Ajker Patrika

ওয়েড জানতেন, কীভাবে জিততে হয়

বোরহান জাবেদ, ঢাকা
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২১, ১৪: ২০
ওয়েড জানতেন, কীভাবে জিততে হয়

অস্ট্রেলিয়ানরা হারার আগে হারে না—প্রচলিত কথাটা ধ্রুব সত্য হয়ে গেছে অনেক আগেই। তা ম্যাথু ওয়েডও তো একজন অস্ট্রেলিয়ান। তিনিই-বা কেন বিনা যুদ্ধে হার মানবেন? মাত্র ১৬ বছর বয়সে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন, সেই যুদ্ধে হার মানেননি। আরেকবার যখন ক্যারিয়ার বাঁচানোর প্রশ্ন উঠে গেছে, এবারও ওয়েড জয়ীর বেশেই ফিরলেন।

মঞ্চটা প্রস্তুতই ছিল ওয়েডের জন্য। পুরো ক্যারিয়ারে সে অর্থে পাদপ্রদীপের আলোয় আসতে পারেননি। ২০১১ সালে কেপটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচয়। শুরুর এক-দেড় বছর সামর্থ্যের প্রমাণ দিলেও ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেননি কখনোই। দলে আসা-যাওয়ার মধ্য দিয়েই গেছেন বেশির ভাগ সময়। ২০১৭ সালের পর তো সব সংস্করণের দল থেকেই বাদ পড়ে যান।

অ্যালেক্স ক্যারি, পিটার হ্যান্ডসকম্ব, টিম পেইনরা ওয়েডের ফেরাটা কঠিনই করেছেন। তাঁদের ভিড়ে হয়তো অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে ক্যারিয়ারের শেষটাই দেখে ফেলেছিলেন! যেমনটা দুবাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে দলকে ফাইনালে তোলা ইনিংসের পর বলছিলেন, ‘ভেবেছিলাম, এটিই হয়তো অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে আমার শেষ ম্যাচ।’ ঘরের মাঠে ২০১৯ সালের অ্যাশেজ দিয়ে দলে ফিরেছিলেন। ওয়েডের জন্য এবার টিকে থাকার চ্যালেঞ্জটা ছিল আরও কঠিন। উইকেটকিপার-ব্যাটার থেকে দলে ঢুকেছেন শুধুই ব্যাটার হিসেবে। দুই সেঞ্চুরিতে কঠিন পরীক্ষাটা স্মরণীয় করে উতরে যান।

তবে যে জন্য ওয়েডকে নিয়ে লেখা, সেই টি-টোয়েন্টিতে গত বছরের ডিসেম্বরে সিডনিতে ভারতের বিপক্ষে ৮০ রানের ইনিংসের পর ব্যাট কথা বলছিল না ঠিকঠাক। বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়াটাও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তাঁর জায়গায় বিগ ব্যাশ মাতানো জশ ইংলিশকে কেন নিয়মিত সুযোগ দেওয়া হচ্ছিল না, সেই আলোচনা চলেছে জোরেশোরে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে মার্কাস স্টয়নিসকে সঙ্গ দিয়ে দলকে জেতান। পরের দুই ম্যাচে আবার সেই পুরোনো ওয়েড, শেষ দুই ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি। সেমিফাইনালে আরেকবার যখন সুযোগ পেলেন, সঙ্গী সেই স্টয়নিস। এরপর কী হয়েছে, সেটা তো এখনো তরতাজাই।

তবে ওয়েডের এই রোলারকোস্টার যাত্রাটা হয়তো থেমে যেতে পারত ১৬ বছর বয়সেই। তখনো ক্যানসার জয়ের উদাহরণ হননি যুবরাজ সিং কিংবা কিংবদন্তি সাইক্লিস্ট ল্যান্স আর্মস্ট্রং। রাজ্যের জুনিয়র ফুটবল দলের হয়ে খেলার সময় একদিন কুঁচকিতে বলের আঘাত পান। গুরুতর না হলেও কিছুদিন পর সেই আঘাত ওয়েডকে হাসপাতাল পর্যন্ত টেনে আনে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানতে পারেন, শরীরে টেস্টিকুলার ক্যানসার। শুরু হয় চিকিৎসা। ধকল নেওয়াটা ওয়েড শিখে যান সেই তরুণ বয়সেই, কেমো থেরাপির ধকল। দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর কেমো থেরাপি শেষে কিছুদিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে ওঠেন।

ক্যানসার ওয়েডের পেশাদার খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্নে ধাক্কা দেয়। দুঃসহ সময়ের পর জীবনকে উপভোগ করতে তবু খেলা চালিয়ে যান। সেখান থেকে সুযোগ পান তাসমানিয়ার রাজ্যে দলে। ফুটবল বাদ দিয়ে ক্রিকেটকে ধ্যানজ্ঞান করেন। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে খুব কম সময় দলের প্রথম পছন্দ হতে পেরেছেন। এখানেও সেই বিপত্তি, উইকেটকিপার হিসেবে তাসমানিয়া দলে নির্বাচকদের প্রথম পছন্দ ছিলেন এখনকার অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অধিনায়ক পেইন। হাল না ছেড়ে ওয়েড পাড়ি জমান ৫৬০ কিলোমিটার দূরের ভিক্টোরিয়া রাজ্যে। যখন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন, তখন জানতেন কীভাবে ফিরতে হয়। এখনো জানেন কীভাবে জেতাতে হয়। জেতাটা তো ওয়েড শিখে গিয়েছিলেন সেদিনই!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মালয়েশিয়ায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ, আবেদন ফি মাত্র ১৪ হাজার টাকা

বিএসএফের হাতে আটক বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তার পরিচয় মিলেছে

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাইরান কাজীর বিষয়ে ইলন মাস্কের মন্তব্যে বিস্ময়

অমীমাংসিত বিষয় সমাধানে পাকিস্তানের দাবি নাকচ করল সরকার

১৫ বছর যাদের জন্য লড়াই করলাম, তারা এখন আমাকে ধাক্কা দেয়: রুমিন ফারহানা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত