Ajker Patrika

ওসমান ভাইদের ওয়ার্ডে বিএনপির ঘাঁটি

সাবিত আল হাসান, নারায়ণগঞ্জ
আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২২, ১০: ০১
ওসমান ভাইদের ওয়ার্ডে বিএনপির ঘাঁটি

চাষাড়া এলাকাকে বলা হয় নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র। এই এলাকা ঘিরেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড। ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে ঢুকতেই এই দুই ওয়ার্ডের অবস্থান। অবস্থানগত কারণে জনবহুল এই দুটি ওয়ার্ড রাজনৈতিকভাবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আবার নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের ওয়ার্ড হিসেবেও পরিচিতি আছে এই দুই ওয়ার্ডের। কারণ শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের বাড়ি এখানে। তাঁদের পৈতৃক বাড়িও এই এলাকায়। দুটি ওয়ার্ডই সেলিম ওসমানের নির্বাচনী আসনের মধ্যে। এরপরও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের গত দুটি নির্বাচনে ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সুবিধা করতে পারেননি। পরপর দুই নির্বাচনে বিএনপিপন্থী দুই নেতা কাউন্সিলর পদে জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন। তাঁরা হলেন শওকত হাশেম শকু (১২ নম্বর ওয়ার্ড) ও মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ (১৩ নম্বর ওয়ার্ড)। এ নির্বাচনেও শক্ত প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন এ দুজন। এবারও তাঁদের জয় অনেকটা নিশ্চিত বলেই স্থানীয় লোকজন মনে করছেন।

নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের রাজনীতির অন্যতম পরাক্রমশালী ওসমান পরিবারের ওয়ার্ডে বিএনপির নেতাদের এমন ধারাবাহিক জয় এবং শক্ত অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আগেও। তবে এবারের নির্বাচনে এ নিয়ে গুঞ্জন আরও বেড়েছে। ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপিপন্থী দুই কাউন্সিলর প্রার্থীকে মদদ দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে ওই পরিবারের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগও করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই। এবারের নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর নির্বাচন পরিচালনার জন্য গঠিত কমিটির আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের পরিস্থিতি নিয়ে আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘যে নারায়ণগঞ্জকে আওয়ামী লীগের জন্মস্থান বলা হয়, সেই জেলার মূল শহর বিএনপির কাউন্সিলরদের নিয়ন্ত্রণে—এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। তাঁদের একজন তো প্রকাশ্যেই সেলিম ওসমানের সমর্থন নিয়ে চলেন। আরেকজনের ওয়ার্ডে ওসমানপন্থী প্রার্থী সরে গিয়ে জয়ের পথ সুগম করে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ভেতর ঐক্যের অভাব এবং জাতীয় পার্টির সাংসদের প্রশ্রয়ের কারণেই গুরুত্বপূর্ণ দুটি ওয়ার্ড আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।’

শহরের অভিজাত পাড়া জামতলায় বাড়ি করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। ফতুল্লা থানার অন্তর্গত এই এলাকা নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে। এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে এবারও প্রার্থী হয়েছেন মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। টানা ১০ বছর এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে আছেন সদ্য বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের এই সভাপতি। করোনাকালে মৃত ব্যক্তিদের সৎকারে সাহসী ভূমিকা পালন করে দেশব্যাপী পরিচিতি পেয়েছেন খোরশেদ। তিনি বিএনপি থেকে অব্যাহতি পাওয়া স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের আপন ছোট ভাই।

খোরশেদ এবার নিজের নির্বাচনের চেয়ে বড় ভাই তৈমুরের প্রচারেই বেশি সময় দিচ্ছেন। কারণ কাউন্সিলর পদে তাঁর বিপক্ষে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় নিজের জয় নিয়ে খোরশেদ এবার অনেকটাই নির্ভার। গত নির্বাচনে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের রবিউল হোসেন। এবারও প্রার্থী হয়েছিলেন শামীম ওসমানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত এই নেতা। কিন্তু প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর স্ত্রীর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। খোরশেদকে সুবিধা দিতে তিনি নির্বাচন থেকে সরে গেছেন—এমন অভিযোগে রবিউলকে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের আইভীপন্থী নেতাদের দাবি, শামীম ওসমানের নির্দেশেই ভোট থেকে সরে গেছেন রবিউল। এতে খোরশেদের জয়ের পথ সুগম হয়েছে। কাউন্সিলর পদের ভোট নিয়ে তাঁকে মাথা ঘামাতে হচ্ছে না। এই সুযোগে বড় ভাইয়ের পক্ষে বেশি সময় দিতে পারছেন তিনি। আইভীর প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমুরকে সুবিধা দিতে ছক কষে রবিউলকে সরানো হয়েছে।

১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি তিনি। ১০ বছর ধরে এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের পদে আছেন তিনি। এর আগে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভায়ও এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারও প্রার্থী হিসেবে অন্যদের চেয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন শকু।

এই ১২ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের বাড়ি হীরা মহল। এই ওয়ার্ডেই ওসমানদের পৈতৃক বাড়ি এ কে এম শামসুজ্জোহার বায়তুল আমান। এই বাড়িকে আওয়ামী লীগের জন্মস্থান বলে দাবি করে ওসমান পরিবার। অথচ এই ওয়ার্ডে সেলিম ওসমানের প্রশ্রয়েই শকু অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের। এ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কেন্দ্রীয় কমিটিকে অভিযোগ দেওয়ার পর সেলিম খান নামে একজন প্রার্থীকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সমর্থন দেওয়া হয়েছে। তারপরও ভোটের হিসাবে শকুকেই এগিয়ে রাখছেন ভোটাররা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত