Ajker Patrika

হক সাহেবের বাঁচা-মরা

সম্পাদকীয়
হক সাহেবের বাঁচা-মরা

কামরুদ্দীন আহমদ তখন কলকাতায়। হাইকমিশনে চাকরি। সৈয়দ আজিজুল হক নান্না মিয়ার টেলিফোন পেলেন তিনি। নান্না মিয়া জানালেন, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের শরীরের অবস্থা সংকটাপন্ন। যেকোনো মুহূর্তে মারা যেতে পারেন। কলকাতায় ডা. মণি দে আছেন, তাঁকে যত শিগগিরই সম্ভব পাঠিয়ে দিতে হবে ঢাকায়।

কামরুদ্দীন আহমদের রাজনীতির সঙ্গে শেরেবাংলার রাজনীতির কোনো মিল ছিল না। তাঁরা দুজনে সব সময় ভিন্নপথের যাত্রী। কিন্তু তাঁকে ভক্তি করতেন কামরুদ্দীন আহমদ। তিনি ছুটলেন ডা. মণি দের খোঁজে। বাড়ি গিয়ে শুনলেন, মণি দে কোথাও কলে গেছেন। কিন্তু কোথায় কলে গেছেন, তা বলতে পারল না বাড়ির লোকজন। পিআইএতে বুকিং করা হলো টিকিট, ক্যাপ্টেনকে বলে দেওয়া হলো, যতক্ষণ কামরুদ্দীন সাহেব না আসছেন, ততক্ষণ প্লেন যেন ছাড়া না হয়।

ডা. মণি দে আসার পর তিনি ঢাকায় ফোন করলেন ডা. শামসুদ্দীনের কাছে। কথাবার্তা যা হলো, তাতে মনে হলো অবস্থা আশাপ্রদ নয়। ডা. মণি দে বললেন, ‘বাঁচার কোনো চান্স নেই। ডা. শামসুদ্দীন যে ওষুধ দিয়েছেন, ওটা ঘরে রাখা ঠিক হয়নি। একটা করে দিলে হতো। আমাকে হয়তো এয়ারপোর্ট থেকেই ফিরে আসতে হতে পারে।’

ডা. দে গেলেন ঢাকায়। ফিরেও এলেন হাসতে হাসতে। বললেন, ‘আমি তো শামসুদ্দীনকে খুব বকেছি। একটা করে ওষুধ না দিয়ে পুরো পাতা হক সাহেবের কাছে দেওয়া হলো কেন? কিন্তু হক সাহেব বাংলার রাজনীতিতে যেমন অর্ধশতাব্দী অভিনয় করে হাত পাকিয়েছেন, এবার তিনি যমরাজের সঙ্গেও অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে অভিনয় করে যমরাজকে ফেরত পাঠিয়ে দিতে পেরেছেন। যমরাজ বুঝতে পারেনি হক সাহেব জীবিত না মৃত।’

হক সাহেব সেবার পাতার নয়টি ওষুধ একসঙ্গে খেয়ে নিয়েছিলেন। নয়টা পিল শক্তিশালী কোনো যুবকের পক্ষেও হজম করা অসম্ভব! হক সাহেব দিব্যি সামলে নিয়েছেন। 

সূত্র: কামরুদ্দীন আহমদ, বাংলার এক মধ্যবিত্তের আত্মকাহিনী, পৃষ্ঠা ২১৪-২১৫

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত