Ajker Patrika

চরের কৃষিতে নারীরা ন্যায্য মজুরি বঞ্চিত

মাসুদ পারভেজ রুবেল, ডিমলা (নীলফামারী)
চরের কৃষিতে নারীরা ন্যায্য মজুরি বঞ্চিত

নীলফামারীর ডিমলার চরগুলোতে পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কৃষিকাজ করছেন নারী শ্রমিকেরা। তবে এ ক্ষেত্রে তাঁরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জীবিকার তাগিদে কম মজুরি নিয়েই তাঁদের কাজ করতে হচ্ছে।

সম্প্রতি তিস্তা নদীর খগার চরে গিয়ে দেখা যায়, নারীরা ভুট্টা ও গমবীজ বপন করছেন। তাঁরা জানান, অধিকাংশ সময় বাড়ির পুরুষেরা কাজের জন্য এলাকার বাইরে থাকেন। তখন সংসার সামলানোর পাশাপাশি দিনমজুরের শ্রম দেন তাঁরা। কিন্তু মজুরির ক্ষেত্রে তাঁদের প্রতি রীতিমতো অবিচার করা হয়। তাঁরা সারা দিন কাজ করে হাতে পান ৩০০ টাকা। সমান কাজ করে পুরুষ শ্রমিকেরা পান ৪৫০ টাকা।

কিসামত চর গ্রামের তিন সন্তানের জননী সুফিয়া বেগম অভাবের সংসারে সহযোগিতার জন্য চরের খেতে শ্রম দেন। তিনি বলেন, ‘খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু কী করমু? উপায় না থাকায় পেটেভাতে বাঁচার জন্য রোদে পুইড়া কাজ করতাছি। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে সংসারের কাজ সেরে রান্না করি। সেই ভাত রাইতে খাই, পরদিন সকালে খাই, দুপুরের জন্য সঙ্গে নিয়ে আসি। স্বামীও তাই করেন।’

সকালের ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে গমবীজ বপন করছিলেন বিধবা রহিমা বেগম। তিনি বলেন, ‘বেটা মানসি খ্যাতে কাজ কইরা পায় ৫০০ টাহা, আমরা হ্যাগো থাইকা বেশি কাম কইরা পাই ২৫০ থেকে ৩০০ টাহা। বর্ষাকালে কাইজকাম থাহে না, পোলাপান নিয়া সংসার চালানো খুব কষ্ট। আমাগো কেউ খোঁজখবর নেয় না।’

তিস্তার তীরবর্তী চরখড়িবাড়ি, বাইশপুকুর, ভেন্ডাবাড়ি এলাকার নারী শ্রমিকেরা জানান, সব কাজে তাঁরা এমন মজুরি বৈষম্যের শিকার।তাঁদের পারিশ্রমিক পুরুষদের থেকে ১৫০ টাকা কম দেওয়া হচ্ছে। এতে আপত্তি করলে কাজ থেকে বাদ দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
চরাঞ্চলের কৃষিকাজের পাশাপাশি অন্যান্য কাজেও মজুরির ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হওয়া নিয়ে শ্রমজীবী নারীদের আক্ষেপ রয়েছে।

সুন্দরখাতা গ্রামের মর্জিনা জানান, মাটি কাটা ছাড়া অন্য সব কাজে তাঁরা পুরুষের সঙ্গে রীতিমতো পাল্লা দিয়ে চলেন। অথচ মজুরির ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় তাঁদের ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কম দেওয়া হয়। অনেক সময় পুরুষদের চেয়ে অর্ধেক মজুরিতে নারী শ্রমিকদের কাজে লাগানো হয়।

খালিশা চাপানি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান কেন্জুল জানান, এলাকায় নারীদের কর্মসংস্থানের সংকট প্রবল। এ সুযোগ নিয়ে স্থানীয় কৃষকেরা নারীদের দিয়ে কাজ করিয়ে তুলনামূলক কম মজুরি পরিশোধ করছেন। এমন মজুরি বৈষম্যের অবসানে সবার এগিয়ে আসার দাবি জানান তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেকেন্দার আলীর মতে, ডিমলায় কৃষিকাজে পুরুষ ও নারী শ্রমিকেরা সমান ভূমিকা রাখছেন। আলু, গম ও ভুট্টা চাষের কাজে পুরুষের চেয়ে নারীরা এগিয়ে। তাঁদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিতে পুরুষ শ্রমিকসহ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।

নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করা সংস্থা ‘পল্লীশ্রী’র প্রকল্প সমন্বয় পুরান চন্দ্র বর্মন জানান, চরাঞ্চলের নারীরা অনেক আগে থেকে মজুরি বৈষম্যের শিকার। তাঁদের সচেতন করার পাশাপাশি শ্রমজীবী নারীদের মজুরি বৈষম্য নিয়ে শ্রম দপ্তরের কার্যকর ভূমিকা পালন করা উচিত।

রংপুর বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল লতিফ সরকার বলেন, আইনে নির্দেশনা রয়েছে, সমকাজে সমান মজুরি। একই কাজ করলে নারী-পুরুষ সবার সমান মজুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত