Ajker Patrika

খোলা তেলের ডাবল সেঞ্চুরি

নওগাঁ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২২, ১৬: ০৯
খোলা তেলের ডাবল সেঞ্চুরি

নওগাঁর বাজারে দুই সপ্তাহ ধরে আবারও ভোজ্যতেলের সংকট দেখা দিয়েছে। ডিলাররা বলছেন, কোম্পানি থেকে কম তেল সরবরাহ করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। এদিকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকটে খোলা সয়াবিনের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, কোম্পানির কাছ থেকে তেল চাইলে তারা তাদের অন্য উপকরণ যেমন আটা, চা কিনতে বাধ্য করছে। আবার বাড়তি পণ্যসহ তেল অর্ডার করলেও ঠিকমতো সরবরাহ করতে পারছেন না বলেও জানিয়েছেন দোকানিরা।

গত সোমবার নওগাঁ শহরের মসলাপট্টি, নতুন বাজার, মুক্তির মোড়সহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবখানেই ভোজ্যতেলের তীব্র সংকট। অধিকাংশ দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই। আবার খোলা তেল দু-একটি দোকানে পাওয়া গেলেও সেগুলোর দাম বেড়েছে। ফলে এই রমজান মাসে অস্বস্তিতে পড়েছেন ক্রেতারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেল নওগাঁর বিভিন্ন বাজারে পাইকারিতে ১৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২০০-২১০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে যেটি ছিল ১৮০-১৮৫ টাকা কেজি। অন্যদিকে বোতলজাত সয়াবিন তেল এক লিটারের দাম ১৬০ টাকা হলেও সংকটের অজুহাতে সুযোগ বুঝে নেওয়া হচ্ছে ১৭০-১৭৫ টাকা।

ক্রেতারা বলছেন, ডিলার, পাইকার, খুচরা বিক্রেতাসহ সবাই মিলে দাম বাড়ানোর জন্য তেল মজুত করে ‘কৃত্রিম সংকট’ তৈরি করতে পারেন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের দ্রুত নজরদারি প্রয়োজন।

নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে বুলেট স্টোরের মালিক মো. বুলেট বলেন, প্রতি সপ্তাহে তাঁর দোকানে সয়াবিনের চাহিদা দু-তিন কার্টন। রমজান এবং ঈদ উপলক্ষে সয়াবিন তেলের চাহিদা আরও বেড়েছে। কিন্তু সরবরাহ নেই। ডিলাররা বলছেন, সরবরাহ বন্ধ রয়েছে কোম্পানি থেকে।

আরেক দোকানি জামাল ভ্যারাইটি স্টোরের মালিক জামাল হোসেন বলেন, বেশ কিছু দিন ধরে পুরো শহরের বোতলজাত তেলের সংকট চলছে। চাহিদা অনুযায়ী তেল নিতে হলে সরবরাহকারীরা শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন। এক কার্টন তেল নিতে হলে সঙ্গে এক কেজি চা কিংবা অন্য পণ্য কিনতে হবে।

উকিলপাড়ার ব্যবসায়ী মান্নাফ রাহী বলেন, ‘আমার তেল দরকার, সেখানে আটা বা চা নিয়ে কী করব। তেলের সঙ্গে ভিন্ন পণ্য নেওয়া মানে বাড়তি ঝামেলা। এ জন্য তেল নিচ্ছিও না, বিক্রিও করতেছি না।’

এদিকে দফায় দফায় সয়াবিনের সংকট এবং দাম বাড়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে পণ্যটি। এতে অস্বস্তি ও অসন্তুষ্টিতে ভুগছেন সাধারণ ক্রেতারা।

উকিলপাড়া এলাকার গৃহিণী নাসরিন বেগম বলেন, প্রতিদিনের রান্নাবান্না ছাড়াও আত্মীয়স্বজন ও মেহমানদের আপ্যায়নে রান্নায় তেলের ব্যবহার হয়। ইচ্ছা থাকলেও তেল ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া যাচ্ছে না। এখন তো তেল পাওয়াই যাচ্ছে না।

শহরের কেডির মোড়ের বাসিন্দা জুয়েল রানা বলেন, ১০ দিন আগে খোলা তেল ১৮০ টাকা ছিল, এখন কিনতে হচ্ছে ২০০-২১০ টাকা লিটারে। ঈদের কারণে বাজারে তেলের সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

নওগাঁ শহরের আমদানিকারক কোম্পানির ডিলার সুমন সাহা বলেন, বর্তমান বাজারে বোতল এবং খোলা দুই জাতের সয়াবিন তেলের সংকট। কোম্পানি থেকে তেল সরবরাহ না করায় তাঁরা তেল পাচ্ছেন না।

অন্য আরেকটি কোম্পানির ডিলার পিন্টু মণ্ডল বলেন, বেশ কিছু দিন হলো কোম্পানি থেকে চাহিদা দিয়ে পরিমাণমতো তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য সংকট তৈরি হয়েছে। কোম্পানি থেকে বলা হচ্ছে, সরকার সয়াবিন বিক্রির যে দর নির্ধারণ করেছে, বিদেশ থেকে তার চেয়ে বেশি দামে তেল আমদানি করতে হচ্ছে। এ জন্য কোম্পানি থেকে তেল দিচ্ছে না।

জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. শামিম হোসেন বলেন, বাজারে তেলের কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। ডিলার, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা মিলে এ সংকট তৈরি করেছেন কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

তেল নিতে চাইলে সরবরাহকারীরা অন্য পণ্য কিনতে শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. শামিম হোসেন বলেন, বিষয়টি তাঁরা শুনেছেন। এ ব্যাপারে দ্রুতই প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আলোচনা হবে। এ ছাড়া তাঁদের নিয়মিত বাজার তদারকি চলমান আছে। অভিযোগ পেলেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত