Ajker Patrika

ছয় মাসে ঝরেছে ২৭ প্রাণ

সাইফুল আলম তুহিন, ত্রিশাল
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২২, ১১: ৫৯
ছয় মাসে ঝরেছে ২৭ প্রাণ

ত্রিশালে ছয় মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ২৭ জনের। এ সময়ে আহত হয়েছেন শতাধিক। এর মধ্যে একই পরিবারের চারজন রয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মারা যাওয়ায় অনেক পরিবারে নেমে এসেছে দুর্বিষহ কষ্ট। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল অংশে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটলেও এর কারণ অনুসন্ধান ও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসব দুর্ঘটনার চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বেশির ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা পণ্যবাহী ট্রাকের সঙ্গে ঘটেছে। বিকল হওয়ার পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা এমনকি কয়েক দিন সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকছে। উপজেলার কাজির শিমলা এলাকায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দাঁড়িয়ে থাকা বালু ভর্তি ট্রাকের পেছনে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় এক শিশু নিহত হয়। আহত হয় অন্তত ৪০ জন। ৩১ জানুয়ারি উজান বৈলর মণ্ডল বাড়ি মোড়ে দাঁড়ানো মাহেন্দ্রকে পেছন থেকে একটি ট্রাক ধাক্কা দিলে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও ৪ জন।

গত ১৪ জানুয়ারি মহাসড়কের ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গেটের সামনে বাসের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়। ২ ফেব্রুয়ারি রাগামারায় ড্রাম ট্রাকের সঙ্গে প্রাইভেটকারের সংঘর্ষে একজন নিহত হন। ২০ ডিসেম্বর নওধার জিরো পয়েন্টে দাঁড়ানো ট্রাক ও অটোয় বাসের ধাক্কায় দুজন নিহত হন। আহত হন অন্তত পাঁচজন। ১৬ ডিসেম্বর ত্রিশাল-বালিপাড়া সড়কের বেলতলী এলাকায় ট্রাক ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়।

এ ছাড়া ত্রিশাল-বালিপাড়া সড়কের রামপুরে গত ১০ নভেম্বর সকালে বালুবাহী ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হন। ২ নভেম্বর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কাজীর শিমলার দুলালবাড়ীতে মোটরসাইকেলকে একটি কাভার্ড ভ্যান ধাক্কা দিলে দুই সহোদর নিহত হন। ২০ অক্টোবর মহাসড়কের আমিরাবাড়ী এলাকায় যাত্রীবাহী লেগুনা ও ট্রাকের সংঘর্ষে দুজন মারা যান। আরও অন্তত ১২ জন আহত হন।

এদিকে ১৬ অক্টোবর মহাসড়কের চেলেরঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা পাথর ভর্তি ড্রাম ট্রাককে ধাক্কা দিলে সাতজন নিহত হন। আহত হন ১০ জন। ২০ আগস্ট দরিরামপুর এলাকায় মালবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এতে দুজন আহত হন। ১৪ আগস্ট মহাসড়কের বড় পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা বিকল ট্রাকে বাসের ধাক্কায় ছয়জন নিহত হন। আহত হন অন্তত ১২ জন।

স্থানীয় বাসিন্দা কাজল, শরীফ, নয়নসহ আরও কয়েকজন বলেন, সড়কে শৃঙ্খলার বড়ই অভাব। দুর্ঘটনা কমাতে হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো জরুরি। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা প্রয়োজন। এ নিয়ে প্রশাসনের উদাসীনতা কষ্টকর ও লজ্জাজনক।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিসের জেলা কর্মকর্তা নিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনাগুলো বিভিন্ন কারণে ঘটছে। তবে অসচেতনভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বা বিকল হয়ে পড়ে থাকা গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে বড় কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। অদক্ষ চালক, অবৈধ থ্রি হুইলার, বেপরোয়া গতি ও রাস্তার পাশে রাখা বালু মূলত দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এ ব্যাপারে আমাদের সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।’

ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘সম্প্রতি ত্রিশাল অংশে বেশ কয়েকটি বড়সড় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। ধারণক্ষমতার চাইতে বেশি পণ্য নিয়ে যাত্রা করতে গিয়ে নিয়মিত বিকল হয়ে পড়ে থাকছে গাড়ি। দুর্ঘটনা এড়াতে মালিকের উচিত দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া অথবা পুলিশকে অবগত করা। নিষিদ্ধ থ্রি হুইলার, অনিয়ন্ত্রিত গতি ও সড়কে রাখা বালুও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।’

ময়মনসিংহ অঞ্চলের সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা জেনেছি মহাসড়কে দুর্ঘটনার জন্য অবৈধভাবে পাশে রাখা বালুও অনেকাংশে দায়ী। ইতিমধ্যে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। মহাসড়কে চলা অবৈধ যানবাহন, মালামাল ও স্থাপনা সরাতে অভিযান চলমান থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইস্পাহানে বাংকার বাস্টার মারেনি যুক্তরাষ্ট্র, অক্ষত ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম

বাবুই পাখির কান্না কেউ শুনল না, কেটে ফেলা হলো তালগাছটি

ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভারতের সংসদীয় কমিটির দীর্ঘ বৈঠক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা: নান্দাইলে সাবেক এমপি-মন্ত্রীকন্যার বিরুদ্ধে মামলা

গোষ্ঠীস্বার্থে বহু মানুষের স্বপ্ন নষ্ট করেছে এই প্ল্যাটফর্ম: দায়িত্ব ছেড়ে উমামা ফাতেমার পোস্ট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত