Ajker Patrika

মধুমতীতে বালুখেকোর থাবা

মোহাম্মদ উজ্জ্বল, মহম্মদপুর (মাগুরা)
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ০৮
মধুমতীতে বালুখেকোর থাবা

মাগুরার মহম্মদপুরে মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী একটি চক্র। গত কয়েক বছর ধরে চলছে এ বালু উত্তোলন। প্রতিদিন শত শত ট্রলিবোঝাই বালু উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আবার খালি গাড়ি নিয়ে ফিরে যাচ্ছে নদীর চরে। এভাবে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে বালু উত্তোলন।

জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় ইমরুল ও সেলিম রেজা নামে দুই প্রভাবশালী।

এ ব্যাপারে প্রশাসনের অভিযান কাজে আসছে না বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দু-একটা অভিযান চললে সাময়িক সময়ের জন্য বালু উত্তোলন বন্ধ হয়। প্রশাসন চলে গেলেই আবার শুরু হয় বালু উত্তোলন। অবৈধভাবে এ বালু তোলার কারণে নদীভাঙনের আশঙ্কাসহ কাঁচা-পাকা সড়ক নষ্টসহ নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এলাকার মানুষ।

সরেজমিন দেখা যায়, মধুমতী নদীর বুক থেকে একসঙ্গে তিনটি অবৈধ ট্রলিতে বালু কাটছেন শ্রমিকেরা। ঘটনাস্থলে এক ট্রলিচালককে পাওয়া গেলে তিনি জানান, প্রতি গাড়িতে ১০০ বর্গফুট বালু ধরে। গাড়িপ্রতি ২০০ টাকা করে দিতে হয় ইমরুলকে। প্রতি গাড়ির হিসাব রাখেন ইমরুল ও সেলিমের একজন ম্যানেজার।

প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ মিনি ট্রাক বালু এসব পয়েন্ট থেকে উত্তোলন করা হয়। প্রতি মিনি ট্রাকে গড়ে ২০০ ঘনফুট বালু ধরে। এক ট্রাক বালু বিক্রি হয় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ টাকার বালু বিক্রি করছেন এসব প্রভাবশালীরা।

বালু কোথায় যাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি জানান, মানুষের বাড়ি ও বিভিন্ন রাস্তা নির্মাণকাজে এ বালু চড়া দামে বিক্রি করা হয়।

তিনি আরও বলেন, তাঁর কাজ শুধু মালিকের কথামতো বিক্রি করা বালু জায়গায় পৌঁছে দেওয়া।

জানা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজনকে ম্যানেজ করে পাল্লা-শিরগ্রাম এলাকার মধুমতী নদীর পাড়েই সমতল জায়গা থেকে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক গাড়ি বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে এ এলাকাসহ আশপাশের এলাকার শত শত একর জমি আগামী বর্ষা মৌসুমে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এমনকি অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে কাশিপুর এলাকার ভাঙন রোধ করতে ব্যবহৃত কোটি কোটি টাকার ব্লক ও জিওব্যাগ ধ্বংস হতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

নদীপাড়ের বাসিন্দা আলী হোসেন বলেন, ইমরুলকে বালু কাটতে বাধা দিলে সে বলে ডিসি অফিস ও এসিল্যান্ডের অফিস থেকে লিখিত অনুমতি এনেছেন। লিখিত কাগজ দেখতে চাইলে তিনি কখনো সেই কাগজ কাউকে দেখান না।

বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন স্থানীয়রা ।

এ বিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করে সেলিম রেজা বলেন, আমিসহ আরও দুজন ফরিদপুর জেলার লঙ্কারচড় বালু মহলের কাছ থেকে বালু কিনেছি। তাঁদের নির্দেশে বালু তুলে এলাকায় বিক্রি করি। এখানে মহম্মদপুরের কারও অনুমতি লাগে না।

মহম্মদপুর উপজেলার মধুমতি অংশের বালু ফরিদপুর জেলার লোকজন কীভাবে বিক্রি করে আর আপনি বা কীভাবে কিনলেন এর কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।

স্থানীয় দীঘা ইউপি চেয়ারম্যান খোকন মিয়া বলেন, ‘আমার এলাকায় দীর্ঘদিন বালু উত্তোলন হয়। নিষেধ করার পরও অভিযুক্তরা শোনেন নাই। নতুন করে ওই স্থানে এলাকার লোকজন ও চৌকিদার নিয়ে লাল নিশান টাঙিয়ে দিয়েছি।’

মহম্মদপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. দবির হোসেন বলেন, উপজেলা ভূমি অফিস থেকে কাউকে নদী থেকে বালু কাটতে লিখিত বা মৌখিক কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। যদি কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেন তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামানন্দ পাল বলেন, বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফরিদপুরে পালিয়ে যাওয়া আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার, থানার ওসিকে বদলি

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় ভারতের উদ্বেগ

কাতারের রাজপরিবারের দেওয়া বিলাসবহুল বিমান না নেওয়াটা বোকামি: ট্রাম্প

সৌদি আরবের সঙ্গে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করে নিজের রেকর্ড ভাঙল যুক্তরাষ্ট্র

পুলিশ হত্যাকারী ফোর্স হতে পারে না: আইজিপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত