Ajker Patrika

যার যা পছন্দ

চেলসি ভেরোনিকা রেমা
আপডেট : ১২ মে ২০২২, ১০: ৫৮
যার যা পছন্দ

মানুষ হরেক রকমের। কারও ইচ্ছে এক রকম আবার কারও ইচ্ছে অন্য রকম। কিন্তু অন্যের ইচ্ছে বা আশা যখন আরেকজনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, সেটা আসলে সামাজিক কোন রীতির মধ্যে পড়ে, তা অজানা। আমাদের সমাজের একটা বিশেষ ধারণা আছে। সরকারি চাকরি করলেই জীবনে আর কোনো ভাবনা থাকে না। আসলেই কি তাই? সরকারি চাকরি পাওয়ার প্রথম কারণ আত্মীয়দের মধ্যে একটু বড়াই করা। কেউ ঘুষ দিয়ে সরকারি চাকরি পেল নাকি নিজের যোগ্যতায় পেল, তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। এত কথা কেন বলছি?

সমাজে যে যত বেশি ডিগ্রি-সার্টিফিকেট অর্জন করে, তার সাফল্যের হার তত বেশি, সম্মান বেশি। এটাই মানা হয়। ‘ডিগ্রি’ শব্দটা ব্যবহার করলাম; কারণ, সব পড়ালেখা ডিগ্রির আওতায় পড়ে না। কিছু মানুষ কৌতূহলের বশে অনেক কিছুর ওপর জ্ঞান আহরণ করে ফেলে। আবার কিছু মানুষ পড়ালেখার চেয়ে হাতের কাজসহ অন্য কাজ করতে পছন্দ করে; কারণ হয়তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ালেখা করা তাদের ধৈর্যের ঊর্ধ্বে এবং সেটা নিষিদ্ধ কিছু না, অস্বাভাবিক কিছু না।

ওপরের ঘটনাগুলো প্রায় প্রতিটি ঘরের কথা। কেউ যদি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, ব্যাংকে চাকরি বা সরকারি চাকরির ঊর্ধ্বে অন্য কিছু চিন্তা করে, তাহলে সমাজের একটু না একটু নাক সিটকানি পাবেই। তাই বলে কি থেমে যাওয়া উচিত?

প্রশ্নটার উত্তর নিজেকে নিজেই জিজ্ঞেস করুন ‘আপনি কী চান?’

আমি যখন অর্থনীতির মতো বিষয় থেকে সাংবাদিকতা বা মিডিয়া নিয়ে পড়ার ইচ্ছে পোষণ করলাম, তখনকার স্মৃতি খুব একটা সুখের নয়। অনেকেই অনেক কথা বলল। আড়ষ্ট হয়ে যেতাম মানুষের কথায়। খুব অপরাধী লাগত নিজেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি নিঃসন্দেহে খুব আনন্দের সময় কাটিয়েছি পড়ালেখার বাইরে। কিন্তু পড়ালেখার সময় আমার মন বসত না। অঙ্ক ভয় পেতাম। অর্থনীতির বই দুর্বোধ্য লাগত। পরীক্ষার হলে সব ভুলে যেতাম। খাতার সামনে বসে ভয়ংকরভাবে কাঁপতে থাকতাম। প্রথম রেজাল্ট যেদিন এল, সেদিন স্রোতের বিপরীতে একটা সিদ্ধান্ত নিলাম—সাংবাদিকতায় পড়ালেখার! সেই সিদ্ধান্তের ফলাফল, আমি যা শিখেছি আনন্দের সঙ্গে শিখেছি। যা বুঝিনি তা বোঝার জন্য এবং অন্যরা যা বোঝে না তা বোঝানোর জন্য আগ বাড়িয়ে যুক্তিতর্ক করেছি। আমি পড়ালেখা এবং শেখাটা আনন্দের সঙ্গেই নিতে পেরেছি।

অনেক বন্ধুবান্ধব এবং পরিচিতদের দেখেছি, চাকরির পাশাপাশি তারা অনলাইনে ব্যবসা করছে। এতে কি অতিরিক্ত আয়ের আশা রয়েছে? না! বরং সারা দিনের ধকল শেষে নিজেদের পছন্দের কাজ করা। কেউ কেক বানিয়ে, কেউ ছবি এঁকে, কেউ গয়না বানিয়ে অনলাইন মাধ্যমে আয় করে। কেউবা নিজের শখকে শুধু পরিবারের জন্য বরাদ্দ রাখছে। সারা দিনের ক্লান্তি শেষে কেন মানুষের এত পরিশ্রম? এতে নিজেরা আনন্দ পায়, সুখ পায়, শান্তি আসে। এতে তাদের ক্লান্তি আসে না। এটাই তাদের জন্য বিশ্রাম।

কিন্তু দিন শেষে এইটুকু সুখের আশাও সমাজের চোখে বাধে। মাঝে মাঝে প্রশ্ন আসে এই ‘সমাজ’টা কী? তাদের কেন এত প্রশ্রয় দিতে হবে? নিজের চেয়ে কেন এই সমাজের চোখে বড় হওয়া আমাদের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ?

এই সমাজটা আসলে আমরাই। ব্যস! এইটুকু মনে রাখলেই চলবে। আমরা যখন নিজেদের মন খোলা রাখতে শিখব, তখন আমরাই এই ছোট ছোট কাজকে বাহ্বা দিতে শিখব।

কোনো এক কোরিয়ান সিরিজে দেখেছিলাম, নায়িকা নায়ককে বলছে, ‘আমরা যখন অসাধারণ কিছুর চেয়ে সাধারণ কিছুর জন্য মন খারাপ করি, এটাই কি দুঃখজনক না?’

বলছি না, সমাজের নিয়ম মানা অনুচিত; বরং মানুষের জন্যই সমাজের এই এত নিয়মনীতি। কিন্তু কিছু নিয়ম যখন একজন জলজ্যান্ত মানুষের চেয়ে বড় হয়ে যায়, তখন সেটা না মানাই ভালো। যার যা পছন্দ, তার তো তা-ই করা উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত