত্ত হিড়িক শেখ হাসিনাকে গত সাড়ে ১৫ বছর ধরে পেয়ে বসেছিল, তারই একটা জাজ্বল্যমান নজির হয়ে থাকবে পায়রা বন্দর। (পায়রা বন্দর প্রকল্প থেকে কত হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে সেটা এখনো প্রকাশ পায়নি)।

পায়রা বন্দরকে চালু রাখা বাংলাদেশের জন্য একটি মহা-অপচয়মূলক বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। ছবি: সংগৃহীতশুধু নিজের রাজনীতির প্রয়োজনে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পটুয়াখালী জেলায় জবরদস্তি করে একটি ‘গভীর সমুদ্রবন্দর’ নির্মাণের যে অপরিণামদর্শী খামখেয়ালিপনা শেখ হাসিনাকে পেয়ে বসেছিল, সেটা দেশকে কমপক্ষে এক বিলিয়ন ডলার অপচয়ের খাদে ফেলেছে, এটা জনগণের বোঝা প্রয়োজন। পায়রা বন্দরকে গড়ে তোলার জন্য শুধু দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ৫০ কোটি ডলার অপচয় করা হয়নি, চট্টগ্রাম বন্দরের ফান্ড থেকেও ৫০০ কোটি টাকা ওই প্রকল্পে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আরও দুঃখজনক হলো, চট্টগ্রাম বন্দরের বিকল্প হিসেবে পায়রা বন্দরকে দাঁড় করানোর খায়েশে ইচ্ছাকৃতভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের ক্যাপিটাল ড্রেজিং এবং বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পকে অবহেলা করেছেন হাসিনা। ওয়াকিবহাল মহলের বিশেষজ্ঞ মতামত হলো, যথাযথ অগ্রাধিকার পেলে এত দিনে বে-টার্মিনাল নির্মাণ সম্পন্ন হয়ে চালু হয়ে যেত। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের ৯ নটিক্যাল মাইল চ্যানেলের গভীরতাকে আধুনিক ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে সাড়ে ৯ মিটার থেকে সাড়ে ১০ মিটারে উন্নীত করা খুবই ব্যয়-সাশ্রয়ী হতো বলে বিশেষজ্ঞদের দৃঢ় মতামত রয়েছে।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এত শক্তি প্রদর্শন আপনাদের মানায় না—অন্তর্বর্তী সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি সালাহউদ্দিনের

মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে ডাকাতির চেষ্টা ব্যর্থ, দোকানদার থেকে ২৫ সেকেন্ডে খেলেন ২০টি চড়

ফরিদপুরে বিএনপির সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে যুবক, ভিডিও ভাইরাল

বেতনের টাকায় সব গাড়ি কোম্পানি, এমনকি দেশও কিনতে পারবেন ইলন মাস্ক

মাথায় হেলমেট নেই চালকের, এক লাখের স্কুটারে জরিমানা ২১ লাখ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এত শক্তি প্রদর্শন আপনাদের মানায় না—অন্তর্বর্তী সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি সালাহউদ্দিনের

মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে ডাকাতির চেষ্টা ব্যর্থ, দোকানদার থেকে ২৫ সেকেন্ডে খেলেন ২০টি চড়

ফরিদপুরে বিএনপির সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে যুবক, ভিডিও ভাইরাল

বেতনের টাকায় সব গাড়ি কোম্পানি, এমনকি দেশও কিনতে পারবেন ইলন মাস্ক

মাথায় হেলমেট নেই চালকের, এক লাখের স্কুটারে জরিমানা ২১ লাখ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এত শক্তি প্রদর্শন আপনাদের মানায় না—অন্তর্বর্তী সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি সালাহউদ্দিনের

মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে ডাকাতির চেষ্টা ব্যর্থ, দোকানদার থেকে ২৫ সেকেন্ডে খেলেন ২০টি চড়

ফরিদপুরে বিএনপির সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে যুবক, ভিডিও ভাইরাল

বেতনের টাকায় সব গাড়ি কোম্পানি, এমনকি দেশও কিনতে পারবেন ইলন মাস্ক

মাথায় হেলমেট নেই চালকের, এক লাখের স্কুটারে জরিমানা ২১ লাখ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এত শক্তি প্রদর্শন আপনাদের মানায় না—অন্তর্বর্তী সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি সালাহউদ্দিনের

মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে ডাকাতির চেষ্টা ব্যর্থ, দোকানদার থেকে ২৫ সেকেন্ডে খেলেন ২০টি চড়

ফরিদপুরে বিএনপির সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে যুবক, ভিডিও ভাইরাল

বেতনের টাকায় সব গাড়ি কোম্পানি, এমনকি দেশও কিনতে পারবেন ইলন মাস্ক

মাথায় হেলমেট নেই চালকের, এক লাখের স্কুটারে জরিমানা ২১ লাখ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এত শক্তি প্রদর্শন আপনাদের মানায় না—অন্তর্বর্তী সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি সালাহউদ্দিনের

মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে ডাকাতির চেষ্টা ব্যর্থ, দোকানদার থেকে ২৫ সেকেন্ডে খেলেন ২০টি চড়

ফরিদপুরে বিএনপির সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে যুবক, ভিডিও ভাইরাল

বেতনের টাকায় সব গাড়ি কোম্পানি, এমনকি দেশও কিনতে পারবেন ইলন মাস্ক

মাথায় হেলমেট নেই চালকের, এক লাখের স্কুটারে জরিমানা ২১ লাখ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত