Ajker Patrika

মর্মান্তিক

সম্পাদকীয়
মর্মান্তিক

ফুটবল মাঠে ১২৫ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে ইন্দোনেশিয়ার মালাং শহরে। মালাং পূর্ব জাভার একটি শহর। এখন পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা উল্লেখ করা হলো। কিন্তু পদদলিতহয়ে কিংবা কাঁদানে গ্যাসের কারণে শ্বাসকষ্ট নিয়ে যাঁরা হাসপাতালে আছেন, তাঁদের মধ্য থেকে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। মালাং শহরের কানজুরুহান স্টেডিয়ামটি ক্রীড়া ইতিহাসের এক বেদনাদায়ক ভেন্যু হিসেবেই পরিচিতি পাবে।

সংবাদপত্রে সংবাদমূল্য নির্ধারিত হয় কিছু বৈশিষ্ট্য দিয়ে। এই বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে ‘নৈকট্য’ বলে একটা বিষয় আছে। আমার নিজের খবর সবচেয়ে জরুরি, তারপর আমার পরিবারের, এরপর মহল্লার, এরপর শহরের, তারও পর দেশের। এভাবেই নৈকট্যের প্রসঙ্গটি ফিকে হতে হতে অঞ্চল ও মহাদেশকে ছাড়িয়ে যায়। যত দূরের খবর, ততই তা কম গুরুত্বপূর্ণ। আবার বহু দূরের দেশে আমাদের কোনো নিকটজনের খবরও কিন্তু কাছের বা নিকটের খবর। হৃদয়ের টান যেখানে আছে, সেখানেই পৌঁছে যায় হৃদয়।

ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে আমাদের নৈকট্য আছে কি নেই, সে প্রশ্নের জবাব এখানে গৌণ। সে দেশটির খেলার মাঠে ঘটা কোনো সংঘর্ষে এক বা দুজন মানুষ মারা গেলে তা নিয়ে এত বড় সংবাদ হতো না। ‘সংখ্যা’ও সংবাদমূল্যের আরেকটি ভিত্তি। সে সংখ্যাটিই ইন্দোনেশিয়ার এ দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটিকে আমাদের নিকটবর্তী করেছে।

সব সময়ই বলা হয়ে থাকে, খেলায় হার-জিত থাকবেই। একদল জিতবে, একদল হারবে। কিন্তু সেটা বড় কথা নয়, সবার ওপর জিততে হবে খেলাকে, খেলার মানসিকতাকে। এই সদুপদেশ খেলোয়াড়েরাই তো কখনো কখনো মানেন না, তাঁদের ভক্ত বা সমর্থকেরা মানবেন কেন? তাই খেলাকে কেন্দ্র করে মারপিট কোনো নতুন ঘটনা নয়।

একসময় বাংলাদেশের ফুটবল মাঠ শাসন করেছে মোহামেডান আর ওয়ান্ডারার্স। এরপর ওয়ান্ডারার্স নিষ্প্রভ হয়ে পড়ার পর মোহামেডান-আবাহনী হয়ে উঠেছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। মূলত বাংলাদেশে ফুটবলের স্বর্ণযুগে আবাহনী-মোহামেডান খেলায় উত্তেজিত দর্শকদের তাণ্ডবলীলা দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছে সেকালের মানুষের। পশ্চিমবঙ্গে মোহনবাগান-ইস্ট বেঙ্গলের খেলাও উত্তেজিত দর্শকদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। হাতের কাছের দুটো উদাহরণ দেওয়া হলো বলে মনে করার কোনো কারণ নেই যে পৃথিবীর অন্য মহাদেশগুলোর দর্শকেরা খুব শান্ত, ভদ্র। মোটেই না। ইংল্যান্ডে তো ক্রিকেট-ভক্ত-দর্শকেরা বার্মি আর্মি নাম নিয়ে গ্যালারিতে ঢোকেন। খেলা নিয়ে মারপিট আন্তমহাদেশীয় সমস্যা।

নিজের দল হারলে বা জিতলে ভক্ত-সমর্থকেরা যে অনর্থ ঘটান, তা গ্রহণযোগ্য নয়। সাধারণ ক্রীড়ামোদী দর্শক স্টেডিয়ামে যান ভালো খেলা দেখার জন্য। কিন্তু যদি প্রবল-ভক্ত হন কেউ, তাহলে তাঁদের স্লোগান হয় ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচ্যগ্র মেদিনী’। আর সে কারণেই জয়ের উল্লাসে কিংবা পরাজয়ের অপমানে মাঠের লড়াইকে তাঁরা নিয়ে আসেন রাস্তায় এবং তা থেকেই ঘটে মর্মান্তিক কোনো ঘটনা।
ইন্দোনেশিয়ায় যে পরিবারগুলো অকারণে প্রিয়জন হারাল, তাদের প্রতি আমরা সমব্যথী। খেলাকে জীবন-মরণ সমস্যা ভাবতে থাকলে এ ধরনের অঘটন ঘটতেই থাকবে। দুঃখ প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গাজীপুরে রাস্তা বন্ধ করে চলাচল করা সেই পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার

জামায়াত আমিরের বাসায় জ্যেষ্ঠ নেতাদের বৈঠক, পিআর নিয়ে অনড় অবস্থান

মির্জাপুরে বিএনপি নেতার পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৭

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, গুলি, এক শ্রমিক নিহত

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান পদ থেকে ইবরাহিমের নাম বাদ দিতে ইসিকে চিঠি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত