সম্পাদকীয়
১৬ ডিসেম্বর রাতে ফোন আসে আমার আম্মার নম্বরে। অপর প্রান্ত থেকে নাম-পরিচয় দিয়ে শিল্পী ফরিদ বঙ্গবাসী বললেন, ‘আগামীকাল সকাল ৯টায় এ সপ্তাহের গানের অনুষ্ঠান “সূচয়ন”-এ আমার সুর ও কণ্ঠে আপনার লেখা একটি গান প্রচারিত হবে বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে।’ খবরটি শোনার পর ঘরের সবাই যেন ফিরে গেলাম সুদূর অতীতে।
ছোটবেলা। গ্রীষ্ম বা শীতের সকাল। গোল হয়ে পড়তে বসেছি গ্রামের বাড়ির টিনের ঘরে। পাশেই কোথাও বসে আছেন আব্বা। কড়া পাহারাদার। একটা রেডিও বাজছে নিচুস্বরে। আমাদের উচ্চ স্বরে পড়ার শব্দ আর রেডিওর শব্দ মিলেমিশে একাকার। মাঝে মাঝে বাবার হাঁকডাক, সতর্ক সংকেত।
কখনো ঘটত অন্য রকম ঘটনাও। যেকোনো গান বা অনুষ্ঠানের শেষে ঘোষকের কণ্ঠে হঠাৎ শোনা যেত, ‘এখন শুনবেন পল্লিগীতি। গানটির কথা লিখেছেন মারজান আহসান মুক্তা, সুর ও কণ্ঠ দিয়েছেন মোখলেছুর রহমান।’ অথবা কখনো কখনো শোনা যেত, ‘আজকের গীতিকার কাজী শামসুল আহসান খোকন।’ প্রসঙ্গত, কাজী শামসুল আহসান খোকন আমার আব্বা, মারজান আহসান মুক্তা আমার আম্মা। দুজনই বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার।
রেডিওতে ঘোষণা শুনে আব্বা চিৎকার করে উঠতেন। আমাদের পড়ার শব্দ বন্ধ হয়ে যেত। রেডিওর ভলিউমটা আব্বা বাড়িয়ে দিতেন সর্বোচ্চে। আম্মা তখন রান্নাঘরে সকালের নাশতা তৈরিতে কিংবা অন্য কাজে ব্যস্ত। খবর পেয়ে ছুটে আসতেন তিনি। যতক্ষণ গান বাজত, যেন স্বর্গ নেমে আসত আমাদের ছোট ঘরে। বাড়ির অন্যরাও এসে ভিড় করতেন দরজা-জানালার আশপাশে। গান শেষ হওয়ার পরও কয়েক দিন লেগে থাকত আনন্দের রেশ। রাতে অফিস থেকে ফিরে আব্বা বর্ণনা করতেন, কে কে গানটি শুনেছেন, কে কী মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ দূরদূরান্ত থেকে আমাদের বাড়িতে এসে জানিয়ে যেতেন যে তাঁরা গানটি শুনেছেন।
অনেক দিন পর রেডিওতে আম্মার গান প্রচারের খবর শুনে পরিবারের সবাই আনন্দে আত্মহারা। কিন্তু রেডিও কোথায় পাই? ঘরে পুরোনো একটা ছিল। বিদ্যুৎ-সংযোগ দিয়ে দেখি সে মৃত। কী উপায়? আব্বা অনেক দোকানে খুঁজে একটা রেডিও আনলেন। রেডিও পাওয়াটাও এখন দুষ্কর। এদিকে আমি ফেসবুকে পোস্ট করে গানটি শোনার আমন্ত্রণ জানালাম। বন্ধু তালিকার অনেকেই গানটি শোনার আগ্রহ প্রকাশ করে জানালেন তাঁদের কাছে রেডিও নেই। কয়েকজন পরামর্শ দিলেন, মোবাইলে সফটওয়্যার ডাউনলোড করে রেডিও শোনা যায়। অবশেষে পরদিন সকাল ৯টায় রেডিও ও মোবাইলে আমরা গানটি শুনলাম।
আজ থেকে ১০-১২ বছর আগেও গ্রামগঞ্জে, এমনকি শহরেও ঘরে ঘরে রেডিও ছিল। দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর বালিশের পাশে রেডিওটা রেখে শুয়ে শুয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের অনুরোধের গান শোনা ছিল বিলাসিতা। শীতের রোদ পোহাতে পোহাতে একটানা ক্রিকেট বা ফুটবলের ধারাভাষ্য শোনার সে কী আনন্দ! রাতের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান দেশ-বিদেশের খবর নিয়ে বিবিসি বাংলা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় উপকূলীয় এলাকার মানুষের কাছে রেডিওতে প্রচারিত আবহাওয়া বার্তার আবেদন ছিল। আরও কত অনুষ্ঠান। ধীরে ধীরে রেডিওর জায়গা দখল করে নিয়েছে টেলিভিশন। টেলিভিশনকে হটিয়ে বর্তমানে রাজত্ব করছে ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।
আগের দিনের রেডিও মানেই এমন একটি যন্ত্র, যেটি বেতার তরঙ্গের নির্দিষ্ট কিছু কম্পাঙ্কে বা ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে। নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের ওই বেতারকেন্দ্রগুলো থেকে পাঠানো কথা বা গান শোনা যেত রেডিওতে। এখন শ্রোতারা রেডিও শোনেন, তবে রেডিওতে নয়, মোবাইল ফোনে। রেডিও এখন দেখারও বটে। ফেসবুকে রেডিও দেখা যাচ্ছে টেলিভিশনের মতোই। কোনো কোনো রেডিওর রয়েছে ইউটিউব চ্যানেল। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে রেডিও।
দেশে এখন চারটি ধারায় রেডিওর সম্প্রচার হয়ে থাকে—সরকারি রেডিও, আন্তর্জাতিক রেডিও, বাণিজ্যিক রেডিও ও কমিউনিটি রেডিও। এর বাইরে সীমিতভাবে কয়েকটি ইন্টারনেট রেডিও চালু আছে। যুক্ত হয়েছে নতুন ও ভিন্নধর্মী নানান অনুষ্ঠান। তারপরও আগের মতো পরিবারের সবাই মিলে অথবা নির্জন জায়গায় বসে একা একা রেডিও শোনার সে আনন্দ কি এখন আছে? আগের মতো সময় ও আগ্রহ নিয়ে মানুষ কি এখন রেডিও শোনে?
১৬ ডিসেম্বর রাতে ফোন আসে আমার আম্মার নম্বরে। অপর প্রান্ত থেকে নাম-পরিচয় দিয়ে শিল্পী ফরিদ বঙ্গবাসী বললেন, ‘আগামীকাল সকাল ৯টায় এ সপ্তাহের গানের অনুষ্ঠান “সূচয়ন”-এ আমার সুর ও কণ্ঠে আপনার লেখা একটি গান প্রচারিত হবে বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে।’ খবরটি শোনার পর ঘরের সবাই যেন ফিরে গেলাম সুদূর অতীতে।
ছোটবেলা। গ্রীষ্ম বা শীতের সকাল। গোল হয়ে পড়তে বসেছি গ্রামের বাড়ির টিনের ঘরে। পাশেই কোথাও বসে আছেন আব্বা। কড়া পাহারাদার। একটা রেডিও বাজছে নিচুস্বরে। আমাদের উচ্চ স্বরে পড়ার শব্দ আর রেডিওর শব্দ মিলেমিশে একাকার। মাঝে মাঝে বাবার হাঁকডাক, সতর্ক সংকেত।
কখনো ঘটত অন্য রকম ঘটনাও। যেকোনো গান বা অনুষ্ঠানের শেষে ঘোষকের কণ্ঠে হঠাৎ শোনা যেত, ‘এখন শুনবেন পল্লিগীতি। গানটির কথা লিখেছেন মারজান আহসান মুক্তা, সুর ও কণ্ঠ দিয়েছেন মোখলেছুর রহমান।’ অথবা কখনো কখনো শোনা যেত, ‘আজকের গীতিকার কাজী শামসুল আহসান খোকন।’ প্রসঙ্গত, কাজী শামসুল আহসান খোকন আমার আব্বা, মারজান আহসান মুক্তা আমার আম্মা। দুজনই বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার।
রেডিওতে ঘোষণা শুনে আব্বা চিৎকার করে উঠতেন। আমাদের পড়ার শব্দ বন্ধ হয়ে যেত। রেডিওর ভলিউমটা আব্বা বাড়িয়ে দিতেন সর্বোচ্চে। আম্মা তখন রান্নাঘরে সকালের নাশতা তৈরিতে কিংবা অন্য কাজে ব্যস্ত। খবর পেয়ে ছুটে আসতেন তিনি। যতক্ষণ গান বাজত, যেন স্বর্গ নেমে আসত আমাদের ছোট ঘরে। বাড়ির অন্যরাও এসে ভিড় করতেন দরজা-জানালার আশপাশে। গান শেষ হওয়ার পরও কয়েক দিন লেগে থাকত আনন্দের রেশ। রাতে অফিস থেকে ফিরে আব্বা বর্ণনা করতেন, কে কে গানটি শুনেছেন, কে কী মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ দূরদূরান্ত থেকে আমাদের বাড়িতে এসে জানিয়ে যেতেন যে তাঁরা গানটি শুনেছেন।
অনেক দিন পর রেডিওতে আম্মার গান প্রচারের খবর শুনে পরিবারের সবাই আনন্দে আত্মহারা। কিন্তু রেডিও কোথায় পাই? ঘরে পুরোনো একটা ছিল। বিদ্যুৎ-সংযোগ দিয়ে দেখি সে মৃত। কী উপায়? আব্বা অনেক দোকানে খুঁজে একটা রেডিও আনলেন। রেডিও পাওয়াটাও এখন দুষ্কর। এদিকে আমি ফেসবুকে পোস্ট করে গানটি শোনার আমন্ত্রণ জানালাম। বন্ধু তালিকার অনেকেই গানটি শোনার আগ্রহ প্রকাশ করে জানালেন তাঁদের কাছে রেডিও নেই। কয়েকজন পরামর্শ দিলেন, মোবাইলে সফটওয়্যার ডাউনলোড করে রেডিও শোনা যায়। অবশেষে পরদিন সকাল ৯টায় রেডিও ও মোবাইলে আমরা গানটি শুনলাম।
আজ থেকে ১০-১২ বছর আগেও গ্রামগঞ্জে, এমনকি শহরেও ঘরে ঘরে রেডিও ছিল। দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর বালিশের পাশে রেডিওটা রেখে শুয়ে শুয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের অনুরোধের গান শোনা ছিল বিলাসিতা। শীতের রোদ পোহাতে পোহাতে একটানা ক্রিকেট বা ফুটবলের ধারাভাষ্য শোনার সে কী আনন্দ! রাতের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান দেশ-বিদেশের খবর নিয়ে বিবিসি বাংলা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় উপকূলীয় এলাকার মানুষের কাছে রেডিওতে প্রচারিত আবহাওয়া বার্তার আবেদন ছিল। আরও কত অনুষ্ঠান। ধীরে ধীরে রেডিওর জায়গা দখল করে নিয়েছে টেলিভিশন। টেলিভিশনকে হটিয়ে বর্তমানে রাজত্ব করছে ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।
আগের দিনের রেডিও মানেই এমন একটি যন্ত্র, যেটি বেতার তরঙ্গের নির্দিষ্ট কিছু কম্পাঙ্কে বা ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে। নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের ওই বেতারকেন্দ্রগুলো থেকে পাঠানো কথা বা গান শোনা যেত রেডিওতে। এখন শ্রোতারা রেডিও শোনেন, তবে রেডিওতে নয়, মোবাইল ফোনে। রেডিও এখন দেখারও বটে। ফেসবুকে রেডিও দেখা যাচ্ছে টেলিভিশনের মতোই। কোনো কোনো রেডিওর রয়েছে ইউটিউব চ্যানেল। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে রেডিও।
দেশে এখন চারটি ধারায় রেডিওর সম্প্রচার হয়ে থাকে—সরকারি রেডিও, আন্তর্জাতিক রেডিও, বাণিজ্যিক রেডিও ও কমিউনিটি রেডিও। এর বাইরে সীমিতভাবে কয়েকটি ইন্টারনেট রেডিও চালু আছে। যুক্ত হয়েছে নতুন ও ভিন্নধর্মী নানান অনুষ্ঠান। তারপরও আগের মতো পরিবারের সবাই মিলে অথবা নির্জন জায়গায় বসে একা একা রেডিও শোনার সে আনন্দ কি এখন আছে? আগের মতো সময় ও আগ্রহ নিয়ে মানুষ কি এখন রেডিও শোনে?
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৩ দিন আগেপাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
৩ দিন আগেভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
৪ দিন আগেঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫