সিরাজুল ইসলাম
দুষ্টের দমন করার ক্ষমতা যাঁর হাতে, সেই বিচারপতিই এবার খুনি হয়ে গেলেন। তিনি হয়ে উঠলেন স্ত্রীর ঘাতক। যুক্তরাষ্ট্রের এক বিচারপতির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠল। তিনি মদ্যপ অবস্থায় স্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করেছেন। তাঁর বাড়ি থেকে পুলিশ ৪৭টি বন্দুক ও ২৬ হাজার গুলি উদ্ধার করেছে।
স্ত্রীকে হত্যার পর ফোন করে সহকর্মীকে বিচারপতি বলেন, ‘আগামীকাল আদালতে আসা হবে না, পুলিশের হেফাজতে থাকব।’ বাস্তবে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে তাঁকে তাঁর বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় পুলিশও বিস্মিত হয়। কারণ ওই বিচারকের বাড়িটি রীতিমতো অস্ত্রের ভান্ডার। পুলিশ জানিয়েছে, ৭২ বছর বয়সী বিচারপতির নাম জেফরি ফার্গুসন। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার অরেঞ্জ কাউন্টির সুপিরিয়র আদালতের বিচারপতি। হত্যা করেন স্ত্রী শার্লিকে (৬৫)। ঘটনার দিন বাড়ির কাছেই একটি রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের। তবে এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। শার্লির আইনজীবী জানিয়েছেন, ঝগড়ার মধ্যেই বিচারপতি শার্লির দিকে গুলি ছোড়ার ভঙ্গি করেন। এরপর স্ত্রী তাঁকে বলেন, ‘আসল বন্দুক দিয়েই গুলি করো।’ এরপরই কোমর থেকে বন্দুক বের করে স্ত্রীর বুক লক্ষ্য করে গুলি চালান বিচারপতি ফার্গুসন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শার্লির। এরপর বিচারপতি নিজেই ৯১১ নম্বরে ফোন করেন। পুলিশ এসে তাঁর বাড়ি থেকে ৪৭টি বন্দুক ও ২৬ হাজার গুলি উদ্ধার করে। ২০১৫ সাল থেকে বিচারপতির দায়িত্ব পালন করা ফার্গুসন স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর আইনজীবীর দাবি, ফার্গুসনের স্ত্রীকে গুলি করার ইচ্ছা ছিল না। এটা নিছক একটা দুর্ঘটনা।
সমস্যা ওই একই। পিতৃতান্ত্রিকতা। বিচারপতি এমনিতেই ক্ষমতাবান। কিন্তু সেই ক্ষমতার ওপর তাঁর আস্থা নেই, যে জন্য বাড়িতে ৪৭টি বন্দুক ও ২৬ হাজার গুলির এক অস্ত্রাগার বানিয়ে রেখেছেন। হতে পারে তাঁর স্ত্রী স্বামীর ক্ষমতার কাছে নতি স্বীকার করেননি; যে জন্য বাগ্বিতণ্ডা ঘটেছে এবং বোঝা যায় সেটা প্রায়ই ঘটত। স্ত্রীর চ্যালেঞ্জ স্বামীর জন্য মেনে নেওয়াটা সহজ ছিল না; যে জন্য গুলি করেই প্রমাণ করে দিয়েছেন যে উপেক্ষার পাত্র তিনি নন। আদালতে বাদী-বিবাদী, উকিল-মক্কেল যাঁকে অত সমীহ করেন, তিনি হেরে যাবেন নিজের স্ত্রীর কাছে, স্বগৃহে? হতেই পারে না।
সমাজ পিতৃতান্ত্রিক, যুগ যুগ ধরে ছিল এবং এখনো আছে। পিতৃতান্ত্রিকতা আর পুরুষতান্ত্রিকতা কিন্তু এক জিনিস নয়। হ্যাঁ, পুরুষদের পক্ষেই পিতৃতান্ত্রিক হওয়াটা সহজ এবং সেটা তাঁরা সাধারণত হনও, কিন্তু নারীরাও যে পিতৃতান্ত্রিক হতে পারেন না, এমন নয়। পরিবারের ভেতরে হন, সমাজে হন, রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রেও হয়ে থাকেন। পিতৃতান্ত্রিকতার অর্থ হচ্ছে কর্তৃত্ববাদিতা। পিতারাই সাধারণত ওই কর্তৃত্বের অধিকারী হন, সে জন্যই ওই নামকরণ। ট্রুডো-পত্নী সোফি গ্রেগেয়ার ওই পিতৃতান্ত্রিকতার বন্ধন থেকেই মুক্তি চেয়েছিলেন। মুক্তি অনেকেই চান, বিশেষভাবে নারীরা। কিন্তু উপায় খুঁজে পান না। তাই মেনে নেন। উপায় খুঁজে না পাওয়ার কারণ রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক গোটা ব্যবস্থাই আসলে পিতৃতান্ত্রিক। ব্যক্তির পক্ষে এর হাত থেকে অব্যাহতি পাওয়া কঠিন। সাহিত্যের দুই বিখ্যাত নারী চরিত্র মুক্তি চেয়েছিল—ইবসেনের নোরা এবং তলস্তয়ের আন্না কারেনিনা। ঘর-সংসার তাকে একটি পুতুলে পরিণত করেছে টের পেয়ে নোরা স্বামীগৃহ ত্যাগ করে নিজের জীবনকে মুক্ত করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে অজানা পথে বেরিয়ে পড়ে। আন্না কারেনিনা স্বামীকে ত্যাগ করে প্রেমিকের সঙ্গে গিয়ে ঘর বেঁধেছিল, দেখল যে স্বামী হওয়ার পরে প্রেমিকটিও আগের স্বামীর মতোই পিতৃতান্ত্রিক হয়ে গেছে। মুক্তির সব পথ অবরুদ্ধ দেখে আন্না শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করে। কিন্তু সেটা তো মুক্তি নয়, মৃত্যু বটে। সমস্যার মূলে রয়েছে অসাম্য। বন্ধুত্ব বলি কি বিবাহ বলি—সবখানেই সমতা চাই। একপক্ষ বড় আর অপরপক্ষ ছোট হলে অসুবিধা। ভারসাম্য থাকে না।
পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীদের নিরাপত্তাই শুধু নয়, সম্মানও বিঘ্নিত হয়। পদে পদে। একাত্তরে আমাদের নারীরা কেমন বিপদের মধ্যে নিক্ষেপিত হয়েছিলেন তার বিবরণ সংখ্যা দিয়ে বোঝানো যাবে না, বর্ণনায় কুলাবে না। যে নারীরা বিশেষভাবে অসম্মানিত হয়েছেন, কিন্তু প্রাণে বেঁচে গেছেন, তাঁদের কয়েকজনকে ‘বীরাঙ্গনা’ বলে সম্মানিত করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেটি যে একটি ভ্রান্ত প্রচেষ্টা ছিল, লাঞ্ছিতদের পক্ষে তা টের পেতে মোটেই বিলম্ব ঘটেনি। বীরাঙ্গনারা কেবল অবহেলার পাত্রীই হননি, অবহেলা তবু সহ্য করা গেছে, তাঁদের পক্ষে করুণার বোঝা বহন করা ছিল অবহেলার চেয়েও দুঃসহ। তা ছাড়া তাঁরা বিদ্রূপের পাত্রী হয়েছেন। অহরহ। সম্মান জানাতে গিয়ে তাঁদের যে অসম্মানিত করা হবে, সম্মান প্রদানের দায়িত্ব যাঁরা নিয়েছিলেন, তাঁরা সেটা বুঝতে পারেননি; চিনতে পারেননি পিতৃতান্ত্রিকতার বিস্তার ও ভয়াবহতাকে। বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা বললেই যথেষ্ট সম্মান করা হতো। তাঁদের লাঞ্ছনার খবরটা সর্বজনগ্রাহ্য করে তোলার কোনো আবশ্যকতা ছিল না। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা কি এমনটাই হয়?
এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্তটাও ছিল ভুল। দরকার ছিল রাজাকারদের এবং শহীদদের তালিকা প্রস্তুত করা। যথার্থ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরির করার কাজ ৫০ বছরের চেষ্টায়ও শেষ করা অসম্ভবই রয়ে গেছে। সর্বশেষ খবর হলো যে গত পাঁচ বছরে (২০১৯-২৩) ২ হাজার ৩১৬ জন ‘মুক্তিযোদ্ধার’ গেজেট বাতিল করা হয়েছে। সংশোধন করা হয়েছে
৩ হাজার ৩১৬ জনের। ভুয়া সার্টিফিকেটধারী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা যে কত, কেউই তা বলতে পারবে না। ওই যে বললাম, আসলে তালিকা প্রস্তুতের সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল না। যুদ্ধ শেষে সার্টিফিকেট পাবেন—এই লোভে কেউ মুক্তিযুদ্ধে যাননি; গেছেন দেশের টানে, প্রাণের দায়ে। সার্টিফিকেট দেখিয়ে সুবিধা আদায় করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ণ বিরোধী কাজ। ওই কাজেই তাঁদের টেনে আনা হয়েছে। যে ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের তালিকা কি তৈরি করা হয়েছে? তাঁরা কি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না? মুক্তিযোদ্ধাদের এখন আবার ‘বীর’ বলা হচ্ছে। কোনো কাপুরুষ কি মুক্তিযুদ্ধ করেছে?
পৃথিবীজুড়ে এখন রক্ষণশীলতা বাড়ছে। অতি উন্নত দেশ আমেরিকা। এক সমীক্ষা বলছে, সেখানে শতকরা ৮০ জন মানুষ এখন রক্ষণশীলতার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো নানা-দোষে-দোষী একজন মানুষেরও নাকি শতকরা ২৫ জন খাঁটি সমর্থক রয়েছেন। এর কারণ কী? মূল কারণ, পুঁজিবাদ যে অন্ধকার তৈরি করেছে তাতে মানুষ কোনো আশার আলো দেখতে পাচ্ছে না। হতাশ মানুষ মৌলবাদ, বর্ণবাদ, জঙ্গিবাদ ইত্যাদি নানা রকমের বিপজ্জনক পথে চলছে এবং এতকাল ধরে যাঁরা উদারনীতিক ছিলেন, তাঁদেরও অনেকেই উদারনীতির ওপর আগের মতো আস্থা রাখতে পারছেন না, ক্রমেই রক্ষণশীল হয়ে পড়ছেন। রক্ষণশীল পুঁজিবাদকেই সাহায্য করবে—বিদায় হতে নয়, টিকে থাকতে। উদারনীতি হচ্ছে সংস্কারপন্থী। সংস্কার রক্ষণশীলতারই বন্ধু, মৌলিক পরিবর্তনের নয়। মৌলিক পরিবর্তনের জন্য চাই পুঁজিবাদবিরোধী সামাজিক বিপ্লব; কয়েকটি দেশে নয়, পৃথিবীর সব দেশে। এই বোধটা স্পষ্ট হচ্ছে। যত বেশি এবং যত দ্রুত স্পষ্ট হয়, ততই মঙ্গল। ভরসাটা সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের ওপরই।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
দুষ্টের দমন করার ক্ষমতা যাঁর হাতে, সেই বিচারপতিই এবার খুনি হয়ে গেলেন। তিনি হয়ে উঠলেন স্ত্রীর ঘাতক। যুক্তরাষ্ট্রের এক বিচারপতির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠল। তিনি মদ্যপ অবস্থায় স্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করেছেন। তাঁর বাড়ি থেকে পুলিশ ৪৭টি বন্দুক ও ২৬ হাজার গুলি উদ্ধার করেছে।
স্ত্রীকে হত্যার পর ফোন করে সহকর্মীকে বিচারপতি বলেন, ‘আগামীকাল আদালতে আসা হবে না, পুলিশের হেফাজতে থাকব।’ বাস্তবে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে তাঁকে তাঁর বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় পুলিশও বিস্মিত হয়। কারণ ওই বিচারকের বাড়িটি রীতিমতো অস্ত্রের ভান্ডার। পুলিশ জানিয়েছে, ৭২ বছর বয়সী বিচারপতির নাম জেফরি ফার্গুসন। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার অরেঞ্জ কাউন্টির সুপিরিয়র আদালতের বিচারপতি। হত্যা করেন স্ত্রী শার্লিকে (৬৫)। ঘটনার দিন বাড়ির কাছেই একটি রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের। তবে এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। শার্লির আইনজীবী জানিয়েছেন, ঝগড়ার মধ্যেই বিচারপতি শার্লির দিকে গুলি ছোড়ার ভঙ্গি করেন। এরপর স্ত্রী তাঁকে বলেন, ‘আসল বন্দুক দিয়েই গুলি করো।’ এরপরই কোমর থেকে বন্দুক বের করে স্ত্রীর বুক লক্ষ্য করে গুলি চালান বিচারপতি ফার্গুসন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শার্লির। এরপর বিচারপতি নিজেই ৯১১ নম্বরে ফোন করেন। পুলিশ এসে তাঁর বাড়ি থেকে ৪৭টি বন্দুক ও ২৬ হাজার গুলি উদ্ধার করে। ২০১৫ সাল থেকে বিচারপতির দায়িত্ব পালন করা ফার্গুসন স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর আইনজীবীর দাবি, ফার্গুসনের স্ত্রীকে গুলি করার ইচ্ছা ছিল না। এটা নিছক একটা দুর্ঘটনা।
সমস্যা ওই একই। পিতৃতান্ত্রিকতা। বিচারপতি এমনিতেই ক্ষমতাবান। কিন্তু সেই ক্ষমতার ওপর তাঁর আস্থা নেই, যে জন্য বাড়িতে ৪৭টি বন্দুক ও ২৬ হাজার গুলির এক অস্ত্রাগার বানিয়ে রেখেছেন। হতে পারে তাঁর স্ত্রী স্বামীর ক্ষমতার কাছে নতি স্বীকার করেননি; যে জন্য বাগ্বিতণ্ডা ঘটেছে এবং বোঝা যায় সেটা প্রায়ই ঘটত। স্ত্রীর চ্যালেঞ্জ স্বামীর জন্য মেনে নেওয়াটা সহজ ছিল না; যে জন্য গুলি করেই প্রমাণ করে দিয়েছেন যে উপেক্ষার পাত্র তিনি নন। আদালতে বাদী-বিবাদী, উকিল-মক্কেল যাঁকে অত সমীহ করেন, তিনি হেরে যাবেন নিজের স্ত্রীর কাছে, স্বগৃহে? হতেই পারে না।
সমাজ পিতৃতান্ত্রিক, যুগ যুগ ধরে ছিল এবং এখনো আছে। পিতৃতান্ত্রিকতা আর পুরুষতান্ত্রিকতা কিন্তু এক জিনিস নয়। হ্যাঁ, পুরুষদের পক্ষেই পিতৃতান্ত্রিক হওয়াটা সহজ এবং সেটা তাঁরা সাধারণত হনও, কিন্তু নারীরাও যে পিতৃতান্ত্রিক হতে পারেন না, এমন নয়। পরিবারের ভেতরে হন, সমাজে হন, রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রেও হয়ে থাকেন। পিতৃতান্ত্রিকতার অর্থ হচ্ছে কর্তৃত্ববাদিতা। পিতারাই সাধারণত ওই কর্তৃত্বের অধিকারী হন, সে জন্যই ওই নামকরণ। ট্রুডো-পত্নী সোফি গ্রেগেয়ার ওই পিতৃতান্ত্রিকতার বন্ধন থেকেই মুক্তি চেয়েছিলেন। মুক্তি অনেকেই চান, বিশেষভাবে নারীরা। কিন্তু উপায় খুঁজে পান না। তাই মেনে নেন। উপায় খুঁজে না পাওয়ার কারণ রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক গোটা ব্যবস্থাই আসলে পিতৃতান্ত্রিক। ব্যক্তির পক্ষে এর হাত থেকে অব্যাহতি পাওয়া কঠিন। সাহিত্যের দুই বিখ্যাত নারী চরিত্র মুক্তি চেয়েছিল—ইবসেনের নোরা এবং তলস্তয়ের আন্না কারেনিনা। ঘর-সংসার তাকে একটি পুতুলে পরিণত করেছে টের পেয়ে নোরা স্বামীগৃহ ত্যাগ করে নিজের জীবনকে মুক্ত করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে অজানা পথে বেরিয়ে পড়ে। আন্না কারেনিনা স্বামীকে ত্যাগ করে প্রেমিকের সঙ্গে গিয়ে ঘর বেঁধেছিল, দেখল যে স্বামী হওয়ার পরে প্রেমিকটিও আগের স্বামীর মতোই পিতৃতান্ত্রিক হয়ে গেছে। মুক্তির সব পথ অবরুদ্ধ দেখে আন্না শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করে। কিন্তু সেটা তো মুক্তি নয়, মৃত্যু বটে। সমস্যার মূলে রয়েছে অসাম্য। বন্ধুত্ব বলি কি বিবাহ বলি—সবখানেই সমতা চাই। একপক্ষ বড় আর অপরপক্ষ ছোট হলে অসুবিধা। ভারসাম্য থাকে না।
পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীদের নিরাপত্তাই শুধু নয়, সম্মানও বিঘ্নিত হয়। পদে পদে। একাত্তরে আমাদের নারীরা কেমন বিপদের মধ্যে নিক্ষেপিত হয়েছিলেন তার বিবরণ সংখ্যা দিয়ে বোঝানো যাবে না, বর্ণনায় কুলাবে না। যে নারীরা বিশেষভাবে অসম্মানিত হয়েছেন, কিন্তু প্রাণে বেঁচে গেছেন, তাঁদের কয়েকজনকে ‘বীরাঙ্গনা’ বলে সম্মানিত করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেটি যে একটি ভ্রান্ত প্রচেষ্টা ছিল, লাঞ্ছিতদের পক্ষে তা টের পেতে মোটেই বিলম্ব ঘটেনি। বীরাঙ্গনারা কেবল অবহেলার পাত্রীই হননি, অবহেলা তবু সহ্য করা গেছে, তাঁদের পক্ষে করুণার বোঝা বহন করা ছিল অবহেলার চেয়েও দুঃসহ। তা ছাড়া তাঁরা বিদ্রূপের পাত্রী হয়েছেন। অহরহ। সম্মান জানাতে গিয়ে তাঁদের যে অসম্মানিত করা হবে, সম্মান প্রদানের দায়িত্ব যাঁরা নিয়েছিলেন, তাঁরা সেটা বুঝতে পারেননি; চিনতে পারেননি পিতৃতান্ত্রিকতার বিস্তার ও ভয়াবহতাকে। বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা বললেই যথেষ্ট সম্মান করা হতো। তাঁদের লাঞ্ছনার খবরটা সর্বজনগ্রাহ্য করে তোলার কোনো আবশ্যকতা ছিল না। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা কি এমনটাই হয়?
এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্তটাও ছিল ভুল। দরকার ছিল রাজাকারদের এবং শহীদদের তালিকা প্রস্তুত করা। যথার্থ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরির করার কাজ ৫০ বছরের চেষ্টায়ও শেষ করা অসম্ভবই রয়ে গেছে। সর্বশেষ খবর হলো যে গত পাঁচ বছরে (২০১৯-২৩) ২ হাজার ৩১৬ জন ‘মুক্তিযোদ্ধার’ গেজেট বাতিল করা হয়েছে। সংশোধন করা হয়েছে
৩ হাজার ৩১৬ জনের। ভুয়া সার্টিফিকেটধারী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা যে কত, কেউই তা বলতে পারবে না। ওই যে বললাম, আসলে তালিকা প্রস্তুতের সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল না। যুদ্ধ শেষে সার্টিফিকেট পাবেন—এই লোভে কেউ মুক্তিযুদ্ধে যাননি; গেছেন দেশের টানে, প্রাণের দায়ে। সার্টিফিকেট দেখিয়ে সুবিধা আদায় করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ণ বিরোধী কাজ। ওই কাজেই তাঁদের টেনে আনা হয়েছে। যে ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের তালিকা কি তৈরি করা হয়েছে? তাঁরা কি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না? মুক্তিযোদ্ধাদের এখন আবার ‘বীর’ বলা হচ্ছে। কোনো কাপুরুষ কি মুক্তিযুদ্ধ করেছে?
পৃথিবীজুড়ে এখন রক্ষণশীলতা বাড়ছে। অতি উন্নত দেশ আমেরিকা। এক সমীক্ষা বলছে, সেখানে শতকরা ৮০ জন মানুষ এখন রক্ষণশীলতার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো নানা-দোষে-দোষী একজন মানুষেরও নাকি শতকরা ২৫ জন খাঁটি সমর্থক রয়েছেন। এর কারণ কী? মূল কারণ, পুঁজিবাদ যে অন্ধকার তৈরি করেছে তাতে মানুষ কোনো আশার আলো দেখতে পাচ্ছে না। হতাশ মানুষ মৌলবাদ, বর্ণবাদ, জঙ্গিবাদ ইত্যাদি নানা রকমের বিপজ্জনক পথে চলছে এবং এতকাল ধরে যাঁরা উদারনীতিক ছিলেন, তাঁদেরও অনেকেই উদারনীতির ওপর আগের মতো আস্থা রাখতে পারছেন না, ক্রমেই রক্ষণশীল হয়ে পড়ছেন। রক্ষণশীল পুঁজিবাদকেই সাহায্য করবে—বিদায় হতে নয়, টিকে থাকতে। উদারনীতি হচ্ছে সংস্কারপন্থী। সংস্কার রক্ষণশীলতারই বন্ধু, মৌলিক পরিবর্তনের নয়। মৌলিক পরিবর্তনের জন্য চাই পুঁজিবাদবিরোধী সামাজিক বিপ্লব; কয়েকটি দেশে নয়, পৃথিবীর সব দেশে। এই বোধটা স্পষ্ট হচ্ছে। যত বেশি এবং যত দ্রুত স্পষ্ট হয়, ততই মঙ্গল। ভরসাটা সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের ওপরই।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫