অর্থ আত্মসাৎ, ব্র্যাককর্মী কারাগারে

পাবনার সাঁথিয়ায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের মাইক্রো ফিন্যান্সের (প্রগতি) ক্রেডিট অফিসার হাসান আলীর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত বুধবার তাঁর নামে মামলা করেছে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ। এরপর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

হাসান আলীর (৩২) বাড়ি যশোরের কাশিমপুর গ্রামে।

জানা গেছে, উপজেলার ধুলাউড়ি শাখা ব্র্যাকের গ্রাহকদের ঋণের কিস্তি জমা না করে হাসান আলী তা আত্মসাৎ করেন। গ্রাহকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটি চার সদস্যের মনিটরিং কমিটি গঠন করে। কমিটি তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায়। এরপর বুধবার রাতে হাসান আলীর নামে মামলা করেন ব্র্যাকের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক আলিমুজ্জামান।

এজাহার সূত্রে জানা গেছে, হাসান আলী ২০২০ সালের জুন মাস থেকে চলতি সেপ্টেম্বরের মধ্যে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় গ্রাহকদের কাছ থেকে ঋণের ৫৫ লাখ ৭৪ হাজার ৫২৩ টাকা উত্তোলন করেন। এমনকি কিস্তির টাকা জমা বইতে না তুলে তিনি নিজের কাছে রেখে দেন। এ টাকা তিনি অফিসে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।

ধুলাউড়ি ব্র্যাক অফিসের অর্ধশতাধিক ভুক্তভোগী জানান, ঋণের বিপরীতে তাঁরা কিস্তির টাকা দেন। কিন্তু ক্রেডিট অফিসার হাসান ওই টাকা জমা না করে আত্মসাৎ করেন।

অভিযোগকারী মকছেদ আলী বলেন, জমির দলিল জমা দিয়ে ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কিস্তি পরিশোধ করলেও, জমির কাগজ ফেরত দিচ্ছেন না তাঁরা। হাসান কম্পিউটারে টাকা ওঠাবেন বলে কিস্তির বই নিয়ে যান। কিন্তু ফেরত দেননি।

ভুক্তভোগী সুমি খাতুন বলেন, ‘ডিপিএসের কথা বলে টাকা নিলেও, সেই ডিপিএসের বই ফেরত দিচ্ছেন না হাসান আলী। আমিসহ আরও অনেকে গত রোববার সকালে ধুলাউড়ি ব্র্যাকের শাখা অফিসে গিয়েহাসান ও এরিয়া ম্যানেজারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি। পরে পুলিশ এসে পরিবেশ শান্ত করে।’

রুদ্রগাতী গ্রামের সবুজ আলী বলেন, এক বছর আগে হাসানের কাছে থেকে তিনি ৪ লাখ টাকা ঋণ নেন। এর বিপরীতে তিনি কিস্তিতে ৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা দিয়েছেন হাসানের কাছে। সব কিস্তি দিলেও বইতে সাত কিস্তির টাকার কথা লেখা হয়েছে। বাকি কিস্তির টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন।

সবুজ আলী আরও বলেন, ব্র্যাক যেখানে এক মাসের কিস্তি নাদিলে বাড়ির ওপর বসে থাকে,সেখানে এতগুলো কিস্তি না দিলে এরিয়া ম্যানেজারকে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

জানতে চাইলে হাসান আলী বলেন, ‘বিভিন্ন সময় ভুলে গ্রাহকদের ঋণের ৩ লাখ টাকা আমার নিকট আছে। বিকেলে ব্র্যাকের কর্মকর্তারা মীমাংসার জন্য ডেকে এনে আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্র্যাকের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক আলীমুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে তিনি কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না। তিনি জেলা অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, ব্র্যাক কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে গত বুধবার রাতেই হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে গতকাল দুপুরে পাবনা আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালতের নির্দেশে তাঁকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।