Ajker Patrika

রাত হলেই আতঙ্ক বাড়ে কাশিয়াইশে

সোহেল মারমা, (চট্টগ্রাম) ও কাউছার আলম, পটিয়া
আপডেট : ১২ মে ২০২২, ১২: ৫৯
রাত হলেই আতঙ্ক বাড়ে কাশিয়াইশে

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাটের পাশেই কাশিয়াইশ ইউনিয়ন। ২২ এপ্রিল রাতে ওই এলাকার বুধপরা বাজারে খুন হন ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের ছোট ভাই সোহেল। ইউপি নির্বাচন-পরবর্তী বিরোধ নিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওই ঘটনার জেরে চেয়ারম্যানের সমর্থকেরা রাতে এলাকার বিভিন্ন ঘরবাড়িতে ভাঙচুর চালায়। ঘটনার পর প্রথম ১০ দিন ওই এলাকার বাজারগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। এখন ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও জনমনে আতঙ্ক কমেনি। অনেক পরিবার এখনো পুরুষশূন্য।

এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা বলছেন, তাঁরা নির্দোষ। অথচ ওই দিন চেয়ারম্যানের ভাই মারা যাওয়ায় এলাকার বিভিন্ন বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। আহত হয় ঘরের ভেতরে থাকা ছোট শিশুসহ নারীরাও। সখিনা বেগম নামের স্থানীয় এক বয়োবৃদ্ধ নারী বলেন, ‘এখনো রাতে ভয়ে ভয়ে থাকি। কখন কী হয়! রাতে মুখোশ পরে কারা যেন ঘোরাফেরা করে। রাতে ঘরের লাইট বন্ধ করে দিয়ে ঘুমাতে হচ্ছে।’

বুধপরা বাজারে যে জায়গায় সোহেল খুন হন, সেখানে একটি দোকানে ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি মালামাল লুটের অভিযোগ উঠেছে। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানটির মালিক জাহাঙ্গীর আলম। তাঁর দোকানের সামনেই খুন হন সোহেল। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় জাহাঙ্গীরকেও আসামি করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি পলাতক আছেন। তাঁর মা ময়ূর খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো কিছুতেই নেই। তাঁর একটা মুদিদোকান আছে। দোকান হওয়ায় সেখানে অনেকেই আসত। এ কারণে চেয়ারম্যানের লোকজনের তাঁর ওপর ক্ষোভ ছিল।’

এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলের পাশে মেসার্স এস এম টিম্বার নামের একটা করাতকল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্বৃত্তরা মিলটির কয়েক লাখ টাকার কাঠ লুট করে নিয়ে যায়। পরে আগুন ধরিয়ে মিলটি পুড়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। মিলটির মালিক মোহাম্মদ আলী।

মোহাম্মদ আলীর বাবা গাজী আবুল কাশেম বলেন, ‘এ ঘটনায় ৬ জনের নামে এবং অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে কদিন আগে থানায় অভিযোগ দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে থানা অভিযোগ গ্রহণ করেনি।’

এঁদের মতো আরও একাধিক ঘরবাড়িতে তাণ্ডবের নৃশংস চিত্র দেখা যায়। এলাকাবাসীর একটি অংশে এখনো আতঙ্ক রয়ে গেছে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ঘটনার পর থেকেই দোকান বন্ধ রাখতে শাসিয়ে গেছেন চেয়ারম্যানের লোকজন। আর বন্ধ না করলে জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে গেছেন। সেই ভয়ে ব্যবসায়ীরা কেউ দোকান খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।

জানতে চাইলে কাশিয়াইশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, ‘যা হওয়ার হয়ে গেছে। আমার ভাই মারা গেছে, তাকে তো আর ফিরে পাব না। এলাকায় যারা পালিয়ে আছে, তাদের ঈদে এসে বাড়িতে ঈদ উদ্‌যাপন করতে আমার লোকজন বলেছিল।’

পটিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাশেদুল ইসলাম বলেন, এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করা হয়েছে স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য। তাঁদের জানমালের স্বার্থ রক্ষার্থে পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তামূলক সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরপরও কারও কোনো অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভাঙচুর ও লুটপাট প্রসঙ্গে রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম থানায় একটি অভিযোগ করেছেন। আমরা এটা এজাহার হিসেবে নেব।’

অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া পটিয়ায় ইউপি নির্বাচন ইস্যু নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে খুন হন মো. সোহেল। তাঁর ভাই আবুল কাশেম এলাকায় প্রভাবশালী। তিনি ছয়বারের মতো ওই ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ঘটনার পরদিন আবুল কাশেম বাদী হয়ে পটিয়া থানায় ৮ জনের নামে এবং অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় ৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

মানবিক করিডর না ভূরাজনৈতিক কৌশল? সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় উদ্বেগ

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা–ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

ভারত–বাংলাদেশ বাণিজ্য বিধিনিষেধের মূল্য গুনছেন ব্যবসায়ীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত